সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ প্রসঙ্গে

বাংলাদেশে চারটি ধর্মাবলম্বী লোক বসবাস করে, যথা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান। বাংলাদেশের সামগ্রিক জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিম, ৮ ভাগ হিন্দু, অবশিষ্ট ২ ভাগ বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান। বাংলাদেশে জনসংখ্যার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি। তা ছাড়া বাংলাদেশে বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায় রয়েছে।

বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায় হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। এদের একটি ক্ষুদ্র অংশ প্রকৃতির পূজারী হিসেবে নিজস্ব ধর্মীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অনুসরণ করে থাকে। আজ থেকে পাঁচ দশক আগেও বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায় হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিল। এদের এক বিরাট অংশ বিগত পাঁচ দশকে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। ধর্মান্তরিত হওয়ার ধারা বর্তমানেও অব্যাহত।

বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালে রাষ্ট্রীয় মূলনীতির অন্যতম নীতি ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। পরবর্তীকালে সামরিক শাসনামলে দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র (পঞ্চদশ সংশোধন) আদেশ ১৯৭৮ দ্বারা ধর্মনিরপেক্ষতা ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। প্রতিস্থাপিত এ বিধানটি সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক বাতিল ঘোষিত হলে ’৭২-এর সংবিধানে প্রত্যাবর্তনের জোর দাবি ওঠে। পরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দ্বারা কিছু বিষয়ে ’৭২-এর সংবিধানে প্রত্যাবর্তন করা হয়। এ বিষয়গুলোর একটি হলো সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের স্থলে পুনরায় ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র প্রতিস্থাপন।

রাষ্ট্র দ্বিতীয় দফায় সামরিক শাসনে পতিত হলে সামরিক শাসক এরশাদের আমলে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ২ক অনুচ্ছেদ সন্নিবেশ করে বলা হয়- প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাবে। রাষ্ট্রধর্ম বিষয়টি’৭২-এর সংবিধানে ছিল না। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক অষ্টম সংশোধনী বাতিল ঘোষিত হলেও সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রণয়নকালে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অক্ষুণ্য রেখে বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সম-অধিকার নিশ্চিত করবে।

বর্তমানে বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। এ দু’টির সাংঘর্ষিক অবস্থান। পৃথিবীর কোনো দেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম বিষয়ে এ ধরনের সাংঘর্ষিকতা নেই। যদিও অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রথমত, বলা হয়েছে অন্যান্য ধর্ম প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাবে এবং অতঃপর ওই বাক্য প্রতিস্থাপনপূর্বক পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয়, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সম-অধিকার নিশ্চিত করবে; কিন্তু তা কোনোভাবেই ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে রাষ্ট্রধর্মের সাংঘর্ষিকতার অবসান ঘটায় না।

সংগঠনের স্বাধীনতা বিষয়ে ’৭২-এর সংবিধানে উল্লেখ ছিল জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। তবে শর্ত থাকে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্পন্ন বা লক্ষ্যানুযায়ী কোনো সাম্প্রদায়িক সমিতি বা সংঘ কিংবা অনুরূপ উদ্দেশ্য সম্পন্ন বা লক্ষ্যানুযায়ী ধর্মীয় নাময্ক্তু বা ধর্মভিত্তিক কোনো সমিতি বা সংঘ গঠন করবার বা তার সদস্য হওয়ার বা অন্য কোনো প্রকারে তার তৎপরতায় অংশগ্রহণ করবার অধিকার কোনো ব্যক্তির থাকবে না।

পরবর্তীকালে দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র (পঞ্চদশ সংশোধন) আদেশ, ১৯৭৮ দ্বারা এ অনুচ্ছেদটি সংশোধন করে এর সাথে সন্নিবেশিত শর্ত অর্থাৎ ‘তবে শর্ত থাকে যে সমিতি বা সংঘ গঠন করবার অধিকার থাকবে না’ অবলুপ্ত করা হয়। এ সংশোধিত বিধানটি সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। দেশের সর্বোচ্চ আদালত পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করলে সংগঠনের স্বাধীনতাসংক্রান্ত অনুচ্ছেদটির শর্তাংশ পুনঃসংশোধন করে বলা হয়।

