‘দ্রূয’ ফেরকা
দ্রূয বাতেনি ফেরকাসমূহের একটি ফেরকা, তবে অন্য সকল ফেরকা থেকে তারা বিচ্ছিন্ন; কারণ তারা হাকিম উবাইদির উলুহিয়াত (ইলাহ হওয়ার) আকিদা ধারণ করে, অর্থাৎ তারা মিসরের ফাতেমি শাসক খলিফা (নামধারী) হাকিম বি আমরিল্লাহকে ইলাহ বলে বিশ্বাস করে থাকে)।
তাদের বিশ্বাস, হাকিম বি আমরিল্লাহ-ই আল্লাহ, যে মানুষের আকৃতিতে অবতীর্ণ হয়েছে। (তাদের কথা থেকে আল্লাহ কতই না পবিত্র!)। এ মতবাদ প্রকাশ করে মূলত তারা শিয়া মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার পুনরাবৃত্তি করল, সে আলী ইবনে আবি তালিব সম্পর্কে এ কথাই বলেছিল।
দ্রূযদের গুরুত্বপূর্ণ আকিদা:
১. সকল দীন ও মতবাদের সাথে কুফরী করা, এবং সে সবের অনুসারীদের কাফের বলা। এ ক্ষেত্রে ইসলাম, ইয়াহূদী ও খৃস্টান সবই তাদের দৃষ্টিতে সমান। ইসলামকে তারা ইবলিসী শরীয়ত বলে। তারা বিশ্বাস করে হাকিম শেষ যুগে পুনরায় আসবেন, অতঃপর তিনি কাবা ধ্বংস, মুসলিমদের হত্যা ও তাদের উপর জিযিয়া কর আরোপ করবেন। সকল দীনের ব্যাপারে তিনি এরূপ করবেন।
২. পরকালকে অস্বীকার করা ও তাকাম্মুসের প্রতি ঈমান আনা, তাকাম্মুস[1] হিন্দুদের পুনর্জন্ম মতবাদের ন্যায় একটি মতবাদ।
৩. নবুওয়ত অস্বীকার ও সকল নবীকে মিথ্যারোপ করা, বিশেষ করে ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। তাদের পবিত্র কিতাবসমূহ তাকে ঘৃণিত বিশেষণে বিশেষায়িত ও খারাপ ভাষায় গালমন্দ করে, অথচ তিনি সকল খারাপি থেকে মুক্ত ।
৪. বাতেনি অপব্যাখ্যা। তাদের নিকট সালাত, সিয়াম, যাকাত, হজ ও অন্যান্য ইবাদতের বিশেষ অর্থ রয়েছে, যার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
৫. দ্রূয বিশ্বাস করে যে, তাদের দীন ইয়াহূদীদের ন্যায় সীমাবদ্ধ, অর্থাৎ বাহির থেকে কেউ তাতে প্রবেশ করতে পারবে না, অনুরূপ তারা বিশ্বাস করে শিয়াদের তাকিয়া (সত্য কথা গোপন করে অন্যদের কাছে ভিন্নভাবে প্রকাশ করা) নীতিতে ও বাতেনিদের অনৈতিকতা ও সেচ্ছাচারিতায়।
এটা স্মরণ রাখুন, আর দ্রূযরা শামদেশে বসবাস করে, বিশেষ করে লেবাননে, ইতিহাসে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ: ফখরুদ্দিন আল-মাগনি আস-সানি, বাশির আশ-শিহাবি, সুলতানুল আতরাশ ও কামাল জুনবলাত।
লেখক: ড. সফর ইবনে আব্দুর রহমান আল-হাওয়ালি
অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
[1] তাকাম্মুস হচ্ছে কাপড় পরিধান করা। তাদের মতে আত্মা এক শরীরকে কাপড় হিসেবে গ্রহণ করে তা বাদ দিয়ে অন্য শরীর গ্রহণ করে। [সম্পাদক]