কখনও ঐ পরিত্যক্ত হৃদয়ের স্তুপে আমাকে ফেলে দিয়ো না!
একদেশে এক কামার ছিল। সে ছিল খুবই কর্মঠ ও দয়ালু। সবাই তাকে খুব পছন্দ করত আর তার জন্য প্রাণভরে দোয়া করত, কারণ সে তাদের দুঃখকষ্টে সবসময় পাশে এসে দাঁড়াত। অথচ এই ভালো মানুষটির নিজের জীবন ভরাই ছিল শুধু দুঃখ আর কষ্ট, কিছুই যেন ঠিকমত যাচ্ছিল না।
একদিন তার এক বন্ধু তাকে প্রশ্ন করলঃ “আচ্ছা তুমি যে এতো ধার্মিক, এতো উদার, এতো দানশীল, তা সত্ত্বেও তোমার জীবনে শুধুই অবনতি, কোন উন্নতি নেই কেন? আল্লাহ্ কি তোমাকে দেখতে পান না? ”
কামার প্রশ্নের উত্তর দিলনা, কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর পুরোপুরি ভিন্ন একটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে লাগলোঃ
“আমার দোকানে প্রতিদিন কাঁচা লোহা আসে, যা দিয়ে আমাকে বিভিন্ন আকৃতির আসবাব, যন্ত্র, গ্রিল, রেলিং হেন তেন হাজারটা জিনিস তৈরি করতে হয়। এই কাজের পদ্ধতিটা খুব মজার, তোমাকে একটু বলি। প্রথমে আমি লোহাটাকে আগুনে পুড়িয়ে লাল বানাই, তারপর একটা ভারি হাতুড়ি দিয়ে খুব করে পেটাই, যতক্ষণ না সেটা একটা সুন্দর মসৃণ আকার ধারণ করে। তারপর সেটাকে যখন ঠাণ্ডা পানির বালটিতে চুবাই, চারপাশ ধোঁয়ায় ঝাপসা হয়ে যায়। লোহার টুকরোটা হিস্ হিস্ করতে করতে একসময় শান্ত হয়। তারপর সেটাকে পরীক্ষা করে দেখি আমার যেমনটি দরকার ঠিক সেরকম মানসম্পন্ন হয়েছে কিনা। না হলে আবার একই পদ্ধতিতে সেটাকে আরেকটু উন্নতমানের বানানো হয়।
মাঝে মধ্যে কিছু লোহা এই কঠিন আচরণ সহ্য করতে পারে না। একটু আঘাত দেওয়া কিংবা ঠাণ্ডা পানিতে চোবানোর পরই সেগুলো ভেঙ্গে যায়। সেগুলো খারাপ মানের লোহা, কোন কাজেই আসে না, কাজেই ফেলে দিতে হয়।”
দোকানের এক কোণায় ফেলে দেওয়া নষ্ট লোহার স্তূপটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলল লোকটি।
“আমি জানি আল্লাহ্ আমাকে কষ্টের আগুনে পোড়াচ্ছেন। জীবনে যে ধাক্কাগুলো, যে আঘাতগুলো খাচ্ছি, সেগুলোর উদেশ্য বুঝতে চেষ্টা করছি। সেই ঠাণ্ডা পানির ঝাপটার তীব্র শীতলতা আমাকে এখন আর যন্ত্রণা দেয় না।
শুধু একটি মাত্র প্রার্থনা আমার – হে আমার মালিক, হে আমার গঠনকারী, যতক্ষণ না আমার মন ঠিক তুমি যেমনটি চাও তেমন সৌন্দর্য ধারণ করে, ততক্ষণ আমায় পরিত্যাগ করোনা। তোমার যেভাবে ইচ্ছা আমাকে গড়ে তোলো, কিন্তু কখনও ঐ পরিত্যক্ত হৃদয়ের স্তুপে আমাকে ফেলে দিয়ো না!”