শবে মিরাজ : একটি প্রামাণ্য বিশ্লেষণ
শবে মিরাজ ও তার বিধান নিয়ে আমরা বক্ষ্যমাণ এ আর্টিকেলটিতে পাঁচটি পয়েন্টে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি, এটি মনোযোগ সহকারে পড়লে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত অনেক ভ্রান্ত বিশ্বাস ও ভুল ধারণা ভেঙে যাবে। সাধারণ মুসলিমদের পাশাপাশি ইমাম ও খতিবদের আলোচনার জন্যও এটি সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।
প্রথম কথা : তাহকিকের মানদণ্ড
রজব মাস আসলেই আমাদের দেশে রজবের দুআ, রজবের ফজিলত, রজবের রোজা, শবে মিরাজ, শবে মিরাজের আমল ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন রকমের জাল, মুনকার ও অগ্রহণযোগ্য হাদিস একত্রিত করে এসব প্রমাণ করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালায়। অনেক এমন আলোচকও দেখা যায়, যারা শুধু কোথাও ‘রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন’ কথাটি দেখলেই সেটাকে হাদিস বলে চালিয়ে দেয়। অনেকে আছে, যারা কোনো আরবি কিতাবে রাসুল সা.-এর নামে কোনো কিছু পেলেই সেটাকে হাদিস বলে মনে করে। অনেকে সনদযুক্ত সকল বর্ণনাকেই সঠিক হাদিস মনে করে। আবার অনেকে প্রসিদ্ধ কোনো হাদিসের গ্রন্থে হাদিস পেলেই সেটাকে বিশুদ্ধ বলে বিশ্বাস করে। অথচ এগুলোর কোনোটিই হাদিস যাচাইয়ের সঠিক পদ্ধতি নয়। উলুমুল হাদিস সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকলে কারও পক্ষে গ্রহণযোগ্য ও অগ্রহণযোগ্য হাদিস নির্ণয় করা অসম্ভবপ্রায়। শুধু সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম কিতাব দুটি ব্যতিক্রম। মুহাদ্দিসদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এতে বর্ণিত সব হাদিসই বিশুদ্ধ। এছাড়া বাকি যত হাদিসের কিতাব আছে, কোনো কিতাবই পুরোপুরি বিশুদ্ধ হাদিসের নিশ্চয়তা দেয় না; বরং তাতে সহিহ, জইফ, মুনকার, এমনকি কোনো কোনোটিতে জাল হাদিসও চলে এসেছে। তাই হাদিস যাচাইয়ের ক্ষেত্রে পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এমনটি শুধু রজব ও শবে মেরাজের ক্ষেত্রেই নয়; বরং শবে বরাত, শবে কদর, আশুরা, মিলাদুন্নবিসহ বিভিন্ন ধর্মীয় দিবসগুলোতেও আমরা এ ভুলগুলো দেখে আসছি। কেউ কোনোভাবে দুয়েকটি হাদিস আনলেও হাদিসের মান কী, এটা আদৌ গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের কিনা, সে বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার মতো পাঠক বা লেখক খুব কমই পাওয়া যায়। এজন্য আমাদের দেশে ইসলামের নামে অনৈসলামিক জিনিস গেলানো যতটা সহজ, আরববিশ্বে ততটা সহজ নয়। কারণ, ওখানকার অধিকাংশ লোক যাচাই-বাছাই করে কথা শোনে, মুখস্ত কথা বললেই মেনে নেয় না। সঠিক দলিল থাকলে সহজেই গ্রহণ করে, সে যে-ই হোক না কেন। আমাদেরও এমন মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি যে বাধার সম্মুখীন হতে হয়, তা হলো নবীনদের তাহকিকপূর্ণ কোনো কথা স্রেফ এ ভিত্তিতেই প্রত্যাখ্যান করা হয় যে, আমাদের অমুক আলিম তো এমন বলেনি! অথচ সেই অমুক এমন তাহকিক করার যোগ্যতাই রাখে না বা রাখলেও এ বিষয়ে তার তাহকিক করার সময় হয়ে ওঠে না। তদুপরি এ বিষয়ে এর বিপরীত দলিলসমৃদ্ধ কোনো লেখাও সে দেখাতে পারে না। তবুও সে নবীন আলিমের তাহকিকসমৃদ্ধ আর্টিকেল শুধু এজন্যই মানতে চায় না যে, অমুক বক্তা বা অমুক ইমাম সাহেব বা অমুক হুজুর তো এমন বলেন না! এই হলো আমাদের অধিকাংশ মানুষের মানসিকতা। এমন মানসিকতার দেশে সমাজের ধারণার বিপরীত নতুন তাহকিকপূর্ণ আর্টিকেল সাধারণত অকার্যকরই হয়ে থাকে। তবুও একটি পজেটিভ বিষয় বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সবাই না হলেও কিছু সত্যসন্ধানী মানুষ ধীরে ধীরে উঠে আসছে, যারা মিথ্যার বিপরীতে সত্যকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত; যদিও তা তার পূর্বের লালিত চিন্তা-চেতনার বিরুদ্ধ হয়।
দ্বিতীয় কথা : শবে মিরাজের তারিখ নির্ধারণ
মূলত রাসুল সা.-এর মিরাজ নিয়ে কোনো মতানৈক্য নেই। এটি সুসাব্যস্ত একটি বিষয়। কিন্তু এটি কবে ঘটেছে, এ নিয়ে বিস্তর মতানৈক্য রয়েছে। কারও মতে হিজরতের পাঁচ বছর পূর্বে, কারও মতে তিন বছর পূর্বে, কারও মতে দেড় বছর পূর্বে, কারও মতে এক বছর পূর্বে, কারও মতে ছয় মাস পূর্বে। অনুরূপ কোন মাসে হয়েছে, এ নিয়েও অনেক মত পাওয়া যায়। কারও মতে রবিউল আওয়ালে, কারও মতে রবিউল আখিরে, কারও মতে রজবে, কারও মতে রমজানে আর কারও মতে শাওয়ালে। এভাবে দিন বা তারিখ নিয়েও অনেক মত পাওয়া যায়।
হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন :
وَقَدِ اخْتُلِفَ فِي وَقْتِ الْمِعْرَاجِ فَقِيلَ كَانَ قَبْلَ الْمَبْعَثِ وَهُوَ شَاذٌّ إِلَّا إِنْ حُمِلَ عَلَى أَنَّهُ وَقَعَ حِينَئِذٍ فِي الْمَنَامِ كَمَا تَقَدَّمَ وَذَهَبَ الْأَكْثَرُ إِلَى أَنَّهُ كَانَ بَعْدَ الْمَبْعَثِ ثُمَّ اخْتَلَفُوا فَقِيلَ قَبْلَ الْهِجْرَةِ بِسَنَةٍ قَالَه بن سعد وَغَيره وَبِه جزم النَّوَوِيّ وَبَالغ بن حَزْمٍ فَنَقَلَ الْإِجْمَاعَ فِيهِ وَهُوَ مَرْدُودٌ فَإِنَّ فِي ذَلِكَ اخْتِلَافًا كَثِيرًا يَزِيدُ عَلَى عَشَرَةِ أَقْوَال مِنْهَا مَا حَكَاهُ بن الْجَوْزِيِّ أَنَّهُ كَانَ قَبْلَهَا بِثَمَانِيَةِ أَشْهُرٍ وَقِيلَ بِسِتَّةِ أَشْهُرٍ وَحَكَى هَذَا الثَّانِيَ أَبُو الرَّبِيعِ بن سَالم وَحكى بن حَزْمٍ مُقْتَضَى الَّذِي قَبْلَهُ لِأَنَّهُ قَالَ كَانَ فِي رَجَبٍ سَنَةَ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ مِنَ النُّبُوَّةِ وَقِيلَ بِأَحَدَ عَشَرَ شَهْرًا جَزَمَ بِهِ إِبْرَاهِيمُ الْحَرْبِيُّ حَيْثُ قَالَ كَانَ فِي رَبِيعٍ الْآخِرِ قبل الْهِجْرَة بِسنة وَرجحه بن الْمُنِيرِ فِي شَرْحِ السِّيرَةِ لِابْنِ عَبْدِ الْبَرِّ وَقيل قبل الْهِجْرَة بِسنة وشهرين حَكَاهُ بن عَبْدِ الْبَرِّ وَقِيلَ قَبْلَهَا بِسَنَةٍ وَثَلَاثَةِ أَشْهُرٍ حَكَاهُ بن فَارِسٍ وَقِيلَ بِسَنَةٍ وَخَمْسَةِ أَشْهُرٍ قَالَهُ السُّدِّيُّ وَأَخْرَجَهُ مِنْ طَرِيقِهِ الطَّبَرِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فَعَلَى هَذَا كَانَ فِي شَوَّالٍ أَوْ فِي رَمَضَانَ عَلَى إِلْغَاءِ الْكَسْرَيْنِ مِنْهُ وَمِنْ رَبِيعٍ الْأَوَّلِ وَبِهِ جَزَمَ الْوَاقِدِيُّ وَعَلَى ظَاهِرِهِ يَنْطَبِقُ مَا ذَكَرَهُ بن قُتَيْبَة وَحَكَاهُ بن عَبْدِ الْبَرِّ أَنَّهُ كَانَ قَبْلَهَا بِثَمَانِيَةَ عَشَرَ شهرا وَعند بن سعد عَن بن أَبِي سَبْرَةَ أَنَّهُ كَانَ فِي رَمَضَانَ قَبْلَ الْهِجْرَةِ بِثَمَانِيَةَ عَشَرَ شَهْرًا وَقِيلَ كَانَ فِي رَجَب حَكَاهُ بن عَبْدِ الْبَرِّ وَجَزَمَ بِهِ النَّوَوِيُّ فِي الرَّوْضَةِ وَقيل قبل الْهِجْرَة بِثَلَاث سِنِين حَكَاهُ بن الْأَثِيرِ وَحَكَى عِيَاضٌ وَتَبِعَهُ الْقُرْطُبِيُّ وَالنَّوَوِيُّ عَنِ الزُّهْرِيِّ أَنَّهُ كَانَ قَبْلَ الْهِجْرَةِ بِخَمْسِ سِنِينَ وَرَجَّحَهُ عِيَاضٌ وَمَنْ تَبِعَهُ.
