আত্মোপলব্ধি

দুয়া মুমিনের অস্ত্র

দুয়া মুমিনের অস্ত্র, আমি মনে প্রানে এই কথা বিশ্বাস করি। রাসুল (সা:) বলেছেন, “দুয়া ছাড়া কোন কিছুই কদর পরিবর্তন করতে সক্ষম নয়। (আহমাদ- ৫/৬৭৭; তিরমিজি-১৩৯)

এই হাদীস জানার পর থেকে আমি চেষ্টা করি বেশী বেশী করে দুয়া করতে। রামাদানের আগে দুয়ার লিস্ট তৈরির উপর একটা ব্লগ পড়ে আমিও তৈরি করার চেষ্টা করি। আর প্রতিবার যখন দেখি আমার গতবছরের টপ লিস্টের কোন দোয়া কবুল হয়েছে এত খুশি লাগে যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।

২০১৫ এর রামাদানের পরপরই আমি যখন প্রেগন্যান্ট হই প্রথমেই আমার মাথায় আসে যে আমাকে এখন অনেক অনেক বেশী বেশী দুয়া করতে হবে। আরও জানলাম সেই হাদীস যেখানে বলা আছে গর্ভের সন্তানের রুহ আসার পর চারটা জিনিস নির্ধারিত হয় তখন আরও মনে হলো কোনভাবেই দুয়া করার সময়গুলো (বৃষ্টির সময়, আযান আর ইকামতের মাঝে, শুক্রবার আসর আর মাগরিবের মধ্যে, তাহাজ্জুদের সময় ইত্যাদি) যেন মিস না হয়।

তাই আমি মনে মনে দোয়ার একটা বড় লিস্ট করেছিলাম যেখানে বাচ্চার গর্ভকালীন সময়ের থেকে শুরু করে বড় হওয়া, বিয়ে, নেক হায়াত সবকিছু অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছিলাম।

এরপর এই দুয়ার লিস্ট থেকে আমার কাছে সবচেয়ে দরকারী মনে হয়েছে এমন ৪/৫ টা দুয়া নিয়ে মাস্টার লিস্ট করেছিলাম। কেন এই মাস্টার লিস্ট?? কারণ সবসময় তো আর সময় ও সুযোগ হয়না মেইন লিস্টের সবগুলো বলার। তাই চেষ্টা করতাম যখন হাতে সময় কম তখনও যেন অন্তত মাস্টার লিষ্টের গুলো মিস না হয়; সাথে নফল নামাজের সিজদায়ও বলতাম এই মাস্টার লিস্টের দুয়া।

বাচ্চার জন্য দুয়া করার পাশাপাশি আরেকটা খুব দরকারী হলো নিজের জন্য দুয়া করা। কারণ প্রেগন্যান্সীর শুরু থেকেই একটা কথা মনে রাখবেন “সুস্থ মা, সুস্থ বাচ্চা”। মায়ের ভালো থাকা, খারাপ থাকার উপর বাচ্চার ভালো/খারাপ থাকা অনেকাংশে নির্ভর করে। আমি খেয়াল করে দেখেছি আমি মুখ গোমরা করে রাখলে আমার ১০ মাসের বাচ্চাও টের পেয়ে যায় সুবহানাল্লাহ।

আর আপনি যদি বিদেশে একা বাচ্চা লালন পালন করেন তাহলে আপনার মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা আরও বেশি দরকার। তাই নিজের জন্যও অনেক দুয়া করা উচিত। আমি সবসময় দুয়া করতাম প্রেগন্যান্সী, বাচ্চা ডেলিভারী, বাচ্চা লালন পালন সবকিছু যেন আল্লাহ আমার জন্য সহজ করে দেন। আমি যেন সুস্থ থাকি। আমি যেন সুন্দরভাবে বাচ্চা লালন পালন করতে পারি, আমাকে যেন আল্লাহ সেই তৌফিক দান করেন এই দুয়া তো এখনও আমার নিয়মিত করা হয়।

নিজের জন্য করা কিছু দুয়া প্রেগন্যান্সীতে যখন কবুল হতে দেখেছি তখন মনে কি যে এক জোর পেতাম। আমাদের কিছু কাজ আল্লাহ একদম সহজ করে দিয়েছিলেন আর প্রেগন্যান্সীর কিছু কঠিন মুহুর্তে আমি নিজের সবর দেখে নিজেই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম আলহামদুলিল্লাহ্‌। পরে বুঝেছি আর-রাহমান তাঁর রহমতের ছোঁয়ায় আমার দুয়া কবুল করেছেন বলেই আমি এমন সবর করতে পেরেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ্‌।

একবার একটা লেকচারে শুনেছিলাম দুয়া করার সময় এমনভাবে করতে যাতে আমি কেন এই নির্দিষ্ট রহমত আল্লাহর কাছে চাই তার কারণ সহ উল্লেখ করতে।

যেমনঃ শেইখ বলেছিলেন তুমি যখন চাকরির জন্য দোয়া করবে তখন আল্লাহ আমাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিন, এইভাবে না বলে একটু ভিন্নভাবে বলতে। তা হলো “আল্লাহ আপনি আমাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিন, যেন আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য দান সাদাকাহ করতে পারি সাথে হজ্জ করার জন্য টাকা জমাতে পারি”।

সুবহানাল্লাহ আসলেই কি সুন্দর করে বদলে গেলো দুয়ার ভাষা। আর আমি দেখেছি এইভাবে আল্লাহ এরর কাছে চাইলে একটা অন্যরকম মানসিক শান্তিও পাওয়া যায়। তাই আমি সব সময় বলতাম, “আল্লাহ আমাকে নেক, ঈমানদার ও সুস্থ সন্তান দিন, যেন সেই সন্তানকে আপনার প্রিয় বান্দা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি আর সে যেন আমার জন্য সাদকায়ে জারিয়াহ হয়”।

আল্লাহ যেন আমাদের সকলকে বেশী বেশী দুয়া করার ও সিরাতুল মুস্তাকিমে চলার মতো তৌফিক দান করেন।

————————-
নাঈমা আলমগীর

দুয়া মুমিনের অস্ত্র

#রৌদ্রময়ী_প্যারেন্টিং

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button