জীবনের বাঁকে বাঁকে

পাসপোর্ট

ইসলাম বোঝার তৌফিক যখন থেকে আল্লাহ দিলেন, তখন থেকেই বিদেশে পড়তে যাওয়া নিয়ে নিজের মধ্যে একটা প্যানিক কাজ করতো, এখনও করে। বাংলাদেশের মত একটা মুসলিম দেশে থেকেও অনেক সময় হারাম থেকে বাঁচা যায়না; দারুল কুফরে যে কাজটি অনেক বেশী কঠিন হবে তা আর বলতে। তারপরেও মনের মধ্যে সযত্নে লালন করা স্বপ্নটাকে (সেটাও আল্লাহর ওয়াস্তেই) একটা রূপ দেবার জন্য আসলে নতুন একটা প্রযুক্তি শিখে আসা খুবই জরুরী। ব্যাপারটা নিয়ে পড়াশোনা করে দেখলাম যে চারটি ক্ষেত্রে কাফির দেশে সাময়িক ভাবে অবস্থান করা যায় –

১. বাণিজ্যের জন্য।

২. চিকিৎসার জন্য।

৩. এমন জ্ঞান অর্জনের জন্য যা মুসলিম বিশ্বে নেই।

৪. ইসলাম প্রচারের জন্য।

শেষ ক্ষেত্রটি বাদে বাকি প্রত্যেক ক্ষেত্রেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুসলিম ভূমিতে ফেরত আসতে হবে। ইসলাম সম্বন্ধে আমার যে জ্ঞান সেটা দিয়ে আমি ইসলাম প্রচার করব এমন কথা বলে মানুষজনকে ধাপ্পা দিলেও আল্লাহকে তো আর দেয়া যাবেনা। আমার মূল উদ্দেশ্য যদিও ছিল তৃতীয় ক্ষেত্রটি কিন্তু তাতেও ভারি সন্দেহ আছে। আসলেই কি এমন কাজের কিছু শিখতে পারবো? এ ব্যাপারে আল্লাহই ভরসা, তিনি যেন কিছু শেখার সুযোগ দেন। কিছুটা বাবা-মা’র প্রত্যাশার চাপে, কিছুটা ভবিষ্যত দাওয়াহ্‌ এর সুবিধার্থে পড়তে যাব এমনটাই মনস্থির করলাম।

যা বলছিলাম – আমেরিকাতে গিয়ে ঈমান নিয়ে থাকা খুব কষ্টকর। শায়খ জামাল আল দিন জারাবোযো তার এক লেকচারে বহিরাগত মুসলিমদের যা বলেছিলেন তার সারমর্ম –

We, those are born in this pit of hell, may have some excuses to live here. But you, those who have immigrated from a Muslim land to live here, I don’t know what you will answer in front of Allah.

আমি জানি শায়খের এ কথাটা অনেকেরই ভালো লাগবেনা কিন্তু তিনি আসলে ক্লু ক্ল্যাক্স ক্ল্যনের সদস্যও নন, আমেরিকান হোয়াইট এক্সট্রিমিস্টও নন। মুসলিমদের কল্যাণার্থেই, তাদের পরকাল রক্ষার্থেই তিনি এ কথা বলেছেন। প্রথম বিশ্বে প্রথম মাত্রার জীবনযাত্রা যে তাকে টানেনা সেটা বলাই বাহুল্য। তিনি আল্লাহর ভয়ে থাকেন ওখানে, ডলারের ভালোবাসায় নয়।

যা হোক আমি তো আর জারাবোযো নই। তার ইলম এবং ঈমানের ধারেকাছেও আমি নেই। তবু একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে স্পষ্ট হারাম থেকে আমি যথাসাধ্য দূরে থাকবো। কিছু ইসলামপন্থীদের মত গ্রেটার গুডের জিগির তুলে হারামের সাথে আপোষ করবোনা। ইসলাম আমি মানিই যেন আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচতে পারি। আল্লাহর অবাধ্য হয়ে, তাকে ক্রুদ্ধ করে আমি ইসলামের নামে যাই করি না কেন সেটা যে ইসলামের কোন উপকারে লাগবেনা। মধ্যে থেকে আমিই ফেঁসে যাবো। আল্লাহ যেন আমাকে এবং অন্য মুসলিম ভাইদের কোন অজুহাতে হারামের সাথে আপোষ করা থেকে রক্ষা করেন, আমিন। মন থেকে চাইলে আসলেই আল্লাহ একটা পথ করে দেন।

এই ক’দিন আগে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বানানোর জন্য আবেদন করলাম। যথারীতি ডিবি থেকে পুলিশ আসলো বাসায়। উনি যাবার সময় বাবা উনার সামনেই বলে দিলেন যেন যাওয়া আসার ভাড়াটা দিয়ে দেই। আমি বাসা থেকে বের হলাম একসাথে, বাবার ভোটার আইডি ফটোকপি করে দেব। কাগজটা দেয়ার সময় বললাম –

“দেখেন আমি যখন পাসপোর্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তখনই আমি ঠিক করে রেখেছিলাম যে ভেরিফিকেশনে আসা মানুষটিকে আমি একটা বই দেব। বইটি হল ‘কালিমা তায়্যিবা’ – যার উপর আমরা এখন একটা কোর্স করছি। আপনি শুনেছেন যে আমার বাবা-মা দুজনই আপনাকে কনভেন্স দিয়ে দিতে বলেছেন। কিন্তু আমি আপনাকে কোন কনভেন্স দেবনা। আমি আপনাকে গিফট হিসেবে এই বইটি দেব। আপনি পড়বেন আশা করি।”

আলহামদুলিল্লাহ, ভদ্রলোক রেগেও যাননি, বইটা প্রত্যখানও করেননি। খালি একটু হেসে বললেন “বইয়ের চেয়ে ভালো গিফট আর কী হতে পারে?” হাসিটা শুকনো ছিল কিনা সে বিবেচনা করবোনা।

পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। আমার মা’য়ের সরকারি চাকরি পার্মানেন্ট না হয়ে দু’বছর ঝুলে ছিল ডিবির পুলিশকে ঘুষ দিয়ে খুশী না করায়। কিন্তু এবার ৩০ দিনের বদলে ২৬ দিনেই যখন আমাকে জানানো হল যে পাসপোর্ট হয়ে গেছে তখন বুঝলাম ভদ্রলোক আমার ব্যাপারে কোন নেতিবাচক ধারণা দেননি।

ঈবাদতের অর্ধেক হল তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর ভরসা এবং সেটা হতে হবে প্রথম থেকেই। সব কিছু করে ফেল মারার পর আল্লাহর উপর ভরসা করলাম – একে তাওয়াক্কুল বলেনা। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলে, তার উপর মন থেকে ভরসা করে কিছু করতে চাইলে সেটা করার একটা বৈধ পথ আল্লাহ ঠিকই বের করে দেন। আমাকে অনেএএএক বার দিয়েছেন। আপনাকেও দেবেন।

– শরীফ আবু হায়াত অপু

২৫/১/১১

মন্তব্য করুন

Back to top button