‘মিরাজের সময় নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কারও মতে এটা নবুওয়াতের পূর্বেই হয়েছে। কিন্তু এটা অত্যন্ত দুর্বল ও বিচ্ছিন্ন মত। তবে স্বপ্নে দেখা উদ্দেশ্য নিলে ঠিক আছে; যেমনটি পূর্বে গত হয়েছে। আর অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মতে এটা নবুওয়াতপ্রাপ্তির পরে হয়েছে। এরপর তারা আবার মতভেদ করেছেন। কারও মতে এটা হিজরতের এক বছর পূর্বে হয়েছে। ইমাম ইবনে সাদ রহ.-সহ প্রমূখ এমনই বলেছেন। ইমাম নববি রহ. এটাকেই চূড়ান্ত বলেছেন। আর ইমাম ইবনে হাজাম রহ. তো অতিরঞ্জিত করে এ মতের ব্যাপারে ইজমার দাবি করেছেন। কিন্তু ইজমার দাবি পুরোই ভুল। কেননা, এ ব্যাপারে দশেরও অধিক মত পাওয়া যায়, যার কয়েকটি ইমাম ইবনুল জাওজি রহ. বর্ণনা করেছেন যে, হিজরতের আট মাস পূর্বে মিরাজ সংঘটিত হয়েছে এবং কারও মতে ছয় মাস পূর্বে। এ দ্বিতীয় মতটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আবুর রবি বিন সালিম রহ.। আর এর পূর্বের উক্তির দাবিকৃত মতটি বর্ণনা করেছেন ইমাম ইবনে হাজাম রহ.। কেননা, তিনি বলেছেন, মিরাজ সংঘটিত হয়েছে নবুওয়াতের দ্বাদশ বছরের রজব মাসে। কারও মতে এগারো মাস আগে। ইমাম ইবরাহিম হারবি রহ. এটাকে চূড়ান্ত মত বলেছেন। কেননা, তিনি বলেছেন, মিরাজ সংঘটিত হয়েছে হিজরতে এক বছর পূর্বে রবিউল আখিরে। ইমাম ইবনে আব্দুল বার রহ. রচিত “আস-সিরাহ” এর ব্যাখ্যাগ্রন্থে ইমাম ইবনে মুনির রহ. এটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কারও মতে হিজরতের এক বছর দুমাস পূর্বে। ইমাম ইবনে আব্দুল বার রহ. এ মতটি বর্ণনা করেছেন। কারও মতে হিজরতের এক বছর তিন মাস পূর্বে। ইমাম ইবনে ফারিস রহ. এ মতটি বর্ণনা করেছেন। কারও মতে হিজরতের এক বছর পাঁচ মাস পূর্বে। ইমাম সুদ্দি রহ. এ মতটি বর্ণনা করেছেন। তার সূত্রে ইমাম তাবারি রহ. ও ইমাম বাইহাকি রহ. বর্ণনাটি রিওয়ায়াত (বর্ণনা) করেছেন। এ মতানুসারে মিরাজ সংঘটিত হয়েছে রমজানে অথবা রবিউল আওয়াল ও রমজানের ভগ্নাংশ দুটি বাদ দিলে শাওয়ালে। ইমাম ওয়াকিদি রহ. এ মতটিকে চূড়ান্ত বলেছেন। এ মতের সাথে মিলে যায় যা ইমাম কুরতুবি রহ. উল্লেখ করেছেন এবং ইমাম ইবনে আব্দুল বার রহ. বর্ণনা করেছেন যে, হিজরতের আঠারো মাস পূর্বে মিরাজ সংঘটিত হয়েছে। ইমাম ইবনে সাদ রহ.-এর বর্ণনায় ইবনে আবু সাবরা রহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, মিরাজ হিজরতের আঠারো মাস পূর্বে রমজান মাসে সংঘটিত হয়েছে। কারও মতে মিরাজ রজব মাসে সংঘটিত হয়েছে, যা ইমাম ইবনে আব্দুল বার. বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম নববি রহ. তাঁর “রাওজাতুত তালিবিন”-এ চূড়ান্ত মত বলে অভিহিত করেছেন। কারও মতে হিজরতে তিন বছর পূর্বে মিরাজ সংঘটিত হয়েছে, যা ইমাম ইবনে আসির রহ. উল্লেখ করেছেন। কাজি ইয়াজ রহ. ও তাঁর অনুকরণে ইমাম কুরতুবি রহ. ও ইমাম নববি রহ. ইমাম জুহরি রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, এটা হিজরতের পাঁচ বছর পূর্বে সংঘটিত হয়েছে। কাজি ইয়াজ রহ. ও তাঁর অনুসারীরা এটাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।’ (ফাতহুল বারি : ৭/২০৩, প্রকাশনী : দারুল মারিফা, বৈরুত)
ইমাম ইবনুল জাওজি রহ. বলেন :
وَاتَّفَقَ الْعُلَمَاءُ عَلَى أَنَّ هَذَا الْمِعْرَاجَ كَانَ بِمَكَّةَ قَبْلَ الْهِجْرَةِ، وَاخْتَلَفُوا فِي الْمُدَّةِ الَّتِي كَانَتْ بَيْنَهُمَا عَلَى أَرْبَعَةِ أَقْوَالٍ: أَحَدُهَا: سَنَةٌ قَالَهُ ابْنُ عَبَّاسٍ. وَالثَّانِي: سِتَّةُ أَشْهُرٍ. قَالَهُ السُّدِّيُّ. وَالثَّالِثُ: ثَمَانِيَةَ عَشَرَ شَهْرًا. قَالَهُ الْوَاقِدِيُّ. ذَكَرَ هَذِهِ الأَقْوَالَ عَنْهُمْ أَبُو حَفْصِ بْنُ شَاهِينَ. وَالرَّابِعُ: ثَمَانِيَةُ أَشْهُرٍ. فَأَمَّا الْهِجْرَةُ فَإِنَّهَا كَانَتْ فِي يَوْمِ الاثْنَيْنِ ثَانِي عَشَرَ رَبِيعِ الأَوَّلِ، أَعْنِي الْيَوْمَ الَّذِي قَدِمَ فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ. فَعَلَى الْقَوْلِ الأَوَّلِ يَكُونُ الْمِعْرَاجُ فِي رَبِيعٍ الأَوَّلِ. وَعَلَى الثَّانِي وَالثَّالِثِ يَكُونُ فِي رَمَضَانَ. وَعَلَى الرَّابِعِ يَكُونُ فِي رجب. وقد ذكر محمد بن سعد عن الْوَاقِدِيُّ عَنْ أَشْيَاخٍ لَهُ قَالُوا: كَانَ الْمِعْرَاجُ لَيْلَةَ السَّبْتِ لِسَبْعَ عَشْرَةَ لَيْلَةً خَلَتْ مِنْ رَمَضَانَ قَبْلَ الْهِجْرَةِ بِثَمَانِيَةَ عَشَرَ شَهْرًا.
