ডান হাত দিলে বাম হাত জানবে না?
সম্প্রতি ডাক্তার আব্দুন নুর তুষার ডান হাত দিলে বাম হাত জানবে না – এই হাদিসটা উল্লেখ করে ফেসবুকে আলিমদের বন্যা সাহায্য কার্যক্রমকে খোঁচা মেরেছেন।
সেই খোঁচার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে প্রতিক্রিয়া জানায়। তার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, কুকুরের সাথে তর্ক করলে ঘেউ ঘেউ ছাড়া কিছু শুনতে পাবেন না।
ডাক্তার তুষারের সাথে আমার প্রথম পরিচয় – পেপসোডেন্ট কুইজ কম্পিটিশনের মাধ্যমে। ১৯৯৯ সালে একুশে টিভিতে প্রচারিত এই কম্পিটিশনে সেন্ট যোসেফ স্কুলের যে টিমটা বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয় সেটাতে ছিলাম আমি এবং আমার বন্ধু মাহিদ ইমরান জিতু।
এই সম্পর্কের জের ধরে, তাঁর মঙ্গল চেয়ে তাঁকে কিছু কথা বলতে চাই।
২০০৮ সালের বন্যার সময় আমি সোবহানবাগ চারতলা কলোনীতে থাকি। বন্যা দেখে নিজের জমানো টাকা নিলাম। ডিপার্টমেন্ট থেকে টাকা তুললাম। তারপরেও অপ্রতুল মনে হওয়ার কলোনীর বাসায় বাসায় গেলাম – টাকা তুললাম। তারপর সব টাকা প্রথম আলোতে গিয়ে বন্ধুসভায় দিয়ে আসলাম।
এরপর আস্তে আস্তে দ্বীনের বুঝ পাওয়া শুরু হয়, প্রথম আলোর এজেন্ডা বোঝার মতো তাওফিক দেন ক্রমশ।
জাফর ইকবাল, আনিসুল হক, আব্দুল্লাহ আবু সাইদ সহ অনেক সেলেব্রিটিদের ইসলাম বিদ্বেষের চেহারাটা আস্তে আস্তে প্রকাশ হয়ে যায়।
যারা ইসলাম বোঝেন তারা আস্তে আস্তে এই লোকগুলোর ব্যাড ইনফ্লুয়েন্সের ব্যাপারে নতুন প্রজন্মকে সচেতন করা শুরু করলেন।
এদের লেখা কোনো পত্রিকাতে ছাপা হতো না, নিছক ব্লগ, ফেসবুক প্রফাইল পোস্ট আর নোট ছাড়া এদের হাতে আর কোনো মিডিয়া ছিল না।
এই মানুষদের কাজ এবং কষ্ট এখন ফল দিচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ।
এখন মানুষ সাংবাদিকদের বিশ্বাস করে না। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া ব্যবসায়ীদের বেনেফিট আর সরকারের প্রপাগান্ডার টুল হিসেবে প্রসিদ্ধি পেয়ে গেছে – সাধারণ মানুষ বুঝে গেছে – তারা জনকল্যাণকামী নয়।
প্রথম আলো বন্ধুসভাকে এখন মানুষ গোণে না কেন? কারণ, এই দুনিয়াতে শো-অফ করা ছাড়া সুশীলদের কোনো প্রাপ্তি নেই।
একজন মুসলিম হিসেবে আমার কষ্টের টাকা কেন আমি গরীব মানুষকে দিব?
আবেগের জন্য? শুধুই ফিল গুডের জন্য?
সেই ফিল -গুড কতদিন টিকে থাকবে?
অনেকের খুব খারাপ লাগছে, কেন মানুষ বন্ধুসভাকে আগের মতো টাকা দিচ্ছে না। কেন মানুষ শায়খ আহমাদুল্লাহর আস সুন্নাহ ট্রাস্টকে দিচ্ছে? সিলেটের আত-তাকওয়া মাসজিদে টাকা দিচ্ছে?
