হারাম-হালাল

মূর্তি পূজার সূচনা হয়েছিল যেভাবে

মানবজাতির আদি পিতা আদম (আঃ) হ’তে দ্বিতীয় পিতা নূহ (আঃ)-এর মধ্যবর্তী সময়ে কিছু নেককার মানুষ খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেন। নূহ (আঃ)-এর সময়ে তাঁরা মৃত্যুবরণ করলে ইবলীস তাদের ভক্ত-অনুসারীদের প্ররোচনা দিল এই বলে যে, ঐসব নেককার লোকদের বসার স্থানে তোমরা তাদের মূর্তি স্থাপন কর এবং সেগুলিকে তাদের নামে নামকরণ কর। শয়তান তাদের যুক্তি দিল যে, যদি তোমরা মূর্তিগুলোকে সামনে রেখে ইবাদত কর, তাহ’লে তাদের স্মরণ করে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি তোমাদের অধিক আগ্রহ সৃষ্টি হবে। তখন লোকেরা সেটা মেনে নিল। অতঃপর এই লোকেরা মৃত্যুবরণ করলে তাদের পরবর্তী বংশধরগণকে শয়তান কুমন্ত্রণা দিল এই বলে যে, তোমাদের বাপ-দাদারা এইসব মূর্তির পূজা করতেন এবং এদের অসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন ও তাতে বৃষ্টি হ’ত। একথা শুনে তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে সরাসরি মূর্তিপূজা শুরু করে দিল। অতঃপর এভাবেই মূর্তিপূজার সূচনা হয়। কুরআনে নূহের সময়কার ৫ জন পূজিত ব্যক্তির নাম এসেছে। যথাক্রমে অদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক্ব ও নাস্র (নূহ ৭১/২৩)। এদের মধ্যে ‘অদ’ ছিলেন পৃথিবীর প্রথম পূজিত ব্যক্তি যার মূর্তি বানানো হয় (ইবনু কাছীর) =(বুখারী হা/৪৯২০ ‘তাফসীর’ অধ্যায়; তাফসীর কুরতুবী, বাগাভী, ইবনু কাছীর, শাওকানী প্রভৃতি)

অদৃশ্য বস্ত্তর চাইতে দৃশ্যমান বস্ত্ত মানব মনে দ্রুত প্রভাব বিস্তার করে। সেকারণ অদৃশ্য ব্যক্তি বা সত্তার কল্পনা থেকে মূর্তি ও ছবির প্রচলন ঘটেছে। অবশেষে মূর্তি বা ছবিই মূল হয়ে যায়। ব্যক্তি বা সত্তা অপাঙক্তেয় হয়। যার জন্য মূর্তিপূজায় মূর্তিই মুখ্য হয়, আল্লাহ গৌণ হয়ে যান। সেকারণ নূহ (আঃ) থেকে মুহাম্মাদ (ছাঃ) পর্যন্ত সকল নবী মূর্তি পূজাকে ‘শিরক’ বলেছেন এবং সর্বদা এর বিরুদ্ধে মানবজাতিকে সাবধান করেছেন। এমনকি নবীগণের পিতা ইবরাহীম (আঃ) তাঁর সন্তানদেরকে মূর্তিপূজা থেকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করে গেছেন (ইবরাহীম ১৪/৩৫)। কেননা ভক্তি ও ভালোবাসা হৃদয়ের বিষয়। বাহ্যিকতায় তা ক্ষুণ্ণ ও বিনষ্ট হয়। এক সময় মানুষ তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে ভুলে যায় ও তাঁর বিধানকে অগ্রাহ্য করে। আর মূর্তির পিছনে তার সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করে। অথচ সে ভাল করেই জানে যে, মূর্তির ভাল বা মন্দ কোন কিছুই করার ক্ষমতা নেই। কিন্তু শয়তানের ধোঁকায় পড়ে সে সর্বদা এর পিছেই লেগে থাকে।

