সংযত বিয়ে নিরাপদ জীবন
মানবজাতির অপরিহার্য একটি সামাজিক আচার হচ্ছে বিয়ে। বিয়ের মাধ্যমে সমাজ-সংসার টিকে থাকে। বংশপরম্পরা অব্যহত থাকে। তাই মানবীয় এই প্রয়োজনটাকে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে থাকে। বিয়েকে প্রয়োজন ও বাস্তবতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে অনাড়ম্বরভাবে তা সম্পাদনের আদেশ দেয় ইসলাম এবং এধরনের বিয়েই পরবর্তীতে সুখ-সমৃদ্ধি বয়ে আনে বলে ঘোষণা দিয়েছে ইসলাম। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-
«أَعْظَمُ النِّكَاحِ بَرَكَةً أَيْسَرُهَا مَئُونَةً»
‘সেই বিয়ে অধিক বরকতপূর্ণ, যা আড়ম্বরমুক্ত।’ [মুসনাদ আহমদ : ২৪৫২৯]
কিন্তু আফসোসের কথা হচ্ছে, মুসলিম জাতি আজ এই আদর্শ থেকে অনেক দূরে। বিয়েকে কেন্দ্র করে আজ যে পরিমাণ বেপর্দা আর অশ্লীলতার প্রদর্শনী হচ্ছে, তার মারাত্মক খারাপ প্রভাব পড়ছে আমাদের অন্যান্য সামাজিক জীবনে। বিয়ের সঙ্গে নানা ধরনের পাপ জড়িয়ে পড়ার কারণে বিয়ের কাঙ্ক্ষিত বরকত ও উদ্দেশ্য সিদ্ধ হচ্ছে না। বরং সুফল পাওয়ার বদলায় এর কুফল প্রত্যক্ষ করছি নানাভাবে, নানা সময়ে। বিয়ের মধ্যে নানা অনাচারের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হচ্ছে বেপর্দার চর্চা। বেপর্দার একটি বিয়ে কী পরিমাণ অশুভ পরিণতি ডেকে আনতে পারে তার ছোট্র একটি উদাহরণ নিন।
শায়লা (ছদ্মনাম) সদ্য কৈশোর পেরিয়ে আসা যৌবনের কাঠি স্পর্শ করতে যাওয়া এক নারী। এ সময়টাতে এ ধরনের নারীদের বিপদ পদে-পদে। সম্ভ্রমখেকো শকুনরা ডালে-ডালে বসে আছে সম্ভ্রম লুণ্ঠনের মরা গরুর আশায়। উঠতি বয়সী এসব নারী তাদের প্রথম টার্গেট। তাই এই নারীদের চলতে হবে অতি সন্তর্পণে, সংযত পদক্ষেপে। কিন্তু পর্দাহীন মুক্তবাসিনী নারীকে যেমনিভাবে আল্লাহর বিধান পালনের ব্যাপারে উদাসীন করে তুলেছে, তেমনিভাবে নিজের মর্যাদা ও সম্ভ্রম রক্ষার তাগিদটুকুও ভুলিয়ে দিয়েছে। তাই নারী কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে যাচ্ছে এবং এই যাওয়ার পরিণাম কী হবে- এসব আজ ভাবনার বিষয়ের মর্যাদা হারিয়েছে। আর এ কারণেই নারী-অলংকারটুকু আজ রক্ষিত থাকে নি। হাট-বাজারে, দোকান-মার্কেটে তা আজ বিকিকিনি হচ্ছে হাজারো মানুষের সামনে, সস্তা দরে!
তো শায়লার কথায় আসুন। ষোল বছরের মেয়ে শায়লা। আত্মীয়ের বিয়েতে ধুম পড়েছে। তাকেও সেখানে যেতে হবে। বোরকা, পর্দা এসব কী বিয়ের মতো মহাযজ্ঞে মানায়! তাই সে বোরকা-পর্দার কোনও তোয়াক্কা করল না। শত যুবক আর তরুণের সঙ্গে সেও মিশে গেল আনন্দযাত্রায়। এই আনন্দযাত্রায় ছিলেন একজন ‘প্রবীণ’ মুসাফিরও। বয়স চল্লিশ ছাড়িয়ে একচল্লিশে। ঘরে বধূ আছে। আছে ছেলেসন্তান সবই। কিন্তু যা নেই তাহলো, আল্লাহর বিধানের প্রতি মর্যাদাবোধ, পর্দার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। তাই তিনি মুক্তবাসিনী শায়লার রূপে মুগ্ধ হলেন। এক বুড়ো প্রেমিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন তিনি।
শায়লা কিন্তু এসবের কিছুই জানত না। একজন বুড়ো লোক তার প্রেমে পড়বে আর সে সেই প্রেমে সাড়া দেবে এমন কোনও কথা সাজে না শায়লার মতো একজন ষোড়শী যুবতীর বেলায়।
কিন্তু ওদিকে ঠিকই মরিয়া হয়ে উঠলেন সেই বৃদ্ধ। শায়লাকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার জন্য যারপর নাই তদবিরে লেগে গেলেন তিনি। তবে কেউ তাকে সায় দিল না। হাসলো শুধু সবাই। ‘বুড়োর ভীমরতি’ বলেও বিদ্রূপ করল কেউ-কেউ। শায়লার অভিভাবকদের বলেও বুড়ো কোনও ফলাফল পেলেন না। সব পথে হেঁটেও কোনও পথ না পেয়ে তিনি হতাশ ও ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন। একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। হাতে তুলে নিলেন নারী জাতির সবচে’ আতংকের বস্তু এসিড নামের তরল আযরাঈলকে। স্ত্রী করে পাওয়ার কল্পনার মেয়েটি এবার বুড়োর অন্য লক্ষবস্তুতে পরিণত হলো। তিনি ওঁৎ পেতে থাকলেন। সুযোগ বুঝে নিক্ষেপ করলেন ষোড়শী শায়লার মুখে সেই দাহ্যপদার্থ। মুহূর্তের ব্যাপার। কয়েকটিমাত্র ক্ষণে নিঃশেষ ও ধ্বংস হয়ে গেল শায়লার সব স্বপ্ন, সব আশা। একটি ভুল, আল্লাহর একটি বিধান লঙ্ঘন মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করল আশার একটি সুউচ্চ মিনারকে।
এ ধরনের আশার মিনার আর যেন ধ্বংস ও চূর্ণিত না হয়, সে জন্য এখনই সবাইকে পর্দার প্রাচীরে আশ্রয় নেয়া কাম্য। সম্ভ্রম তো একটাই। তাই তা রক্ষায় পর্দার বিধান চাই।
– আবু বকর সিরাজী