জীবনের বাঁকে বাঁকে

একজন কুইজারের গল্প

আমরা মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে “আল-আমিন” মসজিদে নামাজ পড়ি। এখানকার জুমার খুতবা আর নামাজের ধরণ বাংলাদেশের আর মসজিদ থেকে আলাদা। এজন্য অনেক দূর থেকে অনেক মানুষ আসে এখানে। তো আমি একটা অমল চেহারার, ধবল বর্ণের একটা ছেলেকে দেখতাম প্রায়ই আসত। আসত তার বন্ধুর হাত ধরে। রেলিং হাঁতড়ে দ্বোতলায় উঠে যেত। নামাজ শেষে যার হাত ধরে আসত তার হাত ধরে রিক্সায় উঠে যেত। একদিন যেচে গিয়ে আলাপ করলাম – জানলাম দুরারোগ্য কোন এক রোগে এক চোখ অন্ধ, আরেকচোখ সেই পথে। দেশে এবং দেশের বাইরে অনেক চিকিৎসা হয়েছে এবং চলছে। কোন লাভ হয়নি। পড়াশোনা বন্ধ করে বসে আছে। কিছু করতে পারেনা। জন্মান্ধ তো নয় যে ব্রেইল শিখবে। করুণা ভিক্ষাতেও গররাজি। বোধকরি মনের মধ্যে ক্ষীণ আশা – যদি আবার দেখতে পাই। তো ছেলেটার একমাত্র হাফ ছেড়ে বাঁচা এই নামাজের সময়টাতে – আশার কথা শোনে। পরকালের স্বপ্নের জাল বোনে। ছেলেটার বন্ধুভাগ্য বেশ। প্রতি শুক্রবার এগারোটার মধ্যে তার এই নিঃস্বার্থ বন্ধুটি তার বাসায় গিয়ে হাজিরা দেয়। হাত ধরে নিয়ে আসে, নামাজ শেষে বাসায় দিয়ে আসে।ওর বন্ধুটাকেও আমি চিনি। একটু পাগলাটে টাইপের। কথাও একটু বেশি বলে। আমি তাই ওর থেকে দূরে থাকি। কিন্তু আমি জানি যদি কখনো আমি অন্ধ হয়ে যাই, কোন এক শুক্রবারে যদি আমার ছোট ভাইটির পরীক্ষা সংক্রান্ত জটিলতায় আমাকে মসজিদে নিয়ে যাবার সুযোগ না হয় তবে এই পাগলাটাকে জানিয়ে দিলে সে আমাকে নিতে চলে আসবে।

এই পাগলাটার নাম মাহিদ ইমরান জিতু।

– শরীফ আবু হায়াত অপু

২৬/২/১০

মন্তব্য করুন

Back to top button