পরবর্তীকালে মানুষ ছবি বানাতে শিখলে ছবি, প্রতিকৃতি, স্থিরচিত্র ইত্যাদি এখন মূর্তির স্থান দখল করেছে। মূল ব্যক্তির কল্পনায় এগুলি তৈরী করা হয়। একই নিয়তে সমাধি সৌধ, স্মৃতিসৌধ, মিনার, বেদী, স্তম্ভ ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়। এগুলিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এগুলির পূজা এবং কবরপূজা মূর্তিপূজারই নামান্তর। বিগত যুগের মুশরিকরা তাদের মূর্তিগুলি নিজ হাতে বানাতো, সেগুলিকে রক্ষা করত, লালন করত, সম্মান করত, সেখানে ফুল ও নৈবেদ্য পেশ করত, কেউ কেউ এর অসীলায় আল্লাহর নৈকট্য চাইত ও পরকালীন মুক্তি তালাশ করত। বর্তমান যুগের নামধারী মুসলমানরা সেকাজটিই করছে একইভাবে একই নিয়তে। ক্ষুধার্ত-জীবিত মানুষকে তারা কিছুই দিতে চায় না। অথচ মৃতের কবরে বিনা দ্বিধায় তারা হাযারো টাকা ঢালে। ভূমিহীন, বাস্ত্তভিটাহীন ছিন্নমূল মানুষ একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পায় না। অথচ এইসব মাযার, মিনার, স্মৃতিসৌধ ইত্যাদির নামে সারা দেশে শত শত একর জমি অধিগ্রহণ করে রাখা হয়েছে। যেগুলি স্রেফ অপচয় ও শিরকের আখড়া ব্যতীত কিছুই নয়। মূর্তিভাঙ্গা ইবরাহীমের গড়া কা‘বায় যেমন তার অনুসারী কুরায়েশরা যুগে যুগে মূর্তি দিয়ে ভরে ফেলেছিল, তেমনিভাবে সেখান থেকে মূর্তি ছাফকারী মুহাম্মাদের অনুসারীরা আজ ঘরে-বাইরে সর্বত্র বেনামীতে ছবি ও মূর্তিপূজা করে চলেছে। অথচ ‘ইসলাম’ এসেছিল এসব দূর করার জন্য। মানুষকে অসীলা পূজা থেকে মুক্ত করে সরাসরি আল্লাহর গোলামীর অধীনে স্বাধীন মানুষে পরিণত করার জন্য। ভারত বিজেতা সুলতান মাহমূদকে যখন সোমনাথ মন্দির ভাঙ্গার বিনিময়ে অঢেল অর্থ ও মণি-মুক্তা দিতে চাওয়া হয়, তখন তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘হামলোগ বুত শেকোন হ্যাঁয়, বুত ফুরোশ নেহীঁ’। ‘আমরা মূর্তি ভাঙ্গা জাতি, মূর্তি বিক্রেতা নই’। অথচ আজ রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ে এসব কাজ করছেন মুসলমানদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা মুসলমানদের দেওয়া ট্যাক্সের পয়সা ব্যয় করে। আল্লাহর নিকটে এঁরা কি কৈফিয়ত দিবেন, তাঁরাই ভাল জানেন। তবে দেশের নাগরিক হিসাবে আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করব এসব থেকে বিরত থাকার জন্য এবং আল্লাহর গযব থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য। কেননা আল্লাহ বান্দার সব গোনাহ মাফ করেন, কিন্তু শিরকের গোনাহ মাফ করেন না এবং পরকালে এসব লোকের জন্য জান্নাতকে আল্লাহ হারাম ঘোষণা করেছেন (নিসা ৪৮; মায়েদাহ ৭২)। অতএব হে জাতি! ছবি ও মূর্তি থেকে সাবধান হও!!

