জীবনের বাঁকে বাঁকে

দূর্গা পূজা

১.

সভা শুরু হলো। সদস্যদের প্রায় সবারই মুখ কালো। ব্যাপার কী—জানতে চাইলেন সভাপতি।

– পূজার চাঁদা চাইতে গেলে অপমান করে পাড়ার লোকেরা।

– অপমান! সে আবার কী? লোকে মন্দ কথা বলেচে, মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিয়েচে, কুকুর লেলিয়ে দিয়েচে। এমনকি পথ চলার সময় বারান্দা থেকে গাছের টব অবধি ছুড়ে মেরেচে—কিন্তু অপমান তো কখনও করেনি।

অপমানের সংজ্ঞা নিয়ে পড়া এ কৌতুকটি বহু বছর আগে পড়া। ওপার বাংলার কোনো এক লেখক বারোয়ারি পূজা আয়োজনের পেছনের ছবিটি তুলে ধরেছিলেন। বাংলাদেশে যে ২৮ হাজারেরও বেশি পূজামন্ডপ দেখা যাচ্ছে তার অধিকাংশ বারোয়ারি, অর্থাৎ জনগণের কাছ থেকে চাঁদা তুলে করা হয়। বারোয়ারি শব্দটা এসেছে বারোর সাথে ইয়ারি থেকে। কথিত আছে বারোজন তরুণ ব্রাহ্মণ প্রথম চাঁদা তুলে গণপূজা শুরু করেছিল। এভাবেই ব্যক্তি মালিকানা থেকে পূজা পাড়ার লোকের অংশগ্রহণে আসে।

এখন হয়ত অনেকের ভ্রু কুঁচকে আসবে? উপাসনার আবার ব্যক্তি মালিকানা কী? ঈদের দিন তো সবাই ঈদগাহে যায় নামায পড়তে, নামায শেষে কোলাকুলিও করে একে অপরের সাথে। ব্যক্তিগত পূজার ইতিহাসটা বুঝতে হলে একটু ফিরে তাকাতে হবে ইতিহাসের দিকে। দুর্গা পূজা কীভাবে এল?

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলছেন,

মূল বাল্মীকির রামায়ণে দুর্গা পূজার কোন অস্তিত্ব আমরা দেখতে পাই না। মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী কবি কৃত্তিবাস ওঝা সংস্কৃত রামায়ণ বাংলা করার সময় মূল রামায়ণের বাইরের তৎলালীন সমাজে প্রচলিত অনেক মিথ, গল্প বাংলা রামায়ণে ইচ্ছাকৃত ভাবে ঢুকিয়ে বাংলা রামায়ণ আরো অধিক সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেন। তাঁর এই অনুবাদকৃত রামায়ণ পরিচিতি পায় কৃত্তিবাসী রামায়ণ নামে। [1]

পুরাণমতে দুর্গাপূজা হওয়ার কথা বসন্তকালে কিন্তু কৃত্তিবাসী রামায়ণে রাম অকালে, অর্থাৎ শরৎকালে দেবীর পূজা করেছিল। সেখান থেকেই বর্তমানে চালু শারদীয় দুর্গাপূজার প্রচলন হয়। অথচ বাল্মিকীর মূল রামায়নের দুর্গাপূজার কোনো অস্তিত্বই নেই! দুর্গা পূজার পুরোটাই মানবরচিত।

বিভিন্ন আনুষঙ্গিক অসংলগ্ন অঙ্গ দেখলে এটি স্পষ্ট যে, এক দেশে দুর্গাপূজার বিবিধ সংস্কৃতি প্রবর্তিত ও বর্ধিত হয়নি। বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন আচারবিধি বিভিন্ন সময়ে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। [2]

১৭৫৭ সাল। ২৩শে জুন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পলাশীর যুদ্ধে হারিয়েছেন ইস্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানির কর্নেল রবার্ট ক্লাইভ। নতুন রাজা হবেন নবকৃষ্ণ দেব। তিনি তার চার একরের গ্রামের বাড়ির উঠোনে একটি পাকা মন্ডপে প্রথম আয়োজন করলেন দুর্গা পূজার। কিংমেকার ক্লাইভ প্রধান অতিথি। উইলসন হোটেল থেকে গোমাংস আর শুয়োর এল। এল বোতলে বোতলে মদ। তথাকথিত মুসলিম ঘরানা থেকে এল বাঈজিরা। শুরু হলো পূজার উৎসব।

