জীবনের বাঁকে বাঁকে

ভালোবাসা মানে…

প্রচন্ড ভালোবাসেন তাকে, অনেক গভীর সেটা… তাকে ঘিরে একটা আলাদা পৃথিবী আপনার – যেখানে তাকে নিয়ে কষ্ট আর আনন্দ মাখা স্মৃতিগুলো খুব যত্নে সাজিয়ে রেখেছেন। পরম যত্ন আর ভালোবাসায়…সেখানে অন্য কাউকে আপনি এক মূহুর্তের জন্যও কল্পনা করতে পারেন না! জায়গাটা শুধুই তার জন্য! যত ঝগড়াই হোক সেটার রাগটা পারেন না বেশিক্ষণ ধরে রাখতে..এক কথায় পাগলের মত ভালোবাসেন..!!

আবার আল্লাহর হুকুমগুলোকেও ভয় করেন আপনি…প্রচন্ড! এর আগে একবার না বারবার…বারবার বের হয়ে আসতে চেয়েছেন এই অ্যাফেয়ার থেকে…কারণ আপনি জানেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে গিয়েছেন বিয়ের আগে কারো সাথে অ্যফেয়ার করলে সেখানে তৃতীয় একজনও এসে যোগ দেয়, সেই জঘণ্য ইবলিস্..যার জন্যই আল্লাহ্ সরাসরি এই সম্পর্কটাকে হারাম বলে দিয়েছেন!

 

কিন্তু শাইত্বন আপনাকে এক ধোঁকায় ফেললো! সে আপনাকে বোঝালো – ‘”তোমার নিয়্যত তো হালাল, বিয়েতো তাকে করবেই! ফোনে বা চ্যাটিংয় বেশী খারাপ হলেইতো হোল..দেখা একটু কম করলেই হোল..তাহলে আর সমস্যা কোথায়? খারাপ কোন কিছু না করলে বা না বললেই তো হলো! চালিয়ে যাও..বিয়ের পর এগুলো সবই মাফ করে দেয়া হবে!!’

 

ব্যস্ আবারো আপনি কন্টিনিউ করা শুরু করলেন..কিন্তু ঠিক সে মূহুর্তেই আপনার রব আপনাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন,

“ও আমার বান্দা..তুমি শয়তানের পথকে অনুসরণ করো না। যে শয়তানের পথ অনুসরণ করবে, শয়তান তাকে খারাপ ও নিকৃষ্ট কাজেরই আদেশ করবে।” – সূরা আন নূর, আয়াত – ২১

 

যেই আপনি এবার পুরোপুরি ঠিক করলেন এই হারাম সম্পর্কটা বাদ দেবেন ঠিক তখন শাইত্বন এবার আসলো নতুন ফন্দি এটেঁ! সে আপনাকে বোঝালো- ” তুমি ওকে এখন থেকে ভালো উপদেশ দাও, সালাত পড়তে বলো- ফযরে ডেকে দাও ফোন করে, টেক্সট করে মনে করায় দাও..পর্দা করতে বলো/ দাঁড়ি আর টাখনুর উপর কাপড় পড়তে বলো…তাহলে আর তোমার গুনাহ্ হবে না, বরং সাওয়াব হবে!” ইত্যাদি আরও কত কি..! এরকম আরো হাজারটা কথাই শাইত্বনের পাতানো ফাঁদ আপনার জন্য.. আর এ ফাঁদে পা দিয়ে যখন নিজেকে আর তুলতে পারবেন না তখন সেই শাইত্বন পিঠ ঘুরিয়ে চলে যাবে..বলবে “তোর গুনাহ্ অনেক!! তোর আবার মাফ কিসের”!!

 

আল্লাহর কসম, তারপরও আল্লাহ্ ভালোবাসেন আপনাকে! আল্লাহ্ অপেক্ষায় থাকেন আপনার ফিরে আসার.. তিনি বলেন, ফা আইনা তাযহাবুন? ও আমার বান্দা আমাকে ভুলে কিসের মায়ায় ছুটছো তুমি ? তিনি বলেন তুমি সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ..বিশাল পাহাড় পরিমাণ গুনাহ্ নিয়ে আসলেও যদি খাঁটি তাওবা কর আমি নিজে তোমার সব গুনাহ্গুলোকে মাফ করে দেব..