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

৯টি মন্তব্য

    1. আপনার মনগড়া কথা, আপনার শব্দের গাঁথুনি একেবারে মন্দ নয়। তবে, মূর্তিপূজায় ব্যয়িত সময়, শ্রম ও অর্থ যদি বৃথা হয়, তবে মসজিদের বড় বড় মিনার-গম্বুজের পেছনে ব্যয়িত সময়, শ্রম ও অর্থ বৃথা নয় কি? হয়ত আপনি বলবেন, “এটাতো আল্লার ঘর, তাই আল্লার উদ্দেশ্যে ব্যয় বৃথা নয়।” কিন্তু গোটা পৃথিবীইতো আল্লার, তাছাড়া আপনাদের মতানুসারে আল্লা নিরাকার; নিরাকারের আবার ঘর কিসের। তিনিতো সর্বত্রই আছেন। পৃথকভাবে একটা নিরাকার বস্তুর ঘর নির্মাণ বৃথা নয় কি? যদি বলেন,মসজিদ আল্লার এবাদতের স্থান, তবে বলব, এবাদত তো যেকোনো স্থানেই করা যায়, মসজিদের কী প্রয়োজন? আবার, মসজিদ গড়লেও তাতে কেবল নামাজের জন্য উপযুক্ত জায়গা হলেই যথেষ্ট, শুধুশুধু বড় বড় গম্বুজ, সুউচ্চ মিনার, দামী দামী টাইলস্, মার্বেল পাথর বসানো সময়, শ্রম ও অর্থের বৃথা অপচয় নয় কি? (আশা করি পোস্টটি ডিলিট করবেন না। নিজের খোড়া যুক্তিকে দৌড় দেয়ানোর অপচেষ্টা করবেন না )

      1. পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে। সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা বাক্কায় (মক্কায়) অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়। এতে রয়েছে ‘মাকামে ইবরাহিমের মতো প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে লোক এর ভিতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ করা হলো মানুষের ওপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার। আর যে লোক তা মানে না, আল্লাহ সারা বিশ্বের কোনো কিছুরই পরোয়া করেন না।’ (সূরা আলে ইমরান : ৯৬-৯৭)

        আলোচ্য আয়াতদ্বয়ের মধ্যে মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কাবা শরিফের নির্মাণের উদ্দেশ্য ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আলোকপাত করেছেন। এই ঘরটি পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম ইবাদতের ঘর যা বরকত ও সব কল্যাণের আধার এবং সারা বিশ্বের জন্য হেদায়েতের দিশারি। আল্লামা ইদ্রিস কান্ধলবী (র.) স্বীয় কিতাব তাফসিরে মারেফুল কোরআনে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন যে, নভমণ্ডল, ভূমণ্ডল, চন্দ্র, সূর্য ও তারকারাজি সৃষ্টি করার আগে মহান রাব্বুল আলামিন কাবার জমিন সৃষ্টি করেছেন। পরে কাবার নিচ থেকে জমিনকে বিস্তৃত করে সারা পৃথিবী সৃষ্টি করেন।

        বায়হাকি শরিফে একটি হাদিস এসেছে, হজরত রসুলে আরাবি (সা.) বলেন, হজরত আদম ও বিবি হাওয়ার পৃথিবীতে আগমনের পর আল্লাহতায়ালা হজরত জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে তাদের কাবা সংস্কারের নির্দেশ দেন। সংস্কার হয়ে গেলে তাদের কাবা গৃহ তওয়াফ করার নির্দেশ দেন। ইবনে কাসিরে উল্লেখ করা হয়, আল্লাহতায়ালা হজরত আদম (আ.)কে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি সর্বপ্রথম মানব এবং এই গৃহটি সর্বপ্রথম গৃহ— যা মানব জাতির জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