ম্লেচ্ছ বা যবনদের ছায়া না মাড়ানো ব্রাহ্মণ পণ্ডিতরা এত সহজে মেনে নিল এত বড় অনাচার? রবার্ট ক্লাইভের সংষ্কৃতি শিক্ষক ছিল জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন, তাকে বেশ মোটা অংকের সম্মানী দিয়ে পুরো পুরোহিতপাড়াকেই ম্যানেজ করে ফেলেন নতুন লর্ড বনে যাওয়া ক্লাইভ বাবু। বাংলার স্বাধীনতা হারানোর সবচেয়ে বড় কুচক্রীদের হাত ধরে ষড়যন্ত্রের সাফল্য উদযাপনেই সূচনা ঘটে আধুনিক দুর্গা পূজার।[3]

এমন কী হতে পারে, যে এক কুলাঙ্গার নবকৃষ্ণের জন্য আমরা সবাইকে দুষছি? ব্লগার বিপ্লব পালা জানাচ্ছেন,

…এবং এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা না- উনবিংশ শতকে বাবু নবকৃষ্ণের দেখা দেখি সব বাবুর পুজোতেই মদ্যপান, নারী এবং গোমাংস সহযোগে উদ্যোম পার্টি হত সাহেব সুবোদের নিয়ে। দুর্গাপুজোর জনপ্রিয়তার এটাই মূল কারন যে তা বৃটিশদের পিষ্ঠপোষকাতে তাদের উমেদারদের জন্যেই জনপ্রিয় হয়েছে। ১৮৪০ সাল পর্যন্ত এই ট্রাডিশন বজায় ছিল। অনেক সাহেব নিজেরাই পুজো দিতেন-পার্টি দিতেন। শেষে পুজোর সময় বারবণিতা এবং বাইজিদের নিয়ে এত টানাটানি এবং টানাটানি থেকে রেষারেষি, মারামারি হতে লাগল, কোম্পানী আইন করে, বৃটিশদের দুর্গাপুজো থেকে বিরত করে। [4]

এভাবেই হঠাৎ ধনী হিন্দু আর ব্রিটিশদের উন্মত্ত পার্টির মাধ্যমে শুরু হয়েছিল কলকাতার দুর্গাপূজাগুলো। সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল না। যখন আস্তে আস্তে কলকাতা গ্রাম থেকে শহর হতে শুরু করল, সেখানে মানুষ বাড়া শুরু করল, সাধারণ মানুষের পূজা করার ইচ্ছেও জাগতে লাগল। কিন্তু শুধু ইচ্ছে থাকলেই তো আর হবে না। পূজা করতে যে ষোলটি[5] উপাচার লাগে, মন্ত্রপড়া বাবদ দক্ষিণা লাগে—তার যোগাড় করা পয়সাওয়ালাদের পক্ষে সম্ভব। যাদের সামর্থ্য নেই—তারা শুরু করল সর্বজনীন পূজা—এখানে সবাই চাঁদা দেয়, সবাই প্রসাদ খায়।

সেই দুর্গাপূজা বাংলাদেশে ঢুকল কেমন করে? ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলছেন-

উনিশ শতক থেকে হয়তো আস্তে আস্তে কলকাতার পূজার রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলাদেশে এবং কলকাতায় অবস্থানরত অনুপস্থিত ভূস্বামী ও ধনাঢ্যরা কলকাতায় আমোদ স্ফূর্তি তামাসার একটি অংশ আবার শুরু করতে চাইলেন নিজ নিজ অঞ্চলে। এ অঞ্চলে দুর্গাপূজার সমারোহ, জনপ্রিয়তা, সর্বজনীন উত্সবে পরিণত করার পেছনে প্রধান ভূমিকা জমিদারদের। এ ছাড়া মধ্যবিত্ত, ধনাঢ্য পেশাজীবীরা যারা প্রধানত থাকতেন কলকাতা বা ঢাকায় তাঁরাও আসতেন পূজার ছুটিতে গ্রামে। মূল উদ্দেশ্য সবার ছিল একই—ঐশ্বর্য (আধিপত্য) ও প্রজাদের প্রতি ‘স্নেহ উদারতা’ প্রদর্শন। [6]

২.

খুব স্বাভাবিক যে বিশ্বাসঘাতকতার মণ্ডপে দুর্গাপূজার হৈহৈরৈরৈ শুরু তাতে আধ্মাতিকতা কম থাকবে। ধর্মতত্ব ঘাটলেও তাই দুর্গা পূজায় অনেক অসামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়। যেমন যাকে পূজা করা হয় সে দুর্গাটা কে?

