পরিবার ও দাম্পত্য

বাবা মা

“তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সাথে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা বল। আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ে ডানা নত করে দাও এবং বল, ‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন। তোমাদের অন্তরে যা আছে, সে সম্পর্কে তোমাদের রবই অধিক জ্ঞাত। যদি তোমরা নেককার হও তবে তিনি তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের প্রতি অধিক ক্ষমাশীল।“ [১৭ঃ২৩-২৫]

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যাবস্থা। যেখানে সব ব্যপারেই দিক নির্দেশনা রয়েছে। যেখানে একজন মানুষের জীবনের প্রতিটি দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে সজাগ করা হয়েছে। বিশেষত পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্বের ব্যপারে। পিতা-মাতাকে ভালোবাসা ও সম্মান করা সম্পর্কে অনেক আয়াত, হাদীস ও সালাফদের বাণী আমাদের জানা। কিন্তু এ জ্ঞান আমরা কতটুকু কাজে লাগাতে পারি?

আল্লাহ্‌ বলেন,
“… আমার ও তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় করো …”[৩১:১৪]
তিনি আরো বলেন,
“… এবং বল, ‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন।”[১৭:২৪]

রাসুল(সাঃ) বলেন, “তিন ধরণে দো’আ আল্লাহ্‌ কখনো ফিড়িয়ে দেন না। পিতা-মাতার দো’আ তার সন্তান সম্পর্কে। রোজাদারের দো’আ এবং মুসাফিরের দো’আ।”[জামে’ আত-তিরমিজি]

সালাফ, মুজাহীদ বলেন, “যদি আপনার পিতা-মাতা বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয় এবং তাদের এমন অবস্থা হয় যে তারা বিছায় মল-মূত্র ত্যাগ করছে তবুও তাদের সাথে বিরক্ত হবেন না এবং ‘উফ’ শব্দটিও বলবেন না। বরং, যত্ন করে সব পরিষ্কার করে দিন। যেমনটি তারা আপনার ছোটবেলায় কোনোরকম বিরক্তি ছাড়াই এসব করতো।“

কেয়ামতের আলামতগুলোর একটি হলো “যখন দাসি তার মনিবকে প্রসব করবে।” এখনের ঘরগুলোর দিকে তাকালে বুঝা যায় কথাটার গুরুত্ব।

…..…..
“উফ্‌!! আম্মু! এতো চিল্লাও কেন তুমি!!”
“সব ব্যপারে আব্বু বেশি বাড়াবাড়ি করে।উফ্‌!”

আমাদের প্রতিদিনের ব্যবহৃত খুব সাধারণ কিছু বাক্য। বিরক্তি প্রকাশের জন্য ‘উফ’ শব্দটি খুব ছোট একটি শব্দ।

আল-হোসাইন বীন ‘আলি(রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুল(সাঃ) বলছেন, “বিরক্তি প্রকাশের জন্য ‘উফ’ শব্দ থেকে ছোট আর কোনো শব্দ নেই। আল্লাহ্‌ এটাকেও নিষিদ্ধ করেছেন।”

“…তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না…” [১৭:২৩]
এ আয়াত সম্পর্কে ইবনে ‘আব্বাস(রাঃ) বলেন, “ ‘উফ’ এমন একটি শব্দ যার দ্বারা বিরক্তি প্রকাশ করা হয়(পিতা-মাতা কিছু করতে বলেছেন যা আপনার পছন্দ না, অথবা তাদের শরীর থেকে কোনো গন্ধ পাচ্ছেন ইত্যাদি) এই আয়াতে শুধু ‘উফ’ বলতেই নিষেধ করা হয়েছে।”

আপনার বয়স যতই হোকনা কেন, সামান্য ‘উফ্‌’ শব্দটাও বলার অনুমতি আপনাকে দেয়া হয়নি। সামান্য ‘উফ্‌’ ও না।

মুজাহীদ বলেন, “যদি আপনার পিতা-মাতা বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয় এবং তাদের এমন অবস্থা হয় যে তারা বিছানায় মল-মূত্র ত্যাগ করছে তবুও তাদের সাথে বিরক্ত হবেন না এবং ‘উফ’ শব্দটিও বলবেন না। বরং, যত্ন করে সব পরিষ্কার করে দিন। যেমনটি তারা কোনো রকম বিরক্তি ছাড়াই আপনার ছোটবেলায় এসব করতো।“