        ভাই আল্লাহর জন্য কোন ঘরের প্রয়োজন নেই। কাবা ঘর হচ্ছে মুসলিমদের কেবলা।পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে যুগে যুগে কেন নবীগণ এবং অন্যান্য মানুষ কাবা শরিফ নির্মাণের মতো এই বরকতপূর্ণ কাজে নিজেদের শরিক করেন? বিষয়টি আমাদের ভালোভাবে বুঝতে হবে, যা কুরআনের মাধ্যমে আমরা সহজেই জানতে পারি। মহান রব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে সূরা জারিয়ার ৫৬-৫৭নং আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে আহার্য জোগাবে।’ আলোচ্য আয়াতদ্বয়ে মানব ও জিন জাতির সৃষ্টির উদ্দেশ্য আলোচিত হয়েছে। আগে পবিত্র কাবাতুল্লাহ নির্মাণের উদ্দেশ্য আলোচিত হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্ববাসী যতদিন পর্যন্ত পবিত্র কাবাতুল্লাহর সম্মান করবে, তওয়াফ করবে, কাবাতুল্লাহর দিকে ফিরে নামাজ আদায় করবে, হজ ও উমরাহ করবে ততদিন পর্যন্ত সারা দুনিয়া টিকে থাকবে। দুনিয়াবাসী রহমত ও বরকত পেতে থাকবে। দুনিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহতায়ালা সম্মানিত গৃহ কাবাকে মানুষের স্থিতিশীলতার কারণ করেছেন’ উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা হজরত আতা (র.) এইভাবে করেছেন যে, কাবাঘর সারা বিশ্বের স্তম্ভস্বরূপ। যতদিন এর দিকে মুখ করে মানুষ নামাজ পড়বে ও হজ করবে ততদিন দুনিয়াটা টিকে থাকবে।

        পৃথিবীর যেকোন পবিত্র স্থানে নামাজ আদায় করা যায়। কিন্তু মসজিদের কেন প্রয়োজন এবং এর পেছনে ব্যয়িত সময়, শ্রম ও অর্থ বৃথা নয় কি? মসজিদে কেন নামাজ আদায় করতে হবে? আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: আল্লাহ তা‘আলার (ঘর) মসজিদ আবাদ তারাই করবে, যারা আল্লাহ তা‘আলা ও পরকালের উপর ঈমান আনে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কাউকেই ভয় করে না। তাদের ব্যাপারে আশা করা যায়, এরা হেদায়াত প্রাপ্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরায়ে তাওবা আয়াত নং ১৮)

        ইসলাম জামাআতবদ্ধ জীবন পছন্দ করে; অপছন্দ করে বিচ্ছিন্নতাকে। কারণ, শান্তি ও শ£খলা রয়েছে জামাআতে। আর নামায একটি বিশাল ইবাদত। নামায পড়তেও হয় সমাজের সকল শ্রেণীর সভ্যকে। তাই সমষ্টিগতভাবে এই ইবাদতের জন্যও একটি সুশৃঙ্খল নিয়ম-নীতির প্রয়োজন ছিল। বিধিবদ্ধ হল জামাআত।

        পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হয় ইসরা’ ও মি’রাজের রাত্রে। ঠিক তার পরের দিন যোহরের সময় জিবরীল (আঃ) প্রিয় নবী (সাঃ)-কে নিয়ে জামাআত সহকারে প্রথম নামায পড়েন। অনুরুপভাবে মুসলিমরাও মহানবী (সাঃ)-এর পশ্চাতে দাঁড়িয়ে তাঁর অনুসরণ করেন। আর জিবরীলের ইমামতির পর মহানবী (সাঃ) মক্কা মুকার্রামায় কোন কোন সাহাবীকে নিয়ে কখনো কখনো জামাআত সহকারে নামায আদায় করেছেন। কিন্তু মদ্বীনায় হিজরত করার পর জামাআত একটি বাঞ্জিত নিয়ম ও ইসলামী প্রতীকরুপে গুরুত্ব পেল। আর সকল নামাযীকে জামাআতবদ্ধ ও জমায়েত করার জন্য বিধিবদ্ধ হল আযান।