‘উলামায়ে কিরামের এ ব্যাপারে ঐকমত্য আছে যে, এ মিরাজ হিজরতের পূর্বে মক্কায় থাকাকালীন সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু হিজরত ও মিরাজের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যাপারে তাদের চারটি মত রয়েছে। এক. এক বছর। এটা ইবনে আব্বাস রা.-এর মত। দুই. ছয় মাস। এটা সুদ্দি রহ.-এর মত। তিন. আঠারো মাস। এটা ইমাম ওয়াকিদি রহ.-এর মত। তাঁদের থেকে এ মতগুলো ইমাম আবু হাফস শাহিন রহ. উল্লেখ করেছেন। চার. আট মাস। এদিকে হিজরত হয়েছে রবিউল আউয়ালের দ্বাদশ দিবসে সোমবার। অর্থাৎ এদিনেই তিনি মদিনায় পৌঁছেন। সুতরাং প্রথম মতানুসারে মিরাজ রবিউল আওয়াল মাসে হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় মতানুসারে রমজান মাসে হয়েছে। আর চতুর্থ মতানুসারে রজব মাসে হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাদ রহ. ইমাম ওয়াকিদি রহ. সূত্রে তাঁর উস্তাদদের থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁরা বলেছেন, হিজরতের আঠারো মাস পূর্বে রমজানের সতেরো তারিখে রোববার রাতে মিরাজ সংঘটিত হয়।’ (আত-তাবসিরা, ইবনুল জাওজি : ২/৩৩-৩৪, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত)
ইমাম ইবনে রজব হাম্বলি রহ. বলেন :
وقد روي: أنه في شهر رجب حوادث عظيمة ولم يصح شيء من ذلك فروي: أن النبي صلى الله عليه وسلم ولد في أول ليلة منه وأنه بعث في السابع والعشرين منه وقيل: في الخامس والعشرين ولا يصح شيء من ذلك وروى بإسناد لا يصح عن القاسم بن محمد: أن الإسراء بالنبي صلى الله عليه وسلم كان في سابع وعشرين من رجب وانكر ذلك إبراهيم الحربي وغيره
‘বর্ণিত আছে যে, রজব মাসে অনেক বড় বড় ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, কিন্তু এর একটিও বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়। যেমন বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সা. এ মাসের প্রথম রাতে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং এ মাসের সাতাশ তারিখে তিনি নবুওয়াতপ্রাপ্ত হন, কারও মতে পঁচিশ তারিখে। এর কোনোটিই বিশুদ্ধভাবে সাব্যস্ত নয়। অনুরূপ অশুদ্ধ সূত্রে কাসিম বিন মুহাম্মাদ রহ. থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সা.-এর মিরাজ রজবের সাতাশ তারিখে হয়েছে। ইমাম ইবরাহিম রহ.-সহ প্রমূখ এটা খণ্ডন করেছেন।’ (লাতায়িফুল মাআরিফ : ১২১, প্রকাশনী : দারু ইবনি হাজাম)
মূলত এগুলোর কোনোটির পক্ষেই প্রমাণযোগ্য কোনো বর্ণনা বা হাদিস পাওয়া যায় না। তাই নির্দিষ্টভাবে ২৭শে রজবকে শবে মিরাজ মনে করার কোনো অবকাশ নেই।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন :
هَذَا إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ الْإِسْرَاءِ تُعْرَفُ عَيْنُهَا، فَكَيْفَ وَلَمْ يَقُمْ دَلِيلٌ مَعْلُومٌ لَا عَلَى شَهْرِهَا وَلَا عَلَى عَشْرِهَا وَلَا عَلَى عَيْنِهَا، بَلِ النُّقُولُ فِي ذَلِكَ مُنْقَطِعَةٌ مُخْتَلِفَةٌ لَيْسَ فِيهَا مَا يُقْطَعُ بِهِ،
‘এটা তখনই ঠিক হতো, যখন মিরাজের রাত নির্দিষ্টভাবে জানা থাকত। অথচ এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত কোনো প্রমাণ নেই, না এর মাসের ব্যাপারে, না এর দশকের ব্যাপারে আর না নির্দিষ্ট কোনো দিনের ব্যাপারে; বরং এ ব্যাপারে সকল বর্ণনাই সূত্রবিচ্ছিন্ন ও মতানৈক্যপূর্ণ, যার কোনোটিই সুনিশ্চিত নয়।’ (জাদুল মাআদ : ১/৫৮, প্রকাশনী : মুআসসাসাতুর রিসালা, বৈরুত)
সুতরাং শবে মিরাজ যেহেতু নির্দিষ্টভাবে নির্ধারিতই নয়, তাই বিশেষ কোনো রাতকে শবে মিরাজ বানিয়ে তাতে বিশেষভাবে ইবাদত করা বিদআত বা দ্বীনের মধ্যে নব আবিষ্কার বলে বিবেচিত হবে। আর শরিয়তে বিদআত জঘন্যতম একটি গুনাহ ও প্রত্যাখ্যাত কর্ম।
যেমন সহিহ বুখারির বর্ণনায় এসেছে :
حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ القَاسِمِ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدٌّ.
‘আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু আবিষ্কার করল, যা দ্বীনের অংশ নয় তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত।’ (সহিহুল বুখারি : ৩/১৮৪, হা. নং ২৬৯৭)
সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَطَبَ احْمَرَّتْ عَيْنَاهُ، وَعَلَا صَوْتُهُ، وَاشْتَدَّ غَضَبُهُ، حَتَّى كَأَنَّهُ مُنْذِرُ جَيْشٍ… وَيَقُولُ: أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ، وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ، وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَة.
‘জাবির বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. যখন খুতবা (ভাষণ) দিতেন তখন তাঁর চক্ষুদ্বয় রক্তিম বর্ণ ধারণ করত, কণ্ঠস্বর জোরালো হতো, তাঁর রাগ বেড়ে যেত; এমনকি মনে হতো, তিনি যেন শত্রুবাহিনী সম্পর্কে সতর্ক করছেন …এবং বলতেন, সর্বনিকৃষ্ট কর্ম হলো বিদআত বা দ্বীনের নামে নবআবিস্কৃত কাজ। আর প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহি।’ (সহিহু মুসলিম : ২/৫৯২, হা. নং ৮৬৭)
মোটকথা, শবে মিরাজ কবে সংঘটিত হয়েছে, এ ব্যাপারে নির্দিষ্টভাবে কোনো মাস বা তারিখ বলার সুযোগ নেই। শবে মিরাজ চূড়ান্তভাবে নির্দিষ্ট না হওয়া এটাই প্রমাণ করে যে, রাসুলুল্লাহ সা. ও তাঁর সাহাবায়ে কিরাম রা.-এর কাছে এ দিবস পালনের কোনো বিশেষত্ব বা গুরুত্ব ছিল না। আর এজন্যই নির্দিষ্টভাবে এর তারিখ নির্ণয় করা পরবর্তী লোকদের পক্ষে কঠিন হয়ে গেছে।
তৃতীয় কথা : মিরাজ স্বশরীরে নাকি স্বপ্নযোগে?
