জীবনের বাঁকে বাঁকে

ভারত বিরোধীতা

১.

সিলো চেন আর আমি একই বাসায় থাকি। চীনাদের যত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লোকমুখে শুনেছি তার একটিও এই ছেলেটার মাঝে বিদ্যমান নেই। বুদ্ধিমান কিন্তু সহজ-সরল একটা সাধারণ ছেলে। সে পড়া শেষে মেয়েবন্ধুকে বিয়ে করে দু’টো ছেলে এবং দু’টো কুকুর সমেত একটা সুখী জীবনের স্বপ্ন দেখে। তো, সেদিন আমাদের সাথে ভিয়েতনামী একটা ছেলের দেখা হল। হাই-হ্যালোর পরে আমি পিংপং খেলা নিয়ে কিছু আলাপ করলাম। পুরো সময় চেন শক্ত মুখে তাকিয়ে থাকল। বাসায় এসে আমাকে বলল, আমরা চীনারা ভিয়েতনামীদের পছন্দ করিনা। ওরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আমাদের শহরগুলোতে এসে পুরুষদের খুন করত, আর মেয়েদের রেপ করত। এর বিনিময়ে জাপানীদের কাছে ওরা পয়সা পেত।

চীনারা পছন্দ করে না সেই তালিকায় এতদিন ছিল – জাপানী, দক্ষিণ কোরিয়ান, তাইওয়ানিজ, ভারতীয়… এখন নতুন আরেকটা জাত যুক্ত হল। আমি কথা প্রসঙ্গে জানালাম বাংলাদেশীরাও ভারতীয়দের পছন্দ করে না। ও আমাকে জিজ্ঞেস করল, তোমরা ভারতীয়দের পছন্দ কর না কেন? বললাম, অনেক কারণ আছে। ওরা আমাদের নদীতে পানি বন্ধ করে দিচ্ছে। ওদের সীমান্তে মাদক উৎপাদন করে এদেশে চালান করে দিচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষদের সীমান্তে গুলি করে মারছে ইত্যাদি ইত্যাদি।

তারপরে থেমে বললাম, আমি কিন্তু ভারতীয়দের ঘৃণা করি না।

ও আশ্চর্য হয়ে বলল, কেন না?

– আচ্ছা, তুমি যে ভিয়েতনামী ছেলেটাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছিলে, সে কি কোন চীনাকে মেরেছে? কোন চীনা মহিলাকে রেপ করেছে?

– না!

– হয়ত ওর দাদা করেছে। কিন্তু তুমি ওর দাদার করা কাজটার জন্য কেন ওকে ঘৃণা করবে? ও তো কিছু করেনি। ও তো নির্দোষ! একের অপরাধ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে তাকে শাস্তি দেয়া খুব বড় একটা অন্যায়।

চেন কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, শরীফ তুমি ঠিক বলেছ।

ভারতের সাম্প্রতিক কিছু কাজকর্মের খবর চাউর হয়ে যাওয়াতে আমরা খুব ক্ষুব্ধ। রেগে যাওয়া মানুষ তাদের স্বাভাবিক চিন্তা শক্তি হারিয়ে ফেলে বিধায় চেন যে যুক্তিটা বুঝতে পারছে সেটা আমরা বুঝতে পারছি না, বোঝার চেষ্টাও করছি না।

২.

অর্থনীতির একদম মৌলিক একটা বিষয় – চাহিদা থাকলে উৎপাদন বাড়ে। বাংলাদেশের ফেন্সিডিলের উৎপাদন নেই, কিন্তু চাহিদা আছে। সীমান্ত এলাকার কিছু ভারতীয় তাই সেটা তৈরী করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। ভারত সরকারের তাতে সায় আছে বলে বিএসএফ সেটা ঠেকায় না। চোরাচালান থেকে লাভের বখরা অধুনালুপ্ত বিডিআর আর সীমান্তে সরকারী প্রশাসন পায় বলে তারাও কিছু বলে না। যশোরের তরুণেরা মোটর সাইকেলে চড়ে বেনাপোলে গিয়ে ‘ডাইল’ খেয়ে আসে – দাম কম থাকায় মাস্তি হয় ভাল – সবাই সুখী।