        ইসলামী শরীয়তের একটি মাহাত্ম এই যে, তার বিভিন্ন ইবাদতে জামাআত ও ইজতিমা বিধিবদ্ধ রয়েছে। যা আসলে এক একটি সম্মেলন। যে সম্মেলনে মুসলিম নিয়মিতভাবে জমায়েত হয়। তাতে তারা এক অপরের অবস্থা জানতে পারে। একে অন্যকে উপদেশ দিতে পারে। কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সলা-পরামর্শ করতে পারে। উপস্থিত সমস্যfর সঠিক সমাধান অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে পরস্পর সহ্‌যোগিতা করতে পারে। এক সাথে বসে পরস্পর মত-বিনিময় করতে পারে। জামাআতে উপস্থিত হয়ে অজ্ঞ ব্যক্তি ইসলামী জ্ঞান লাভ করতে পারে। দরিদ্র সাহায্য পেতে পারে। ঐক্যের মহামিলন দেখে মুসলিমের হৃদয় নরম হয়ে থাকে। প্রকাশ পায় ইসলামী শান-শওকত, সমতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা।

        জামাআতে ভেঙ্গে চুরমার হয় বর্ণ-বৈষম্যের সকল প্রাচীর। একাকার হয় সকল জাত-পাত। আমীর-গরীব, আতরাফ-আশরাফ, বাদশা-ফকীরের কোন ভেদাভেদ নেই এখানে। ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের মহান আদর্শর অভিব্যক্তি ঘটে এই জামাআতে।

        সময়ানুবর্তিতা, নিয়মানুবর্তিতা, সুশৃঙ্খলতা এই জামাআতের মহান বৈশিষ্ট্য । সভ্য জাতির আদর্শ শিক্ষা লাভ হয় এই পুন: পুন: ইজতিমায়। জামাআতে উপস্থিত হয়ে একে অপরের দেখাদেখি আল্লাহর ইবাদতের জন্য প্রতিযোগিতামূলক মন-মানসিকতা সৃষ্টি হয় মুসলিমের।

        জামাআতের এই মহা মিলনক্ষেত্রে ইসলামী সম্প্রীতির যে সুন্দর ও সুষ্ঠ পরিবেশ পরিলক্ষিত হয়, তাতে সামাজিক জীবনের চলার পথে নিজেকে একাকী ও অসহায় বোধ হয় না। মনে জাগে খুশী, প্রাণে জাগে উৎফুল্লুতা, ইবাদতে আসে মনোযোগ, উৎসাহ্‌, উদ্দীপনা ও স্ফূর্তি।

        বড় বড় গম্বুজ, সুউচ্চ মিনার, দামী দামী টাইলস্, মার্বেল পাথর বসানো সময়, শ্রম ও অর্থের বৃথা অপচয় নয় কি?

        ভাই মানুষ সৌর্দযকে পছন্দ করে, তাই সকলেই চায় মসজিদের সৌর্দয বৃদ্ধিপাক। আর এজন্য অর্থ ব্যয় করে। আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করা মুসলামদের কর্তব্য এবং সাওয়াবের কাজ। আর এ কাজের পিছনে অর্থ ব্যয় অপচয় নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: আল্লাহ তা‘আলার (ঘর) মসজিদ আবাদ তারাই করবে, যারা আল্লাহ তা‘আলা ও পরকালের উপর ঈমান আনে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কাউকেই ভয় করে না। তাদের ব্যাপারে আশা করা যায়, এরা হেদায়াত প্রাপ্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরায়ে তাওবা আয়াত নং ১৮)।

        তবে একথা বলবো, অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল নয়, সেটা যে কাজেই হোক (মসজিদ. নির্মান, মাদ্রাসা নির্মান বা অন্য কিছু।) আর হ্যা ভাই, কিয়ামতের আলামতের মধ্য একটা আলামত হচ্ছে, শেষ জামানায় মানুষ মসজিদ নিয়ে গর্ব করবে। অর্থাৎ কোন মসজিদ কত সুন্দর এটা নিয়ে গর্ব করবে।