এ ব্যাপারে কিছুটা মতানৈক্য রয়েছে। আল্লামা ইবনে কাসির রহ. বলেন :
ثُمَّ اخْتَلَفَ النَّاسُ: هَلْ كَانَ الْإِسْرَاءُ بِبَدَنِهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَرُوحِهِ، أَوْ بِرُوحِهِ فَقَطْ؟ عَلَى قَوْلَيْنِ، فَالْأَكْثَرُونَ مِنَ الْعُلَمَاءِ عَلَى أَنَّهُ أُسْرِيَ بِبَدَنِهِ وَرُوحِهِ يَقَظَةً لا مناما، ولا ينكرون أَنْ يَكُونَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى قَبْلَ ذَلِكَ مَنَامًا ثُمَّ رَآهُ بعد يقظة،
‘এরপর লোকেদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে যে, তাঁর মিরাজ কি দেহ ও রুহ উভয়টির মাধ্যমে হয়েছে নাকি শুধু রুহের মাধ্যমে। এখানে দুটি মত পাওয়া যায়। তবে অধিকাংশ উলামায়ে কিরামের মতানুসারে তাঁর মিরাজ দেহ ও রুহ উভয়টির মাধ্যমে জাগ্রত অবস্থায় সংঘটিত হয়েছে, স্বপ্নযোগে নয়। তারা এটাও অস্বীকার করেন না যে, রাসুলুল্লাহ সা. মিরাজের পূর্বে স্বপ্ন দেখেছিলেন এরপর জাগ্রত অবস্থায় বাস্তবেও সব দেখেছেন।’ (তাফসিরু ইবনি কাসির : ৫/৪০-৪১, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত)
সশরীরে হওয়ার কয়েকটি দলিল :
ক. আল্লাহ তাআলা সুরা বনি ইসরাইলে মিরাজের রাতের ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন :
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত, যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি; যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ০১)
আল্লাহ তাআলা এখানে ‘সুবহান’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। আর এটা কেবল ওই সব ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ও মহান কোনো কিছু বুঝানো হয়ে থাকে। অতএব, রাসুলুল্লাহ সা.-এর মিরাজ যদি সশরীরে না হয়ে স্বপ্নযোগে হতো তাহলে তো এটা স্বাভাবিক বিষয় হতো, এতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাব্যস্ত হতো না। কেননা, স্বপ্নে অনেক বিষয়ই দেখা যায়, যা বাস্তবে সম্ভব নয়। তাই স্বপ্নযোগে মিরাজ হয়ে থাকলে কুরআনে এখানে ‘সুবহান’ শব্দ ব্যবহার করাটা অনর্থক সাব্যস্ত হয়। একমাত্র সশরীরে মিরাজ হলে তবেই ‘সুবহান’ শব্দটির ব্যবহার এখানে যথার্থ হয়। কুরআনের এ ইঙ্গিত থেকে সাব্যস্ত হয় যে, রাসুলুল্লাহ সা.-এর মিরাজ সশরীরেই ছিল। (দ্রষ্টব্য- তাফসিরু ইবনি কাসির : ৫/৪০-৪১, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত)
খ. কুরআনের এ আয়াতে ‘আব্দুন’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আর দেহ ও রুহের সমন্বয় হলেই তাকে ‘আব্দুন’ বা বান্দা বলা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ০১) এখানে আল্লাহ তাআলা তাঁর নবির জন্য ‘আব্দুন’ বা বান্দা শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এ রাতে তাঁকে সশরীরে সফর করানো হয়েছে। (দ্রষ্টব্য- তাফসিরু ইবনি কাসির : ৫/৪১, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত)
গ. আল্লাহ তাআলা কুরআনে এ মিরাজকে মানুষদের জন্য ফিতনা তথা পরীক্ষা বলে অভিহিত করেছেন। যেমন ইরশাদ হচ্ছে :
وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْنَاكَ إِلَّا فِتْنَةً لِلنَّاسِ
‘আর আমি আপনাকে যে দৃশ্য দেখিয়েছি, তা শুধু মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৬০)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، فِي قَوْلِهِ تَعَالَى: {وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْنَاكَ إِلَّا فِتْنَةً لِلنَّاسِ} قَالَ: هِيَ رُؤْيَا عَيْنٍ، أُرِيَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ إِلَى بَيْتِ المَقْدِسِ
‘ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর বাণী “আর আমি আপনাকে যে দৃশ্য দেখিয়েছি, তা শুধু মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য” এর ব্যাখ্যায় বলেন, এটি হলো প্রত্যক্ষভাবে চোখের দেখা, যা রাসুলুল্লাহ সা.-কে সে রাতে দেখানো হয়েছে, যে রাতে তাঁকে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয়েছিল।’ (সহিহুল বুখারি : ৫/৫৪, হা. নং ৩৮৮৮, প্রকাশনী : দারু তাওকিন নাজাত. বৈরুত)
আর পরীক্ষা তো তখনই হবে, যখন এটাকে সশরীরে মিরাজ বলে মেনে নেওয়া হবে। নচেৎ স্বপ্নযোগে হলে সেটা বিশ্বাস করা তো খুবই সহজ ও সাধারণ। এতে তো কোনো পরীক্ষা সাব্যস্ত হয় না। সুতরাং কুরআনের আয়াতের অর্থ ও মর্ম যথাযথভাবে সাব্যস্ত করতে হলে মিরাজকে সশরীরে মানতে হবে। অন্যথায় ‘পরীক্ষা করার জন্য’ কথাটির কোনো অর্থই থাকে না।
ঘ. যদি মিরাজ সশরীরে না হয়ে শুধু স্বপ্নযোগে হতো তাহলে এটা নিয়ে কাফিররা হইচই করত না এবং দুর্বল মুসলমানেরা মুরতাদও হয়ে যেত না। কেননা, স্বপ্নযোগে হলে তো এটা সাধারণ বিষয় হতো, এর কারণে এত বিশাল আলোড়ন সৃষ্টি হতো না। কিন্তু এটা যেহেতু সশরীরে হওয়ার কথা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, সেজন্যই সবাই এটা নিয়ে মাতামাতি শুরু করে দেয় এবং এটাকে অসম্ভব ও মিথ্যা ভেবে কিছু দুর্বল ইমানের অধিকারী পুনরায় কাফিরদের দলে যোগ দেয়। আর এটা এমনই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল যে, আবু বকর রা. প্রথম শোনায়ই এটা বিশ্বাস করে নেওয়ায় তাঁর নামের শেষে আজীবনের জন্য ‘সিদ্দিক’ উপাধী লেগে যায়। যেমনটি মুসতাদরাকে হাকিমের বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে :
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: لَمَّا أُسْرِيَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى أَصْبَحَ يَتَحَدَّثُ النَّاسُ بِذَلِكَ، فَارْتَدَّ نَاسٌ مِمَّنْ كَانَ آمَنُوا بِهِ وَصَدَّقُوهُ، وَسَمِعُوا بِذَلِكَ إِلَى أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَقَالُوا: هَلْ لَكَ إِلَى صَاحِبِكَ يَزْعُمُ أَنَّهُ أُسْرِيَ بِهِ اللَّيْلَةَ إِلَى بَيْتِ الْمَقْدِسِ، قَالَ: أَوَ قَالَ ذَلِكَ؟ قَالُوا: نَعَمْ، قَالَ: لَئِنْ كَانَ قَالَ ذَلِكَ لَقَدْ صَدَقَ، قَالُوا: أَوَ تُصَدِّقُهُ أَنَّهُ ذَهَبَ اللَّيْلَةَ إِلَى بَيْتِ الْمَقْدِسِ وَجَاءَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ؟ قَالَ: نَعَمْ، إِنِّي لَأَصُدِّقُهُ فِيمَا هُوَ أَبْعَدُ مِنْ ذَلِكَ أُصَدِّقُهُ بِخَبَرِ السَّمَاءِ فِي غَدْوَةٍ أَوْ رَوْحَةٍ، فَلِذَلِكَ سُمَيَّ أَبُو بَكْرٍ الصِّدِّيقَ
‘আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবি সা.-কে (মিরাজের) রাতে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হলো, (সকালে ঘটনা জানতে পেরে) লোকেরা এ নিয়ে পরস্পর বিভিন্ন কথা বলাবলি করতে লাগল। এতে কিছু লোক মুরতাদ হয়ে গেল, যারা ইতিপূর্বে তাঁর ওপর ইমান এনেছিল এবং তাঁকে সত্যায়ন করেছিল। তারা আবু বকর রা.-কে ঘটনা শুনিয়ে বলল, তোমার বন্ধুর কথা শুনেছ? সে দাবি করছে, আজ রাতে নাকি তাঁকে বাইতুল মুকাদ্দাস সফর করানো হয়েছে! তিনি বললেন, সত্যিই কি তিনি এমন বলেছেন? তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, যদি তিনি এটা বলে থাকেন, তাহলে অবশ্যই সত্য বলেছেন। তারা বলল, তুমি কি একথা বিশ্বাস করো যে, রাতে সে বাইতুল মুকাদ্দাসে গিয়ে সকাল হওয়ার আগেই ফিরে এসেছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি তো এর চেয়ে অসম্ভব কথাও বিশ্বাস করি। সকাল-সন্ধ্যা তাঁর নিকট আসমানের অহি আসার বিষয়ে আমি তাঁকে সত্যায়ন করি। এ ঘটনার কারণেই তাঁকে ‘সিদ্দিক’ বা মহাসত্যবাদী বলে ডাকা হয়।’ (মুসতাদরাকুল হাকিম : ৩/৬৫, হা. নং ৪৪০৭, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত)
ঙ. যদি মিরাজকে সশরীরে না বলে স্বপ্নযোগে বলা হয়, তাহলে এটা রাসুলুল্লাহ সা.-এর মুজিজা বলে সাব্যস্ত হয় না। অথচ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হলো, মিরাজ আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি মুজিজা। আর মুজিজা হলো নবিদের থেকে প্রকাশিত আলৌকিক কোনো ঘটনা বা বিষয়। সুতরাং এটা মুজিজা তখনই সাব্যস্ত হবে, যখন এ কথা মানা হবে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সশরীরে আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ, এমনটা স্বাভবিক নিয়মে অসম্ভব ছিল, কিন্তু মুজিজা হওয়ার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু স্বপ্নযোগে মিরাজের দাবি করলে এটাকে মুজিজা বলার কোনো সুযোগ থাকে না।’ (দ্রষ্টব্য- মাআরিজুল কবুল : ৩/১০৬৭, প্রকাশনী : দারু ইবনিল কাইয়িম, দাম্মাম)
চ. সহিহ হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, মিরাজের রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বোরাকে আরোহন করিয়ে ভ্রমণ করানো হয়েছে। আর বোরাক অস্বাভাবিক দ্রুতগতিসম্পন্ন একটি বিশেষ প্রাণী, যা দেহবিশিষ্ট কোনো কিছুর জন্যই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য বিশেষভাবে বোরাকের ব্যবস্থা করাই প্রমাণ করে যে, তাঁর মিরাজ সশরীরে হয়েছিল। কেননা, রুহের জন্য এমন কোনো প্রাণী বা যানবাহনের প্রয়োজন পড়ে না।’ (দ্রষ্টব্য- তাফসিরু ইবনি কাসির : ৫/৪১, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত)