কারণ মানুষ চায় তার টাকাটা দিয়ে গরীব মানুষের উপকার হোক এবং সাথে সাথে হুজুররা যে শুধু নেয় না – দেয়ও এটা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক।
সেকুলার এজেন্সিগুলোর মতো হুজুরদের আন্তর্জাতিক দাতা গোষ্ঠীগুলোর ফান্ডিং নেই। করপোরেট দান হুজুররা পায় খুবই কম।
সরকারী টাকা হুজুরদের মাধ্যমে বিতরণ হয় না – হয় সরকারী লোকদের মাধ্যমে যারা কতটা খায় আর কতটা গরীবদের বিলায় – এটা যে জীবনে একবারের জন্য হলেও সরকারী অফিসে গেছে সে বোঝে।
হুজুরদের টাকা দেয় তারাই যারা ইসলামকে ভালোবাসে। যারা ইসলামের নিদর্শন – দাড়ি-টুপিকে ভালোবাসে। তাঁরা তাঁদের দান এবং ইসলামের প্রতি ভালোবাসার বিনিময়ে আল্লাহর কাছে সাওয়াব চান।
বন্ধু-সভা সেকুলারিজম প্রমোট করে। ছেলে-মেয়েদের ফ্রি মিক্সিং প্রমোট করে। মেরিল-প্রথম আলো পুরষ্কার বিনোদন জগতের নটিবাজি প্রমোট করে।
আমি মুসলিম হিসেবে কীভাবে যারা ইসলামকে ধ্বংস করছে তাদের হাতে আমার হালাল উপার্জনের দানের টাকা তুলে দিব?
আমি তো করপোরেট না যে পাবলিক রিলেশনশিপ করব দান দেখিয়ে। কিংবা CSR ফান্ডের বেনেফিট নিব ট্যাক্স রিবেটের মাধ্যমে।
আমি সাধারণ মানুষ – আমি আল্লাহর সাথে সম্পর্ক চাই – তা’আল্লুক মা’আল্লাহ।
এইজন্য আমরা সাধারণ ইসলাম ভালোবাসা মানুষরা মুসলিম পরিচয় প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে টাকা দিই।
যারাই টাকা নেয় তাদের সবাইকে জবাব দিতে হয়। ডোনেশন মনিটরিং এন্ড ইভ্যালুয়েশন প্রচলিত আছে প্রত্যেকটা এনজিওতে। ডোনারদের সাথে রেগুলার মিটিং এ কাজের আপডেট দিতে হয়। তাতে দাতা সংস্থাগুলোর এজেন্ডা কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে সেই হিসাবও দিতে হয়।
এটা হুজুরদের জন্যও প্রযোজ্য। আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ কিংবা হাফেজ্জি হুজুর সেবা সংস্থা – সবার টাকা আসে মূলত ক্রাউডসোর্সিং থেকে – যেখানে অনেক মানুষ অল্প অল্প করে টাকা দিচ্ছে বন্যার্তদের খাবার-পানি-আলোর জন্য।
হুজুরদের এনজিও সেটাপ নেই – অপারেশন কস্ট অনেক বেশি হয়ে যাবে তাতে। এখানে প্রায় সবাই ভলান্টিয়ার। তাই দানের টাকা কই গেল এটা দেখানোর জন্য ফেসবুকে ছবি-ভিডিও-লাইভের বিকল্প নেই। এভাবেই হুজুররা তাদের দায়বদ্ধতা পূরণ করেন।
কমন সেন্স বন্ধ না করে রাখলে এই সিম্পল ব্যাপারটা বোঝা খুবই সহজ।
ব্যক্তিগত আমলের হাদিসকে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে আনা উচিত না। যদিও ব্যক্তিগত আমলের ক্ষেত্রেও দেখিয়ে দান করাটা জায়েজ অন্য মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য।
যে আল্লাহকে খুশি করার জন্য করবে সে আল্লাহর কাছে পুরষ্কার পাবে।