 

ভাইয়া/আপু জানি প্রচন্ড কষ্ট হবে তাকে ছেড়ে থাকতে কিন্তু আপনি এভাবে শাইত্বনের ধোকায় পড়ে থাকলে আল্লাহ্ আরো অনেক বেশি কষ্ট পান! তার সাথে হারাম সম্পর্ক রেখে এবং পরবর্তীতে তাকে বিয়ে করে হালালের নিয়াত থাকলেও তা কন্টিনিউ করা কোনদিনও হালাল হবে না। হয় এখনই বিয়ে করতে হবে নাহয় হারাম সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যেতে হবে। পরে বিয়ের বাহানা দিয়ে সম্পর্ক রাখা শাইত্বনের একটি বড় ধোঁকা । দেখা না হলেও প্রতিটি ইনবক্স ও ফোন কল কাল হাশরের ময়দানে কোটি কোটি মানুষের সামনে দেখানো হবে। বিয়ে করে সম্পর্কটা হালাল হলেও তার আগের হারাম সম্পর্কের প্রতিটি মূহুর্তের হিসেব তো অবশ্যই দিতে হবে কাল হাশরের ময়দানে।

 

তাই কারো এই ধরণের সম্পর্ক থাকলে আল্লাহকে ভয় করে আজই ফ্যামিলিকে জানান তার কথা, সাধ্যমত চেষ্টা করে রাজি করান এবং যদি ফ্যামিলি সমর্থন দেয় তবে বিয়ের সময় হলেই যোগাযোগ করে অগ্রসর হোন… আর যদি সমর্থন না দেয় তাহলে ভেঙ্গে না পরে বা হুটহাট করে কোন কিছুতে না জড়িয়ে সবর করুন, পুরোপুরি মেনে নিন এটাই আল্লাহর চূড়ান্ত ইচ্ছা। কারণ এর চাইতে বেশি কিছু করার ক্ষমতা পৃথিবীতে আর কারোর নেই! আর হ্যা মা-বাবা কে কষ্ট দিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে কিংবা অভিভাবকহীন গোপন বিয়ে কখনোই শারীয়াহ্ অনুমোদিত না, কখনোই না! তাই ওসব করে ভালো থাকার চিন্তা করা শুধু মূর্খতাই না বরং আস্পর্ধারও! তাই সরে আসুন, প্রয়োজনে ফেইসবুকে ব্লক বা মোবাইল নাম্বার চেইঞ্জ করে ফেলুন। কোন ধরণের কমিনিউকেশনের রাস্তা যেন না থাকে, ফেইসবুক, ইমো, স্কাইপ ইত্যাদি সব…সবকিছু থেকে যোগাযোগ বন্ধের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা করুন।

 

মনে রাখবেন যাকে আল্লাহ্ আপনার জন্য রাখেনি আপনি কেন গোটা পৃথিবী চাইলেও আপনি তাকে পাবেন না, আর পেলেও সেটা কোনদিনও স্থায়ী হবে না…আর আল্লাহ্ যাকে আপনার জীবনের জন্য ফিক্সড করে রেখেছেন তাকে গোটা পৃথিবী চাইলেও ঠেকাতে পারবে না…

 

এমূহুর্ত থেকে তাওবা করে দুজন সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যান, শেষরাতে তাহাজ্জুদে উঠে কান্নাকাটি করুন নিজের চাওয়াগুলো নিয়ে, গুনাহগুলোর জন্য ক্ষমা চান, আল্লাহ্ সেসময় খুব কাছ থেকে বান্দার কথা শোনেন, আর খুব বেশি দু’আ করুন যাতে তাকে পাবার মাঝে আল্লাহ্ ভালো কিছু রাখেন, দুজনের দ্বীনদারিতাকে বাড়িয়ে দেন। ভালোবাসা যদি সত্যি হয় আর এতে যদি আল্লাহর বারাকাহ্ থাকে আপনি যে প্রান্তেই থাকুন না কেন – কথা, দেখা, এমনকি কোন ধরনের যোগাযোগ না হলেও আল্লাহ্ তাকে আপনার কাছে এনে দিবেনই ইন শা আল্লাহ্ ..

 

তাই হারামের বেড়াজালে নিজেকে আর বন্দী না রেখে মনটাকে মুক্ত করে দিন আপন রবের প্রতি সীমাহীন এক নিখাদ ভালোবাসায়…

মন্তব্য করুন

Back to top button