এছাড়াও আরও অনেক দলিল রয়েছে, যা থেকে প্রমাণ হয় যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মিরাজ স্বপ্নযোগে নয়; বরং সশরীরে ছিল। যারা সত্যপ্রত্যাশী, তাদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।
চতুর্থ কথা : শবে মিরাজের ঘটনার বিশুদ্ধ বিবরণ
শবে মিরাজের ঘটনা নিয়ে আমাদের দেশে বিভিন্ন কিসসা-কাহিনী ও বানোয়াট কথা প্রচলিত আছে, যা তাহকিকের নিরিখে একটিও প্রচারযোগ্য নয়। এ আলোচনায় আমরা বিশাল কলেবরের বিশুদ্ধ দুটি হাদিস এনেছি, যা থেকে শবে মিরাজের পূর্ণ বিবরণ পাওয়া যাবে। আর সরল পথের পথিক মুমিনদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।
সহিহ বুখারিতে শবে মিরাজের বিবরণ বর্ণিত হয়েছে :
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: كَانَ أَبُو ذَرٍّ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” فُرِجَ عَنْ سَقْفِ بَيْتِي وَأَنَا بِمَكَّةَ، فَنَزَلَ جِبْرِيلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَفَرَجَ صَدْرِي، ثُمَّ غَسَلَهُ بِمَاءِ زَمْزَمَ، ثُمَّ جَاءَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٍ حِكْمَةً وَإِيمَانًا، فَأَفْرَغَهُ فِي صَدْرِي، ثُمَّ أَطْبَقَهُ، ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِي، فَعَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَلَمَّا جِئْتُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، قَالَ جِبْرِيلُ: لِخَازِنِ السَّمَاءِ افْتَحْ، قَالَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ هَذَا جِبْرِيلُ، قَالَ: هَلْ مَعَكَ أَحَدٌ؟ قَالَ: نَعَمْ مَعِي مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَلَمَّا فَتَحَ عَلَوْنَا السَّمَاءَ الدُّنْيَا، فَإِذَا رَجُلٌ قَاعِدٌ عَلَى يَمِينِهِ أَسْوِدَةٌ، وَعَلَى يَسَارِهِ أَسْوِدَةٌ، إِذَا نَظَرَ قِبَلَ يَمِينِهِ ضَحِكَ، وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ يَسَارِهِ بَكَى، فَقَالَ: مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالِابْنِ الصَّالِحِ، قُلْتُ لِجِبْرِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا آدَمُ، وَهَذِهِ الأَسْوِدَةُ عَنْ يَمِينِهِ وَشِمَالِهِ نَسَمُ بَنِيهِ، فَأَهْلُ اليَمِينِ مِنْهُمْ أَهْلُ الجَنَّةِ، وَالأَسْوِدَةُ الَّتِي عَنْ شِمَالِهِ أَهْلُ النَّارِ، فَإِذَا نَظَرَ عَنْ يَمِينِهِ ضَحِكَ، وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ شِمَالِهِ بَكَى حَتَّى عَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ، فَقَالَ لِخَازِنِهَا: افْتَحْ، فَقَالَ لَهُ خَازِنِهَا مِثْلَ مَا قَالَ الأَوَّلُ: فَفَتَحَ، – قَالَ أَنَسٌ: فَذَكَرَ أَنَّهُ وَجَدَ فِي السَّمَوَاتِ آدَمَ، وَإِدْرِيسَ، وَمُوسَى، وَعِيسَى، وَإِبْرَاهِيمَ صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِمْ، وَلَمْ يُثْبِتْ كَيْفَ مَنَازِلُهُمْ غَيْرَ أَنَّهُ ذَكَرَ أَنَّهُ وَجَدَ آدَمَ فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا وَإِبْرَاهِيمَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ، قَالَ أَنَسٌ – فَلَمَّا مَرَّ جِبْرِيلُ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِإِدْرِيسَ قَالَ: مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالأَخِ الصَّالِحِ، فَقُلْتُ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا إِدْرِيسُ، ثُمَّ مَرَرْتُ بِمُوسَى فَقَالَ: مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالأَخِ الصَّالِحِ، قُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا مُوسَى، ثُمَّ مَرَرْتُ بِعِيسَى فَقَالَ: مَرْحَبًا بِالأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ، قُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا عِيسَى، ثُمَّ مَرَرْتُ بِإِبْرَاهِيمَ، فَقَالَ: مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالِابْنِ الصَّالِحِ، قُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا إِبْرَاهِيمُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ “، قَالَ ابْنُ شِهَابٍ: فَأَخْبَرَنِي ابْنُ حَزْمٍ، أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ، وَأَبَا حَبَّةَ الأَنْصَارِيَّ، كَانَا يَقُولاَنِ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ثُمَّ عُرِجَ بِي حَتَّى ظَهَرْتُ لِمُسْتَوَى أَسْمَعُ فِيهِ صَرِيفَ الأَقْلاَمِ»، قَالَ ابْنُ حَزْمٍ، وَأَنَسُ بْنُ مَالِكٍ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” فَفَرَضَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى أُمَّتِي خَمْسِينَ صَلاَةً، فَرَجَعْتُ بِذَلِكَ، حَتَّى مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى، فَقَالَ: مَا فَرَضَ اللَّهُ لَكَ عَلَى أُمَّتِكَ؟ قُلْتُ: فَرَضَ خَمْسِينَ صَلاَةً، قَالَ: فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ، فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُ ذَلِكَ، فَرَاجَعْتُ، فَوَضَعَ شَطْرَهَا، فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى، قُلْتُ: وَضَعَ شَطْرَهَا، فَقَالَ: رَاجِعْ رَبَّكَ، فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُ، فَرَاجَعْتُ فَوَضَعَ شَطْرَهَا، فَرَجَعْتُ إِلَيْهِ، فَقَالَ: ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ، فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُ ذَلِكَ، فَرَاجَعْتُهُ، فَقَالَ: هِيَ خَمْسٌ، وَهِيَ خَمْسُونَ، لاَ يُبَدَّلُ القَوْلُ لَدَيَّ، فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى، فَقَالَ: رَاجِعْ رَبَّكَ، فَقُلْتُ: اسْتَحْيَيْتُ مِنْ رَبِّي، ثُمَّ انْطَلَقَ بِي، حَتَّى انْتَهَى بِي إِلَى سِدْرَةِ المُنْتَهَى، وَغَشِيَهَا أَلْوَانٌ لاَ أَدْرِي مَا هِيَ؟ ثُمَّ أُدْخِلْتُ الجَنَّةَ، فَإِذَا فِيهَا حَبَايِلُ اللُّؤْلُؤِ وَإِذَا تُرَابُهَا المِسْكُ
‘আনাস বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু জার রা. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি মক্কায় থাকাবস্থায় আমার গৃহের ছাদ উন্মুক্ত করা হলো। অতঃপর জিবরিল আ. অবতীর্ণ হয়ে আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। আর তা জমজমের পানি দ্বারা ধৌত করলেন। অতঃপর হিকমত ও ইমানে ভর্তি একটি সোনার পাত্র নিয়ে আসলেন এবং তা আমার বুকের মধ্যে ঢেলে দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। অতঃপর হাত ধরে আমাকে দুনিয়ার আকাশের দিকে নিয়ে চললেন। পরে যখন দুনিয়ার আকাশে আসলাম, জিবরিল আ. আসমানের রক্ষককে বললেন, দরজা খোলো। আসমানের রক্ষক বললেন, কে আপনি? জিবরিল আ. বললেন, আমি জিবরিল। আকাশের রক্ষক বললেন, আপনার সঙ্গে কেউ রয়েছেন কি? জিবরিল আ. বললেন, হ্যাঁ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রয়েছেন। অতঃপর রক্ষক বললেন, তাঁকে কি ডাকা হয়েছে? জিবরিল আ. বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর যখন আমাদের জন্য দুনিয়ার আসমান খুলে দেওয়া হলো এবং আমরা দুনিয়ার আসমানে প্রবেশ করলাম তখন দেখলাম, সেখানে এমন এক ব্যক্তি উপবিষ্ট রয়েছেন, যার ডান পাশে অনেক মানুষের আকৃতি রয়েছে এবং বাম পাশেও রয়েছে অনেক মানুষের আকৃতি। যখন তিনি ডান দিকে তাকাচ্ছেন হেসে উঠছেন, আর যখন বাম দিকে তাকাচ্ছেন কাঁদছেন। অতঃপর তিনি বললেন, স্বাগতম হে সৎ নবি ও সৎ সন্তান। আমি জিবরিল আ.-কে বললাম, কে এই ব্যক্তি? তিনি জবাব দিলেন, ইনি হচ্ছেন আদম আ.। আর তার ডানে বামে রয়েছে তাঁর সন্তানদের রুহ। তাদের মধ্যে ডান দিকের লোকেরা জান্নাতী আর বাম দিকের লোকেরা জাহান্নামী। ফলে তিনি যখন ডান দিকে তাকান তখন হাসেন আর যখন বাম দিকে তাকান তখন কাঁদেন। অতঃপর জিবরিল আ. আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে উঠলেন। অতঃপর তার রক্ষককে বললেন, দরজা খোলো। তখন এর রক্ষক প্রথম রক্ষকের মতোই প্রশ্ন করলেন। পরে দরজা খুলে দেওয়া হলো। আনাস রা. বলেন, আবু জার রা. উল্লেখ করেন যে, তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসমানসমূহে আদম আ., ইদরিস আ., মুসা আ., ইসা ও ইবরাহিম আ-কে দেখতে পেয়েছেন। কিন্তু আবু জার রা. তাদের স্থানসমূহ নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। তবে এতটুকু উল্লেখ করেছেন যে, তিনি আদম আ.-কে দুনিয়ার আকাশে এবং ইবরাহিম আ.