আমি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব; আবার আমিই সরস্বতী, লক্ষ্মী ও পার্বতী। আমি সূর্য, আমি নক্ষত্ররাজি, আবার আমিই চন্দ্র। আমিই সকল পশু ও পাখি। আবার আমি জাতিহীন, এমনকি তস্করও। আমি ভয়াল কর্মকারী হীন ব্যক্তি; আবার আমিই মহৎ কার্যকারী মহামানব। আমি নারী, আমি পুরুষ, আমিই জড়।[7]

যে নারী এবং পুরুষ তাকে কেন নারীরূপে দেখা যায় সবসময়? সে নারীরূপ কেন বছরে বছরে পরিবর্তন হয়? কেন বলিউডের বহুগামী নায়িকাদের মুখের আদলে প্রতিমার চেহারাটি তৈরী হয়?

যে চাঁদ-তারা-সুরুজ একইসাথে, সব জীব এবং জড় একইসাথে; তাকে কেন কয়েক লাখ টাকার মূর্তির আকার দিয়ে পূজা করতে হবে? যে চোর জোর গলায় বলে সে চোর, যে নীচ ভয়ংকর পাপী—তার সাথে কথা বলতেই তো রুচিতে বাধে না; সেই সত্ত্বাটার ইবাদাত করতে হবে? উপাসনা করতে হবে? নিজের হাতে গড়া লাখ টাকার প্রতিমা ফেলে দিতে হবে নদীতে, বলতে হবে—সামনের বছর আবার দেখা হবে মা। এ কেমন চলে যাওয়া, এ কেমন ফিরে আসা? নিছক কল্পকাহিনীতে ধর্ম কেন এত অসহায় বন্দী?

সর্বেশ্বরবাদীদের তত্ত্ব কেন যেন দিন শেষে একটা মাটির মূর্তিতে গিয়ে আটকে পড়ে। মানুষ যখন ধর্ম বানায় তখন বড় অধর্ম হয়।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে দুর্গা পূজার প্রথম প্রবর্তক কৃষ্ণ, দ্বিতীয় বার দুর্গা পূজা করেন স্বয়ং ব্রহ্মা আর তৃতীয়বার দূ্র্গা পূজার আয়োজন করেন মহাদেব। দুর্গার একটি অংশ কীভাবে আরেকটি অংশকে পূজা করছে বোঝা মুশকিল। এই দেবতারা সেই দেবীর পূজা করছে যাকে তারা নিজেদের তেজ থেকে জন্ম দিয়েছে! কেন জন্ম দিল? মহিষাসুর নামে এক অসুরকে মারার জন্য যাকে কোনো পুরুষ বধ করতে পারছিল না। কেন পারছিল না? কারণ ব্রহ্মা সেই অসুরকে এমনই বর দিয়েছিল। ব্রহ্মা বর দেওয়ার আগে কেন চিন্তা করল না যে এই ব্যাটা কয়েকদিন পর আমার বরের জোরে আমাকেই স্বর্গছাড়া করবে?

যে কথা ইদানীং বেশ শোনা যাচ্ছে—ধর্ম যার যার উৎসব সবার। শোনা যাচ্ছে দুর্গাপূজা নাকি সর্বজনীন উৎসব। সংসদ অভিধান মতে, সর্বজনীন মানে সকলের পক্ষে হিতকর, সকলের জন্য কৃত অনুষ্ঠিত বা উদ্দিষ্ট। তো এখন সর্বজন বলতে কাদের বোঝাচ্ছে? রাজা-গজাদের পকেট থেকে বেরিয়ে সাধারণ হিন্দুদের অংশগ্রহণ—এ অর্থে সর্বজনীন হতে পারে। নিম্নবর্ণের হিন্দুরা মনসা পূজা ছেড়ে একটা দিন দেবী দুর্গার চেহারা দেখল—এ অর্থেও সর্বজনীন বলা যেতে পারে, কিন্তু দলে দলে মুসলিমরা পালে পালে পূজামন্ডপে যাবে—এমনতর সর্বজনীনতা কোথা থেকে আসল? মুসলিমদের ধর্মবিশ্বাসে মূর্তি পূজা হিতকর নয় মোটেই— ভয়াবহ ক্ষতিকর। অনন্তকালের জীবনে নরকে জীবন্মৃত অবস্থায় দগ্ধ হবার কারণ মাত্র।