        আশা করি, দলিল সহ উত্তর পেয়েছেন।

        একজন মুসলমান হিসেবে শুধু এটুকু বলবো, আল্লাহর খুশির জন্য যে কোন ধরণের অর্থ ব্যয় করা অপচয় নয়। সেটা মসজিদ নির্মাণের জন্য হোক, কাউকে সাহায্য করে হোক। আল্লাহর খুশির জন্য যে কোন কাজ করা একজন মুমিন মুসলমানের শেষ ও একমাত্র ইচ্ছা (যে আমি যা করবো আল্লাহর খুশির জন্যই করবো)। আর এতেই আমাদের তৃপ্তি। আল্লাহর ইবাদত করা ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করা শিরক এবং সেই সকল কাজের জন্য শুধু অর্থ নয়, সময়, শ্রম, অর্থ, পুজার স্থানে যাওয়া বা সামান্য সাহায্য করাও গুনাহের কাজ। কেননা এগুলো ধীরে ধীরে আমাদের ঈমানকে ধ্বংস করে দেয়।

      2. ইবাদত এমন একটি কাজ যা একাগ্রতার সাথে করতে হয় যে কোন কাজের একটি নির্দিষ্ট জায়গা প্রয়োজন হয় তাই আল্লাহ ইবাদত করতে মসজিদ হল একটি নির্দিষ্ট ঘড়। ঘোটা পৃথিবী আল্লাহর তাই আপনি দেখবেন মুসলমান নামাজের সময় হলে যে কোন জায়গায় ণামাজ পড়ে যদি সময় পায় তাহলে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া উত্তম। আপনি অফিসে একটি শারীরিক ও মানসিক কাজ করবেন যদি আপনাকে একটি দুর্গন্দ যুক্ত, ভাঙা,রুমে দেওয়া হয় তাহলে আপনি সেই কাজ গুলো মনোযোগ দিয়ে করতে পাড়বেন? কাজে মনোযোগটার জন্য আপনি চাইবেন সুন্দর পরিবেশ তাই ইবাদতের জায়গা বা পরিবেশ সুন্দর করা অপচয় নয়। সুউচ্চ মিনার দেওয়া হয় বিশেষ করে আজান দেওয়ার জন্য। আপনি যদি হিন্দু হয়ে থাকেন তাহলে বলি, মূর্তি পূজা হিন্দু ধর্মে নিষিদ্ধ।