কিন্তু আমাদের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী মাথা পুরো ঘটনাটা জানে কিন্তু বিচারের সময় দোষী পায় ভারতকে। আমাদের রাগ ফুঁসে ওঠে। হাতের কাছে মেশিনগান থাকলে ভারতের সীমান্তকে গুলি করে ঝাঁজরা করে দিতাম। কিছু করতে পারিনা বলে বায়ু নিঃসরণের কল্পনা করি – সে মর্মে কার্টুন আঁকি। অথচ যারা ফেন্সিডিল বিপণনের ব্যবস্থা করছে, যারা তাতে সাহায্য করছে, যারা ‘ডাইল’ খেয়ে নেশা করছে – তাদের ব্যাপারে আমাদের সব করণীয়গুলো আমরা জোর করে ভুলে থাকতে চাই। এরা বাংলাদেশী বলেই কি এদের সাত খুন মাফ? আমার বাবার বন্ধু কাস্টমসে চাকরি করেন বলেই কি এ ব্যাপারে আমার কোন বক্তব্য নেই? যে ছেলেগুলো ঢাবির হলে মাঝে মধ্যে ডাইল খায়, তারা আমার বন্ধু বলে কি সেখানে আমার বিবেক থমকে দাঁড়ায়?

ভারতীয় সাংষ্কৃতিক আগ্রাসন তো আজকের নতুন কিছু না। যেসব বাবা-মা হিন্দি সিরিয়াল দেখায় ব্যস্ত থাকেন তাদের না হয় সময় হয় না, কিন্তু আমরা যারা ছাত্রাবস্থায় টুইশনি করেছি আমরা কি জানি না ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে কাদের ইতিহাস পড়ান হয়? কাদের ভূগোল পড়ান হয়? এই সিলেবাস কি ভারতীয়রা আমাদের দেশে এসে ঠিক করে দিয়ে গেছে না বাংলাদেশী শিক্ষাবণিকেরা করেছে? মাদ্রাসাশিক্ষার পশ্চাতপদতায় যাদের ঘুম হয় না তারা নিজের সন্তানদের শেখানোর জন্য কোন স্কুল বেছে নিয়েছে সেটা কি আমরা জানি না? নিজের সন্তানদের অন্তত ছাদে খেলতে নিয়ে যাবার মত সময় দেয়ার ইচ্ছা নেই আজকের মধ্যবিত্ত বাবা-মার। সন্তানদের ডোরিমনের হাতে তুলে দেয়ার অপরাধ কি শুধুই হিন্দি চ্যানেলের আর ডিশ ব্যবসায়ীদের? মাসে মাসে ডিশ ব্যবসায়ীদের টাকা দিচ্ছে কে? ভাবটা এমন সীমান্তে হত্যা বন্ধ করে দিলে হিন্দি চ্যানেল দেখা যায়েজ হয়ে যাবে! অনৈতিক শিক্ষাগুলো বাংলা ভাষাতে দিলেই সেটা খুব আনন্দের ব্যাপার হবে! ভারতের বিরুদ্ধে আক্রোশে ফেটে পড়া একটা ছেলে কেন বাবা-মাকে বলতে পারে না – “এই বাসায় হয় আমি থাকব না হয় টিভি। তোমাদের সময় না থাকলে ছোট ভাইদের আমি খেলতে নিয়ে যাব।” ‘ক্যাটরিনাময় স্বপ্ন’ ভঙ্গ হবে এই গোপন কারণে?

পাকিস্তানীরা খুব খারাপ; ওরা ১৯৭১ সালে ত্রিশলক্ষ মানুষের হত্যাযজ্ঞের কথা স্বীকার করে না। আর আমরা হলাম মহান কর্মবীর জাতি, চল্লিশ বছরের মাথায়ও তিন লক্ষ নিহতের একটা তালিকা বানাতে পারলাম না। আমরা খালি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা আপগ্রেড করি, চাকরি-বাকরিতে কোটার দাবী মেটাতে? ভারতীয়রা খুব খারাপ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছে। আমরা হলাম মানুষের সুরতে ফেরেশতা, মিথ্যা কথা বলিই না। বাংলাদেশ সংসদের ‘মাননীয়’ ডেপুটি স্পিকার শওকত আলির বক্তব্য ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ ১৬ই ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে এভাবে উদ্ধৃত করেছে –

I would give hundred per cent credit to India for the liberation of Bangladesh. We gained Independence but India fought for it.