এ সেকুলার সর্বজনীনতা কেন একমুখী? উৎসব সবার বলার পরেও কেন ধার্মিক হিন্দু গরু জবাইয়ে সাহায্য করে না? গরুর গোশত দিয়ে ভুরিভোজ করে না? গোহত্যা হিন্দুর জন্য মহাপাপ, আর মূর্তিপূজা তথা শির্ক মুসলিমের জন্য নয়? কেন দেশনেতারা সবচেয়ে ভয়াবহ পাপ কাজ উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছাবাণী জানাবে? শুধু দুর্গা কেন, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য আছে—এই বিশ্বাস বা কথা শির্ক, কুফরী। এই কুফরী নামধারী মুসলিমকে টেনে হিচড়ে ইসলামের গণ্ডীর বাইরে নিয়ে যাবে। নিয়ে যাবে সেই জাহান্নামে যেখানে মূর্তি, মূর্তিপূজারী এবং ‘মা দুর্গা এসেছেন বলে ফসল ভালো হয়েছে’—বক্তব্যদানকারীকে একসাথে পোড়ানো হবে। শির্ক এমন পাপ যা থেকে তাওবাহ করে ফিরে আসতে হয়। নাহলে মুসলিমদের খাতা থেকে নামটি কাটা যায়। ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’—মানে এটাই যে আল্লাহ ছাড়া যত উপাস্য আছে তাদের মিথ্যা সাব্যস্ত করতে হয়। অস্বীকার করতে হয়।

ইসলামে মূর্তি-পূজা অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। শুধু ইসলামই না, চিন্তা-ভাবনাতে স্বাধীনতা থাকা যেকোন মানুষই এর অসারতা বুঝতে পারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমরা দেখি পৌত্তলিকতার বিরোধী অবস্থায়-

কোন প্রতিমাকে পূজা করিব না, কোন প্রতিমাকে প্রণাম করিব না, কোন পৌত্তলিক পূজার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করিব না। [8]

আফসোস, আজ পূজা মণ্ডপে মুসলিম নামধারীদের আনাগোণা হিন্দুদের চেয়েও বেশি। এ মিশেল কোনো ধর্মবোধ থেকে নয়, ধর্মহীনতা থেকে।

স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন,

মূর্তিপুজা সেই সময়েরই- যখন পাঁচ সাত ক্রোশ দূরের লোক বিদেশী, পরদেশের লোক ম্লেচ্ছ, পর-সমাজের লোক অশুচি, এবং নিজের দলের লোক ছাড়া আর সকলেই অনধিকারী- এক কথায় যখন ধর্ম আপন ঈশ্বরকে সংকুচিত করিয়া সমস্ত মানুষকে সংকুচিত করিয়াছে। [9]

আফসোস, আজ যারা রবি ঠাকুরকে জাতির বাতিঘর মনে করে তাদের সংষ্কৃতি কেবলই মূর্তিময়।

৩.

ইসলামে মানুষের একমাত্র উপাস্য আল্লাহ। তিনি কী সে সংজ্ঞা স্পষ্ট এবং তাতে কোনো পরষ্পরবিরোধী কথা নেই:

তিনিই আল্লাহ্, অদ্বিতীয়! অমুখাপেক্ষী, সবকিছু তাঁর উপর নির্ভরশীল। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। তাঁর সমকক্ষ আর কিছুই নেই!

ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর ইতিহাস মুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গী বোঝানোর জন্য যথেষ্ট। তিনি তার জাতিকে স্পষ্ট বলেছিলেন,

তোমরা নিজেরা খোদাই করে যেগুলো বানাও, তোমরা কি সেগুলোর উপাসনা কর, অথচ আল্লাহই তোমাদেরকে এবং তোমরা যা কর তা সৃষ্টি করেছেন?[10]

তার জাতি বোঝেনি। তারা উত্তর দিল,

আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এদের পূজা করতে দেখেছি [11]

তিনি বোঝানোর জন্য হাতে-কলমে শিক্ষা দিতে চাইলেন। উৎসবের দিনে যখন সবাই মন্দির ফাঁকা রেখে চলে গিয়েছিল, ইবরাহিম আলাইহিস সালাম সবার অজান্তে মন্দিরে গেলেন। তিনি মূর্তিগুলোকে উল্লেখ করে বললেন, এই যে তোমাদের সামনে এত খাবার, তোমরা খাচ্ছ না কেন? মূর্তিগুলো নিরুত্তর। তিনি বললেন, সমস্যা কী তোমাদের, কথা বলছ না কেন? এরপরে তিনি জোরে আঘাত করে মূর্তিগুলোকে ভেঙে ফেললেন।[12] তিনি শুধু সবচেয়ে বড় মূর্তিটিকে অক্ষত রেখেছিলেন।

আল্লাহ ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এবং তার মূর্তিপূজারী গোত্রের মধ্যের আলোচনাটা আমাদের জন্য তুলে ধরেছেন। মিথ্যা মাবুদের ব্যাপারে সামান্যতম বিবেকসম্পন্ন মানুষদের জন্য এ কথাগুলো যথেষ্ট।

তারা বলল, ‘হে ইবরহীম, তুমিই কি আমাদের দেবদেবীগুলোর সাথে এরূপ করেছ’?

