কবিতা/গান

হে নিশানবাহী!

 নিশান কি ঝড়ে প’ড়ে গেছে আজ মাটির পরে?

আধো চাঁদ-আঁকা সেই শাশ্বত জয়-নিশান?

বহু মৃত্যুর প্রলয়-আঘাতে, প্রবল ঝড়ে

নুয়ে গেছে সেই প্রথম দিনের জয়-নিশান?

হামাগুড়ি দিয়ে কারা চলে ঐ পতাকীদল?

কার ক্রন্দনে ভরিছে শূন্য জলস্থল?

নিশান ‘কি আজ প’ড়ে গেছে ভূঁয়ে,

নিশান-বাহী কি চলে মাটী ছুঁয়ে,

শিয়রে কি তার কঠিন বাধার জগদ্দল?

হে নিশান-বাহী! আজো সম্মুখে রাতের সীমা,

দৃষ্টি রোধে কি তিমিরাচলের ঘন ম্লানিমা?

আজো সম্মুখে বন্ধুর পথ বালিয়াড়ির

সঙ্গী-বিহীন জনতা-মুখর সাগরতীর?

ঐ দেখো স্রোতে অরূপ আলোতে সূর্যতরী

তীক্ষ্ণ আলোর তুফানে ছিঁড়িছে এ শর্বরী,

এই কালো রাত জমাট-তুহিন হিম-অতল,

ছিঁড়ে চ’লে যায় আলোর ছোঁয়ায় গলানো জল।

পাওনি এখনো আলোর পরশ নবজীবন?

মৃত শব হ’তে হয়নি কি আজো উজ্জীবন,

এখনো সূর্য ভাঙেনি কি এই রাতের সীমা,

এখনো তোমার পথ ছেয়ে আছে ঘন ম্লানিমা?

হে নিশান-বাহী! তাই আছো নূয়ে?

তাই কি পতাকা আছে মাটি ছুঁয়ে?

তবু এই চলা জানি উদয়ের পূর্বাভাষ,

কালো কুয়াশার পর্দায় ঢাকা

তোমার সূর্য, আলো, আকাশ।

পায়ের তলায় প্রবল অশ্বখুরে

মরুবালুকার স্ফূলিঙ্গ উঠে নিমেষে মিলায় দূরে,

ওড়ে বাতাসের শিখার শিখরে মুক্তি লাল,

শ্বেত পতাকায় শান্তিচিহ্ন আল্-হেলাল।

সেই উদ্দাম রণতুরঙ্গ মানে না বাধা,

পলকে পলকে জ্বলে তার খুরে অগ্নিশিখা!

আলোর প্লাবনে কে নিশান-বাহী অগ্রগামী,

ঝড়ের দাপটে ভাঙে শতকের কুজ্ঝটিকা?

আমাকে জাগাও তোমার পথের ধারে,

আমাকে জাগাও এ বিজন কান্তারে,

আমাকে জাগাও যেখানে সেনানী! মানে না বাঁধন রবি,

আমাকে জাগাও যেখানে দীপ্ত সে মদিনাতুন্নবী,

বিশ্বকরুণা, মুক্তি পদ্ম-বেদনা লাল

বহিছে চিত্ত-সুরভিত শ্বেত আল হেলাল।।

– ফররুখ আহমদ

মন্তব্য করুন

আরও দেখুন
Close
Back to top button