নির্বাচিত ফেসবুক স্ট্যাটাস

নারীর স্বাধীনতা: ইসলামে কতটুকু সম্ভব?

ধর্ম হিসেবে ইসলাম নারীর অবস্থানকে যতটা গ্লোরিফাই করে, দুনিয়ার আর অন্যকোনো ধর্ম এমনটা করে বলে আমার জানা নেই।

উত্তর আধুনিক দুনিয়া আমাদের শিখিয়েছে, স্বাধীনতার একটা সংজ্ঞা হলো নিজে উপার্জন করা। অন্যের উপার্জনের উপর নির্ভরশীল না হওয়া। এতে করে ব্যক্তিস্বাধীনতা থাকবে, ব্যক্তিপছন্দ নিশ্চিত হবে।

শুনতে অবশ্যই খুব সুন্দর লাগে।

তবে, চিন্তাটা এসেছে ধর্মের রক্ষণশীলতা নীতির বিপরীতে গিয়ে। বিশেষ করে, ইসলাম ধর্মে নারীদের গৃহে অবস্থান আর পিতা, স্বামী, সন্তানের উপর নির্ভরশীলতার যে বিধান, সেই বিধানের বিপরীত মত হিশেবে।

আদতে ব্যাপারটা হলো, নারীকে পিতা, স্বামী আর সন্তানের উপর নির্ভরশীল করে ধর্ম তার অবস্থানকে খাটো করেনি, বরং তার অবস্থানকে যে সম্মানিত করেছে, তাকে বাইরের যাবতীয় ‘হ্যাসেল’, যাবতীয় ‘গ্যাঞ্জাম’ থেকে মুক্তি দিয়েছে—এই জিনিসটাকে মিসকোট করা হয়। বলা হয়, এতে করে নাকি তাকে চার দেয়ালের মাঝে বন্দী করে ফেলা হয়।

দেখুন, একজন নারী বাইরে গিয়ে সকাল ৯ টা থেকে ৫ টা অবধি অফিস করে কেন? টাকা উপার্জন করার জন্যেই তো, তাই না? সেই টাকা দিয়ে কী হবে? সে ভালো খাবে, ভালো পরবে, ভালো জিনিস কিনবে ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

তো, ইসলাম বলছে—তোমার ভালো খাবার তোমার প্লেটে আসবে, তোমার ভালো কাপড়চোপড় তোমার গায়ে আসবে, তোমার যাবতীয় ভালো জিনিসও তোমার ড্রয়ারে আসবে। কিন্তু, কে এনে দিবে?

এই দায়িত্বটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা জীবনের একটা পর্যায়ে নারীর পিতাকে দিয়েছেন, একটা পর্যায়ে স্বামীকে দিয়েছেন, আবার একটা পর্যায়ে এই দায়িত্ব এসে পড়ে সন্তানের কাঁধে।

বাইরে ৯ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত চাকরি করে নারী যে চাহিদা পূরণ করবে, তার সেই সকল চাহিদা এই তিন শ্রেণীর পুরুষ পূরণ করে দিতে বাধ্য।

সমস্যাটা হলো, আমাদের দেশের অধিকাংশ পুরুষ ‘হক’ বিষয়টা বোঝে না৷ পিতা মনে করেন তিনি সন্তানের দেখভাল করে দয়া করছেন, স্বামী মনে করেন তিনি স্ত্রীর ভরণপোষণ সামলে দয়া করছেন, সন্তান ভাবে মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে তারা বড় দয়ালু হচ্ছেন। কথায় কথায় তারা সেই ‘দয়ার’ বিষয়টা দেখিয়ে দেয়।

 এতে করে যেটা হয়, এই মেন্টালিটি বড় আকারে মেয়েদের মাঝে হীনমন্যতা তৈরি করে৷ তারা ভাবে—আজ যদি তারা চাকরি করত, উপার্জন করত, এই মানসিক টর্চার তাদের সহ্য করতে হত না৷ পরিবারে তাদেরও ‘আলাদা’ একটা মর্যাদা থাকত। তারাও অনেক গুরুত্ব পেত, যেভাবে পুরুষেরা পায়।

এটা আদতে ধর্মীয় বিধানের সমস্যা নয়। সমস্যাটা আমাদের অশিক্ষা আর অজ্ঞতার।

ইসলাম নারীর ঘরে থাকাকে (ঘরে থাকা মানে আবার তথাকথিত চার দেয়ালে বন্দী থাকা নয়) কেন প্রায়োরিটাইজ করে, অনেকগুলো অ্যাঙ্গেল থেকে সেটা ব্যাখ্যা করার সুযোগ আছে। এটার অন্যতম একটা কারণ হলো—সন্তানের সঠিক তারবিয়াহ তথা বেড়ে উঠাকে নিশ্চিত করা। আধুনিক যামানার হাল হাকীকত থেকে আমরা তো অন্তত এটা টের পাচ্ছি যে, সন্তানকে সঠিকভাবে বড় করতে না পারলে, সভ্যতা অত্যন্ত নাজুকভাবে ভেঙে পড়বে। এই দিকটা এত গুরুত্বপূর্ণ যে, ইলন মাস্কের মতো বিলিয়নিয়ারও বলতে বাধ্য হয়—‘Being a Mom is just as important as any career’.

আমাদের ব্যর্থতা হলো—ইসলাম নারীর জন্য যে বিধানগুলো নাযিল করেছে, সেগুলোর গুরুত্ব, সেগুলোর সঠিক মর্মার্থ আর সেগুলোর প্রায়োগিক দিক আমরা কখনোই বৃহত্তর নারী সমাজের সামনে তুলে ধরতে পারিনি। আমাদের আরও ব্যর্থতা হলো—আমরা পুরুষদেরকে শেখাতে পারিনি কোনটা আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব আর কোনটা দয়া।

ফলে, যা ঘটবার তাই ঘটছে৷ নারীবাদীরা নিজেদের মতো করে এই বিধানগুলোকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, আমাদের বৃহৎ নারী সমাজকে সভ্যতার নামে এক সীমাহীন অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে৷ অত্যন্ত সুকৌশলে তারা ধর্মের ব্যাপারে বীতশ্রদ্ধ করে তুলছে জনসংখ্যার এই বিশাল অংশটাকে।

নামে বেনামে এই দেশে নারীবাদের কতো অসংখ্য অগনিত প্ল্যাটফর্ম দাঁড়িয়ে আছে তা কল্পনাও করা যায় না৷ অথচ, ধর্মীয় অধিকার হরণের ব্যাপারে সোচ্চার হবে, ধর্মের বিকৃতি আর অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে সরব হবে—এমন একটা ‘নারী প্ল্যাটফর্ম’ আমরা আজ অবধি বানাতে পারিনি।

এক আকাশ পরিমাণ আফসোস!

– আরিফ আজাদ

মন্তব্য করুন

Back to top button