ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম — তরুণ-তরুণীদের জন্য এক ভয়ংকর প্লাটফর্ম
ঘটনা ১:
১৫ বছর বয়স্ক কেইলি-কে একদিন ২৮ বছর বয়স্ক লিউক ফেইসবুকে মেসেজ পাঠায়, “হাই! কেমন আছ তুমি?” মেয়েটি উত্তর দেয়, “ভালো! তুমি কেমন আছো?”। তারপর তাদের মধ্যে প্রায় ২৬০০ মেসেজ আদান-প্রদান হয়, তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়। দুই সপ্তাহ পর কেইলি সেই লিউকের এপার্টমেন্টে যায়। সেখানে তাকে প্রচুর পরিমাণে মদ খাইয়ে, ধর্ষণ করে, মেরে ফেলা হয়।
এই ঘটনাটি যুক্তরাজ্যে ঘটেছিল। ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। কেইলি-র এই ঘটনা অনুসারে পুলিশ একটি চলচ্চিত্র বানায় এবং বহু স্কুলে তা দেখানো হয়, যেন অল্প বয়স্ক মেয়েরা তা দেখে সাবধান হতে পারে। বহু মেয়ে এই চলচ্চিত্র দেখে পুলিশকে গিয়ে জানায় যে, তারাও এরকম এক বা একাধিক জনের সাথে কথা বলছিল এবং দেখা করতে যাচ্ছিল।
ঘটনা ২:
একটি অল্প-বয়স্ক মেয়ে এবং একজন বয়স্ক-লোকের সাথে অনলাইনে চ্যাট চলছে, যে কয়েকদিন ধরে নকল কেউ সেজে চ্যাট করে অল্প-বয়স্ক মেয়েটির কাছ থেকে কিছু আপত্তিকর ছবি হাতিয়েছে—
লোক: আমি তোমাকে বোকা বানিয়েছি। আমি আসলে একটা পুরুষ। আমি তোমার সবগুলো ছবি এখন স্কুলে পাঠিয়ে দেব। খবরদার আমাকে ব্লক করবে না। যদি আমাকে ব্লক করো, তাহলেও আমি সব ছবি পাঠিয়ে দেব। যদি আমার কথা শোনো এবং আমি যা বলছি করো, তাহলে তোমার ছবিগুলো আমি মুছে দেব। কিন্তু সাবধান করে দিচ্ছি, যদি আমার কথা না শোনো, তাহলে সব ছবি স্কুলে পাঠিয়ে দেব।
মেয়ে: আমাকে কী করতে হবে?
লোক: তোমাকে কিছু নগ্ন ছবি পাঠাতে হবে। জামা খোলো।
মেয়ে: আমি কাঁদছি! প্লিজ, অন্য কিছু কি করতে পারি আমি?
লোক: না।
মেয়ে: শুধু একটা ছবি?
লোক: না। আমি বলব কখন থামবে।
মেয়ে: নগ্ন ছবি না পাঠিয়ে অন্য কিছু কি করতে পারি?
লোক: না। অন্য কিছুতে হবে না।
মেয়ে: প্লিজ! আমাকে অন্য কিছু করার সুযোগ দিন!
এই লোকটিকে আমেরিকার লুইসিয়ানাতে ধরা হয়েছিল। আদালতে বিচারের সময় তার সাথে অল্প বয়স্ক মেয়েটির এই কথোপকথন মামলায় প্রমাণ হিসেবে হাজির করা করা হয়। এই অপরাধটি হচ্ছে Child Grooming — এক-দুই শব্দে যার বাংলা করা কঠিন —”ছোটদের ভুলিয়ে-ভালিয়ে যৌন-সুখ নেওয়া”। অনেক বয়স্ক-লোকেরা এভাবে নকল প্রোফাইল বানিয়ে অনলাইনে অন্যান্য ছোটদের সাথে চ্যাট করে, তাদের মানসিক অপরিপক্বতার সুযোগ নিয়ে তাদের জানের-দোস্ত হয়ে যায়, তারপর তাদেরকে পটিয়ে, ফুসলিয়ে নগ্ন ছবি, এমনকি ভিডিও নিয়ে নেয়।
একবার যখন তারা একটা ব্যক্তিগত গোপন-কিছু হাতাতে পারে, তখন শুরু হয় ব্ল্যাক মেইল। সে তার আসল পরিচয় প্রকাশ করে ছোট ছেলে বা মেয়েটার কাছ থেকে আরও নোংরা ছবি, অনেক সময় ভিডিও আদায় করা শুরু করে। বাবা-মা জেনে যাবে, বা স্কুলের বন্ধুরা জেনে যাবে, বা লোকে জানতে পারলে লজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতে পারবে না— এই ভয়ে সেই ছেলে বা মেয়েটা তখন ওই লোকটা যা বলে, তা-ই করতে থাকে। একসময় তারা সশরীরে সেই প্রতারকের সাথে দেখা করে, তার বাসায় যায়। তারপর যা হবার তাই হয়। অনেকে আর কোনোদিন ফিরে আসে না। যারা ফিরে আসে, তারা সারা জীবনের জন্য এক বিরাট মানসিক ক্ষত বয়ে বেড়ায়।
ঘটনা ৩:
লোক: আমি তোমার ছবি সবাইকে দেখিয়ে দেবো, যদি তুমি ১০ মিনিটের মধ্যে আমার সাথে চ্যাট না করো।
মেয়ে: সরি, আমি থ্যাংকস গিভিং এর জন্য অনলাইন ছিলাম না। আমি অনেক ঝামেলার মধ্যে আছি। আমার মা হাসপাতালে। আমি এখন আমার ছোট বোন, চাচি এবং দাদির সাথে আছি। এখন কথা বলতে পারছি না।
লোকঃ তুমি কি চাও আমি তোমার ছবি সব জায়গায় ছড়িয়ে দেই? আমি আর ১০টা ছবি চাই। তারপর তোমাকে ছেড়ে দেবো। যদি না দাও, তাহলে আমি সবাইকে দেখিয়ে দেবো।
মেয়ে: আচ্ছা আমি কথা দিচ্ছি, আমি আজ রাতের মধ্যেই দশটা ছবি দেবো। আমাকে বলবে কি ধরনের ছবি চাও? আমি কথা দিচ্ছি, আজ রাতের মধ্যেই দেবো।
লোক: ঠিক আছে। তোমার ছোট বোনের বয়স কত?