      3. হ্যাঁ ভাই মূর্তি পূজা করা সময় শ্রম অর্থ সবগুলাই বৃথা। কারণ যারা আমার হাতের তৈরি তারা তো আমারই গোলাম, আমি কেন তাদের গোলাম হব।উপাসনা হবে একমাত্র স্রষ্টার জন্য।স্রষ্টার নামে স্রষ্টার উপাসনার ভাগ আপনি মূর্তি কে দিবন কেন? যে মূর্তি আপনার কোন ক্ষতি কিংবা উপকার করতে পারে না। শুধু তাই নয় যে মূর্তি নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা নাই সে পরকালে আপনাকে বিপদ থেকে কিভাবে রক্ষা করবে.
        আর মুসলমানরা কোন ঘরের উপাসনা করেনা। নির্বিঘ্নে নিরাপদে নিরিবিলি মালিকের উপাসনা করার জন্য ঘর. মালিকের উপাসনা করে.
        মসজিদের গম্বুজ মিনার এগুলো উপাসনার কোন মূল বিষয় নয় শুধু ওই ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে যেখানে সে ইবাদত করবে. এজন্য ইসলামে বাঁশের তৈরি ভাঙ্গাচুরা জীর্ণ-শীর্ণ মসজিদের যে সম্মান বায়তুল মোকাররমের একই সম্মান। উঁচু বিশাল ইমারতের আলাদা কোন সম্মান নাই যেহেতু উভয় জায়গাটুকু স্রষ্টার উপাসনার জায়গা তাই উভয়ের জায়গার মর্যাদা এক.
        এখন বলতে পারেন পুরো পৃথিবীর তো আল্লাহর.তাহলে একটু জায়গা একটি ঘর কেন আল্লাহর ঘর হবে.
        আপনার কথা ঠিক আছে. পুরো পৃথিবী আল্লাহর এবং রাসূলের হাদিস বুখারির হাদিসে রাসূল বলেছেন সারা পৃথিবীর ভূমি আমাদের মসজিদ করা হয়েছে সুতরাং পথে-ঘাটে-মাঠে যে যেখানে নামাজ পড়ে নামাজ আদায় হবে.
        যেহেতু সব জায়গায় সব সময় পবিত্র থাকে না কোন কোন জায়গা বিভিন্ন প্রাণীর পেশাব পায়খানায় অপবিত্র হতে পারে সব জায়গাকে সর্বদা পরিষ্কার করে সংরক্ষণ সম্ভব নয়. তাই সর্বদা যে জায়গাটুকুতে ইবাদত করা হবে ওই জায়গাটুকু ওই ঘর টুকু পুতপবিত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করা যাকে বলা হয় আল্লাহর ঘর।আল্লাহর ঘর মানে এই নয় যে আল্লাহ এখানে বসবাস করেন বরং আল্লাহকে স্মরণ করার ঘর, আল্লাহকে উপাসনার ঘর। তাই তার নাম আল্লাহর ঘর.
        আল্লাহ সব জায়গায় সর্বদা অবস্থান করেন এ বিশ্বাস ইসলামের বিশ্বাস নয়. ইসলামের বিশ্বাস হলো আল্লাহ আসমানে আর আরবে আজীমে আছেন এটা কুরআনের কথা. আর যারা বলে আল্লাহ সব জায়গায় আছেন তার মানে হল সব জায়গা আল্লাহর চোখের সামনে আছে।

      4. Zero ভাই। এটা আপনার দৃষ্টিভঙ্গির বক্রতা। নিরাকার আল্লাহ মসজিদকে নিজের ঘর বলে ইবাদাতের স্থানকে সম্মানিত করেছেন। নিজের থাকার জন্য নয়। আর গম্বুজ, মিনার ইত্যাদি জরুরি কোন বিষয় নয়। ব্যক্তিগতভাবে কেউ করতে চাইলে করতে পারে। নিষেধ নেই।
        আপনার শেষ আপত্তি- সমস্ত জমিন আল্লাহর। তাহলে তার ইবাদাতের জন্য মসজিদের কী প্রয়োজন?

        উত্তর: মূলত ইসলাম ধর্ম একটি বিজ্ঞানময় ধর্ম। মানুষের সুরুচি ও চাহিদাকে অঘ্রাহ্য করে না। প্রতিদিন ৫বার আল্লাহর ঘরে এসে হাজিরা দিলে ২৪ ঘন্টা আল্লাহকে স্মরণ রাখতে পারে। একটি জায়গা নির্দিষ্ট করলে সেখানে একত্রিত হওয়া সহজ। তাই মসজিদের বিকল্প নেই। ইসলামের ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন, মুসলমানদের ব্যাক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এমনকি রাজনৈতিক কার্যক্রমের বিচার-ফায়সালা সব কিছুই পরিচালিত হয়েছে এই মসজিদ থেকে। আপনিও অবাক হবেন যে, পৃথিবীতে ইসলাম ২য় কোন ধর্ম নেই- যেখানে প্রত্যেক ব্যাক্তিই ব্যাক্তিগত থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যন্ত সকল সেক্টরে সকল সমস্যার সঠিক সমাধান দেওয়া হয়েছে। যদি বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, ontest any way. I’m can chalenge u. Don’t mind.
        (মনটাকে সরল করলে সঠিক বিষয়টি বুঝতে পারবেন বলে আমি আশাবাদী। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন

Back to top button