আমরা কিভাবে রামাদানের প্রস্তুতি নিব?
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি, আমাদেরকে রামাদানের প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফীক্ব দান করেছেন। দুরূদ, সালাম ও শান্তি বর্ষিত হউক মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর প্রতি যিনি, রামাদান আগমন করলে ‘স্ত্রীদের থেকে পৃথক হয়ে ইবাদত করতেন’। সাহাবা, তাবি‘য়ী, তাবি-তাবি‘য়ীসহ সকল মুসলিমদের প্রতিও যারা রামাদানের আগমনে বহুরূপী ইবাদতে আত্মনিয়োগ করতেন।
রামাদান মাস উপলক্ষে প্রস্তুতি নেয়ার কিছু প্রশংসনীয় ও অতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হল নিম্নরূপঃ
সত্যিকার তাওবাহ ও ইস্তিগফার করাঃ
জীবনে কৃত সকল অন্যায়, অপরাধ থেকে তাওবাহ করা। মনে রাখতে হবে কৃত অপরাধটি যেন আর পূণরাবৃত্তি না ঘটে, এজন্য অনুশোচিত হওয়া, ভাল-উত্তম ও সাওয়াবের কাজ করা। গুনাহমুক্ত পবিত্র মন ও প্রশান্ত হৃদয় নিয়ে রামাদানে প্রবেশ করে আনুগত্য ও ‘ইবাদাতে মশগুল হওয়া।
► মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
﴿وَتُوبُوا إِلٰى اللهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ﴾
“আর হে মু’মিনেরা, তোমরা সবাই, আল্লাহর কাছে তাওবাহ কর যাতে করে সফলকাম হতে পার।” [সূরা আন-নূর: ৩১]
► আল-আগার ইবন ইয়াসার (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন :
يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ فَإِنِّي أَتُوبُ فِي الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ
“হে লোক সকল, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবাহ কর কেননা, আমি দিনে তাঁর কাছে ১০০ বার তাওবাহ করি।” [মুসলিম ২৭০২]।
অধিক পরিমাণে দু‘আ পাঠ করাঃ
কোনো কোনো পূর্বসূরী (সাহাবীগণ, তাবি‘ঈনগণ …..) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তাঁরা ৬ মাস ধরে আল্লাহর কাছে দু‘আ করতেন যাতে তিনি তাঁদের রমযান মাস পাওয়ার তাওফীক্ব দেন, এরপর (রমযান শেষে) ৫ মাস ধরে এই দু‘আ করতেন যেন (রমযানের আ‘মালসমূহ) তাদের কাছ থেকে কবুল করা হয়। তাই একজন মুসলিম তার রবের কাছে দো‘আ করবে যাতে তিনি তাকে রমযান মাস পাবার তাওফীক্ব দেন সর্বোত্তম দীনি অবস্থা ও শারীরিক সুস্থতার মাঝে এবং তাঁর কাছে এই দো‘আ করবে যাতে তিনি তাকে তাঁর আনুগত্যে সাহায্য করেন এবং তাঁর কাছে এই দো‘আ করবে যাতে তিনি তার আমল কবুল করেন।
এই মহান মাসের আসন্ন আগমনে আনন্দিত হওয়াঃ
রমযান মাসের আগমন একজন মুসলিম বান্দার প্রতি আল্লাহ্ র সুমহান নি‘আমাতগুলোর (অনুগ্রহসমূহের) একটি, কারণ রমযান কল্যাণময় একটি মওসুম। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এটি হল ক্বুর‘আনের মাস, আমাদের দীনের গুরুত্বপূর্ণ, চূড়ান্ত সংগ্রামের মাস।
► মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
﴿قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ﴾
“বলুন, আল্লাহ্ র অনুগ্রহে ও তাঁর দয়ায়, অতঃপর এর দ্বারা তারা আনন্দিত হোক; তা, তারা যা সঞ্চয় করে তা থেকে উত্তম।” [সূরা ইঊনুস : ৫৮]
ওয়াজিব সিয়াম হতে নিজেকে দায়িত্ব মুক্ত হওয়াঃ
► আবূ সালামাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন :
سَمِعْتُ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا تَقُولُ : كَانَ يَكُونُ عَلَيَّ الصَّوْمُ مِنْ رَمَضَانَ فَمَا أَسْتَطِيعُ أَنْ أَقْضِيَهُ إِلا فِي شَعْبَانَ
