পর্দা করে তবে…
পর্দা করে তবে…
বিয়ের দিন হিজাব খুলে ফেললো সে। মাথাটা তার কোনো মতে এক টুকরো কাপড় দিয়ে ঢাকা। আমি আর আমার স্বামী বরকতের জন্য দোয়া করে দিতে গেলাম। দেখতে গেলাম কথা বলার উদ্দেশ্যে। পাশে বসার পর সে বিয়ের ছবিগুলো নিয়ে এলো আমাদের দেখানোর জন্য। অবশ্য তাকে বলেছিলাম অ্যালবামটা না খুলতে। জানালাম যে তার পরনে হিজাব নেই। এই নন-হিজাবী বিয়ের ছবি আমার স্বামী দেখবে না। পর্দা সে করে বটে, তবে ভুলেই গিয়েছিল যে, সে পর্দা করে!
পর্দা করে তবে…
মেয়েটার বোন আসছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে ছুটে গেল সে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হলো। কারণ, লাগেজ নামাতে সময় লাগে। অবশেষে চোখে পড়ল বোনের মুখ। সাথে তার স্বামীও। যিনি একজন শিক্ষক। কাছে গিয়ে বোনকে জড়িয়ে ধরল সে। এমনকি তার স্বামীকেও! ভুলেও গেল যে বোনের স্বামী তার জন্য গাইরে-মাহরাম!
পর্দা করে তবে…
বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। উপস্থিত আছে সেও। সবাই বেশ ফিটফাট। আনন্দঘন পরিবেশ। হাই-ভলিউমে গান বাজছে। হাততালি দিয়ে গলা মিলিয়ে চলছে ক’জন। তার ভেতরটাও নেচে উঠছে। মা তার হাত ধরে টেনে আনল, বলল, ‘আনন্দ করো, এটাই তো বয়স!’ সে মিশে গেল সবার মাঝে। নেচে-গেয়ে হেসেখেলে একাকার। কেউ কেউ অবশ্য ইশারা-ইঙ্গিতে বিদ্রুপের হাসি হেসেছিল। তাকে নিয়ে নয়,তারা হেসেছে তার পর্দা নিয়ে!
পর্দা করে তবে…
কালো লম্বা ফ্রকটা পরে বেরিয়ে এলো সে। বড় একটা চাদরে শরীরের সামনের অংশ ঢাকা। গাড়িতে উঠার সময় এক পা তুলল। সরে গেল ফ্রকের নিচটা। সবার দৃষ্টি ফর্সা পা দুটোতে।
পর্দা করে তবে…
কালো বোরকা কিনেছে সে। হাতার অগ্রভাগ এতই প্রশস্ত যে অর্ধেক হাত দেখতে পাওয়া কঠিন কিছু নয়। আর হাতটা উঁচু করলে তো পুরোটাই চোখে পড়ে যায়! এমন না সে জানেনা। আলবৎ জানে। এই তো ক’দিন আগেও কোন এক অনুষ্ঠানে এমন হাতাওয়ালা গাউন পড়ে গিয়েছিল সে। তবে পাতলা হাতার ভেতরে কনুই পর্যন্ত আলাদা কোন কাপড় ছিলনা। পর্দা সে করে বটে, তবে সবই খোলামেলা।
পর্দা করে তবে…
বোরকার গলাটা বেশ বড়। আবরণও এত স্বচ্ছ যে, ভেতরটা দেখা যায়। সুযোগ! হ্যাঁ, চমৎকার গলার যে হারটা পড়ে আছে, সেটা দেখানোর একটা সুযোগ। স্বচ্ছ হিজাবের নিচে সেটা বেশ সুন্দর দেখায়। অবশ্য তুমি তাকে সতর্ক করতে গেলে সে বাঁকা চোখে তাকাবে। এমনভাবে উত্তর দিবে যেন সে অপরাধী নয়, তুমিই অপরাধী!
