গোটফি/হাম্বাফি বনাম কুরবানি
ছোটবেলা থেকেই আমরা কুরবানী দেখে এবং করে বড় হয়েছি। প্রদর্শনেচ্ছা তখনও ছিল, তবে হাম্বাফির এই যুগে সেই ইচ্ছেগুলোর পাখা মেলার সুযোগ অনেক বেশি। আমরা প্রায় প্রতিবারই কুরবানী দিই। কখনও কী ভেবে দেখেছি কেন?
এ ব্যাপারে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের (রাহিমাহুল্লাহ) কিছু মর্মস্পর্শী উপদেশ:
কুরবানীর মূল বিষয় হলো উদ্দেশ্যের বিশুদ্ধতা। নিজের সম্পদের কিছু অংশ একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিলিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কুরবানী করলেই তা প্রকৃত কুরবানী। আল্লাহ বলেন:
এগুলির (কুরবানীকৃত পশুগুলির) গোশত বা রক্ত আল্লাহর নিকট পৌঁছে না; বরং তোমাদের তাকওয়া তাঁর নিকট পৌঁছায়। এভাবেই তিনি এ সব পশুকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবীর পাঠ করতে পার, এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে হেদায়াত করেছেন; সুতরাং তুমি সৎকর্মশীলদেরকে সুসংবাদ দাও।” [সূরা আস-সাফফাত: ১০২-১০৭]
মূল বিষয় হলো অন্তরের তাকওয়া, আল্লাহ ভীতি, আল্লাহর কাছে সাওয়াব পাওয়ার আবেগ, আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও শাস্তি থেকে আত্মরক্ষার আগ্রহ। একমাত্র এরূপ সাওয়াবের আগ্রহ ও অসন্তুষ্টি থেকে রক্ষার আবেগ নিয়েই কুরবানী দিতে হবে। আর মনের এ আবেগ ও আগ্রহই আল্লাহ দেখেন এবং এর উপরেই পুরস্কার দেন।
আমরা নিজেরা ও পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজন সকলেই কুরবানীর পশুর গোশত খাব। পশুটির গোশত সুন্দর হবে, মানুষ ভালভাবে খেতে পারবে ইত্যাদি সবই চিন্তা করতে হবে। কিন্তু গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরবানী দিলে কুরবানীই হবে না। মূল উদ্দেশ্য হবে, আমি আল্লাহর রেযামন্দি ও নৈকট্য লাভের জন্য আমার কষ্টের সম্পদ থেকে যথাসম্ভব বেশি মূল্যের ভালো একটি পশু কুরবানী করব।
কুরবানীর পর এ থেকে আল্লাহর বান্দারা খাবেন। আল্লাহর বান্দা হিসেবে আমি ও আমার পরিজন কিছু খাব। আর যথাসাধ্য বেশি করে মানুষদের খাওয়াব। আল্লাহ বলেন:
“যেন তারা নিজেদের কল্যাণের স্থানসমূহে হাযির হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিযক দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলিতে আল্লাহর নাম যিকির করে। অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দুস্থ-দরিদ্রদেরকে খেতে দাও।” [সূরা হাজ্জ: ২৮]
দুস্থ-দরিদ্রদেরকে খাওয়ানো আগ্রহ ও উদ্দেশ্য কুরবানীর অবিচ্ছেদ্য অংশ। কুরবানীর গোশত তিনভাগ করে একভাগ পরিবারের, একভাগ আত্মীয়দের এবং একভাগ দরিদ্রদের প্রদানের রীতি আছে। এরূপ ভাগ করা একটি প্রাথমিক হিসাব মাত্র। যাদের সারা বৎসর গোশত কিনে খাওয়ার মত সচ্ছলতা আছে তারা চেষ্টা করবেন যথাসম্ভব বেশি পরিমাণ গোশত দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করতে।
যারা কিছুটা অসচ্ছল এবং সাধারণভাবে পরিবার ও সন্তানদের গোশত কিনে খাওয়াতে পারেন না, তারা প্রয়োজনে পরিবারের জন্য বেশি পরিমান রাখতে পারেন। তবে কুরবানীর আগে আমার পরিবার কী পরিমাণ গোশত পাবে, অথবা বাজার দর হিসেবে গোশত কিনতে হলে কত লাগত এবং কুরবানী দিয়ে আমার কী পরিমাণ সাশ্রয় হলো ইত্যাদি চিন্তা করে কুরবানী দিলে তা আর কুরবানী হবে না।
কুরবানীর গোশত ঘরে রেখে দীর্ঘদিন ধরে খাওয়া বৈধ। তবে ত্যাগের অনুভূতি যেন নষ্ট না হয়। আজকাল ফ্রীজ হওয়ার কারণে অনেকেই কুরবানীর গোশত রেখে দিয়ে বাজার খরচ বাচানোর চিন্তা করি। বস্তুত যথাসম্ভব বেশি পরিমাণ দান করতে এবং যথাসম্ভব বেশি দরিদ্রকে ঈদুল আযহার আনন্দে শরীক করতে চেষ্টা করতে হবে। এরপর কিছু রেখে দিলে অসুবিধা নেই।
কুরবানী দিতে হবে আল্লাহর নামে। আমরা বাংলায় বলি, অমুকের নামে কুরবানী। আমাদের উদ্দেশ্য ভাল হলেও কথাটি ভাল নয়। এক্ষেত্রে বলতে হবে, “অমুকের পক্ষ থেকে কুরবানী”। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কুরবানী বা জবাই করা শিরক এবং এভাবে জবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়া হারাম।
আল্লাহ যেন আমাদের ইবাদাতগুলো সঠিকভাবে করা এবং রক্ষা করার তাওফিক দেন। আমীন।
– শরীফ আবু হায়াত অপু