“আমি ‘আয়েশাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বলতে শুনেছি, “আমার উপর বিগত রমযানের সাওম বাকি থাকত যার কাযা আমি শা‘বান ছাড়া আদায় করতে পারতাম না।” [বুখারী : ১৮৪৯ ও মুসলিম : ১১৪৬] হাফিজ ইবনু হাজার (রাহি.) বলেছেন : ‘এ হাদীস দ্বারা আয়েশা (রাদি) কর্তৃক শা‘বান মাসে রমযানের সিয়াম পালনের চেষ্টা প্রমাণ করে যে, এক রমযান এর কাযা আরেক রমযান প্রবেশ করা পর্যন্ত দেরী করা জায়েয নয়।” [ফাতহুল বারী ৪/১৯১]
পর্যাপ্ত ‘ইলম (জ্ঞান) অর্জন করা। যাতে সিয়ামের হুকুম-আহকাম, বিধি-বিধান এবং রমযান মাসের মর্যাদা সম্পর্কে জানা যায়।
রমযান মাসের ‘ইবাদাত থেকে একজন মুসলিমকে বিরত করতে পারে এমন কাজসমূহ দ্রুত সম্পন্ন করে ফেলা।
পরিবারের সদস্যবর্গ যেমন স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে বসে তাদেরকে সিয়ামের বিধি-বিধান শিক্ষা দেয়া এবং ছোটদের সিয়াম পালনে উৎসাহিত করা।
কিছু বই প্রস্তুত করা যা বাড়িতে বসে পড়া সম্ভব বা মাসজিদের ইমামকে উপহার দেয়া, যা তিনি রমযান মাসে লোকদের পড়ে শোনাবেন।
রমযান মাসের প্রস্তুতিস্বরূপ শা‘বান মাস থেকেই সিয়াম পালন শুরু করা।
► আয়েশাহ্ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ حَتَّى نَقُولَ لا يُفْطِرُ وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولَ لا يَصُومُ، فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ إِلا رَمَضَانَ، وَمَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ
‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এমনভাবে সিয়াম পালন করতেন যে আমরা বলতাম তিনি আর সিয়াম ভঙ্গ করবেন না এবং এমনভাবে সিয়াম ভঙ্গ করতেন যে আমরা বলতাম, তিনি আর সিয়াম পালন করবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে রমযান ছাড়া অন্য কোন মাসের গোটা অংশ সাওম পালন করতে দেখিনি এবং শা‘বান ছাড়া অন্য কোনো মাসে অধিক সিয়াম পালন করতে দেখি নি।” [বুখারী : ১৮৬৮ ও মুসলিম : ১১৫৬]
কুরআন তিলাওয়াত ও রামাদানে সালাফদের অবস্থা :
► সালামাহ ইবন কুহাইল বলেছেন : “শা‘বান মাসকে ক্বারীগণের মাস বলা হত।”
► আমর ইবন ক্বাইস : শা‘বান মাস শুরু হলে, তাঁর দোকান বন্ধ করে কুরআন তিলাওয়াতের জন্য অবসর নিতেন।
► আবূ বাকর আল-বালাখী বলেছেন : “রাজাব মাস হল বীজ বপনের মাস, শা‘বান মাস হল ক্ষেতে সেচ প্রদানের মাস এবং রমযান মাস হল ফসল তোলার মাস।”
► তিনি আরও বলেছেন : “রাজাব মাসের উদাহরণ হল বাতাসের ন্যায়, শা‘বান মাসের উদাহরণ মেঘের ন্যায়, রমযান মাসের উদাহরণ বৃষ্টির ন্যায় ; তাই যে রাজাব মাসে বীজ বপন করল না, শা‘বান মাসে সেচ প্রদান করল না, সে কীভাবে রমযান মাসে ফসল তুলতে চাইতে পারে?”
► রাজাব মাস গত হয়েছে, আর আমরা শা‘বান মাসে কি করবঃ যদি রমযান মাস পেতে চাই?
► এটা হলো বরকতময় মাসে আমাদের নবী ও উম্মাতের পূর্বসূরীগণের অবস্থা। এ সমস্ত আমল ও মর্যাদাপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান কী হবে?
মহান আল্লাহ আমাদেরকে রামাদানের পরিপূর্ণ পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতঃ তদানুযায়ী ‘আমল করে আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমে জান্নাত অর্জন করার তাওফীক্ব দান করুন, আমীন।
সংকলক: আব্দুস সালাম হুসাইন আলী। শিক্ষক, ইনসাইট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, উত্তরা, ঢাকা।