জীবনের বাঁকে বাঁকে

স্যার, বোরকা পরা তরুণ প্রজম্ম নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখা যায় না….

লেখক: ইসলামিক কন্ঠ

আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি হলে উঠার পর আমাকে বোরকা পড়তে দেখে এক রুম মেট আপু আমাকে প্রশ্ন করেছিল, কি রে! বোরকার ভিতর থেকে দুনিয়া দেখবি কি করে? আমি গভীরভাবে চিন্তা না করেই উত্তর দিয়েছিলাম, কেন আপু! দুনিয়া দেখার জন্য চোখ তো খোলা আছে। অল্প দিনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম – উনাদের দুনিয়াটা দেখার জন্য শুধু চোখ খোলা থাকলেই চলবে না সাথে আরো কিছু খোলা থাকতে হবে।

গত ৪ঠা নভেম্বর’ ২০১১ তারিখে দৈনিক প্রথম আলো’র ত্রয়োদশ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে “ ওদের নিয়ে কেন স্বপ্ন দেখব না” শিরোনামে শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যারের একটি লেখা পড়তে পড়তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টায় চলে গিয়ে ছিলাম। আর ভাবতে লাগলাম হায়! কত যে, দুর্ভাগা আমরা- আমাদের নিয়ে নাকি স্বপ্নও দেখা যায় না!

আপনারা যারা জাফর ইকবাল স্যারের লেখা পড়েন তারা সকলেই অবগত আছেন বা একমত হবেন স্যার অত্যন্ত সুকৌশলী একজন লেখক। একজন সাধারণ মুসলমান (যে ইসলাম সম্পর্কে তেমন জ্ঞান রাখে না বা যা জানে তা নিয়ে তেমন কোন চিন্তা করে না) খুব সহজেই তার লেখা পড়ে বিভ্রান্ত হতে পারেন। কারণ তিনি মানবতার কথা বলে প্রথমে মানুষের মনে জায়গা করে নেন। তারপর মানুষ যখন তার লেখার গভীরে চলে যান, তখন একটা আবগ চলে আসে, ঠিক তখনি তিনি ইসলামকে এমনভাবে টেনে আনেন যেন ইসলাম খুব অমানবিক একটা জীবন বিধান। আবেগপ্রবণ এই মানুষটি তখন ভাবতে থাকেন ঠিকই তো ইসলামের এই দিকগুলো খুবই অমানবিক। এভাবে তিনি অনেককে বিভ্রান্ত করতে সফল হয়ে ছেন বলে আমার বিশ্বাস।

এখন এমন একটা প্রজম্ম তৈরী হয়েছে যারা জাফর ইকবাল স্যারের মত কিছু মানুষের অন্ধভক্ত, ওরা সামাজিকভাবে নিজেদের মুসলমান হিসাবে পরিচয় দেয়। বাহ্যিকভাবে ধর্মীয় কিছু আচার আচরণ পালনও করে বটে, কিন্তু মন-মানসিকতায় তারা মূলতঃ ধর্ম বিদ্বেষী ও ধার্মীকতা বিরোধী।

তবে মজার ব্যাপার হল- স্যার সরাসরি ধর্মকে দোষী করে কথা বলে না। তিনি প্রথমে ধর্মের কিছু বিষয় একটা ধর্মীয় গোষ্টির উপর চাপিয়ে দিয়ে এমন ভাবে লেখার অবতারনা করেন যে, পাঠক মাত্রই মনে করতে থাকে ধর্মের এই বিষয়টি ঐ গোষ্ঠিই আবিষ্কার করেছেন। এর সাথে মূল ধর্মের কোন মিল নেই। আর যারা প্রকৃত মুসলিম তাদের এসব মানার প্রয়োজন নেই। স্যারের মূল কৌশলটা এখানেই। তিনি তাসলিমা নসরিনদের মত নিজেকে নাস্তিক হিসাবে পরিচয় দেন না। এক বালটি দুধের মধ্যে এক গ্লাস বা তারও বেশী পানি মিশিয়ে দিলে খুব সহজেই মানুষকে ধোঁকা দেয়া যায়।