যে মানুষকে দেখানোর জন্য করবে সে পাবে না।
কিন্তু দুই দান থেকেই বিপদে যারা আছে তারা উপকৃত হবে।
আমার সবচেয়ে খারাপ লেগেছে যারা উনার স্ট্যাটাসের বিরুদ্ধে কমেন্টে ভ্যালিড আরগুমেন্ট এনেছে তাদের তিনি কুকুরের সাথে এবং তাদের মন্তব্যগুলোকে ঘেউ ঘেউ হিসেবে তুলনা দিয়েছেন যার মধ্যে কুরআনের আয়াতও আছে।
একজন বিতার্কিক এবং বিতর্ক অঙ্গনের দিকপাল হিসেবে কীভাবে তিনি যুক্তিখন্ডন বা রিবাটলকে ঘেউ ঘেউ এবং প্রতিপক্ষকে কুকুর হিসেবে অভিহিত করলেন – এটা আমার কল্পনাতে আসছে না।
I Disapprove of What You Say, But I Will Defend to the Death Your Right to Say It
এটাতো সেকুলার ডিবেট অঙ্গনের টেন কমান্ডমেন্টগুলোর মধ্যে একটা! সেকুলার হিসেবে ফাউন্ডিং ফান্ডামেন্টালসের প্রতি বেঈমানি এই স্ট্যাটাসটা।
আর কুরআনের আয়াতের অবমাননার ব্যাপারটা যে আপনাকে ইসলামের গন্ডির বাইরে নিয়ে যাবে এটা হয়তো আপনি জানেন না।
বলা বাহুল্য আমি ধরে নিচ্ছি আপনি মুসলিম কারণ প্রধানমন্ত্রীর জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করেছেন বলে অতীতে আপনি পাবলিক স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন।
যিনি আল্লাহর কাছে দু’আ করেন বা সপ্তাহে একবার বা বছরে দুইবার নামায পড়েন তিনি কীভাবে কুরআনের আয়াতের অনুবাদ কোট করাকে ঘেউ ঘেউ এর সাথে তুলনা করেন?
একজন হিন্দুরও তো এই ডিসেন্সি থাকার কথা যে একটা ধর্মগ্রন্থকে এভাবে অবমাননা করা যায় না।
আপনি বলেছেন – আপনার স্ট্যাটাসের কোথায় ‘ইসলামের’ কথা বলেছেন?
সরাসরি বলেননি। ইমপ্লিসিটলি বলেছেন। এমন অনেক ইমপ্লাইড মিনিং ওয়ালা স্ট্যাটাসে আপনার টাইম লাইন ভর্তি যাতে সরকার বিরোধী কথাগুলোকে ‘সরকার বিরোধী’ হিসেবে প্রমাণ করা না যায়।
কিন্তু সরকার আর আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা তো এক নন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বিচার করবেন অন্তরের, নিয়তের। তিনি তো জানেন কোন কথাটা আপনি কেন লিখেছেন।
আর আমরা আপনার বিরুদ্ধে মামলা করার জন্যও বসিনি। একজন মুসলিম হিসেবে আরেকজন ‘মুসলিম হিসবে পরিচয়দানকারীর’ কল্যাণ চেয়েই এই লেখাটা লেখা।
তুষার ভাই, এই দেশের শিক্ষিত মানুষের মন জয় করার যুদ্ধে আপনারা হেরে যাচ্ছেন। বন্যা-দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে ‘ততটা-শিক্ষিত-নয়’ মানুষদের মনটাও মুসলিমরা জয় করে নিচ্ছে।
বাকি থাকল আখিরাত। যেটা আসল। যেটা অনন্ত-অক্ষয়।
সেটাও হারাবেন?
আল্লাহ আপনাদের হিদায়াত দিন তুষার ভাই।
দাড়ি রেখে টুপি পরে পরের বছরের বন্যায় দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর তাওফিক দেন যেন এই দু’আ করি।
– Md Sharif Abu Hayat