পর্দা করে তবে…
টাইট জিন্স পরে! উপরে একটা শার্ট। মাথায় হিজাব। কেউ যদি কিছু বলে তবে রেগেমেগে উত্তর দেয়, ‘আমার এই জিন্স তোমাদের বোরকার থেকে বেশি ঢেকে রাখে।’ আচমকা কোথাও বসলে জিন্স চিপসে যায়, তার পায়ের আকৃতি ধরা পড়ে স্পষ্টভাবে। সে এখন পুরুষদের মত বসে। পা বিছিয়ে দিয়ে অথবা পায়ের উপর পা তুলে। বিপদের সময় হলো- যখন সে কোন বাচ্চাকে কোলে নিতে অথবা জুতা পরতে নিচু হয়। সমস্যা হলো -এরকম মহিলাদের কেউ আছে খুবই স্থূল। তবু তারা জিন্স ছাড়তে পারে না।
পর্দা করে তবে…
বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে আয়নায় তাকালো সে। নিজেকে ডানে-বামে ঘুরেঘুরে দেখে। হঠাৎ খেয়াল চাপল সামনের কয়েকটা চুল বের করে দেওয়ার। হয়তো এতে আরো বেশি সুন্দরী লাগবে তাকে। তাই হিজাবের আড়াল থেকে যত্ন করে কিছু চুল বেরিয়ে এলো। হাতাটাও গুটিয়ে নেওয়া হলো যাতে হাতটা দেখা যায়। সবশেষে গায়ে সুগন্ধি সেন্ট। যে সেন্টের ঘ্রাণে যুবকদের মাথা ঘুরে যায়। আয়নায় তাকিয়ে আরেকবার মুচকি হেসে বেরিয়ে পড়ল সে। মুচকি হাসল শয়~তানও।
পর্দা করে তবে…
ভার্সিটির ক্যাম্পাসে সবার সামনে জোরে জোরে ডাকছে বান্ধবীকে। গলার স্বর শুনে সবাই উৎস খুঁজে বেড়ায়। আবার উচ্চস্বরে হেসে নেয়। সবাই আবার তার দিকে তাকায়। এরকম করবে না কেন? ছোটবেলা থেকে মাকে দেখেছে রাস্তার মাঝে ছোট ভাইকে বকতে কিংবা বিক্রেতার সাথে জোরে জোরে কথা বলতে।
হিজাব যেন কেবল এক টুকরো কাপড়!
পর্দা করে তবে…
ইন্টারনেটে ঢুকলে সবকিছু ভুলে যায়। এর সাথে মজা করে, ওর সাথে হাসি-ঠাট্টা, ফান-ট্রলে হাজার হাজার কমেন্ট-রিয়্যাক্ট করে বেড়ায়। এমন কিছু বলে যা নিজের বাবা অথবা স্বামীর সামনে বলার মত সাহস হয় না। এমনকি যাকে অনলাইনে এমনটা বলছে তাকে সামনাসামনি দেখলেও এমন বলার সাহস করতো না সে। অমুক-তমুক এর সাথে চ্যাটে-কমেন্টে এতো হাসাহাসি, এত মজা যে সবাই তাকে নিয়ে হাসতে বাধ্য হয়। কিন্তু দিনশেষে তাকে কেউ সম্মান করে না। দুঃখজনকভাবে সে নাকি পর্দাও করে!
পর্দা করে তবে…
এমন জামা পড়ে যেটা জালের মতো। সে মনে মনে ভাবছে পর্দা হচ্ছে। অথচ সবকিছু প্রকাশ পাচ্ছে সুস্পষ্টরূপে।
পর্দা করে তবে…
যার সাথে কথা বলে তার চোখে চোখ রেখে বলে।
কখনো চোখের দৃষ্টিতে অন্য কিছু মেশানো থাকে। গলার আওয়াজ খুবই মিষ্টি-মধুর। লিপ্ত হয় উষ্ণ কথাবার্তায়। সহকর্মী বলে কথা! অথচ সে নাকি পর্দানশীল!
পর্দা করে তবে…
সহকর্মীর পাশে বসে স্বামীর নামে গীবত করে। স্বামীর গোপনীয় কথা বলে ফেলে যাতে তার সাথে ফ্রি হওয়া যায়। অনেক গভীর বিষয়ও জানা যায়। দীর্ঘ চ্যাট শুরু হয়। দুজনের মাঝে তৈরি হয় অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। কিন্তু দিনশেষে কেউ কাউকে নিয়ে কবরে যাবে না। এমনকি মেয়েটার চোখে-ঠোঁটে মধু থাকলেও না; মেয়েটা সবচেয়ে সুন্দরী হলেও না।
পর্দা করে তবে…
ফেক আইডি খুলে চ্যাট করতে থাকে। ভালোবাসার জালে আবদ্ধ হয়। রিলেশনে জড়িয়ে পড়ে। উত্তেজনাকর কথাবার্তাও হয়। কিছুক্ষণ পর ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ঠিকই হিজাব পরে। গরিবদের কাছে গিয়ে দান-সদকা করে। এই আশায় যে, কিয়ামতের দিন হয়তো জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচবে।
তার পর্দা কেন তাকে অনলাইনের পর্দা করাতে পারল না?
পর্দা করে তবে…
কন্ঠটা বেশ কর্কশ। কিন্তু ছেলেদের সাথে কথা বলার সময় কঠিনতা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। কন্ঠ হয়ে যায় বিড়ালের মত। ফোন ধরার সাথে সাথে মিষ্টি গলায় কথা বলে। মাঝে মাঝে গলাটা একটু পরিষ্কার করে নেয়। বেশ পারদর্শী অভিনেত্রী।
আচ্ছা, কেন এত রকমফের? সবাই কি পর্দা করছে আদৌ? এরকম দৃশ্যপট আমরা সবাই দেখেছি হয়তো। দেখে বুঝতে পেরেছি কিছু একটা ঘাপলা আছে। পর্দার প্রকৃত অর্থ তারা বোঝেনি। হয়তো কেউ কেউ সত্যিই পর্দার অর্থ জানে না। এরা কি আসলেই পর্দানশীল?
(‘জীবন যদি হতো নারী সাহাবির মতো’ বই হতে)