পরিবার ও দাম্পত্য

মায়ের ক্যারিয়ার বনাম সন্তান

সংসার শুরু করতে চাওয়ার অর্থ হলো, আপনি জানেন এটার সাথে সাথে কিছু দায়িত্বও আসবে।

মনে করেন, একজন পুরুষ বিয়ে করল, কিন্তু স্ত্রী’র ভরণপোষণ নিতে একেবারেই আগ্রহী না। তিনি স্ত্রী কে কেবল কবিতা শুনিয়েই খুশি রাখতে চান। স্ত্রী প্রসবযন্ত্রণায় কাতর। তিনি স্ত্রীর পাশে না থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন। স্ত্রীর হাত ধরে থাকার বদলে বরং স্ত্রীর নামে যে বইটি লিখছেন, ওটা লেখা শেষ করতে চান। এভাবেই তিনি স্ত্রীকে ভালোবাসার এবং ভালো রাখার এক নতুন ইতিহাস রচনা করতে চান!

এগুলো শুনলে আপনি কী বলবেন? ননসেন্স? আরো খারাপ কিছুও হয়ত বলবেন।

কিন্তু বাচ্চার ব্যাপারে আপনার চিন্তাটা উল্টে যাচ্ছে। বাচ্চা নেয়ার আগেই চিন্তা করা উচিত ছিল, আপনি তাকে সময় দিতে পারবেন কিনা, তাকে ন্যূনতম দেখাশোনা করতে পারবেন কিনা।

কিন্তু না। আপনি সন্তানের মা হবেন। এরপর আপনার মনে পড়ে যাবে, আহারে আপনার কত স্বপ্ন ছিল! আপনি নিজের ক্যারিয়ারের পিছে সময় দিতে গিয়ে সন্তানকে রেখে যাবেন নানীর কাছে, দাদীর কাছে; ন্যানি, বুয়া কিংবা ডে কেয়ারে! আপনার বাচ্চা কাঁদবে, আপনাকে মিস করবে, কষ্ট পাবে। কিন্তু না বাচ্চাকে শেখাতে হবে মায়ের চাকরি করা বড় দরকার! মায়ের স্বপ্নপূরণ করতে হবে। মানুষের বিজনেসকে বড় করে নিজের গলায় কয়েকটা প্রোমশনের সার্টিফিকেট না ঝুলাতে পারলে নিজেকে ব্যর্থ ব্যর্থ মনে হয়, সো তুমি বাবু নিজের ডাইপারটা সম্ভব হলে নিজেই বদলে নাও।

বাচ্চার একদম প্রথম কিছু বছর মা কে দরকার। মা-ই তার দুনিয়া। খাওয়ানো, শোওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, ইমোশোনাল বন্ডিং, সিকিউরিটি, সব মায়ের উপর ডিপেন্ডেন্ট। এরপর আস্তে আস্তে প্রয়োজনটা কমতে থাকে। ওরা নিজেই চলতে শিখে যায়। একসময় বাবা-মা কে আর সেভাবে দরকারও হয়তো হয় না।

বাট মা বাচ্চা দিয়েই খালাস। তাকে চাকরি ধরে রাখতে হবে। জান লাগিয়ে খেটে অন্যের বিজনেস দাঁড় করাতে হবে। আর নিজের বাচ্চাটা, উপস! ওটা কাউকে দিয়ে দেখিয়ে নিলেই চলে।