-কে ষষ্ঠ আসমানে পেয়েছেন। আনাস রা. বলেন, জিবরিল আ. যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে নিয়ে ইদরিস আ.-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন তখন ইদরিস আ. বললেন, মারহাবা হে সৎ ভাই ও পুণ্যবান নবি। আমি বললাম, ইনি কে? জিবরিল আ. বললেন, ইনি হচ্ছেন ইদরিস আ.। অতঃপর আমি মুসা আ.-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তিনি বললেন, মারহাবা হে সৎ নবি ও পুণ্যবান ভাই। আমি বললাম, ইনি কে? জিবরিল আ. বললেন, ইনি মুসা আ.। অতঃপর আমি ইসা আ.-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তিনি বললেন, মারহাবা হে সৎ নবি ও পুণ্যবান ভাই। আমি বললাম, ইনি কে? জিবরিল আ. বললেন, ইনি হচ্ছেন ইসা আ.। অতঃপর আমি ইবরাহিম আ.-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলে তিনি বললেন, মারহাবা হে পুণ্যবান নবি ও নেক সন্তান। আমি বললাম, ইনি কে? জিবরিল আ. বললেন, ইনি হচ্ছেন ইবরাহিম আ.। ইবনে শিহাব জুহরি রহ. বলেন, (বিখ্যাত তাবিয়ি) ইবনে হাজাম রহ. আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, ইবনে আব্বাস রা. ও আবু হাব্বা আনসারি রা. উভয়ে বলতেন, নবি সা. বলেছেন, এরপর আমাকে আরও উপরে উঠানো হলো। অতঃপর এমন এক সমতল স্থানে এসে আমি উপনীত হলাম, যেখানে আমি লেখার শব্দ শুনতে পাই। ইবনে হাজাম রহ. ও আনাস বিন মালিক রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অতঃপর আল্লাহ আমার উম্মতের ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দেন। অতঃপর তা নিয়ে আমি ফিরে আসি। অবশেষে যখন মুসা আ.-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলাম তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা আপনার উম্মতের ওপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার পালনকর্তার নিকট ফিরে যান। কেননা, আপনার উম্মত তা আদায় করতে পারবে না। আমি ফিরে গেলাম। আল্লাহ তাআলা কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। আমি মুসা আ.-এর নিকট পুনরায় গেলাম আর বললাম, আল্লাহ তাআলা কিছু অংশ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনি পুনরায় আপনার রবের নিকট ফিরে যান। কারণ, আপনার উম্মত এটিও আদায় করতে পারবে না। আমি ফিরে গেলাম। তখন আরও কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া হলো। আবারও মুসা আ.-এর নিকট গেলাম। এবারও তিনি বললেন, আপনি পুনরায় আপনার প্রতিপালকের নিকট যান। কারণ, আপনার উম্মত এটিও আদায় করতে সক্ষম হবে না। তখন আমি পুনরায় গেলাম, তখন আল্লাহ বললেন, এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই (নেকির দিক দিয়ে) পঞ্চাশ ওয়াক্তের নামাজ (বলে গণ্য হবে)। আর আমার কথার কোনো রদবদল হয় না। আমি পুনরায় মুসা আ.-এর নিকট আসলে তিনি আমাকে আবারও বললেন, আপনার প্রতিপালকের নিকট পুনরায় যান। আমি বললাম, পুনরায় আমার প্রতিপালকের নিকট যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। অতঃপর জিবরিল আ. আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। আর তখন তা বিভিন্ন রঙে আবৃত ছিল, যার তাৎপর্য আমি অবগত ছিলাম না। অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলে আমি দেখতে পেলাম যে, তাতে রয়েছে মুক্তোমালা আর তার মাটি হচ্ছে কস্তুরী।’ (সহিহুল বুখারি : ১/৭৮-৭৯, হা. নং ৩৪৯, প্রকাশনী : দারু তাওকিন নাজাত, বৈরুত)
সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে :
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أُتِيتُ بِالْبُرَاقِ، وَهُوَ دَابَّةٌ أَبْيَضُ طَوِيلٌ فَوْقَ الْحِمَارِ، وَدُونَ الْبَغْلِ، يَضَعُ حَافِرَهُ عِنْدَ مُنْتَهَى طَرْفِهِ»، قَالَ: «فَرَكِبْتُهُ حَتَّى أَتَيْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ»، قَالَ: «فَرَبَطْتُهُ بِالْحَلْقَةِ الَّتِي يَرْبِطُ بِهِ الْأَنْبِيَاءُ»، قَالَ ” ثُمَّ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ، فَصَلَّيْتُ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ خَرَجْتُ فَجَاءَنِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ بِإِنَاءٍ مِنْ خَمْرٍ، وَإِنَاءٍ مِنْ لَبَنٍ، فَاخْتَرْتُ اللَّبَنَ، فَقَالَ جِبْرِيلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اخْتَرْتَ الْفِطْرَةَ، ثُمَّ عُرِجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ، فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ، فَقِيلَ: مَنَ أَنْتَ؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: َ قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ، فَفُتِحَ لَنَا، فَإِذَا أَنَا بِآدَمَ، فَرَحَّبَ بِي، وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ، ثُمَّ عُرِجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ، فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ، فَقِيلَ: مَنَ أَنْتَ؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ، فَفُتِحَ لَنَا، فَإِذَا أَنَا بِابْنَيْ الْخَالَةِ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ، وَيَحْيَى بْنِ زَكَرِيَّاءَ، صَلَوَاتُ اللهِ عَلَيْهِمَا، فَرَحَّبَا وَدَعَوَا لِي بِخَيْرٍ، ثُمَّ عَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الثَّالِثَةِ، فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ، فَقِيلَ: مَنَ أَنْتَ؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قِيلَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ، فَفُتِحَ لَنَا، فَإِذَا أَنَا بِيُوسُفَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذَا هُوَ قَدِ اُعْطِيَ شَطْرَ الْحُسْنِ، فَرَحَّبَ وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ، ثُمَّ عُرِجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ الرَّابِعَةِ، فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، قَالَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ، فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِإِدْرِيسَ، فَرَحَّبَ وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ، قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: {وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا} [مريم: 57]، ثُمَّ عُرِجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ الْخَامِسَةِ، فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ، فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِهَارُونَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَرَحَّبَ، وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ، ثُمَّ عُرِجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ السَّادِسَةِ، فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ، فَفُتِحَ لَنَا، فَإِذَا أَنَا بِمُوسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَرَحَّبَ وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ، ثُمَّ عُرِجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ، فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ، فَقِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قِيلَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ، فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِإِبْرَاهِيمَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُسْنِدًا ظَهْرَهُ إِلَى الْبَيْتِ الْمَعْمُورِ، وَإِذَا هُوَ يَدْخُلُهُ كُلَّ يَوْمٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ لَا يَعُودُونَ إِلَيْهِ، ثُمَّ ذَهَبَ بِي إِلَى السِّدْرَةِ الْمُنْتَهَى، وَإِذَا وَرَقُهَا كَآذَانِ الْفِيَلَةِ، وَإِذَا ثَمَرُهَا كَالْقِلَالِ، قَالَ: فَلَمَّا غَشِيَهَا مِنْ أَمْرِ اللهِ مَا غَشِيَ تَغَيَّرَتْ، فَمَا أَحَدٌ مِنْ خَلْقِ اللهِ يَسْتَطِيعُ أَنْ يَنْعَتَهَا مِنْ حُسْنِهَا، فَأَوْحَى اللهُ إِلَيَّ مَا أَوْحَى، فَفَرَضَ عَلَيَّ خَمْسِينَ صَلَاةً فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَنَزَلْتُ إِلَى مُوسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: مَا فَرَضَ رَبُّكَ عَلَى أُمَّتِكَ؟ قُلْتُ: خَمْسِينَ صَلَاةً، قَالَ: ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ التَّخْفِيفَ، فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا يُطِيقُونَ ذَلِكَ، فَإِنِّي قَدْ بَلَوْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَخَبَرْتُهُمْ “، قَالَ: فَرَجَعْتُ إِلَى رَبِّي، فَقُلْتُ: يَا رَبِّ، خَفِّفْ عَلَى أُمَّتِي، فَحَطَّ عَنِّي خَمْسًا، فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى، فَقُلْتُ: حَطَّ عَنِّي خَمْسًا، قَالَ: إِنَّ أُمَّتَكَ لَا يُطِيقُونَ ذَلِكَ، فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ التَّخْفِيفَ، قَالَ: فَلَمْ أَزَلْ أَرْجِعُ بَيْنَ رَبِّي تَبَارَكَ وَتَعَالَى، وَبَيْنَ مُوسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ حَتَّى قَالَ: يَا مُحَمَّدُ، إِنَّهُنَّ خَمْسُ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، لِكُلِّ صَلَاةٍ عَشْرٌ، فَذَلِكَ خَمْسُونَ صَلَاةً، وَمَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كُتِبَتْ لَهُ حَسَنَةً، فَإِنْ عَمِلَهَا كُتِبَتْ لَهُ عَشْرًا، وَمَنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا لَمْ تُكْتَبْ شَيْئًا، فَإِنْ عَمِلَهَا كُتِبَتْ سَيِّئَةً وَاحِدَةً “، قَالَ: ” فَنَزَلْتُ حَتَّى انْتَهَيْتُ إِلَى مُوسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَخْبَرْتُهُ، فَقَالَ: ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ التَّخْفِيفَ “، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” فَقُلْتُ: قَدْ رَجَعْتُ إِلَى رَبِّي حَتَّى اسْتَحْيَيْتُ مِنْهُ
