জীবনের বাঁকে বাঁকে

মুসলিম ফ্রি হাসপাতাল

হাসপাতালের নাম “মুসলিম ফ্রি হাসপাতাল”। সাবেক বার্মার রাজধানী রেঙ্গুনে ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল হাসপাতালটি।

রেঙ্গুনের সকল সম্প্রদায়ের দরিদ্র মানুষের জন্য কয়েক মুসলিম নেতা মিলে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক বিনিয়োগের পুরোটাই এসেছিল তাদের নিকট থেকে।

যাদের অন্য কোথাও চিকিৎসা সেবার সুযোগ ছিল না, এই হাসপাতাল ছিল তাদের শেষ ভরসা।

সেই মুসলিম ফ্রি হাসপাতাল এখনো টিকে আছে এবং মিয়ানমারের মুসলিমরা আজো এই হাসপাতালে অর্থায়ন করে যাচ্ছে।

image

১৯৮৮ সালে নাম পরিবর্তন করে বার্মা হয়ে যায় মিয়ানমার। আর রেঙ্গুনকে হয় ইয়াঙ্গুন। কিন্তু মুসলিম ফ্রি হাসপাতাল নামটি অপরিবর্তিতই থেকে যায়।

হাসপাতালটি তার সেবা প্রদান শুরু করার পর থেকে ধর্ম, জাতিগতভাবে কোনো বৈষম্য করেনি। মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, হিন্দু সব ধর্মের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালটি।

বিশেষভাবে লক্ষনীয় যে এটা ঘটাছে মিয়ানমারে যেখানে মুসলমানরা সংখ্যালঘু। মিয়ানমারের জনসংখ্যার মাত্র ৪ ভাগ মুসলিম, যারা অত্যন্ত ভয়ের মধ্যে জীবনযাপন করছেন।

এখানে শান্তিপূর্ণ মুসলমানদের বিরুদ্ধে অত্যাচার-নিপীড়ন বেড়েই চলেছে। সন্ত্রাসী বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সরাসরি মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেয়।

বৌদ্ধ ভিক্ষুরাই তাদের সাথে পশুর মতো আচরণ করে এবং তারাই সব মুসলমানকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলে।

২০১৩ সালে টাইম ম্যাগাজিনের এক নিবন্ধে মিয়ানমারের মান্দালয় অঞ্চলে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সৃষ্ট রোমহর্ষক সন্ত্রাসী কমর্কাণ্ডের কথা প্রথম বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হয়। তখন থেকে এখানকার পরিস্থিতি ক্রমেই আরো খারাপের দিকেই এগিয়ে যেতে থাকে।

তারপরও কোনো অভিযোগ ছাড়াই সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের বিনা টাকায় সেবা দিয়ে যাচ্ছে মুসলিম ফ্রি হাসপাতাল। মুসলিম ফ্রি হাসপাতালের কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই।

মুসলিম ফ্রি হাসপাতালের কর্মচারীরা যেন ধর্মীয় সহিষ্ণুতার জ্বলন্ত উদাহরণ। মুসলিম, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ সব ধর্মের ডাক্তার ও সেবক-সেবিকা সন্মানের সাথে একসাথে কাজ করেন।

সীমিত সম্পদ দিয়ে হাসপাতালটির প্রদত্ত সেবার মান ও পরিমাণ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও অকল্পনীয়। মিয়ানমারের মুসলিমরা হাসপাতালটিতে বছরে প্রায় ৩১ কোটি টাকা প্রদান করে। রোগীরা টাকা থাকলে দেয়, না থাকলে দেয় না।

হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৪৫০ জন রোগী চিকিৎসা নেয়। এখানে রোগীদের জন্য রয়েছে ১৬০ টি বিছানা। এক পরিসংখ্যান মতে, ২০০০ সালে এক বছরে প্রায় ৬০০০ রোগী এখানে ভর্তি হয়েছিল।

এখানে রয়েছে মেডিসিন বিভাগ, সার্জারি বিভাগ, মা ও শিশু বিভাগ এবং রয়েছে চক্ষু রোগীদের জন্য বিশেষ বিভাগ। রয়েছে প্রসূতি বিভাগ যেখানে বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে ২২০ জন মা সন্তানের জন্ম দেন।

হাসপাতালে রয়েছে এক্স-রে সবিধা, আলট্রা সাউন্ড ইউনিট এবং রয়েছে অস্ত্রোপচার কক্ষসহ আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম।

সর্বমোট ৪৫ জন ডাক্তার নিবেদিতপ্রাণে হাসপাতালটিতে সময় দিচ্ছেন।

একটা জটিল পৃথিবী যেখানে প্রতিদিন  ভয়ঙ্কর সব ঘটনা ঘটছে সেখানে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে অন্যের সেবা করার মতো একটা উজ্জ্বল আলো দেখতে পাওয়া সত্যিই সুন্দর একটা ব্যাপার।

হাফিংটন পোস্ট/আরটিএনএন

মন্তব্য করুন

Back to top button