অর্থাৎ, ওরা যুদ্ধ করছে আর আমরা মাছি মেরেছি। পঞ্চাশ-পঞ্চাশ কিংবা নব্বই-দশ এর ভাগাভাগি নেই – শতভাগই ওদের কৃতিত্ব। এই বক্তব্য ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেয়া হয়েছে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে বসে। জাফর ইকবাল স্যারেরা এসব দেখেও দেখবে না। আমাদের বিবেকবান শিক্ষিত ভোটাররা এই ভদ্রলোককে আবার ভোট দিয়ে সংসদে পাঠাবে!

গরুর মাংস ছাড়া আমাদের দাওয়াত জমে না। নিজেদেরকে কখনও প্রশ্ন করে দেখেছি সারা জীবনে গরু খেলাম তো অনেকগুলো, গরু পাললাম কয়টা? ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়ানোর এত গরু আসবে কোথা থেকে? আমরা শহুরে অভিজাত মানুষ, আমরা পালব গরু? ইচ্ছি! গোবর ঘাটবে গরীব মানুষ, মাংশ খাব আমরা। আচ্ছাও তাও সই। নিজের গ্রামের একটা বিশ্বাসী গরীব মানুষের হাতে দু’টা বাছুর কিনে দিয়ে বলতে পারতাম – যা পার খাওয়াও, বড় কর, দুই বছর পরে একটা তুমি বিক্রি করবা আরেকটা আমি কুরবানী দেব। বলা তো দূরের কথা এই ভাবনা মনেই আসেনি কখনও!

এই পৃথিবীতে আমরা এসেছি মেরে কেটে খেয়ে সব সাফ করে ফেলতে, পৃথিবীর প্রতি আমাদের কোন কর্তব্য নেই। বারান্দায় একটা কাচামরিচের গাছ লাগিয়ে তাতে পানি দিয়ে দিয়ে অন্তত একটা কাচামরিচ ফলানোর মুরোদ নেই আমাদের। আমাদের যত শক্তি মরিচের দাম এত বেশী কেন, সরকার কি করে – এই মর্মে সমালোচনা করতে করতে শেষ হয়ে যায়। আমরা এত নির্লজ্জ যে নিজেদের কর্তব্যবোধ নিয়ে তো ভাবিই না, কেউ যদি আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় আমাদের কি করা উচিত কি বর্জন করা উচিত তাহলে তাকে দালাল বলে রায় দিয়ে দেই।

৩.

আধুনিক সমাজে শোষণের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে জাত্যাভিমান, দেশকেন্দ্রিক গর্ব। আমরা বাংলাদেশীরা মনে করি, বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল দেশ। আমাদের হালকা কিছু সমস্যা থাকলেও আমরা হলাম সবচেয়ে ভাল জাতি। একই কথা ভারতীয়রাও মনে করে, পাকিস্তানিরাও মনে করে। শ্রেষ্ঠত্বের এই মিথ্যা প্রবোধটাকে ব্যবহার করে সরকারের মাথায় বসে থাকা চালাক লোকেরা ফায়দা তোলে। খুব সাধারণ একজন ভারতীয়ও তাই সীমান্তের হত্যাকান্ড দেখে আনন্দিত হয় – ইন্ডিয়া ইস গ্রেট – বাংলাদেশীদের কি সুন্দর ঠান্ডা করে রেখেছে। পাকিস্তানিরা পাক-ভারত ম্যাচে পাকিস্তান জিতলে আনন্দে লাফ দিয়ে বলে, উই আর আনপ্রেডিক্টেবল। আমরা সবাইকে হারাতে পারি।

এই হারা, এই জেতায় কি লাভ?

