ছাহাবী চরিত

আস’য়াদ ইবন যুরারা (রা)

আবূ উমামা আস’য়াদ, যিনি আস’য়াদ আল-খায়র নামেও পরিচিত, মদীনার খাযরাজ গোত্রের নাজ্জার শাখার সন্তান। তাঁর পিতা যুরারা ইবন ’আদাস। (আল-ইসাবা-১/৩৪; উসুদুল গাবা-১/৭১) তাঁর জন্মের সন-তারিখ সম্পর্কে কিছু জানা যায় না।

হযরত রাসূলে কারীমের সা. নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে সমগ্র আরব উপদ্বীপ কুফর ও গুমরাহীর অন্ধকারে আচ্ছন্ন ছিল। তবে এর মধ্যেও কিছু লোক বিশুদ্ধ স্বভাব বা ফিতরাতের দাবী অনুসারে তাওহীদ বা একত্ববাদের প্রবক্তা ছিলেন। আস’য়াদ ইবন ইবন যুরারা তাঁদেরই একজন। (তাবাকাত- ১/১৪৬)
ইসলাম-পূর্ব যুগেও ইয়াসরিবের (মদীনা) লোকেরা নিজেদের ঝগড়া বিবাদে কুরাইশদের সমর্থন লাভ এবং তা ফায়সালার উদ্দেশ্যে মক্কায় যাতায়াত করতো। তাছাড়া হজ্জ ও ’উমরা আদায়ের জন্যও তারা সেখানে যেত। অতঃপর মক্কায় ইসলামের অভ্যূদয় ঘটলো। এরমধ্যে হযরত রাসূলে কারীম সা. নবুওয়াতী জীবনের বেশ ক’টি বছর অতিবাহিতও করেছেন। মক্কার লোকদের ইসলামের দাওয়াত দানের সাথে সাথে বিভিন্ন মেলা ও হাটে-বাজারে উপস্থিত হয়ে ব্যাপকভাবে তিনি মানুষকে সত্যের দা’ওয়াত দিচ্ছেন। বিভিন্ন উদ্দেশ্যে মক্কায় আগত বহিরাগত লোকদের নিকটও গোপনে কুরআনের বাণী পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও পালন করে চলেছেন। ইবনুল আসীর ওয়াকিদীর সূত্রে বলেনঃ এমনি এক সময়ে আস’য়াদ ইবন যুরারা ও জাকওয়ান ইবন ’আবদিল কায়স নিজেদের একটি ঝগড়া নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে মক্কার কুরাইশ নেতা ’উতবা ইবন রাবী’য়ার নিকট যান। এই ’উতবার নিকট তাঁরা রাসূলুল্লাহর সা. সাথে দেখা করেন। হযরত রাসূলে কারীম সা. তাঁদের সামনে ইসলামের দা’ওয়াত পেশ করেন এবং পবিত্র কুরআন থেকে কিছু তিলা’ওয়াত করে শোনান। এই সাক্ষাতেই তাঁরা দু’জন ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহর সা. নিকট থেকে ’উতবার কাছে আর না গিয়ে সোজা মদীনায় ফিরে যান। এভাবে তাঁরা দু’জনই হলেন মদনিায় আগমণকারী প্রথম মুসলমান। এটা নবুওয়াতের দশম বছরে ’আকাবার প্রথম বাই’য়াতের পূর্বের ঘটনা। (উসুদুল গাবা- ১/৭১, আল-ইসাবা- ১/৩৪, হায়াতুস সাহাবা- ১/৮৬)

অবশ্য ইবন ইসহাকের বরাতে ইবনুল আসীর বলেছেন, আস’য়াদ ইবন যুরারা সেই লোকগুলির একজন যাঁরা নবুওয়াতের দশম বছরে অনুষ্ঠিত ’আকাবার ১ম বাইয়াতে শরিক হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। তারপর তিনি নবুওয়াতের একাদশ ও দ্বাদশ বছরে অনুষ্ঠিত ২য় ও ৩য় বাইয়াতেও উপস্থিত ছিলেন। তাই তিনি ছিলেন একজন পূর্ণ ’আকাবী ব্যক্তি। (উসুদুল গাবা- ১/৭১)