সে বলল, ‘বরং তাদের এ বড়টিই একাজ করেছে। তাই এদেরকেই জিজ্ঞাসা কর, যদি এরা কথা বলতে পারে’।

তখন তারা নিজদের দিকে ফিরে গেল এবং একে অন্যকে বলতে লাগল, ‘তোমরাই তো যালিম’। অতঃপর তাদের মাথা অবনত হয়ে গেল এবং বলল, ‘তুমি তো জানই যে, এরা কথা বলতে পারে না’।

সে (ইবরহীম) বলল, ‘তাহলে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত কর, যা তোমাদের কোন উপকার করতে পারে না এবং কোন ক্ষতিও করতে পারে না’? ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদাত কর তাদেরকে! ‘তবুও কি তোমরা বুঝবে না’? [13]

ইসলামের ধর্মতত্ত্বটা খুব সরল এবং স্পষ্ট। আমরা যদি মনে করি আমাদের একজন স্রষ্টা আছে, তার নিশ্চয়ই আমাদের সৃষ্টির পেছনে একটা উদ্দেশ্য আছে। সে উদ্দেশ্যটা কী সেটাও তিনি আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। কৃত্তিবাসের মতো মানুষেরা যুগে যুগে ছিল—তারা আমাদের কাছ থেকে আমাদের রব কী চেয়েছেন সেটা লুকিয়ে ফেলেছে। কিন্তু পৃথিবীতে একমাত্র কুর’আন যা আল্লাহর বাণী অপরিবর্তিত অবস্থায় আছে। সেখানে আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন যে তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদাতের জন্য। সেই ইবাদাতের প্রকৃতি এবং ধরণ আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন তার প্রেরিত রসুল মুহাম্মাদ, সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে। রসুল এবং তাঁর সাহাবাদের জীবনধারাও অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষণ করা আছে আমাদের পথ প্রদর্শনের জন্য।

মৃত্যুর পরে যে নিশ্চিত অনন্তকালের জীবন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে সেখানে সুখে থাকার একমাত্র উপায় একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করা, তার সাথে কাউকে কোনোভাবে অংশীদার না করা, এবং জীবন বিধান হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সার্বিক অনুসরণ করা।

আল্লাহ যেন মূর্তিপূজার মতো ক্ষমার অযোগ্য পাপাচার থেকে আমাদের রক্ষা করেন। আমরা যেন এই পাপাচারের ব্যাপারে সবাইকে সাবধান করতে পারি—আল্লাহ যেন আমাদের সেই তাওফিক দেন। আমীন।

 

– শরীফ আবু হায়াত অপু

————————————————————-

[1] রামায়ণ, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ১৯৫৭ সংস্করণ

[2] হিন্দু শাস্ত্রে ‘দুর্গা’ নামটির একটি চমৎকার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়—কমল সরকার, অক্টোবর ১০, ২০১৩ তারিখে ব্যক্তিগত ব্লগে প্রকাশিত। https:/kamalnews.wordpress.com/201…

[3] Durga puja’s colonial roots—Sankar Ray, DNA India, Sunday, 21 October 2012

[4] http:/biplabbangla.blogspot.com/20…

[5] আসন, অর্ঘ্য, আচমনীয়, অষ্টকলসি স্থানীয় জল, ভূষণ, স্বাগত, পাদ্য, বস্ত্র, গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, মালা, বিল্বপত্র ও চন্দন।

[6] দুর্গা যেভাবে সর্বজনীন হলেন , ২৫-০৯-২০০৯

[7] দেবীভাগবত পুরাণ, গ্রন্থ ৭, ৩৩: ১৩-১৫

[8] আত্মজীবনী, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর

[9] সঞ্চয়- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: বিশ্বভারতী ১৯৭০

[10] সূরা সাফফাত, ৩৭:৯৫-৯৬

[11] সূরা আম্বিয়া, ২১:৫৩

[12] সূরা সাফফাত, ৩৭:৯১-৯৩

[13] সূরা আম্বিয়া, ২১:৬২-৬৭

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Back to top button