‘আমরা তোমার উপরে’ – এ মিথ্যা অহংকার মানুষের মনে এতটাই আসন গেড়ে বসেছে যে ভারতে শচীন টেন্ডুলকারকে পূজা করতে মন্দির তৈরী হয়েছে। অথচ সেখানে হাজার হাজার কৃষক ক্ষুদ্র ঋণের বোঝা বইতে না পেরে আত্মহত্যা করছে। বোমা-মৃত্যু-যুদ্ধে জেরবার পাকিস্তানিদের জন্য নাকি ক্রিকেট দলের জয় সান্তনা হিসেবে কাজ করে। কিসের সান্তনা! ডাঙ্গুলি খেলার আধুনিক সংষ্করণ কি বোমা হামলায় মৃত সেই ট্যাক্সিড্রাইভারের পরিবারের ভরণ-পোষণ চালাবে? গ্রামীন ফোন না খেতে পাওয়া মানুষদের কাজের ব্যবস্থা করার জন্য ক’টাকা খরচ করে আর ক্রিকেটের স্পন্সরশিপে কত টাকা ওড়ায়? যে খেলাটা ছিল হাত-পা নাড়িয়ে খেলে একটা আনন্দ পাওয়ার মাধ্যম সেটা কিছু মানুষের জন্য হয়ে গিয়েছে জীবনের লক্ষ্য। “ইট ক্রিকেট, স্লিপ ক্রিকেট – ড্রিংক অনলি কোকাকোলা” – এত স্পষ্ট শব্দগুলোও আমাদের চিন্তাজগতে একটুও ধাক্কা দেয় না। বাংলাদেশ দলের জয় মানে আমাদের গর্ব – এত বড় মিথ্যা আত্মতৃপ্তি বোধ সৃষ্টির একটাই কারণ, যাতে আসল গর্ব কিসে, আসল সম্মান কিসে সেটা আমাদের মনে কখনও আসতেই না পারে।

এই অবস্থাটা শুধু আমাদের দেশ, পাকিস্তান বা ভারতে না, সারা দুনিয়াতেই চালু হয়েছে। মার্কিনীদের ‘ওয়ে অফ লাইফ’ কে ঠিক রাখতে ইরাকে লক্ষ শিশুকে জীবন দিতে হচ্ছে। চীন সরকার দুনিয়ার চোখ ধাঁধাঁতে ৪২৩ মিলিয়ন ডলার খরচ করে ‘পাখির নীড়’ নামে স্টেডিয়াম বানাচ্ছে আর এদিকে কয়লাখনিতে শ্রমিকেরা জীবন্ত কবর পাচ্ছে। জীবনের মূল্য কমে যাচ্ছে অবিশ্বাস্য হারে জীবনের লক্ষ্য উলটে যাওয়ার কারণে।

সম্প্রতি এক আন্দোলনের ডাক পড়েছে – ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন। যারা ডেকেছেন তারা কতটা ওয়াকিবহাল জানিনা, তবে আমার বাজার অভিজ্ঞতা বলে ভারতীয় খাদ্যশস্য ছাড়া বাংলাদেশের অতিকরুণ অবস্থা হবে। আমার বিবেক এও বলে, ভারতীয় বাহিনীর সীমান্তে গুলি বর্ষণের শাস্তি মসুর ডাল উৎপাদনকারী ভারতীয় চাষীকে দেওয়া উচিত না। শাস্তি পাওয়া উচিত সেসব আমলাদের যারা ‘বাজারদর উৎপাদন মূল্যের চেয়ে কম বিধায় সেটা বিক্রি করা যাবে না’ এই যুক্তিতে উৎপাদিত চিনি গুদামে পঁচিয়ে নষ্ট করে। এদিকে সরকার ভারত থেকে চিনি আমদানি করতে বাধ্য হয় আর সরকারী সুগার মিলগুলো হয় দেউলিয়া। বয়কট করতে হলে সুদ-ঘুষ আর দুর্নীতি দিয়ে যারা আমাদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে দিচ্ছে তাদের আগে প্রত্যাখ্যান করা উচিত।

৪.

