সুন্নাহকে অনুসরণ করুন, সামাজিকতা নয়
আমার পরিবারকে কোনোভাবেই প্র্যাকটিসিং পরিবার বলা যাবে না। গতানুগতিক গ্রাম্য পরিবারগুলো যেমন হয় অনেকটাই সেরকম। আম্মা আমার সাথে ঢাকায় থাকার ফলে ইসলামী অনুশাসনের রীতি-নীতিকে নতুনভাবে জানা শুরু করেছেন এবং আলহামদুলিল্লাহ সে-মতে চলবার আপ্রাণ চেষ্টাও আম্মার মাঝে লক্ষণীয়।
যেহেতু আমার পরিবার সেভাবে প্র্যাকটিসিং না, তাই একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করাটা আমার জন্য একটা চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিলো রীতিমতো। চ্যালেঞ্জটা বহু দিক থেকে— একটা নন-প্র্যাকটিসিং পরিবেশে একজন প্র্যাকটিসিং মেয়েকে সর্বোতভাবে সহায়তা করা যাতে তাঁর প্র্যাকটিসের কোন অসুবিধে না হয়। আবার, সেটা করতে গেলে আত্মীয়স্বজনদের যে টিঁটকারী, কথা কানাকানি, এমনকি নিজের পরিবারের মানুষগুলোর বিরূপ মনোভাবগুলোকেও সমানভাবে সামলানোটা কতোটা দুরূহ তা বিবাহিত জীবনের শুরুর দিকে বেশ ভালোমতোন টের পেয়েছিলাম।
আমার বিয়ের দিনের ঘটনা। মসজিদ থেকে বিয়ের সমস্ত কাজ সম্পন্ন করে আমরা বাসায় এলাম। আমাদের গ্রাম্য রীতি-নীতি অনুসারে— বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর কনেকে মিষ্টি হাতে ছেলের দুলাভাইদের (যদি থাকে) সামনে যেতে হয়। তাদেরকে মিষ্টি খাইয়ে দিতে হয় এবং দুলাভাইরা শালার বউ দেখে বখশিস প্রদান করে।
বলাই বাহুল্য— আমার বিয়ের দিনও সেরকম একটা গুঞ্জন উঠেছিলো। যদিও আমি আগেই বলে রেখেছিলাম যে— আমার স্ত্রী পর্দা করবেন। কোন পুরুষ মানুষের সামনে যাবেন না, কিন্তু পরিবারের সদস্যরা ধরে নিয়েছিলো— অন্তত হিজাব পরে হলেও তো দুলাভাইদের সামনে মিষ্টির প্লেট হাতে আসতে পারে। খাইয়ে না দিক, অন্তত একটা সালাম দিয়ে চলে গেলো না হয়।
কিন্তু বেঁকে বসলাম আমি এবং আমার নব বিবাহিতা স্ত্রী। সাফ জানানো হলো— কোন নন মাহরাম পুরুষের সামনে আমার স্ত্রী যাবেন না। সেটা দুলাভাই হোক আর আমার নিজের ভাই। এগুলো তথাকথিত সামাজিকতা। এসব সামাজিকতা মানতে আমরা বাধ্য নই।
বুঝতে পেরেছি— সে-রাতে আমার বোনেরা কষ্ট পেয়েছিলো। তারা ভেবেছিলো তাদের আদরের ছোট ভাই তাদের জামাইকে অপমান করেছে। কী এমন হতো তার বউকে মিষ্টির থালা হাতে একমিনিটের জন্য পাঠালে?
কিন্তু— সামাজিকতা নয়, আমাদের যে সুন্নাহটাই মানতে হবে!
যাহোক, আমার স্ত্রীর পর্দার ব্যাপারে কেবল ওই একবার-ই পরিবেশ ঘোলাটে হয়েছিলো। এরপর পর্দা করা নিয়ে আর কোন সমস্যার মুখোমুখি আমার স্ত্রীকে আজ পর্যন্ত হতে হয়নি আলহামদুলিল্লাহ। বরং আমার পরিবার আর আত্মীয়স্বজনদের সকলে এখন সমানভাবে সচেতন তাঁর পর্দা করার বিষয়ে৷ কোন আত্মীয়স্বজনের বাসায় বেড়াতে গেলে সেখানকার পুরুষেরাও আমার স্ত্রীর পর্দা করার ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেন এবং সেভাবে সবকিছুর আয়োজন করেন।
আজকে দারুন একটা ব্যাপার চোখে পড়লো। আমার স্ত্রী রান্না করছিলেন রান্নাঘরে। রান্নাঘরের দরোজায় খেলছিলো আমার তিন বছরের ছোট ভাগিনা। বাইরে থেকে হঠাৎ আমার বড় ভাই ঘরের ভেতরে এলে ভাগিনা জোরে বলতে শুরু করলো, ‘মামা, এখানে এসো না। মামী আছে এখানে’।
আমার স্ত্রী আছে বিধায় রান্নাঘরে যে আমার বড় ভাই আসতে পারবে না, সেটা আমার তিন বছরের ভাগিনাও বুঝতে শিখে গেছে, আলহামদুলিল্লাহ। সে দেখছে যে— তার ছোট মামী যে রুমে থাকে, সে রুমে তার বাবা, তার ভাই আসতে পারে না। তার বড় মামাও যে আসতে পারবে না, সেটা তার ছোট্ট মস্তিষ্ক বুঝে ফেলেছে।
স্রোতে গা না ভাসিয়ে আমরা চেষ্টা করেছিলাম আল্লাহর বিধানকে আঁকড়ে থাকতে। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা আজ তা আমাদের জন্য কতোই না সহজ করে দিলেন।
নোট: প্র্যাকটিসিং মুসলিম বলতে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলেন এমন মুসলিমকে বোঝানো হয়।
– আরিফ আজাদ
Mashaa Allah
valuable post
Alhamdulillah, valuable post,jazakallahu khairon