আসুন তার লেখার কিছু উল্লেখ যোগ্য অংশ উদ্ধৃতি করছিঃ-

১। স্যার লিখেছেন- সৌদি আরবে মাত্র কয়েকদিন আগে আটজন বাংলাদেশীর শিরচ্ছেদ করা হয়েছে (খোদা যেন আমার ওপর করুণা করেন, জীবনে আর কোন দিন যেন আমাকে এ শব্দ লেখতে না হয়)।

এটা লেখে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন- আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি আমাদেরকে পরিচালনা করেন( তা না হলে করুণা করবে কি করে?)

তার পর তিনি গার্মেন্টেসের মেয়েদের অসহায়ত্বের কথা লিখেছেন, লিখেছেন সড়ক দুর্ঘটনার কথা। রেল লাইনে বেড়ে উঠা অসহায় শিশু কিশোরের কথা।

২। তার পর তিনি লিখেছেন- বেশ কিছু দিন আগে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছেলে মেয়েরা ভাষা আন্দোলন নিয়ে একটা আলোকচিত্র প্রদর্শন করেছিল। আমি আর আমার স্ত্রী সেটা দেখতে গিয়েছিলাম। বড় বড় ছবি দেখতে দেখতে আমার আমার স্ত্রী আমাকে বলল – একটা জিনিস লক্ষ করেছ? আমি জিজ্ঞাসা করলাম কি জিনিস? আমার স্ত্রী বলল ভাষা আন্দোলনে কত মেয়ে। কিন্তু একটি মেয়েও বোরকা পড়ে নেই, হিজাব পড়ে নেই।

আমি তাকিয়ে দেখি তার কথা সত্য। যাট বছর আগে এ দেশের মেয়েদের বোরকা পরতে হতো না। এখন মেয়েদের বোরকা পড়তে হয়। ষাট বছর আগে এদেশের মেয়েরা ধর্মহীন ছিল এখন মেয়েরা ধর্মভীরু হয়ে গেছে – আমি সেটা বিশ্বাস করি না।

যারা জ্ঞানীগুণী গবেষক, তারা প্রকুত কারণটি খুঁজে বের করবেন। আমি সোজাভাবে বিষয়টি এভাবে দেখি যে সমাজে পুরুষ আর নারী সমানভাবে পাশাপাশী থেকে কাজ করে, সেই সমাজে মৌলবাদীদের, ধর্মব্যবসায়ীদের খুব ভয়। তাই মেয়েদের ঘড়ের ভিতর রাখতে পারলে সবচেয়ে ভাল। একান্তই যদি ঘরের ভিতর আটকে রাখা না যায় অন্তত বোরকার ভিতর আটকে রাখা যায়।

এখান থেকেই শুরু হয়েছে তার সিঁদ কাটা। তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন ধর্মভীরু হওয়া খারাপ কিছু নয়। তবে ধর্মভীরু হওয়ার জন্য পর্দা করতে হয় না। মেয়েদেরকে পর্দা করতে বাধ্য করে শুধু ধর্ম ব্যবসায়ী মৌলবাদীরা। অথচ আল্লাহ তায়ালা পর্দা করা ফরজ করেছেন, ছেলে- মেয়ে উভয়ের জন্য। এটা নিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। তিনি সাহস করে এটা বলতে পারেননী – কেন যে আল্লাহ তায়ালা খুব অমানবিকভাবে ছেলে মেয়েদের পর্দা করতে বলেছেন। মেয়েদেরকে প্রয়োজন ছাড়া ঘড়ের বাহিরে যেতে নিষেধ করেছেন। নিষেধ করেছেন মেয়েদেরকে তাদের রূপ লাবণ্য প্রদর্শন করে ছেলেদের লোলুপ দৃষ্টির স্বীকার হতে? এটা তিনি বলবেন না। এটা বলার সাহস তার নেই। কিন্তু যে মানুষগুলো ধর্মকে পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার চেষ্ট করবে তাদেরই মৌলবাদী বলে, ধর্ম ব্যবসায়ী বলে বির্তকিত করার চেষ্টা করছে। আর এভাবেই সে বিষ ছড়াচ্ছে এই লোকটি আমাদের সমাজে।

এখন আমার প্রশ্ন হল- স্যার কেন বোরকা পড়া মেয়েদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারে না?

