আত্মোপলব্ধি

আমারই কেন সব সময় অকল্যাণ হয়?

আল্লাহ যখন আমাদের ভালো কিছু দেন আমরা চাই আরেকটু বেশি পেতে।

যেমন ধরুন, আমরা যখন অসুস্থ হয়ে যাই, আল্লাহ আমাদের একটু সুস্থ করে দিলে আমরা কি দোয়া করি? আমরা বলি আল্লাহ আমাদের পুরোপুরি সুস্থ করে দেন। আল্লাহ তখন বলেন- দাড়াও, তুমি যখন পুরোপুরি সুস্থ ছিলে যখন কোন ধরনের অসুখ-বিসুখ তোমার ছিল না, তখন তো তুমি কখনো আমাকে এত আন্তরিকতার সাথে ডাকোনি, কখনো এতো ব্যাকুল হয়ে আমার আমল করনি, এভাবে চোখের পানি ফেলে আমার কাছ থেকে কিছু চাওনি, তাই আমার থেকে উপহারস্বরূপ আমি তোমাকে এই সমস্যা দিলাম, এই বাধা-বিপত্তি দিলাম। কারণ, আমি জানি আমার কাছে ফিরে আসার জন্য তোমার এই সমস্যার প্রয়োজন ছিল।

অর্থাৎ আমাদের জীবনে সমস্যাগুলো আসে হয়তো সেটা আল্লাহর তরফ থেকে একটা উপহার, একটা নিয়মত। কারণ, এক সপ্তাহ জ্বর নিয়ে পড়ে থেকে এমনকি এক বছর অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে থেকে অথবা কোন প্রিয়জনকে হারানোর ফলে যদি আমরা আল্লাহকে পেয়ে যাই তাহলে বাস্তবে তা শাস্তি নয় বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য উপহার। কিন্তু আমরা দেখি, যখন আল্লাহ আমাদের জীবন থেকে কোনো বাধা-বিপত্তি, বালা-মুসিবত সরিয়ে নেন, আমরা তাকে আবার ভুলে যাই। আমরা যেন এটা হতে না দেই।

আল্লাহ বলেন, ‘যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর’ (ইবরাহিম:৭)।

এখানে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তার ব্যাকরণগত বিশ্লেষণ করে দেখলে আমরা দেখব, কোন সন্দেহ নেই, আমরা একেবারে নিশ্চিত করে বলতে পারি অবশ্যই অবশ্যই নিঃসন্দেহে আমাদের বৃদ্ধি করে দিবেন। কিন্তু কি করে দেবেন? বৃদ্ধি করবেন আমাদের নিয়ামতগুলো, আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের উপহার গুলো। আমাদের জীবনে ভালো যা কিছু ঘটে – সবকিছুই তিনি বৃদ্ধি করে দেবেন। কি করলে? আমরা যদি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হই। অর্থাৎ আল্লাহর নেয়ামত গুলো আমাদের কৃতজ্ঞতার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত।

আমরা যদি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ না হই, তাহলে আমাদের জীবনের আপাতদৃষ্টিতে যা কিছু ভালো জিনিস আছে তা আসলে আল্লাহর নেয়ামত নয় বরং এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি অথবা একটা বড় ধরনের পরীক্ষা। যেমন ধরুন, একজন মানুষের খুবই আরামদায়ক বিছানা আছে। কিন্তু সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ না। এই বিষয়টাই তার জন্য আযাব বা শাস্তিতে পরিণত হতে পারে। কিভাবে? সে এই বিছানায় এতটাই আরাম করে ঘুমায়, সে ফজরের নামাজের জন্য উঠতে পারে না। সে আল্লাহর থেকে দূরে সরে গেল।

অপরদিকে আরেকজন মানুষের জীবনে আপাতদৃষ্টিতে খারাপ কিছু ঘটে গেল। হয়তো তার বাবা-মা মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করলেন (আল্লাহ আমাদের সবার বাবা-মার হায়াতকে বৃদ্ধি করে এবং তাদের ব্যবহার করেছেন তাদের ক্ষমা করুন)। আর এর ফলে সে ইসলামকে পূর্ণাঙ্গরূপে পালন করা শুরু করল, সে আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হলো না। এক্ষেত্রে একই ঘটনা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর তরফ থেকে তার জন্য একটি উপহার।

আল্লাহ যেন আমাদেরকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার তৌফিক দান করেন। আমিন।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Back to top button