মেয়ে: সাত।
লোক: ওর ছবি পাঠাও।
মেয়ে: দাড়াও! কী ধরনের ছবি?
লোক: একটা হলেই হোল। নগ্ন ছবি।
মেয়ে: আমার ছোট বোনের বয়স সাত। আমি ওর নগ্ন ছবি তুলতে পারব না।
লোক: তাহলে আমি তোমার ছবি ছড়িয়ে দেবো। আমি তোমার এবং ওর কয়েকটা ছবি চাই। ঠিক আছে?
মেয়ে: প্লিজ! ও আমার ছোট বোন। আমি ওর সাথে এটা করতে পারি না। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। প্লিজ!
সূত্রঃ ফ্লোরিডা ডিসট্রিক্ট কোর্ট-এর একটি মামলায় ব্যবহার করা প্রমাণ।
ইন্সটাগ্রাম — এক ভয়ংকর প্লাটফর্মঃ
ইন্সটাগ্রাম-এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল। এই প্লাটফর্মটি চাইল্ড গ্রুমারদের সবচেয়ে বড় বিচরণ ক্ষেত্র। এখানে আশংকাজনক পরিমাণে ছোটদের সাথে বড়দের যৌন আলোচনা চলে। Bark.us নামে একটি কোম্পানি অনলাইনে ছোটদের নিরাপত্তার জন্য প্রোগ্রাম তৈরি করে। তারা একবার একটি গবেষণা করে। তাদের দলের একজন ৩৭ বছর বয়স্ক মা ইন্সটাগ্রাম-এ ১১ বছর বয়স্ক একটি মেয়ে সেজে প্রোফাইল খুলে। খুব সাধারণ একটা ছবি আপলোড করে ইন্সটাগ্রাম-এ বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানায় কথা বলার জন্য। এক মিনিটের মধ্যে তার কাছে মেসেজ আসা শুরু করে। দুই ঘণ্টার মধ্যে ১৫ জন বয়স্ক মানুষ তার সাথে চ্যাট করা শুরু করে। এর মধ্যে চল্লিশ বছর বয়স্ক একজনের সাথে চ্যাট ছিল এরকম—
হাই!! তুমি কি অনেক দিন ধরে মডেলিং করো?
— হাহা, না। আমি মডেল না।
না? যাহ, তুমি মিথ্যে বলছ। তোমার মডেল হওয়া উচিত। তুমি কী সুন্দর!
কিছু সময় চ্যাটের পর সে মেয়েটির বয়ফ্রেন্ড হওয়ার জন্য আবেদন জানায়। ইন্সটাগ্রাম-বয়ফ্রেন্ড একটি প্রচলিত শব্দ, এর অর্থ যে, তার সাথে ব্যক্তিগত গোপন আলোচনা করা যাবে, একে অন্যের সাথে যৌন ছবি, ভিডিও পাঠান যাবে। যাহোক, পাঁচ মিনিটের মধ্যে আলোচনা রগরগে হতে থাকে এবং একসময় সে তার হস্ত… করার একটি ভিডিও পাঠায়।
“তোমার পছন্দ হয়েছে? তুমি এরকম করা আগে দেখেছ?”
১১ বছর বয়স্ক একটি মেয়ের কখনো এটা দেখার কথা না। এরকম কিছু পাঠানো আইনত অপরাধ জেনেও ইন্সটাগ্রাম-এ প্রতিদিন এধরনের কাজ হরদম করা হচ্ছে।
কিছুক্ষণ পরে আরেকজন বয়স্ক লোক তার সাথে চ্যাট করা শুরু করে এবং তার ইন্সটাগ্রাম-বয়ফ্রেন্ড হতে চায়। তারপর সে মেয়েটিকে শেখানো শুরু করে কীভাবে যৌন কাজ করতে হয়। একসময় সে তার উত্তেজিত অঙ্গের একটি ছবি পাঠায়।
এক সপ্তাহের এই এক্সপেরিমেন্টে ৫২ জন বয়স্ক পুরুষ সেই ১১ বছর বয়স্ক মেয়ের সাথে যোগাযোগ করে।
এই হচ্ছে ইন্সটাগ্রাম। আপনার সন্তানরা যদি ইন্সটাগ্রাম-এ পড়ে থাকে, কাউকে ডেকে বলুন কষে একটা চড় মারতে। তাকে নয়, আপনাকে। আগে আপনার হুশ ফেরানো দরকার।
– ওমর আল জাবির
সত্যিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট ।আমাদের সবাইকে সাবধান হওয়া উচিত ।
আসলেই অসাধারণ লেখা। সকলের সতর্ক হওয়া দরকার।