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, মদীনার প্রথম মুসলমান কে- এ বিষয়ে সীরাত বিশেষজ্ঞদের বিস্তর মতবিরোধ আছে। ইবন হিশাম বলেছেন, সুওয়াইদ ইবন সামিত হজ্জ অথবা ’উমরার উদ্দেশ্যে মক্কায় যান এবং রাসূলুল্লাহর সা. সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। ইয়াসরিববাসীরা তাঁকে ‘কামিল’ উপাধি দান করে। বীরত্ব, সাহসিকতা, কাব্য প্রতিভা, বংশ মর্যাদা, সম্মান-প্রতিপত্তি, মোটকথা সর্বগুণে গুণান্বিত ব্যক্তিকে সে যুগের আরবরা ‘কামিল’ উপাধি দান করতো। মদীনাবাসীদের মধ্যে রাসূলুল্লাহর সা. দাও’য়াত লাভ ও কুরআন শোনার সৌভাগ্য সর্বপ্রথম তাঁরই হয়। ইবন হিশাম বলেন, এ দাওয়তের পর তিনি ইসলাম থেকে দূরে ছিলেন না। (সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৪২৬-২৭) কিন্তু এর অব্যবহিত পরেই তিনি নিহত হন। যাই হোক সুওয়াইদ সর্ব প্রথম মুসলমান হলেও মদীনায় ফিরে ইসলামী দাওয়াতের কাজ শুরু করার সুযোগ পাননি। সম্ভবতঃ আস’য়াদ ও জাকওয়ানই প্রথম দুই ব্যক্তি যাঁরা সর্বপ্রথম মদীনায় ইসলামের তাবলীগের কাজ শুরু করেন।

মদীনায় পৌঁছে সর্বপ্রথম তিনি আবুল হায়সামের সাথে দেখা করেন এবং তাঁর কাছে নিজের নতুন বিশ্বাসের কথা ব্যক্ত করেন। আবুল হায়সাম সাথে সাথে বলে ওঠেন, ‘‘তোমার সাথে আমিও তাঁর রিসালাতের প্রতি ঈমান আনলাম।’’ (তাবাকাত- ১/১৪৬) অনেকে এই আবুল হায়াসামকে মদীনার প্রথম মুসলমান বলে মনে করেছেন।

নবুওয়াতের দশম বছরে প্রতিবছরের মত ইয়াসরিববাসীরা হজ্জ উপলক্ষে মক্কায় আসে। তাদের মধ্য থেকে ছয় ব্যক্তি হজ্জ শেষে গোপনে মিনার আকা’বা নামক স্থানে রাসূলুল্লাহর সা. সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর হাতে বাইয়াত করেন। এ ছয়জনের মধ্যে আস’য়াদও ছিলেন। পরের বছর হজ্জের মওসুমে ইয়াসরিববাসীরা আবার মক্কায় আসে। তাদের মধ্য থেকে বারোজন লোক গোপনে, আকাবায়ে রাসূলুল্লাহর সা. সাথে মিলিত হয়ে বাই’য়াত করেন। এই বারো জনের মধ্যে আসয়াদও ছিলেন। (সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৪২৯, ৪৩১, ৪৩৩, ৪৩৫, ৪৩৬, ৪৩৭) এই ’আকাবার পর মদীনায় যখন ইসলামের তাবলীগ ও দাওয়াতের সম্ভাবনা অনেকটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তখন তাঁরা রাসূলুল্লাহর সা. নিকট একজন শিক্ষক দাবী করেন, যিনি তাদেরকে কুরআন ও দ্বীন শিক্ষা দেবেন। তাঁদের দাবী অনুসারে রাসূল সা. মুস’য়াব ইবন ’উমাইরকে রা. ইয়াসরিবে দা’য়ী বা আহবায়ক হিসাবে পাঠালেন। মুসয়াবের মদীনায় যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সেখানে আসয়াদ ইবন যুরারা নামাযের ইমাম ছিলেন। তারপর মুস’য়াব ইমাম হন। তবে অনেকের মতে সালেম মাওলা আবী হুজাইফার মদীনা পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত আস’য়াদই সেখানে ইমামতির দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। মুস’য়াব শুধুমাত্র তাদের কুরআনের তা’লীম দিতেন। মদীনায় তাঁরা বাইতুল মাকদাসের দিকে মুখ করে নামায আদায় করতেন। (আনসাবুল আশরাফ- ১/২৩৯, ২৬৬) আস’য়াদ হযরত মুস’য়াবকে মদীনায় নিজ গৃহে অতিথির মর্যাদায় আশ্রয় দেন। (তাবাকাত- ৩/৪৮৩)