তবে শর্ত থাকে যে, কোনো ব্যক্তির উক্ত সমিতি বা সংঘ গঠন করবার কিংবা এর সদস্য হওয়ার অধিকার থাকবে না; যদি-(ক) উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (গ) উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; বা (ঘ) উহার গঠন ও উদ্দেশ্য সংবিধানের পরিপন্থী হয়।

স্পষ্টত ধর্মভিত্তিক সমিতি বা সংঘ গঠন বিষয়ে’ ৭২-এর সংবিধানে যে বিধিনিষেধ ছিল তাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসম্পন্ন বা লক্ষ্যানুযায়ী সমিতি বা সংঘ গঠনের অধিকার খর্ব করা হয়েছিল। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, তাতে অন্যান্য বিষয়ের সাথে যুক্ত করে বলা হয় ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কিংবা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টির বা জঙ্গি কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হলে, সে ক্ষেত্রে সমিতি বা সংঘ গঠন করবার অধিকার থাকবে না। তা ছাড়া, এরূপ সমিতি বা সংঘ সংবিধানের পরিপন্থী হলে এর গঠন নিষিদ্ধ করা হয়।

সংগঠনের স্বাধীনতাবিষয়ক অনুচ্ছেদটির পূর্বোক্ত দু’টি অবস্থান পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, প্রথমোক্ত অবস্থানে ধর্মভিত্তিক সমিতি বা সংঘ গঠনের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা পূর্ণাঙ্গ। আর বর্তমানে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাকে আংশিক বলা যায় এ কারণে যে, গঠন-পরবর্তী বা পূর্ববর্তী পর্যায়ে যদি দেখা যায় কোনো সমিতি বা সংঘ অনুচ্ছেদটিতে উল্লেখিত শর্তাংশের লঙ্ঘনপূর্বক পরিচালিত হবে বা হচ্ছে সেক্ষেত্রে গঠনের অনুমতি প্রদান থেকে বিরত থাকার বা অনুমতি প্রদান না করার অবকাশ আছে।

অরাজনৈতিক সমিতি বা সংঘ হিসেবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ১৯৭৫ সালে যাত্রা শুরু করলেও এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮৮ সালের জুন মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, ৯ জুন ১৯৮৮ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই ঘোষণার তারিখেই এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কয়েক দিন পর দেয়া হয়। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ৯ জুন তারিখটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে- এটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন এবং এটি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার রক্ষা। গঠনতন্ত্রে এ সংগঠনটিকে অরাজনৈতিক এবং এটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার রক্ষার কথা বলা হলেও কার্যত এটি যে, অসাম্প্রদায়িক নয় এবং এটি যে, শুধু তিনটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলে সেটি স্পষ্ট।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ দাবি করেছিলেন, এ সংগঠনটি কোনো ধর্ম বা রাজনৈতিক দল বা সরকারের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট নয় এবং এটি কারো ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থে পরিচালিত নয়। সংগঠনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের আলোকে এটিকে ’৭২-এর সংবিধান এবং সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রবর্তন-পরবর্তী পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সংগঠনটির কার্যকলাপ সংগঠনের স্বাধীনতার বিষয়ে সাম্প্রদায়িক সমিতি বা সঙ্ঘ গঠন বিষয়ে যে বিধিনিষেধ দেয়া আছে, তাকে আকৃষ্ট করে।

বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্মের সাংঘর্ষিক অবস্থান হলেও তা দেশের প্রধান চারটি ধর্মাবলম্বী যথা- মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের নিজ নিজ ধর্ম পালনে সমমর্যাদা ও সম-অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। একটি দেশের সংবিধানে যখন সব ধর্মাবলম্বীর ধর্ম পালন ও ধর্মীয় অধিকার সমান, তখন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, দেশের প্রধান ধর্মাবলম্বীদের বাদ দিয়ে অপর তিনটি ধর্মাবলম্বী যদি ধর্মীয় নামযুক্ত কোনো সমিতি বা সংঘ গঠন করে, তাতে ধর্মভিত্তিক সমিতি বা সংঘ গঠনের বিষয়ে সংবিধানে যে বিধিনিষেধ দেয়া আছে তা আকৃষ্ট হয়, যার অর্থ দাঁড়ায় সংবিধান এ ধরনের সমিতি বা সঙ্ঘ গঠনের অনুমতি দেয় না।