সমস্যাটা কোন জায়গায়?

এই দুটো প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে প্রথম জানতে হবে স্যার তরুণ প্রজম্মকে নিয়ে আসলে কি স্বপ্ন দেখতে চান?

তিনি যেহুত দেশপ্রেমীক, মানবদরদী, সমাজ সেবক ইত্যাদি বহুগুণাবলী সর্ম্পন্ন একজন ব্যক্তি; ধরে নিলাম তার স্বপ্ন এমন একটা তরুণ প্রজম্ম কে ঘিরে- যারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে, হবে সৎ যারা দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করবে। হবে মজবুত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। থাকবে নিজের বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং সর্বভৌমত্ব সম্পর্কে সচেতন।

স্যারের স্বপ্ন যদি সত্যিই এমন হয়- তাহলে আমার প্রশ্ন উপরের কোন গুণটি অর্জন করার জন্য বোরকা বা হিজাব বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়?

স্যার আপনি শুধু আপনার বিশ্ববিদ্যালয়েই পর্যালোচনা করে দয়া করে বলবেন কি?

শুধু মাত্র বোরকা পড়ার কারণে কি কোন মেয়ের রেজাল্ট খারাপ হয়- নাকি ফতুয়া বা টি শাট পড়া মেয়েদেরও রেজাল্ট খারাপ হয়?

তবে হ্যাঁ- কোন মেয়ে যদি সত্যিকারভাবেই তার মূল্যবোধ ধেকে বোরকা পড়ে থাকে তাহলে তার দ্বারা এমন কোন কাজ হবে যা ফতুয়া বা টি শাট পড়া মেয়ের দ্বারা হবে না। একটা বোরকা পড়া মেয়ের দ্বারা সমাজের কুকুর শ্রেণীর ছেলেদের নোংরামী করার সুযোগ তৈরী হয় না। ধর্ষণ অবৈধ সন্তানের জম্ম দেয়া, এসিড নিক্ষেপণ , পরকীয়, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করা ইত্যাদি সামাজিক অবক্ষয়গুলো একটা বোরকা পড়া মেয়ে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

অন্যদিকে- শরীরের সৌন্দর্য প্রদর্শনমূলক বিজ্ঞাপন করে নারীদের পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যম বানানো, এক গাদা বয়ফ্রেন্ডের সাথে অবাধে মেলামেশা, সংস্কৃতি র্চচার নামে ডিজে পার্টি করা, আধুনিকতার নামে বিয়ের পুর্বেই বিয়ে পরবর্তী চাহিদা পুরণের স্বাদ গ্রহণ করা।

স্যার আপনার প্রিয় তরুণ প্রজম্মের ফতুয়া আর টি শাট পড়া মেয়েরাই পারবে। এই স্বপ্ন কোন পর্দা রক্ষাকারী বোরকা পড়া মেয়ের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা অরণ্যে রোদন ছাড়া আর কিছুই নয়।

স্যার আপনার স্বপ্নটা তাহলে কি এ রকমই?

যদি তাই হয়ে থাকে – তাহলে আমি বলব; আমরা বোরকা পড়া তরুণ প্রজম্ম বড় বাঁচা বেজে গেছি। কেউ আমাদেরকে নিয়ে স্বপ্ন নাইবা দেখল- অন্তত আমরা কারো জীবনের দুঃস্বপ্ন হতে চাই না।

শুকরিয়া আদায় করি আল্লাহ আমাদেরকে দুঃস্বপ্নের হাত থেকে রক্ষা করেছেন।


মন্তব্য করুন

Back to top button