আল কুর’আনের সুরা আলে-ইমরানের ২৬, ২৭ ও ২৮ এ তিন আয়াতে আল্লাহ অভাবনীয় একটি বিষয় তুলে ধরেছেন। এখানে সম্মান এবং ক্ষমতার মালিক হিসেবে আল্লাহর একচ্ছত্র আধিপত্য স্বীকার করে নেয়ার পরে মুসলিমদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে তারা যেন কাফিরদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করে। আমরা কাফিরদের বন্ধু ভাবলেও তারা আমাদের বন্ধু ভাবে না, তারা নিজেদের প্রভু মনে করে। তাদের আচরণ সিংহভাগ ক্ষেত্রেই হয় প্রভুত্ব দেখানোর আচরণ। এই কাফিরেরা দেশীয় পরিচয়ে ভারতীয় হতে পারে, বাংলাদেশী হতে পারে – পাকিস্তানী বা মার্কিনীও হতে পারে। আমরা যেন অন্যায়ের বিরোধী হই, সেটা মানুষেরা যে দেশেই করে থাকুক না কেন। আর এ পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় অন্যায় আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করা, তার জায়গা অন্য কাউকে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করা। আমাদের বুঝতে হবে যারা আল্লাহর সাথে শির্ক করে না এবং মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একমাত্র অনুসরণযোগ্য হিসেবে মেনে নিয়েছে তারা আমাদের বন্ধু, আমাদের ভাই। তারা যে দেশের, ভুখন্ডের বাসিন্দা হোক না কেন, তাদের ভালবাসা, তাদের দোষগুলোকে উপেক্ষা করা, তাদের আপন করে নেয়া আমাদের কর্তব্য। আমরা যদি এটা করতে পারি তার প্রতিদানে আল্লাহ এই পৃথিবীতে আমাদের সম্মানিত করবেন, আমাদের ক্ষমতা দেবেন, আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অভাব মিটিয়ে দেবেন। এর ব্যতিক্রম আমাদের অপমান-লাঞ্চনা আর অভাবের মুখে ঠেলে দেবে।

ব্যক্তিগত পরিসরে আমরা কি করতে পারি? বড়লোক মানুষ দেখেই চোখ উল্টানোর অভ্যাস ত্যাগ করি। দুর্নীতি করা লোকদেরকে ঈর্ষা না করুণা করা শুরু করি। ভোগবাদী মনোভাব ত্যাগ করি, যে জিনিসটা না হলেও আমার চলে সেটা কেনা বন্ধ করি; জিনিসটা ভারতে বানান হোক, চীনে কিংবা বসুন্ধরার লিমিটেডের। যতটুকু সম্ভব, যেখানে সম্ভব উৎপাদনমুখী হই। অন্তত চক্ষুলজ্জার খাতিরে হলেও পৃথিবী আমাকে কী দিয়েছে সেই হিসাবের পাশাপাশি আমি তাকে কী দিয়েছি সেই হিসাব করি। সর্বোপরি একমাত্র আল্লাহকে এককভাবে ইবাদাতের সত্তা হিসেবে মেনে নেই। তার আদেশ অনুযায়ী মানুষকে সৎ কাজে উৎসাহিত করি, অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেই। প্রতিকূল পরিবেশেও যথাসাধ্য সত্য কথা বলার, সত্যের সাক্ষ্য দেয়ার এবং ব্যক্তিগত মতবাদ ও ভাললাগা ছেড়ে সত্যকে মেনে নেয়ার সৎ সাহস দেখাই। মুখে ইসলামের কথা বলার সাথে সাথে নিজেদের জীবনে যথাসম্ভব ইসলাম জানা ও মানার চেষ্টা করি।

আল্লাহ যেন আমাদের মানুষের দাসত্বকে তুচ্ছ দৃষ্টিতে দেখার সামর্থ্য দেন। তিনি যেন অর্থহীন ভারত, পাকিস্তান বা মার্কিন বিরোধীতার বদলে শির্ক ও কুফরের বিরোধীতা করার মানসিকতা দান করেন। আমিন।

– শরীফ আবু হায়াত অপু

৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৩৩ হিজরি

ফোর্ট ওয়েইন, যুক্তরাষ্ট্র।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button