ছোট্ট একটি প্রাণী থেকে একটি বড় শিক্ষা
বাড়ির পিছনের টেরেসে একদিন সকালে আমি প্রায় একটি ঘন্টা নষ্ট করলাম, এক ছোট্ট পিপড়াকে পর্যবেক্ষণ করে, যে তার আকারের তুলনায় অনেক বড় একটি পাখা বহন করছিল। যাত্রাপথে পিপড়াটি প্রায়ই বাধার সম্মুখীন হচ্ছিল এবং সামান্য বিরতি দিয়ে আবার পথ খুঁজে নিচ্ছিল। এক জায়গায় এসে এটি কংক্রিটের ছোট একটি ফাঁটলের মুখোমুখি হল। একটু থামার পর সে তার বহন করা পাখাটিকে ফাটলের উপর রাখল এবং ফাটল পার হয়ে গিয়ে অপর পার্শ্ব থেকে আবার পাখাটি তুলে নিল। সে যাত্রা অব্যাহত রাখল।
আমি আল্লাহ্র সবচেয়ে ছোট্ট সৃষ্টির একটি এই পিপড়ার উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখে হতবাক হলাম। আল্লাহ্র সৃষ্টির অলৌকিকত্বের স্বাক্ষর সে কত চমৎকারভাবেই না বহন করে চলেছে। আকারে সে অতিশয় ক্ষুদ্র হতে পারে কিন্তু তারও চিন্তা করা, আবিষ্কার করা এবং বাধার মোকাবিলা করার মত মেধাশক্তি রয়েছে। আবার দু’পেয়ে মানুষের মত সংবেদনশীলতা, চারিত্রিক দুর্বলতাও তার মাঝে বর্তমান।
কিছুক্ষণ পর পিপড়াটি টেরেসের শেষ মাথায় একটি ফুলবাগানে তার গন্তব্যে পৌঁছে গেল। ক্ষুদ্র একটি ছিদ্র মাটির অভ্যন্তরে তার বাসস্থানের প্রবেশপথ। সহজেই সে ছিদ্রপথে ঢুকে গেল। কিন্তু ছিদ্রের তুলনায় এতবড় পাখাটি সে কিভাবে ঢুকাবে? চেষ্টা করেও সে পাখাটি ঢুকাতে সক্ষম হল না। অবশেষে সারাপথ কষ্ট স্বীকার করে, বুদ্ধি খাটিয়ে, সমস্যার মুকাবিলা করে এ পর্যন্ত পৌঁছার পর পিপড়াটি ক্ষান্তি দিল। পাখাটির মায়া পরিত্যাগ করে সে নিজ বাড়ি ফিরে গেল।
পিপড়াটি নিশ্চয়ই এই সমস্যার কথা তার বিরাট অভিযাত্রা শুরুর সময় ভাবেনি। ফলে পাখাটি তার জন্য শেষ পর্যন্ত নিছক বোঝায় পরিণত হল। আমি ভাবলাম, আমাদের জীবনটাও কি এমনই নয়? আমরা আমাদের পরিবার নিয়ে চিন্তিত হই। অর্থের চিন্তা করি। কর্ম, বাসস্থান ইত্যাদি সবকিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন হই। মূলত এগুলো তো সব আমাদের জীবনের একেকটি বোঝা। এসব জিনিস দীর্ঘ জীবনপরিক্রমায় আমরা সংগ্রহ করি এবং বড় বড় বাধা থেকে রক্ষা করে সযত্নে বহন করি শুধুমাত্র যেন এটা দেখার অপেক্ষায় যে গন্তব্যস্থলে পৌঁছার পর কিভাবে এটা অর্থহীন হয়ে পড়ছে। কেননা আমরা কোনমতেই সেগুলো সাথে নিতে পারব না।
সুতরাং এই পার্থিব জীবনে আমাদের সেসবই উপার্জন করা উচিৎ যা আমাদের পরবর্তী জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়; যেসব জিনিস প্রয়োজনীয় নয় তা বহন করা ঐ পিপড়াটির পাখা বহনের চেয়েও অর্থহীন। মৃত্যুর পর কেবল আমাদের কর্ম ছাড়া আর কিছুই আমাদের সাথে থাকবে না। আল্লাহ আমাদের সকলকে পরবর্তী জীবনের জন্য পূর্ণ প্রস্ত্ততি গ্রহণে সাহায্য করুন- আমীন!!
– মুনীরা আযীয, কাবুল, আফগানিস্তান।
১টি মন্তব্য