‘আনাস বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার জন্য বোরাক পাঠানো হলো। বোরাক গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট একটি সাদা রঙের জন্তু। যতদূর দৃষ্টি যায়, এক পদক্ষেপে সে ততদূর চলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এতে আরোহণ করলাম এবং বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত এসে পৌঁছলাম। তারপর অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরাম তাদের বাহনগুলো যে খুঁটির সাথে বাঁধতেন, আমি সে খুঁটির সাথে আমার বাহনটিও বাঁধলাম। তারপর মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দুই রাকআত নামাজ আদায় করে বের হলাম। জিবরিল আ. একটি শরাবের পাত্র ও একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার কাছে এলেন। আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিবরিল আ. আমাকে বললেন, আপনি সঠিক স্বভাবকেই গ্রহণ করলেন। তারপর জিবরিল আ. আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে গেলেন এবং আসমান পর্যন্ত পৌছে দ্বার খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি জিবরিল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? বললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, পাঠানো হয়েছিল। অতঃপর আমাদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হলো। সেখানে আমি আদম আ.-এর দেখা পাই। তিনি আমাকে মুবারকবাদ জানালেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন। তারপর জিবরিল আ. আমাকে ঊর্ধ্বলোক নিয়ে চললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জিজ্ঞেস করা হলো, তাকে কি আনতে পাঠানো হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে আমি দুই খালাত ভাই ইসা বিন মারইয়াম আ. ও ইয়াহইয়া বিন জাকারিয়া আ.-এর দেখা পেলাম। তাঁরা আমাকে মারহাবা বললেন, আমার জন্য কল্যাণের দুআ করলেন। তারপর জিবরিল আ. আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে চললেন এবং তৃতীয় আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরিল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে ইউসুফ আ.-এর দেখা পেলাম। সমুদয় সৌন্দর্যের অর্ধেক দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন। তারপর জিবরিল আ. আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরিল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে ইদরিস আ.-এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন। আল্লাহ তাআলা তার সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, “আর আমি তাকে উন্নীত করেছি উচ্চ মর্যাদায়।” (সুরা আল-হাদিদ : ১৯)। তারপর জিবরিল আ. আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরিল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পাঠানো হয়েছিল। অতঃপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে হারুন আ.-এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন। তারপর জিবরিল আ. আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরিল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে মুসা আ.-এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন। তারপর জিবরিল আ. সপ্তম আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরিল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে ইবরাহিম আ.-এর দেখা পেলাম। তিনি বাইতুল মামুরে পিঠ ঠেকিয়ে বসে ছিলেন। বাইতুল মামুরে প্রত্যেহ সত্তর হাজার ফেরেশতা তাওয়াফের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেন, যারা আর সেখানে পুনরায় ফিরে আসার সুযোগ পান না। তারপর জিবরিল আ. আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে গেলেন। সে বৃক্ষের পাতাগুলো হাতির কানের ন্যায় আর ফলগুলো বড় বড় মটকার মত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সে বৃক্ষটিকে যখন আল্লাহর নির্দেশ থেকে কোনো নির্দেশ এসে আবৃত করে তখন তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। সে সৌন্দর্যের বর্ণনা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কারোর পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর আল্লাহ তাআলা আমার ওপর যে প্রত্যাদেশ করার, তা করলেন। আমার ওপর দিনরাত মোট পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করলেন। এরপর আমি মুসা আ.-এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনার প্রতিপালক আপনার ওপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। তিনি বললেন, আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং তাঁর নিকট আরও সহজ করার আবেদন করুন। কেননা, আপনার উম্মত এ নির্দেশ পালনে সক্ষম হবে না। আমি বনি ইসরাইলকে পরীক্ষা করেছি এবং তাদের বিষয়ে আমি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তখন আমি আবার প্রতিপালকের কাছে ফিরে গেলাম এবং বললাম, হে আমার রব, আমার উম্মতের জন্য এ হুকুম সহজ করে দিন। পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দেওয়া হলো। তারপর মুসা আ.-এর নিকট ফিরে এসে বললাম, আমার থেকে পাঁচ ওয়াক্ত কমানো হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত এটাও পারবে না। আপনি ফিরে যান এবং আরও সহজ করার আবেদন করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এভাবে আমি একবার মুসা আ. ও একবার আল্লাহর মাঝে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম। শেষে আল্লাহ তাআলা বললেন, হে মুহাম্মাদ, যাও দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারণ করা হলো। প্রতি ওয়াক্ত নামাজে দশ ওয়াক্ত নামাজের সমান সাওয়াব রয়েছে। এভাবে (পাঁচ ওয়াক্ত হলো) পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের সমান। যে ব্যক্তি কোনো নেক কাজের নিয়ত করল এবং তা কাজে রূপায়িত করতে পারল না আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখব; আর তা কাজে রূপায়িত করলে তার জন্য লিখব দশটি সাওয়াব। পক্ষান্তরে যে কোনো মন্দ কাজের নিয়ত করল; অথচ তা কাজে পরিণত করল না তার জন্য কোনো গুনাহ লিখা হয় না। আর তা কাজে পরিণত করলে তার ওপর শুধু একটি গুনাহ লিখা হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারপর আমি মুসা আ.-এর নিকট নেমে এলাম এবং তাকে এ বিষয়ে অবহিত করলাম। তিনি তখন বললেন, প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং আরও সহজ করার প্রার্থনা করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ বিষয়টি নিয়ে বারবার আমি আমার প্রতিপালকের নিকট আসা-যাওয়া করেছি, এখন (এ আবেদন নিয়ে) পুনরায় যেতে লজ্জা হচ্ছে।’ (সহিহু মুসলিম : ১/১৪৫-১৪৬, হা. নং ১৬২, প্রকাশনী : দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)
পঞ্চম কথা : শবে মিরাজে বিশেষ আমলের বিধান
শবে মিরাজের জন্য কোনো আমলের কথা প্রমাণিত নয়। রাতে বিশেষ কোনো নামাজ, বিশেষ কোনো ইবাদত বা পরদিন বিশেষ রোজা; এসবের কোনোটিই শরিয়াসম্মত নয়। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর সাহাবায়ে কিরাম রা., তাবিয়িন রহ. ও আইম্মায়ে মুজতাহিদিন রহ; তাঁদের কারও থেকেই এ ব্যাপারে কোনো আমলের কথা বর্ণিত হয়নি। তাই শবে মিরাজের নামে বিশেষ কোনো ইবাদত করা সম্পূর্ণরূপে বিদআত বলে পরিগণিত হবে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন :
وَلَا شُرِعَ لِلْمُسْلِمِينَ تَخْصِيصُ اللَّيْلَةِ الَّتِي يُظَنُّ أَنَّهَا لَيْلَةُ الْإِسْرَاءِ بِقِيَامٍ وَلَا غَيْرِهِ.