হযরত মুস’য়াবের মদীনায় যাওয়ার পর আস’য়াদ ইবন যুরারা তাঁকে সংগে করে ব্যাপকভাবে দা’ওয়াতী তৎপরতা শুরু করেন। তাঁরা মদীনার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগতভাবে মানুষকে ইসলামের দা’ওয়াত দিতেন। ইবন ইসহাক বলেনঃ একদিন আস’য়াদ ইবন যুরারা মুস’য়াব ইবন ’উমাইরকে সাথে করে বনী ’আবদিল আশহাল ও বনী যাফারের দিকে বের হলেন। তাঁরা বনী যাফারের একটি বাগিচায় প্রবেশ করে ‘মা’রাক’ নামক একটি কূপের ধারে প্রাচীরের ওপর বসলেন। তাঁদের চারপাশে লোকজন জড় হল। সা’দ ইবন মু’য়াজ ও উসাইদ ইবন হুদাইর ছিলৈন বনী ’আবদিল আশহালের নেতা। তখনও তারা পৌত্তলিক ছিলেন। সা’দ ছিলেন আস’য়াদের খালাতো ভাই। আস’য়াদ ও মুস’য়াবের আগমণের কথা জানতে পেয়ে সা’দ ছিলেন আস’য়াদের খালাতো ভাই। আস’য়াদ ও মুস’য়াবের আগমণের কথা জানতে পেয়ে সা’দ উসাইদকে বললেনঃ ‘উসাইদ, তুমি এ দু’ব্যক্তির কাছে যাওতো। তারা আমাদের বাড়ীর উপর এসে আমাদের দুর্বল লোকগুলিকে বোকা বানিয়ে যাচ্ছে। তুমি তাদেরকে নিষেধ করে এস। যদি আমার খালাতো ভাই আস’য়াদ না থাকতো তাহলে তোমার প্রয়োজন হতো না। আমিই তাদের তাড়িয়ে দিতাম।’ উসাইদ বল্লম হাতে নিয়ে তাঁদের দিকে এগিয়ে গেল। আস’য়াদ তাকে দেখে মুস’য়াবকে বললেন, ‘এ ব্যক্তি তার গোত্রের একজন নেতা, আপনার কাছে এসেছে।’ হযরত মুস’য়াব তার সাথে কথা বললেন। আল্লাহর ইচ্ছায় সেই বৈঠকেই উসাইদ মুসলমান হযে গেলেন। (হায়াতুস সাহাবা- ১/১৮৭/১৯০)

আস’য়াদ ও মুস’য়াবের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মদীনায় ইসলামের এত ব্যাপক প্রসার হল যে , মাত্র এক বছর পর নবুওয়াতের দ্বাদশ বছরে হজ্জের মওসুমে তিহাত্তর মতান্তরে পঁচাত্তর জন নারী-পুরুষের একটি দল আবার মিনার ’আকাবায় গোপনে রাসূলুল্লাহর সা. সাথে মিলিত হয়। এই তৃতীয় তথা সর্বশেষ ’আকাবায় কে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহর সা. হাতে হাত রেখে বাইয়াত বা শপথ করেন সে ব্যাপারে সীরাত বিশেষজ্ঞদের মতভেদ আছে। একটি মতে সেই ভাগ্যবান ব্যক্তিটি আস’য়াদ। (আল-ইসাবা- ১/৩৪, আনসাবুল আশরাফ- ১/২৫৪, উসুদুল গাবা- ১/৭১)

আবদুল্লাহ ইবন আবী বকর থেকে বর্ণিত। বাই’য়াতের পর রাসূল সা. বললেন, ‘তোমরা তোমাদের মধ্য থেকে বারোজন ‘নাকীব’ নির্বাচন কর, যাঁরা হবে ঈসার হাওয়ায়ীদের (সাথী) মত আপন আপন গোত্রের কাফীল বা দায়িত্বশীল।’ আস’য়াদ সায় দিয়ে বললেনঃ ‘হাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ।’ রাসূল সা. বললেনঃ তুমি হবে তোমার গোত্রের ‘নাকীব’। তারপর তিনি অন্য ‘নাকীব’-দের নাম ঘোষণা করেন। (তারীখুল ইসলাম ওয়া তাবাকাতুল মাশাহীর ওযাল আ’লাম- ১/১৮২) এভাবে তিনি হলেন রাসূল সা. মনোনীত বনী নাজ্জারের ‘নাকীব’। তবে ইবন মুন্দাহ ও আবূ নু’ঈমের মতে তিনি ছিলেন বনী সায়িদার ‘নাকীব’। ইবনুল আসীর বলেন, এটা তাঁদের ধারণা মাত্র। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন নিজ গোত্র বনী নাজ্জারের ‘নাকীব’। তাই তিনি যখন মারা যান তখন বনী নাজ্জারের লোকেরা রাসূলুল্লাহর সা. নিকট আবেদন করে- ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আস’য়াদ মারা গেছেন, তিনি ছিলেন আমাদের নাকীব। এখন আপনি অন্য একজন নতুন ‘নাকীব’ নির্বাচন করে দিন। জবাবে রাসূল সা. বললেনঃ তোমরা আমার মাতুল গোত্র। আমিই তোমাদের ‘নাকীব’। এটা ছিল বনী নাজ্জারের জন্য বিরাট মর্যাদা। (উসুদুল গাবা- ১/৭১-৭২) রাসূল সা. তাঁকে শুধু নাকীবই মনোনীত করেননি, বরং ‘নাকীব আল-নুকাবা বা প্রধান দায়িত্বশীল বলেও ঘোষণা দেন। (আনসাবুল আশরাফ- ১/২৫৪) ইবনুল আসীর বলেন, একমাত্র জাবির ইবন আবদিল্লাহ ছাড়া আস’য়াদ ছিলেন এই আকাবীদের মধ্যে সর্বকণিষ্ঠ। (উসুদুল গাবা- ১/৭১, আল-ইসাবা- ১/৩৪)

