হীনস্বার্থের প্রলোভন
নারীদেহের প্রতি হীনচরিত্রের পুরুষের লোভ চিরদিনের। বৈধ-অবৈধ যে কোনও পন্থায় নারীদেহ পাওয়ার চেষ্টা এধরনের পুরুষের অন্যতম ধ্যান-জ্ঞান। যেন গুরুত্বপূর্ণ কর্মযজ্ঞ। তাই পুরুষমুখে শরীয়তের পক্ষ থেকে শক্তিশালী লাগাম পরিয়ে দেয়া হয়েছে। সীমানারক্ষী দেয়াল। যাকে আমরা পর্দা বা হিজাব বলে চিনে থাকি। জন্তুর মুখে টুলি না পরালে সে শস্যক্ষেতের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বারবার মুখ দেয় কৃষকের কষ্টের ফসলে। ধ্বংস করে কিছু, নিজের পেটে তোলে কিছু। একারণে কৃষক দেয় তার ক্ষেতের পাশে বেড়া আর পশুর মালিক দেয় পশুর মুখে বেড়া। পশু এতে যতই হাঁসফাঁস করুক না কেন এতেই কৃষক ও মালিকের নিরাপত্তা, শান্তি।
ঠিক তদ্রূপ মানুষের মধ্যেও একটা পশুসত্তা বাস করে। সেই পশুসত্তাটাকে যদি বেঁধে রাখা না হয়, তাহলে সে সমাজ-সংসারের সম্ভ্রমের মুখে হানা দিয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করে দেয়, অশান্তি ডেকে আনে। তাই শরীয়ত নির্দেশ দিয়েছে, নারীলোভী এসব লোকের হাত থেকে বাঁচতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। সেই চেষ্টা না করলে কী ক্ষতি হতে পারে, তা দেখুন নিচের ঘটনা দু’টি পাঠ করে।
ঘটনা : প্রাইভেট পড়ার সূত্রে পরিচয় হয় তুলি (ছদ্মনাম) ও আকন শিকদারের ছেলে পারভেজ শিকদারের মধ্যে। ঝিনাইদহ জেলার ফুলহারী গ্রামে তাদের বাস। দুইজনেই কলেজ শিক্ষার্থী। পরিচয়সূত্রে প্রেম। নতুন বন্ধনের উত্তেজনায় শিহরিত হন তুলি। প্রেম তার গভীরতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তিনি যত নিজেকে উজাড় করে দেন ভালোবাসার মানুষের মন জয় করার জন্য, তার ভালোবাসার মানুষটি ততই উন্মুখ হয়ে থাকে সুযোগ পাওয়ার লোভে। অবশেষে প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হয়। পারভেজের বাসনা পূরণ হওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়।
৯/৯/২০১০ইং তারিখে ঝিনাইদহের কন্যাদহ গ্রামে খালার বাড়ি বেড়াতে যান তুলি। বেড়ানো শেষে ২২ তারিখে রওয়ানা হন নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে। ভ্যানযোগে ভাটই বাজারে আসার পর সেখানে দেখা হয় পারভেজের বন্ধু মধুর সঙ্গে। বন্ধুর প্রেমিকা বলে মধু তাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার কথা বলে ভ্যান থেকে নামিয়ে মোটরসাইকেলে তুলে নেয়। সরল বিশ্বাসে তার পিছনে চড়ে বসেন তুলি। কিছুক্ষণ পরেই তার বিশ্বাস ভাঙতে থাকে। মধু তাকে তাদের বাড়িতে না নিয়ে পারভেজদের বাড়িতে নিয়ে যায়। তুলি তখনও বুঝতে পারেন নি তার জন্য কী পরিণতি অপেক্ষা করছে। প্রেমিকের বাড়ি এ-ই তো! ভয়ের কী আছে? হয়ত এই ছিল তার ভাবনা।
কিন্তু পারভেজ ও তার অন্য বন্ধু রাসেল তার জন্য অপেক্ষা করছিল পশুসত্তার দানবীয় রূপ দেখানোর জন্য। আমি বলছিলাম না, সমাজে কিছু মানুষ আছে, যাদের পশুসত্তার মুখে লাগাম পরানো নেই- তারা সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করে? পারভেজ-রাসেল আর মধুরা তো সেই শ্রেণীর পশুসত্তার অধিকারী মানুষ। তাদের দ্বারা সমাজের শান্তি নষ্ট তো হবেই এবং হলোও তা-ই। পারভেজ তার ভালোবাসার মানুষটির সম্ভ্রম লুট করল পশুর নির্লজ্জতা নিয়ে। একবারও তার অন্তর কেঁপে উঠল না একথা ভেবে যে, এই নারীটি তো আমাকে ভালোবাসে! আমাকে নিয়ে ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখে! তার সম্ভ্রম রক্ষা করা আমার দায়িত্ব আর যদি ভালোবাসার মানুষ ভাবতে না পারিস, তাহলে অন্তত একথা কি ভাবতে পারলি না যে, মেয়েটি তো আমার বোনের মতোই, মায়ের মতোই। আমার বোন বা মায়ের সম্ভ্রম কেউ নষ্ট করতে চাইলে আমি কি তা মেনে নিতে পারবো?
একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের কাছে অবিবাহিত যুবক এসে বললেন, তিনি অবৈধ পথে তার মনোবাসনা পূরণ করতে ইচ্ছুক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম তাকে বললেন, আচ্ছা তোমার বোন বা তোমার মায়ের সঙ্গে অন্য কোনও পুরুষ যদি এইভাবে মনোবাসনা পূরণ করতে চায়- তাহলে তুমি কি তা মেনে নেবে? জবাবে ওই যুবক বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কেউ আমার বোন বা মায়ের দিকে কুদৃষ্টিতে তাকালে আমি তার ঘাড় থেকে ধড় নামিয়ে ফেলব। তখন তিনি বললেন, তোমার মা- বোনের বেলায় যেমন চাওনা কেউ তাদের দিকে এই দৃষ্টিতে তাকাক, অন্যের মা-বোনের বেলায়ও তোমার দৃষ্টিভঙ্গি অনুরূপ হওয়া দরকার। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের কথা শুনে যুবকটি তাওবা করে অন্য নারীদেরকেও নিজের মা-বোনের মতো সম্মানের দৃষ্টিতে দেখার প্রতিজ্ঞা নিয়ে ফিরে গেলেন।
এতো হলো ওই যুবক যার মধ্যে অন্যের মা-বোনকে নিজের মা-বোনের মতো করে দেখার গুণ ছিল। কিন্তু আমাদের আলোচিত যুবকটির কাণ্ড দেখুন, সে ওই নারী যাকে ভালোবাসে বলে অভিনয় করেছিল, তার সম্ভ্রম শুধু সে-ই নষ্ট করল না, অন্য বন্ধুদেরকেও লেলিয়ে দিল এই কাজে। ঘটনা এখানেই শেষ হলে হয়ত বেঁচে যেতেন তুলি। কিন্তু এই নরপশুরা তাকে ততটুকুও বাঁচার অধিকারও দিল না। ‘ধর্ষণের স্বীকৃতি’ লাভের জন্য সেই দৃশ্য ভিডিও করে তাকে দেখিয়ে বলা হলো, আমরা যা করেছি, তা চুপচাপ মেনে নাও। কারো কাছে তা ফাঁস করবে না। করলে সকলকে তা দেখিয়ে বেড়াবো বলে দিলাম!
হতাশ, ক্ষুদ্ধ আর সদ্য স্বপ্নভাঙা তুলি তাও মেনে নিয়েছিলেন। মুখ না খোলার বদৌলতেও যদি অবশিষ্ট সম্ভ্রমটুকু রক্ষা হয় তাও বা কম কী! কিন্তু তার সেই আশাটুকুও পুড়ে ছাই হয়ে যায় প্রতারকদের নির্মমতার আগুনে। তুলি কথা রাখলেও সেই প্রতারক, লম্পটরা কথা রাখে নি। দেড় মাস পরে তুলি যে তথ্য পান, তাতে তার মাথায় আকাশটাই ভেঙে পড়ে। বেশ কিছুদিন ধরে ঝিনাইদহ শহরে একটি মেয়ের ধর্ষণের ভিডিওচিত্র পুরুষদের মোবাইলের মেমোরির বিরাট একটা স্থান দখল করে আছে তা শুনেছিলেন অনেকের কাছে। কিন্তু হতভাগা মেয়েটি কে তা জানা ছিল না। যখন জানলেন তখন নিজের কাছেই নিজের পরিচয় দিতে ঘৃণা হলো তার!
কলেজছাত্রী তুলির পরবর্তী অবস্থা কী হয়েছিল তা জানি না। আল্লাহ করুন তিনি যেন পর্দার আবৃতে এসে হারানো সম্ভ্রম ফিরে পাওয়ার কসরত করেন এবং তার যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে পারেন।
ঘটনা ২ : দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে মোবাইলপ্রেম। কতশত কথা ভালোবাসার মানুষকে ঘিরে! কত স্বপ্ন! কত আশা! কিন্তু আশার পালকগুলো একে একে ডানা থেকে খুলে পড়ল প্রেমিকের ভেতরের চেহারাটা দেখে। পাঁচটি বছরের ওপর দাঁড়িয়ে যে স্বপ্নটা বোনা হয়েছিল, সেই স্বপ্নটা সম্পূর্ণ মিথ্যে হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে। স্মীতা (ছদ্মনাম) থাকেন ঢাকার মিরপুরে। আর প্রেমিকা মো.আলীর পুত্র মাসুম ব্যাপারী। বাড়ি মুন্সিগঞ্জ পৌর এলাকায়। আধুনিক যুগে এতটুকু দূরত্ব নেহায়তই কম। তারপর আছে মোবাইল! তাই প্রেমের বন্ধন-বাঁধনে কোনও বাধা থাকে না। এভাবে প্রেম চলে তার নিজ গতিতে। দীর্ঘ পাঁচ বছর। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? চাই সফল পরিণতি তথা বিয়ে।
বিয়ের প্রস্তাব উঠলে মাছুম তাকে ৯ই ডিসেম্বর ২০১০ইং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ডেকে নিয়ে আসে। এখানে এলে সে তাকে কাশীরপুর এলাকায় মামার বাড়ি নিয়ে যায়। মামী তাকে যোগ্য সহায়তা করে। স্মীতাকে বিয়ে না করে মাসুম একাধিক বার লাঞ্ছিত করে। পাঁচ বছরের প্রেমের ফসল ঘরে উঠায় সে দুইদিনে। এ কয়দিন সে তাকে নিয়মিত লাঞ্ছিত করে। কিন্তু বিয়ের পিঁড়িতে পা রাখার নাম করে না।
অবস্থা বেগতিক দেখে কৌশলে পালিয়ে আসে স্মীতা। প্রেমিকের চরিত্রে ভালোবাসার বদলে কেবলই কামনার আগুন। তাই সম্ভ্রমলুটের ইতিহাসকে দীর্ঘায়িত না করে কেটে পড়েন তিনি। ঢাকা মেডিকেলে পরীক্ষা করান এবং রিপোর্ট নিয়ে ধর্ষক প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। [সূত্র : ইন্টারনেট তারিখ : ২৯/২/২০০৯ ইং]
– আবু বকর সিরাজী
দুঃখজনক হলেও সমাজে এমন ঘটান নিত্যদিনের