‘অনুরূপ মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্টভাবে কোনো রাতকে শবে মিরাজ মনে করা এবং তাতে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি করাও শরিয়া-অনুমোদিত নয়।’ (জাদুল মাআদ : ১/৫৮, প্রকাশনী : মুআসসাসাতুর রিসাল, বৈরুতি)
হাফিজ ইবনে কাইয়িম জাওজিয়া রহ. বলেন :
وَكُلُّ حَدِيثٍ فِي ذِكْرِ صَوْمِ رَجَبٍ وَصَلاةِ بَعْضِ اللَّيَالِي فِيهِ فَهُوَ كَذِبٌ مُفْتَرًى كَحَدِيثِ مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ أَوَّلَ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبٍ عِشْرِينَ رَكْعَةً جَازَ عَلَى الصِّرَاطِ بِلا حِسَابٍ وَكُلُّ حَدِيثٍ فِي ذِكْرِ صَوْمِ رَجَبٍ وَصَلاةِ بَعْضِ اللَّيَالِي فِيهِ فَهُوَ كَذِبٌ مُفْتَرًى كَحَدِيثِ “مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ أَوَّلَ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبٍ عِشْرِينَ رَكْعَةً جَازَ عَلَى الصِّرَاطِ بِلا حِسَابٍ.
‘রজব মাসের রোজা ও এতে কিছু রাতের নামাজের ব্যাপারে বর্ণিত প্রতিটি হাদিসই মিথ্যা ও জাল। যেমন একটি হাদিস হলো, “যে ব্যক্তি রজবের প্রথম তারিখ রাতে বিশ রাকআত নামাজ পড়বে, সে বিনা হিসাবে পুলসিরাত পার হয়ে যাবে।”’ (আল-মানারুল মুনিফ : পৃ. নং ৯৬, প্রকাশনী : মাকতাবাতুল মাতবুআতির ইসলামিয়্যা, হালব)
হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন :
لم يرد في فضل شهر رجب، ولا في صيام شيء منه معين، ولا في قيام ليلة مخصوصة فيه حديث صحيح يصلح للحجة.
‘রজব মাসের ফজিলত, এ মাসে নির্দিষ্ট রোজা ও নির্দিষ্ট রাতের নামাজ সম্পর্কে এমন কোনো বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত হয়নি, যা দলিলের উপযুক্ত হতে পারে।’ (তাবয়িনুল আজব বিমা ওরাদা ফি শাহরি রজব : পৃ. নং ২৩)
শাইখ সাইয়িদ সাবিক রহ. বলেন :
وصيام رجب، ليس له فضل زائد على غيره من الشهور، إلا أنه من الاشهر الحرم. ولم يرد في السنة الصحيحة: أن للصيام فيه فضيلة بخصوصه، وأن ما جاء في ذلك مما لا ينتهض للاحتجاج به.
‘আর অন্যান্য মাসের রোজার তুলনায় রজবের রোজার অতিরিক্ত কোনো মর্যাদা নেই, তবে এতটুকু যে, রজব হলো হারাম বা মর্যাদাপূর্ণ মাসসমূহের একটি। বিশুদ্ধ হাদিসে এমনটা পাওয়া যায় না যে, রজব মাসে রোজার বিশেষ কোনো মর্যাদা আছে। এ ব্যাপারে যেসব বর্ণনা এসেছে, তার কোনোটিই দলিলের উপযোগী নয়।’ (ফিকহুস সুন্নাহ : ১/৪৫৩, প্রকাশনী : দারুল কিতাবিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)
শাইখ ইবনে উসাইমিন রহ. বলেন :
ثم ابتدع الناس في هذه الليلة بدعاً لم تكن معروفة عند السلف، فصاروا يقيمون ليلة السابع والعشرين من رجب احتفالاً بهذه المناسبة، ولكن لم يصح أنها- أعني: ليلة الإسراء والمعراج- كانت في رجب، ولا أنها في ليلة سبع وعشرين منه، فهذه البدعة صارت خطأً على خطأ: خطأً من الناحية التاريخية؛ لأنها لم تصح أنها في سبع وعشرين من رجب، وخطأ من الناحية الدينية؛ لأنها بدعة، فإن الرسول صلى الله عليه وعلى آله وسلم لم يحتفل بها، ولا الخلفاء الراشدون، ولا الصحابة، ولا أئمة المسلمين من بعدهم.
‘অতঃপর লোকেরা এ রাতে অনেক বিদআত আবিষ্কার করেছে, যা সালাফে সালিহিনের সময় প্রচলিত ছিল না। তারা এ উপলক্ষে রজবের সাতাশ তারিখে শবে মিরাজ উদযাপন করে। অথচ মিরাজ যে রজব মাসে হয়েছে এবং এটা যে রজবের সাতাশ তারিখে; এর কোনোটিই প্রমাণিত নয়। অতএব, এ বিদআত ভুলের ওপর ভুল বলে গণ্য হয়েছে। এক তো ঐতিহাসিক ভুল; কেননা রজবের সাতাশ তারিখে শবে মিরাজ হওয়া প্রমাণিত নয়। আর দ্বিতীয়টি হলো দ্বীনি ভুল; কেননা এটা বিদআত বা নবআবিষ্কৃত। যেহেতু রাসুলুল্লাহ সা., খুলাফায়ে রাশিদিন, সাহাবায়ে কিরাম ও তাঁদের পরবর্তী ইমামগণের কেউই শবে মিরাজ উদযাপন করেননি।’ (ফাতাওয়া নুর আলাদ দারব : ৪/২, প্রকাশ : আল-মাকতাবাতুশ শামিলা)
সারকথা :
ইসলামের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধ যথাযথভাবে অনুসরণ করা। আল্লাহ-রাসুলের কথা ও পদ্ধতির বাইরে গিয়ে যত ইবাদতই করা হোক না কেন, তা গ্রহণযোগ্য হবে না। সর্বদা আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, আমার কৃত আমল ও পদ্ধতিটি কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত কিনা। ফরজ-ওয়াজিব বাদে অন্যান্য আমল কম হলেও অসুবিধা নেই। কিন্তু বেশি আমল করতে গিয়ে আমলের মধ্যে বিদআতের অনুপ্রবেশ ঘটানো খুবই জঘন্য ব্যাপার। তাই আমল অল্প হলেও তা খাঁটি করা উচিত। বেশি আমলের লোভে বিদআতি কাজ করা যাবে না। এ আলোচনায় যখন প্রমাণ হলো যে, শবে মিরাজে বিশেষ কোনো আমল নেই এবং এ রাতে ইবাদত করার বিশেষ কোনো ফজিলতও নেই; তদুপরি এ রাতটি চূড়ান্তভাবে নির্দিষ্টও নয়, তাই সাতাশে রজবের রাতে প্রচলিত সকল প্রকারের বিদআত ও রুসুম থেকে আমাদের সবারই বেঁচে থাকা কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে বিদআত থেকে বেঁচে থেকে সুন্নাহসম্মত আমল করার তাওফিক দান করুন।