এইরকম আপসাইড ডাউন টোটকা কখনই ইসলাম দেয় নি। সাহাবীরা নিজেদের সন্তান নিজেরাই লালন-পালন করেছেন। ডে কেয়ারে রেখে এসে বিজনেস আর চাকরি করেন নাই। এক ঘণ্টা কোয়ালিটি টাইম দিয়ে নিজের দায়িত্ব খালাস মনে করেন নাই। এইগুলা স্বপ্নপূরণের নামে ফেমিনিজম শুরু করেছে আল্লাহবিহীন সেক্যুলার সমাজ। প্রথমে মেয়েদেরকে স্বামী-যদি-না-দেখে সেই জুজুর ভয় দেখিয়ে মাঠে নামিয়েছে। এখন একটা মায়ের যেন তার ছোট বাচ্চা ফেলে কাজে আসতে দ্বিধা না হয়, অপরাধবোধ না থাকে, তাই বাইরে কাজ করাটাকেও গ্লোরিফাই করে যাচ্ছে সমানে। মানুষের বিজনেসে খাটা কবে থেকে নিজের অসহায় ছোট বাচ্চাটাকে দেখাশোনা করার চেয়েও বেশি জরুরি হয়ে গেল? আর অবধারিত ভাবে নানী-দাদী বাচ্চা পেলে দিবে, এইটা এক্সপেক্ট করা কেমন করে সম্ভব! অ্যাবসার্ড একটা জেনারেশন!

এই যুগে তাও নানী-দাদীরা বাচ্চা পেলে দিচ্ছেন, আলহামদুলিল্লাহ, তাই বাচ্চাটার কেয়ার হচ্ছে! কয়দিন পর এখনকার জেনারেশনরা যখন নানী-দাদী হবেন, তখন তাদের নিজেদেরই প্রচুর স্বপ্ন, প্রচুর ক্যারিয়ার থাকবে, সো ডে-কেয়ার বা টাকার বিনিময়ে বাচ্চা পালানো ছাড়া আর কোনো গতি নেই, যেটা এখন ওয়েস্টে আমরা অলরেডি দেখতে পাচ্ছি। বাচ্চা অসুস্থ থাকুক, তবু দুইটা অ্যান্টিবায়োটিক সহ বাচ্চাকে ডে-কেয়ারে রেখে আসা হবে। এইটা মনে রেখেন, মা বাচ্চাকে যেভাবে কেয়ার করতে পারে, ডে কেয়ারের স্টাফ সেটা কখনই করবে না। প্লেইন ট্রুথ।

প্রয়োজন থাকলে, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মেয়েদেরকে বাইরে কাজ করতে কেউ বাধা দেয় না, শরীয়াহ মানুষের জীবনকে সহজ করে। কিন্তু হাই ক্লাস, মিডল ক্লাস সোসাইটির নারীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রয়োজন না, বরং শখ বা ক্যারিয়ার বানাতেই বাইরে বের হয়, দিস ইজ নট রকেট সায়েন্স। নিজের স্বপ্নপূরণের নামে বাচ্চাটার উপর হয় সমানে জুলুম। আর পুরা সমাজ চুপ। বাহ! কত ভালো মা, দুইদিক সামলে নিচ্ছে।

এই বাহবা আমরা চাই না। বাবা-মায়ের উপর প্রাইমারি রোল সন্তানকে বড় করবে। হ্যাঁ, সন্তান কেমন হবে আমরা কেউই জানিনা। নবীদের সন্তান কাফের ছিল, গুনাহগার ছিল, এমন দৃষ্টান্তও আছে। তবে পৃথিবীর জেনারেল রুল হলো, আপনি যেখানে সময় দেবেন, শ্রম দেবেন, মেধা দেবেন, সেখানে উন্নতি হবে ইনশাআল্লাহ। আপনি যদি আপনার সবচেয়ে দামি সময়টুকু জাস্ট নিজের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য দেন, ডেফিনিটলি দ্যাটস ইওর চয়েস। বাট দরকার ছাড়াই, জাস্ট নিজের স্বপ্নপূরণের জন্য ছোট একটা বাচ্চাকে মানুষের হাতে ছেড়ে দেয়া, এটাকে অন্তত ইসলামের নামে জাস্টিফাই করবেন না। মায়ের দায়িত্ব না নিয়ে মানুষকে দিয়ে বাচ্চা পালানোর মতো হাস্যকর, উদ্ভট ভালোবাসা, আর ভালো রাখার সংজ্ঞা সেক্যুলার ধর্মে থাকতে পারে; ইসলামে নাই।

– Anika Tuba

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Back to top button