“…আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ে ডানা নত করে দাও… “[১৭:২৪]

এ আয়াত সম্পর্কে আরওাহ্‌ বীন আয-জুবায়ের বলেন, “এর মানে হলো বাবা মায়ের কোনো কথাকেই অবহেলা করা যাবে না।”

আল্লাহ্‌ বলেন, “…এবং বল ‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন।‘…”[১৭:২৪]

এ আয়াতে আল্লাহ্‌ ‘লালন-পালন’ শব্দটাকে বিশেষভাবে বলেছেন। আমাদের বাবা মা আমাদের বড় করতে কতটা ত্যাগ করেছেন তা যেন আমরা উপলব্ধি করতে পারি।

“আর স্মরণ করো। যখন আমি বনী ইসরাঈলের অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম যে, তোমরা আল্লাহ্‌ ছাড়া কারো ইবাদত করবে না এবং সদাচার করবে পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও মিসকীন্দের সাথে। আর মানুষকে উত্তম কথা বল, সালাত কায়েম কর এবং যাকাত প্রদান কর… ”[০২:৮৩]

দেখুন, এই আয়াতে আল্লাহ্‌র ইবাদত করতে বলার পরই বলা হয়েছে পিতা-মাতার সাথে সদাচার করার কথা। তারপর অন্য সব। সদাচারের গুরুত্বটা বোঝা যাচ্ছে?

এই আয়াত সম্পর্কে ইবনে কাসীর বলেন, “আল্লাহ্‌ বনী ইসরাঈলদের শুধু মাত্র তাঁর ইবাদত করতে বলেছে। তাঁর সাথে কিছুকে শরিক করতে নিষেধ করেছেন। এই নির্দেশ তাঁর প্রতিটি সৃষ্ট জীবের প্রতি। এটা একমাত্র আল্লাহ্‌র অধিকার যে শুধুমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করা হবে না। তারপর আসে সৃষ্টির অধিকার। যার মধ্যে পিতা-মাতার অধিকার প্রাধান্য পেয়েছে সবার আগে। কেননা, আল্লাহ্‌ বলেন, ‘… আমার ও তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় করো …’[৩১:১৪]

আল্লাহ্‌ ইয়াহিয়া(আঃ) এর প্রশংসা করেছেন করণ তিনি ছিলেন পিতা-মাতার প্রতি সদাচারী।
“আর সে ছিলো তাঁর পিতা-মাতার সাথে সদাচারী, আর ছিলো না অহংকারী, অবাধ্য।” [১৯:১৪]

অবশ্যই, প্রয়োজনের সময় বাধ্য থাকাটা একটা বড় ব্যপার। যখন তাদের আপনাকে দরকার হবে তখন যদি আপনার মেজাজ মর্জি তিরিক্ষে থাকে তাহলে তো আর হয় না! একজন মানুষ বৃদ্ধ বয়সেই সবচে’ অসহায় হয়ে পরে। দুর্বল হয়ে পরে। এক কথা হাজার বললেও বুঝে না। না বুঝে কথা বাড়ায়। এই সময়টা খুব বৈরি সময় তাদের জন্য। নিজের আত্মসম্মানবোধ থাকে তুঙে আবার নিজের সাথে প্রতারণা করা মস্তিষ্ককেও মেনে নিতে পারেন না। নিজের সর্বস্ব দিয়ে যাদের লালন করেছেন তাদের সামান্য কথাও তখন বুকের গভীরে গিয়ে লাগে।

লাগাটাই কি স্বাভাবিক না? এই মানুষটাই কি সেই মানুষ না, যে আপনার সব অযোক্তিক আবদার পুরণ করেছিলো? এই মানুষটাই সেই কি মানুষ না, যে আপনার সব অযোক্তিক প্রশ্নের উত্তর দিতো! এখন আপনি পারছেন না সমান্য ধৈর্য ধরতে, তাদের সাথে সামান্য হেসে কথা বলতে।

………………

বাবা মা
নুসরাত জাহান মুন

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button