নির্বাচিত ফেসবুক স্ট্যাটাস

আল্লাহর ফয়সালাকে মেনে নিতে পারার স্বীকারোক্তি

রোদের প্রখরতা বাড়লে এবং তীব্র খরায় মাঠ ঘাট পুড়ে খাক হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যখন জনজীবন পর্যদুস্ত হয়, তখন মুসলমানরা জামাতবদ্ধ হয়ে সালাত পড়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে।

বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়। আমরা তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে কতোকিছুর জন্যেই দোয়া করি। আমাদের সব দোয়া কি জায়নামায থেকে উঠার আগে আগেই কবুল হয়ে যায়? যায় তো না। তাই বলে কি আমরা ধরে নিতে পারি যে আমাদের দোয়া ব্যর্থ বা আল্লাহ আমাদের দোয়া শোনেননি বা শোনেন না?

না, বিষয়টা আসলে সেরকম নয়।

ইউসুফ আলাইহিস সালামকে যখন তাঁর ভাইয়েরা চক্রান্ত করে কূপে ফেলে দিয়ে আসলো, এবং ‘ইউসুফকে নেকড়ে খেয়ে ফেলেছে’—এরকম একটা মিথ্যা সংবাদ যখন তারা তাদের পিতা ইয়াকুব আলাইহিস সালামের কাছে নিয়ে আসলো, তখন ইয়াকুব আলাইহিস সালাম দোয়া করে আল্লাহর কাছে কী চেয়েছিলেন? তিনি চেয়েছিলেন সবরুন জামিল তথা সুন্দরতম ধৈর্য।

সন্তান হারানোর মতো কঠিন বিপদে নিপিতিত হয়ে তিনি আল্লাহর কাছে ধৈর্য ধারণের তাওফিক চেয়েছেন। কিন্তু, তাই বলে কি নবি ইয়াকুব আলাইহিস সালামের মনের কোথাও ইউসুফকে ফিরে পাওয়ার সুতীব্র বাসনা ছিলো না? অবশ্যই ছিলো। তিনি ইউসুফকে ফিরে পেতে চাচ্ছিলেন খুব করে, কিন্তু সেটা তাঁর নিজের পছন্দনীয় সময় আর পদ্ধতিতে নয়, বরং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নির্ধারিত আর পছন্দনীয় সময়ে।

আল্লাহর সিদ্ধান্তকে ভালোবাসতে গেলে তো তাড়াহুড়ো করা যায় না। ফলে আল্লাহর নবি ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ‘হে রব, আমার ইউসুফকে ফিরিয়ে দিন’ না বলে তিনি বলেছেন— ‘হে রব, আপনি আমাকে সুন্দরভাবে ধৈর্য ধারণের তাওফিক দান করুন’।

মুসলমানরা যখন কোনো বিপদে নিপতিত হয়ে আল্লাহর কাছে হাত উঠায়, তখন সেই হাত উঠানোর মাঝে সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটা ভাস্বর হয়ে উঠে সেটা হলো আল্লাহর ফয়সালাকে মেনে নিতে পারার স্বীকারোক্তি।

আমরা যখন বৃষ্টির জন্যে সম্মিলিত সালাত আদায় করি, আমরা তখন যতোখানি না বৃষ্টি চাই, তারচেয়ে বেশি চাই আল্লাহর অনুগ্রহ। সেই অনুগ্রহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কয়েকভাবে আমাদের ওপর নাযিল করতে পারেন।

হয়তো তিনি সরাসরি বৃষ্টি নামিয়ে আমাদের দোয়া কবুল করতে পারেন। হয়তো তিনি বৃষ্টি দিবেন না, কিন্তু এই অসহনীয় গরম সহ্য করার মতো আমাদেরকে শারীরিক আর মানসিক শক্তি দিবেন। অথবা—এই অসহনীয় গরমে যে সকল বিপদ আমাদের ওপর আপতিত হতে যাচ্ছিলো, বৃষ্টি না দিয়েও তিনি সেই বিপদগুলো থেকে আমাদের বাঁচিয়ে নিতে পারেন, যেমন—খরা, দূর্যোগ, বিভিন্ন রোগ বালাই ইত্যাদি।

তারচেয়েও বড় কথা, এই অবস্থাটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে—আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতীত আমরা কতো অসহায় আর দূর্বল৷ আল্লাহর দয়া, রহমত আর অনুগ্রহ না পেলে আমরা যে কোনোভাবেই টিকতে পারবো না দুনিয়ায়, এরকম অবস্থাগুলো আমাদের মনে বিশ্বাসটাকে পোক্ত করে৷ তাই আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে নত হওয়ার মাধ্যমে আমাদের ঈমানকে চাঙা করতে পারি৷

মুমিন জীবন হলো লাভের জীবন। আল্লাহর অনুগ্রহ যেমন তাকে আল্লাহর দিকে ধাবিত করায়, আল্লাহর অনুগ্রহের অনুপস্থিতিও তাকে আল্লাহর দিকে টেনে নিয়ে যেতে সহায়ক হয়।

মন্তব্য করুন

Back to top button