সংবিধানের দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র (পঞ্চদশ সংশোধন) আদেশ দ্বারা ধর্মভিত্তিক সমিতি বা সঙ্ঘ গঠনের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার অবসান করা হলে ধর্মভিত্তিক দল, সমিতি বা সঙ্ঘ গড়ে ওঠে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রবর্তন-পরবর্তী স্পষ্টত এ ধরনের ধর্মভিত্তিক দল, সঙ্ঘ বা সমিতির কার্যকলাপ সংবিধানের পরিপন্থী। আর সেক্ষেত্রে সংবিধান দ্বারা আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে অবজ্ঞা বা উপেক্ষাপূর্বক যারা দল, সমিতি বা সঙ্ঘ পরিচালনা করছেন, তাদের উচিত এরূপ সাংঘর্ষিকতা পরিহারপূর্বক দল, সমিতি বা সঙ্ঘ পরিচালনা করা।

উল্লেখ্য, পৃথিবীর যেকোনো দেশে যেকোনো ধর্মাবলম্বীর ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন নিন্দনীয় ও আইনের পরিপন্থী। তবুও কম-বেশি প্রায় প্রতিটি দেশেই সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীদের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন চলে আসছে। এ ধরনের অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে বাংলাদেশ ও ভারতও মুক্ত নয়। ভারতে সম্প্রতি ফ্রিজে গরুর গোশত রাখা, মোটরসাইকেলে গরুর গোশত পরিবহন এবং গরু বিক্রয়ের সাথে জড়িত থাকার কারণে তিনজি রাজ্যে তিনটি হৃদয়বিদারক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

তিনটি ঘটনাতেই নৃশংসভাবে ইসলাম ধর্মাবলম্বী তিন ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। এসব বিষয় সে দেশের পত্রপত্রিকাসহ আমাদের পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলেও এ ব্যাপারে মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের কোনো নাগরিক নিজ নিজ দেশের সরকারকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুসলিম নিধন বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাননি। এর পেছনে মূল যে কারণ, তা হলো- উভয় দেশের মানুষ ঘটনাগুলোকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছে এবং উভয় দেশের মানুষের মধ্যে দৃঢ়বিশ্বাস রয়েছে যে, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ভারত এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনার পুনরাবৃত্তিকে প্রশ্রয় না দিয়ে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ সাজা দেবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশে একজন হিন্দু পুরোহিত ও দর্জি ছাড়াও কয়েকজন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী সন্ত্রাসী দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশে বসবাসরত সব ধর্মাবলম্বী সাধারণ মানুষ এ ঘটনাগুলোর কঠোর নিন্দা এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। কিন্তু হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং অপর একজন বিশিষ্ট হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হত্যা ও তাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধানকে হস্তক্ষেপ জানানোর আহ্বান বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। তা ছাড়া এ ধরনের আহ্বান দেশপ্রেমের চিন্তা-চেতনার পরিপন্থী এবং এর সাথে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক।

ধর্মীয় নাম ব্যবহার করে যখন দেশের তিনটি ধর্ম মতাবলম্বীর ঐক্যের কথা বলে, তখন সে ঐক্য থেকে দেশের সংখ্যাগুরু ধর্ম মতাবলম্বীদের বাদ দেয়া হলে এটা এক ধরনের অনৈক্য ও বিভেদের বার্তা দেয়। এ ধরনের অনৈক্য ও বিভেদের বার্তা একটি দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা, উন্নতি ও সমৃদ্ধি এবং জনগণের ভ্রাতৃত্ব, সহযোগিতা, সৌহার্দ্য ও পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের অন্তরায়।

ইকতেদার আহমেদ

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button