আকাবার তৃতীয় বাই’য়াতের পর এক বিরাট দায়িত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে তিনি মদীনায় ফিরে যান। বয়স অল্প হলে কি হবে। তাঁর ঈমানী জযবা বা আবেগ ছিল অতি তীব্র। তিনি মদীনায় জামা’য়াতে নামায আদায়ের ব্যবস্থা করেন এবং চল্লিশজন মুসল্লী নিয়ে সর্বপ্রথম মদীনায় জুম’য়ার নামায আদায়ের ব্যবস্থা করেন এবং চল্লিশজন মুসল্লী নেয় সর্বপ্রথম মদীনায় জুম’আর নামাযের জন্য বের হলে যখনই আযান শুনতে পেতেন, তিনি আবু উমামা আস’য়াদ ইবন যুরারার জন্য ইসতিগফার ও দু’আ করতেন। একদিন আমি বললামঃ ‘আব্বা, আপনি আযান শুনলে এভাবে সব সময় তাঁর জন্য দু’আ করেন কেন?’ বললেনঃ ‘বেটা! রাসূলুল্লাহ সা. মদীনায় আসার আগে তিনিই সর্বপ্রথম আমাদেরকে বনী বায়দা’র ‘হাযমুত নাবীত’ নামক পাহাড়ের কাছে ‘নাকী আল-খাদিমাত’ নামক স্থানে একত্র করে জুম’আর নামায আদায় করতেন। আমাদের সংখ্যা হত ৪০ জন।’ (উসুদুল গাবা- ১/৭১, আল-ইসাবা- ১/৩৪, সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৪৩৫, আনসাবুল আশরাফ- ১/২৪৩, হায়াতুস সাহাবা- ৩/৩৮৭) মদীনায় সর্বপ্রথম কে জুম’আর নামায কায়েম করেন সে ব্যাপারে মতভেদ আছে।

হযরত রাসূলে কারীম সা. মদীনায় পৌঁছার পর যদিও আবু আইউব আল-আনসারীর রা. বাড়ীতে ওঠেন, তবে তাঁর বাহন উটনীটি আস’য়াদের মেহমান হয়। (তাবাকাত- ১/১৬০) রাসূলুল্লাহর সা. মদীনায় পৌঁছার প্রথম ক্ষণটিতে উটনীটি সর্বপ্রথম বসে পড়ে এবং পরে যে স্থানটি রাসূলুল্লাহর সা. মসজিদ ও বাসস্থানের জন্য নির্বাচিত হয়, সেই ভূমির মালিক ছিল সাহল ও সুহাইল নামক দুই ইয়াতীম বালক। আর তাদের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন আস’য়াদ ইবন যুরারা। (বুখারী, হায়াতুস সাহাবা- ১/৩৪৩) রাসূল সা. বালক দু’টির মুরব্বী আস’য়াদের নিকট ভূমির মূল্য জানতে চান। বালক দু’টি সাথে সাথে বলে ওঠে, ‘আমরা আল্লাহর কাছেই এর মূল্য চাই।’ যেহেতু বিনা মূল্যে রাসূল সা. ভূমি গ্রহণে রাজী হলেন না তাই হযরত আবু বকর রা. তার মূল্য পরিশোধ করেন। তবে কোন কোন বর্ণনায় জানা যায়, আস’য়াদ ইবন যুরারা তাঁর বনী বায়দায় অবস্থিত একটি বাগিচা মসজিদের এই ভূমির বিনিময়ে ইয়াতীমদ্বয়কে দান করেন। (যারকানী- ১/৪২২)

বালাজুরী বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. মদীনায় আগমণের পর আবু আইউবের বাড়ীতে অবস্থানকালে আস’য়াদ ইবন যুরারা এক রাত পর পর পালাক্রমে তাঁর জন্য খাবার পাঠাতেন। আস’য়াদের বাড়ী থেকে খাবার আসার পালার রাতে তিনি জিজ্ঞেস করতেনঃ ‘আস’য়াদের পিয়ালাটি কি এসেছে?’ বলা হত, ‘হাঁ।’ তিনি বলতেনঃ ‘তা হলে সেইটি নিয়ে এস।’ বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন, তাতে আমরা বুঝে নিতাম তাঁর খাবারটি রাসূলুল্লাহর সা. প্রিয়। (আনসাবুল আশরাফ- ১/২৬৭) ওয়াকিদী হযরত আয়িশা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল সা. মদীনায় আবু আইউবের বাড়ীতে ওঠার পর একদিন জিজ্ঞেস কররেনঃ ‘আবু আইউব, তোমার কি কোন খাট (পালঙ্ক) আছে?’ উল্লেখ্য যে, মক্কায় কুরাইশরা খাটে ঘুমাতে অভ্যস্ত ছিল। আবু আইউব বললেনঃ ‘না।’ একথা আস’য়াদ ইবন যুরারার কানে গেল। তিনি একটি স্তম্ভ ও কারুকার্য করা পায়া বিশিষ্ট একটি খাট পাঠিয়ে দিলেন। রাসূল সা. তাঁর ওপর ঘুমাতেন। অতঃপর রাসূল সা. যখন আমার ঘরে চলে আসেন এবং আমার মা আমাকে যে খাটটি দেন তাতেই তিনি ঘুমাতেন। (আনসাবুল আশরাফ- ১/৫২৫)

হযরত তালহা ইবন ’উবায়দিল্লাহ মক্কা থেকে মদীনায় হিজরাতের পর আস’যাদের বাড়ীতে ওঠেন। হযরত হামযাও তাঁর বাড়ীতে ওঠেন বলে বর্ণিত আছে। (সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৪৭৭-৪৭৮)

মসজিদে নববীর নির্মাণ কাজ তখন চলছে। এমন সময়ে প্রথম হিজরীর শাওয়াল মাসে তাঁর পরকালের ডাক এসে যায়। তিনি ‘জাবহা’ নামক কণ্ঠনালীর এক প্রকার রোগে আক্রান্ত হন। হযরত রাসূলে কারীম সা. নিজ হাতে তাঁর আক্রান্ত স্থানে সেক দেন, তাঁর মাথায় হাত দেন; কিন্তু কোন উপকার দেখা গেল না। তিনি মারা যান। ওয়াকিদীর মতে হিজরতের পর ৯ম মাসে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে রাসূলুল্লাহ সা. ব্যথিত হন। তিনি বলেন, ‘‘এখন তো ইয়াহুদীরা বলে বেড়াবে ‘যদি তিনি নবী হতেন তাহলে তাঁর সাথী মরতো না, অথচ আমি কি মৃত্যুর চিকিৎসা করতে পারি?’’ হযরত রাসূলে কারীম সা. তাঁর জানাযার নামায পড়ান এবং মদীনার বাকী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করেন। (সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৫০৭, উসুদুল গাবা- ১/৭১, আল-ইসাবা-১/৩৪, আনসাবুল আশরাফ- ১/২৪৩)

বলা হয়ে থাকে রাসূলুল্লাহর সা. মদীনায় হিজরাতের পর এটাই প্রথম মৃত্যু। আর এটাও ধারণা করা হয় যে, এবারই সর্বপ্রথম রাসূল সা. জানাযার নামায আদায় করেন। আনসারদের ধারণা মতে বাকী’তে দাফনকৃত প্রথম মুসলমান আস’য়াদ আর মুহাজিরদের মতে ’উসমান ইবন মাজ’উন। (আল-ইসাবা-১/৩৪)

মৃত্যুকালে হযরত আস’যাদ দু’টি কন্যা সন্তান রাসূলুল্লাহর সা. জিম্মায় ছেড়ে যান। রাসূল সা. আজীবন তাদের দেখাশুনা করেন। মোতির দানা মিশ্রিত সোনার বালা তিনি তাদের হাতে পরান। এক মেয়েকে তিনি সাহল ইবন হুনাইফের সাথে বিয়ে দেন এবং সেখানে তাঁর গর্ভে জন্মগ্রহণ করে আবু উমামা বিন সাহল। (আনসাবুল আশরাফ- ১/২৪৩, আল-ইসাবা- ১/৩৪)

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

আরও দেখুন
Close
Back to top button