কেলিকুঞ্চিকা
শ্যালিকা। শালী মানে বউয়ের ছোট বোন। আমাদের সমাজে এ হল হাসি-রহস্যের পাত্রী। যেমন ‘ভাবী’কে সমাজে ‘ভাবের-ই’ গণ্য করা হয়, তেমনি শালীও।
‘দেবর’ (দ্বিতীয় বর)-এর বিপরীত হল মহিলার নিজের বাড়িতে তার দোলাভাই বা বোনাই। শালী হয় স্ত্রীর বিকল্প অথবা দ্বিতীয় স্ত্রী বা ‘দেবউ’। তার এক নাম ‘কেলিকুঞ্চিকা’। কেলি মানে প্রেমখেলা। আর কুঞ্চিকা মানে চাবি। পরিবেশে শালী হল প্রেমকেলির চাবি। বউ তো আছেই, শালী ‘ফাউ’ আর কী? এ জন্যই অনেকে বলে থাকে, ‘শালী, আধী ঘর-ওয়ালী!’
‘এক পায়ে নুপুর তার অন্য পা খালি,
এক পাশে বউ আমার অন্য পাশে শালী।’
এ জন্যই এমন পরিবেশে প্রবাদ প্রচলিত আছে,
‘বাগানে কখনো ফোটে না ফুল যদি না থাকে মালী,
বিয়ের আসরে বলো না কবুল যদি না থাকে শালী।’
প্রবাদটিকে এভাবেও বলা যায়,
‘বাগানে কখনো ফোটে না ফুল যদি না থাকে মালী,
বিয়ের বাসরে জমে না মজা যদি না থাকে শালী।’
আরো বলা হয়,
‘ওরে আমার পাত্রী খোঁজ তোরা,
শালীও যেন থাকে এক জোড়া।
এ জন্যই শালীর সাথে দোলামিঞার ভাব জমে ভালো। এ জন্যই অনেকের জীবনে,
‘বাপের বেটি মুড়কি পায় না মোন্ডা শালীর পাতে,
সহোদরের মুখ দেখে না সখ্য শালার সাথে!’
এ বলে, ‘ভাশুর-শ্বশুর দেওরা ভালো মিনসে কপাল-পোড়া রে।’ আর ও বলে, ‘গিন্নির চেয়ে শালী ভালো।’ শালী-বুনাইয়ের ভাব ভালোভাবে জমে ওঠে। একান্তে ভ্রমণে যায়। বউয়ের অনুপস্থিতিতে শালী ঘরের কাজ সামলায়। হাসপাতালে থাকলে দোলাভাইয়ের খিদমত করে ইত্যাদি। তাতে দোলাভাই খোশ, শালীরাও খোশ থাকে। তাই তারা বলে,
‘জামাইবাবু কমলা লেবু একলা খেয়ো না,
তোমার দুটো শালী আছে ভুলে যেয়ো না।’
‘শ্বশুর-বাড়ি যাব আমি ইলিশ নিয়া হাতে,
লম্বা লম্বা মাছের পেটি পড়বে আমার পাতে।
শাশুড়ী-মা করবে বাতাস হাসবে খিলিখিলি,
পকেট ফাঁকা করবে শালা চিমটি দেবে শালী।’
অনেক সময় বোন (দিদি) ও উপকৃত হয়ে গর্বিতা হয়। কিন্তু অনেক সময় সে জানতে-অজান্তে নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মারে। নিজের মাথায় বেল ভেঙ্গে বোনকে খেতে দেয়।
অনেক সময় বোনে-বোনে ঝগড়া বাধে, হিংসার আগুন জ্বলে ওঠে। আর তখন চোখের কাজল ‘শালী গালের কালী’ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে চালাক স্ত্রী বোনকে স্বামীর খিদমতে লাগায় না, দাসী রাখে না। পর রেখে ঘর নষ্ট করে না; সে গড়বড়কে ভয় করে।
বলা বাহুল্য, পুরুষের উচিত, একই বাড়িতে চাচাতো বোন, শ্বশুর বাড়িতে বেপর্দা শালী-শালাজ প্রভৃতিকে আপন বোনের নজরেই দেখা। নচেৎ অন্য নজর তাকে সজোরে আঘাত ক’রে মহা বিপদে ফেলবে।
পরকীয়াতে জড়িত হলে দ্বীন-দুনিয়ার সর্বনাশ হবে। যেমন ব্যভিচার হবে স্ত্রী থাকতে আপন শালীর প্রেম অনির্বাণ রাখতে গিয়ে তাকেও বউ করে ঘরে আনলে।
নিঃসন্দেহে আমাদের সমাজে অধিক শৈথিল্য পরিলক্ষিত হয় দেওর-ভাবী ও শালী-বুনাই-এর ক্ষেত্রে। অথচ এদের মাঝেই বিপর্যয় ঘটে অধিক। কারণ ‘পর চোরকে পার আছে, ঘর চোরকে পার নাই।’ তাই তো আল্লাহর নবী ﷺ মহিলাদের পক্ষে তাদের দেওরকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করেছেন।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৩১০২নং)
অতএব ওহে দেবর-ভাবী, ওহে শালী-বুনাই, আর ওহে গৃহস্বামী! তোমরা কি জাগ্রত ও সচেতন হবে না?
মহানবী ﷺ বলেছেন, “মাহরাম ছাড়া কোন পুরুষ যেন কোন মহিলার সাথে নির্জনতা অবলম্বন না করে এবং মাহরাম ছাড়া যেন কোন মহিলা একাকিনী সফর না করে।” এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার স্ত্রী (একাকিনী) হজ্জ করতে বের হয়েছে। আর আমি অমুক অমুক যুদ্ধের জন্য নাম লিখিয়ে ফেলেছি। (এখন আমি কী করতে পারি?)’ তিনি বললেন, “তুমি ফিরে যাও এবং তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ কর।” (বুখারী ৩০০৬, মুসলিম ১৩৪১নং)
পরিশেষে মনে রাখবেন, ‘কারো কাছে শালী হয় “নরকের রানী”, আবার কারো কাছে শালী হয় How Funny!!
সঞ্চয়নে: আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী