পরিবার ও দাম্পত্য

আল-কুরআনের পরিবার – শান্তির আধার, পৃথিবীর জান্নাত ও আল্লাহর নিকটজন!

পৃথিবীর কণ্টকাকীর্ণ জীবনে শান্তির একমাত্র ঠিকানা আল-কুরআন:

أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

…জেনে রাখ, আল্লাহর ‘যিকির’ এর দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়। [সূরা আর রাদ, ১৩ : ২৮]

একদল মুফাসসিরের মতে এখানে আল্লাহর যিকির দ্বারা উদ্দেশ্য আল-কুরআন।

আল-কুরআনের হিফয, তিলাওয়াত, অর্থ অনুধাবন, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা, এর আমল ও শিক্ষাদান – যদি এগুলো হয় একটি পরিবারের কর্মকাণ্ডের মূল – তবে তা বিশ্বের সবচেয়ে সুখী পরিবার – তারা আল কুরআনের পরিবার:

« يُؤْتَى بِالْقُرْآنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَهْلِهِ الَّذِينَ كَانُوا يَعْمَلُونَ بِهِ تَقْدُمُهُ سُورَةُ الْبَقَرَةِ وَآلُ عِمْرَانَ كَأَنَّهُمَا غَمَامَتَانِ أَوْ ظُلَّتَانِ سَوْدَاوَانِ بَيْنَهُمَا شَرْقٌ أَوْ كَأَنَّهُمَا حِزْقَانِ مِنْ طَيْرٍ صَوَافَّ تُحَاجَّانِ عَنْ صَاحِبِهِمَا »

কেয়ামতের দিন কুরআন ও এর পাঠকারীদের – যারা এর ওপর আমল করেছে – তাদেরকে আনা হবে, এর অগ্রভাগে থাকবে সূরা আল বাকারা ও আলে ইমরান। যেন তা দুটি কালো সামিয়ানা বা মেঘের খণ্ড যার মাঝখানে রয়েছে ঔজ্জ্বল্য, কিংবা তা যেন ডানা মেলে উড়ে চলা পাখির দুটি ঝাঁক, তারা তাদের পাঠকারীদের পক্ষে বিতর্ক করবে। [মুসলিম(৮০৫)।]

আল-কুরআনের যে সকল পাঠকারী এর শিক্ষা অনুযায়ী আমল করে, তাদেরকে এখানে এমন দুটি শব্দ দ্বারা আখ্যায়িত করা হয়েছে যা মানুষের সবচেয়ে আপনজনদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়: ১) ‘আহল’ – পরিবার ও ২) ‘সাহিব’ – সাথী।

আল-কুরআনের সান্নিধ্যে জীবন কতই না সুখের! তাদের আনন্দ অবর্ণনীয় যারা আল-কুরআনের পরিবারের সদস্য, আল-কুরআনের সাথী। যাদের জিহ্বা কুরআনের আয়াত পাঠে সিক্ত, কণ্ঠ কুরআনের সুললিত সুরে অনুরণিত, অন্তর কুরআনের প্রেরণায় উদ্বেলিত, কর্ণ কুরআন শ্রবণে আলোড়িত, দৃষ্টি কুরআন পাঠে নিষ্পলক, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কুরআনের শিক্ষা বাস্তবায়নে তৎপর – তারা আখিরাতের পূর্বে  দুনিয়াতেই যেন জান্নাতে পেয়েছে! তাদের ওপর অবর্তীর্ণ হয় প্রশান্তি, রহমত ও মালাইকা [ফেরেশতা], আর উর্দ্ধজগতে চলে তাদের স্তুতি – স্বয়ং আল্লাহ তাদেরকে স্মরণ করেন!

وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِى بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلاَّ نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلاَئِكَةُ وَذَكَرَهُمُ اللَّهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ

যখনই একদল লোক আল্লাহর ঘরসমূহের কোন একটি ঘরে মিলিত হয়ে কুরআন পাঠ করে এবং পরস্পরের মাঝে তা অধ্যয়ন করে, তখনই তাদের উপর প্রশান্তি অবতরণ করে, রহমত তাদেরকে আচ্ছন্ন করে, ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তীদের নিকট তাদেরকে স্মরণ করেন। [মুসলিম(২৬৯৯)]

স্বয়ং আল্লাহ তাদেরকে স্মরণ করেন! তারা আল কুরআনের পরিবার। তারা আল্লাহর ঘনিষ্ঠজন!

عن أنس بن مالك قال: – قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( أن لله أهلين من الناس ) قالوا يا رسول الله من هم ؟ قال ( هم أهل القرآن أهل الله وخاصته )

আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “নিশ্চয়ই মানুষের মাঝে রয়েছে আল্লাহর ঘনিষ্ঠজন।” তাঁরা বললেন: “তারা কারা হে আল্লাহর রাসূল?” তিনি বললেন: “তারা আল-কুরআন চর্চাকারী, তারা আল্লাহর ‘আহল’ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।” [ইবনে মাজাহ(২১৫)]

এই হাদীসে তাদেরকে বলা হয়েছে আল-কুরআনের ‘আহল’, আল্লাহর ‘আহল’ তথা পরিবার। পরিবারের সদস্যরা যেমন মানুষের নিকটজন, তেমনি তারা আল-কুরআনকে তাদের নিকটতম সঙ্গী বানিয়েছে – ফলে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বিশেষভাবে তাঁর নৈকট্যের জন্য বাছাই করেছেন! যদি কারও সৌভাগ্য দেখে ঈর্ষান্বিত হতে হয়, তবে নি:সন্দেহে এরাই ঈর্ষার সর্বাধিক যোগ্য:

لَا حَسَدَ إِلَّا فِي اثْنَتَيْنِ رَجُلٌ آتَاهُ اللَّهُ الْقُرْآنَ فَهُوَ يَتْلُوهُ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ وَرَجُلٌ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَهُوَ يُنْفِقُهُ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ

দুটি বিষয় ছাড়া কোন কিছুতেই ঈর্ষা বৈধ নয়। এমন ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ্‌ কুরআন দিয়েছেন আর সে তা রাতদিন তিলাওয়াত করে, আর এমন ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ্‌ সম্পদ দিয়েছেন আর সে রাতদিন তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে। [বুখারী(৪৭৩৭), মুসলিম(৮১৫)]

যদি “ঈর্ষনীয় সাফল্য” বলে পার্থিব জীবনে কিছু থাকে, তবে তা এখানেই!

আল-কুরআন যেন তার পরিবারের এই লোকদের সমস্ত দু:খ-দুশ্চিন্তাকে বুকে টেনে নিয়ে তাদেরকে প্রশান্তির শীতল ছায়ায় আশ্রয় দিয়েছে – তাই তো দু:খকষ্ট, দুশ্চিন্তা ও আশংকা দূর করতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া শিখিয়েছেন:

مَا أَصَابَ أَحَدًا قَطُّ هَمٌّ وَلَا حَزَنٌ فَقَالَ اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ نَاصِيَتِي بِيَدِكَ مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ أَوْ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي وَنُورَ صَدْرِي وَجِلَاءَ حُزْنِي وَذَهَابَ هَمِّي إِلَّا أَذْهَبَ اللَّهُ هَمَّهُ وَحُزْنَهُ وَأَبْدَلَهُ مَكَانَهُ فَرَجًا قَالَ فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلَا نَتَعَلَّمُهَا فَقَالَ بَلَى يَنْبَغِي لِمَنْ سَمِعَهَا أَنْ يَتَعَلَّمَهَا

যখনই কেউ দুশ্চিন্তা কিংবা দুঃখে পতিত হয় এবং বলে: “হে আল্লাহ, আমি আপনার বান্দা, আপনার দাসের সন্তান, আপনার দাসীর সন্তান, আপনার হাতে আমার চুলের অগ্রভাগ [অর্থাৎ আমি সম্পূর্ণরূপে আপনার ক্ষমতার অধীন ও নিয়ন্ত্রণে], আমার ব্যাপারে আপনার হুকুম কার্যকর, আমার ব্যাপারে আপনার ফয়সালা ইনসাফপূর্ণ, আমি আপনার এমন প্রতিটি নামের বদৌলতে আপনার কাছে চাই – যার দ্বারা আপনি নিজেকে নামকরণ করেছ, অথবা আপনার সৃষ্টির কাউকে শিখিয়েছেন কিংবা আপনার কিতাবে তা নাযিল করেছেন অথবা আপনার গায়েবের জ্ঞানে একচ্ছত্রভাবে সংরক্ষিত রেখেছেন – আপনি আল কুরআনকে বানিয়ে দিন আমার হৃদয়ের বসন্ত, আমার অন্তরের আলো, আমার দুঃখের অপসারণ এবং আমার দুশ্চিন্তার প্রস্থান” – আল্লাহ পাক তাঁর দুশ্চিন্তা ও দুঃখ দূর করে দেন এবং এর পরিবর্তে প্রশস্ততা দান করেন। বলা হল: হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কি তা শিখব না? তিনি বললেন: অবশ্যই, যে এটা শুনল তার তা শিখে নেয়া উচিৎ। [আহমদ(৩৭১২)। আলবানীর মতে সহীহ।]

আর কেয়ামত দিবসে তার জন্য অপেক্ষা করছে উচ্চ মর্যাদার আসন! এই সংকটপূর্ণ দিনটিতে সে থাকবে সম্মানিত লেখক কিংবা ওহীর বাহক ফেরেশতাদের কাতারে:

الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَة

আল-কুরআন দক্ষ পাঠকারী [কিয়ামতের দিন] অনুগত ও সম্মানিত বাণীবাহক [অপর ব্যাখ্যামতে লেখক] [ফেরেশতাগণের] সাথে থাকবে। [মুসলিম(৭৯৮)]

এই কুরআন আয়ত্তকারীকেই কিয়ামতের দিন বলা হবে:

اقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِى الدُّنْيَا فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا

কুরআন পাঠ করতে করতে [জান্নাতে] উর্দ্ধারোহণ করতে থাকো এবং দুনিয়াতে যেভাবে তারতীল সহকারে [কুরআন তেলাওয়াতের নিয়মকানুন রক্ষা করে ধীরস্থিরভাবে] পাঠ করতে অনুরূপভাবে পাঠ কর, কেননা তোমার পাঠের শেষ আয়াতেই হবে তোমার অবস্থান। [আহমদ(৬৭৯৯), আবু দাউদ(১৪৬৪), তিরমিযী(২৯১৪)।]

এই কুরআন কেয়ামতের দিন তার জন্য শাফায়াত করবে:

اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لأَصْحَابِهِ

তোমরা কুরআন পাঠ কর, কেননা কেয়ামতের দিন তার পাঠকারীদের জন্য সে শাফায়াতকারী হবে। [মুসলিম(৮০৪)]

এবং বলবে:

مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ

আমি রাত্রিতে তাকে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি সুতরাং [হে আল্লাহ] তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। [আহমদ(৬৬২৬)।]

কেয়ামতের দিন আল-কুরআনকে সে তার পাশে পাবে:

يجيء القرآن يوم القيامة كالرجل الشاحب يقول لصاحبه : هل تعرفني؟ أنا الذي كنت أسهر ليلك وأظمئ هواجرك

কেয়ামতের দিন আল-কুরআন এক মলিন ব্যক্তিরূপে আবির্ভূত হয়ে এর পাঠকারীকে বলবে: আমাকে চেন কী? আমিই সে যে তোমার রাত্রিগুলোকে নিদ্রাহীন ও মধ্যাহ্নগুলোকে তৃষ্ণার্ত করে তুলতাম।…

হাদীস ব্যাখ্যাকারীগণ উল্লেখ করেছেন যে দুনিয়াতে এই ব্যক্তি যেমনিভাবে কুরআন চর্চার কারণে ক্লান্ত, অবসন্ন, মলিন থাকত, তেমনি কুরআন কেয়ামতের দিন অনুরূপ বেশে আসবে – যেন সে এই ব্যক্তির নাজাতের জন্য ছুটোছুটি করে আজ মলিন হয়েছে!

এখানেই শেষ নয়:

فيعطى الملكَ بيمينه والخلدَ بشماله و يوضع على رأسه تاج الوقار ويكسى والداه حلتين لا تقوم لهما الدنيا وما فيها، فيقولان : يا رب! أنى لنا هذا ؟ فيقال : بتعليم ولدكما القرآن

অত:পর তার ডান হাতে রাজত্ব ও বাম হাতে চিরজীবন দেয়া হবে এবং তার মাথায় সম্মানের মুকুট পরানো হবে, আর তার মা-বাবাকে দুনিয়া ও এর অন্তর্ভুক্ত সকল বস্তু থেকে উত্তম দুটি পোশাক পরানো হবে। তারা দুজনে বলবে: হে রব! এ আমাদের জন্য কিভাবে অর্জিত হল? বলা হবে: তোমাদের সন্তানকে আল-কুরআন শিক্ষা দেয়ার কারণে।

[বর্ণনাদুটো একই হাদীসের অংশ যা আত তাবারানী আল মুজাম আল আওসাতে আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি সহীহ। দেখুন: আস সিলসিলা আস সাহীহাহ (২৮২৯)]

এই হাদীস পাঠের পর মা-বাবারা সন্তানদেরকে সর্বাগ্রে আল-কুরআনের আলেম বানাতে সংকল্পবদ্ধ হবেন কী?

শুধু তাই নয়, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:

يجيء القرآن يوم القيامة فيقول : يا رب حله فيلبس تاجَ الكرامة ثم يقول يا رب زده فيلبس حلةَ الكرامة ثم يقول : يا رب ارض عنه فيرضى عنه

কেয়ামতের দিন আল-কুরআন এসে বলবে: হে রব! তাকে অলংকৃত করুন। ফলে তাকে সম্মানের মুকুট পরানো হবে। এরপর বলবে: হে রব! তাকে আরও বাড়িয়ে দিন। ফলে তাকে সম্মানের পোশাক পরানো হবে। এরপর বলবে: হে রব! তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান, ফলে তিনি তার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন… [আত-তিরমিযী(২৯১৫)। আলবানীর মতে সহীহ।]

কুরআন চর্চাকারীদের এই অতুলনীয় সম্মান ও মর্যাদা হবেই না কেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো জানিয়েই দিয়েছেন:

خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ

তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম যে কুরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়। [বুখারী(৪৭৩৯)।]

আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবকে আঁকড়ে থাকা লোকদেরকেই দুনিয়া ও আখিরাতে মর্যাদার আসনে আসীন করবেন:

إِنَّ اللَّهَ يَرْفَعُ بِهَذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا وَيَضَعُ بِهِ آخَرِينَ

নিশ্চয়ই আল্লাহ এই কিতাবের দ্বারা একদলকে উন্নীত করেন, আর এর দ্বারাই অন্যদেরকে করেন অবনত। [মুসলিম(৮১৭)।]

আসুন, আমরা সপরিবারে আল-কুরআনকে আঁকড়ে ধরি। স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া বিপদগ্রস্ত মানুষ যেভাবে সর্বশক্তি দিয়ে কোন কিছু আঁকড়ে থাকতে চায়, তেমনিভাবে আমরা আঁকড়ে ধরি আল-কুরআনকে – যেন পাপ-পংকিল জীবনের বিষাক্ত স্রোতধারা আমাদেরকে আল্লাহ থেকে সরিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে না পারে।

আল-কুরআন হোক পরিবারের প্রাণ, পরিবারের বিনোদন, পরিবারের সকল কর্মকাণ্ডের মূল। পরিবারগুলো ভরে যাক ছোট-বড় সকলের কণ্ঠে ভেসে আসা আল-কুরআনের সুরের মূর্ছনায়:

زَيِّنُوا الْقُرْآنَ بِأَصْوَاتِكُمْ، فَإِنَّ الصَّوْتَ الْحَسَنَ يَزِيدُ الْقُرْآنَ حُسْنًا

তোমরা তোমাদের কণ্ঠের দ্বারা আল কুরআনকে সৌন্দর্যমণ্ডিত কর, কেননা নিশ্চয়ই সুন্দর কণ্ঠ আল-কুরআনের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয়। [হাকিম(২১২৫) প্রমুখ।]

لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَتَغَنَّ بِالْقُرْآنِ

যে সুললিত উচ্চকণ্ঠে কুরআন পাঠ করে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। [বুখারী(৭৫২৭)।]

আর আল-কুরআন পাঠে সুন্দরতম কণ্ঠ ঐ ব্যক্তির, যে আল-কুরআনের অর্থ অনুধাবন করে আল্লাহর প্রতি ভয়-ভীতি ভালবাসা সহকারে অন্তর থেকে তা পাঠ করে:

إِنَّ مِنْ أَحْسَنِ النَّاسِ صَوْتًا بِالْقُرْآنِ الَّذِي إِذَا سَمِعْتُمُوهُ يَقْرَأُ حَسِبْتُمُوهُ يَخْشَى اللَّهَ

আল-কুরআন পাঠে সর্বোত্তম সুরের অধিকারী ঐ ব্যক্তি যাকে পাঠ করতে শুনলে তোমাদের মনে হয় সে আল্লাহকে ভয় করছে। [ইবনু মাজাহ(১৩৩৯)।]

আসুন পরিবারের সকলে আল-কুরআনের তিলাওয়াত, সাধ্যমত হিফয, তাফসীর পাঠ ও অনুধাবন, আল কুরআনের শিক্ষা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, আমলে এর বাস্তবায়ন, মানুষকে কুরআন শিক্ষা দেয়া, আল-কুরআনের অধ্যয়ন ও আলোচনা করা, রাত্রির সালাতে আল-কুরআনের তিলাওয়াত ও আল-কুরআনের দিকে মানুষকে আহ্বান জানানোর মত কাজগুলোকে জীবনের মূল ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে নিয়মিত তা করি – যেন আমরা আল-কুরআনের সাথী হতে পারি, যেন সেই মহাসৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি যারা আল্লাহর ঘনিষ্ঠজন, যাদেরকে তিনি উর্দ্ধজগতে স্মরণ করেন, যাদের জন্য আল-কুরআন দুনিয়াতে সমস্ত দু:খ-দুর্দশা-দুশ্চিন্তার কবল থেকে আশ্রয় এবং আখিরাতে সুপারিশকারী।

আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করি যেন তিনি আমাদের পরিবারগুলোতে আল-কুরআনের পরিবেশ তৈরী করে দেন।

হে আল্লাহ! আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, যাদের জন্য আল-কুরআন কেয়ামতের দিন দলীল ও সুপারিশকারী হবে। আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যাদের সম্পর্কে আল কুরআন বলবে: “আমি তাকে রাত্রিতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি, অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন!” আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যাদেরকে বলা হবে: “কুরআন পাঠ করতে করতে [জান্নাতে] উর্দ্ধারোহণ করতে থাকো এবং দুনিয়াতে যেভাবে তারতীল সহকারে পাঠ করতে অনুরূপভাবে পাঠ কর, কেননা তোমার পাঠের শেষ আয়াতেই হবে তোমার অবস্থান।” হে আল্লাহ আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করবেন না যাদের সম্পর্কে রাসূল অভিযোগ দেবেন:

يَا رَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَذَا الْقُرْآنَ مَهْجُورًا

…হে আমার রব, নিশ্চয়ই আমার জাতি এই কুরআনকে পরিত্যাজ্য বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছে। [সূরা আল ফুরকান, ২৫ : ৩০।]

হে আল্লাহ! আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যাদের নাজাতের জন্য কেয়ামতের দিন আল-কুরআন সচেষ্ট ও সঞ্চালিত হবে, যাদের সম্পর্কে আপনি বলেছেন:

الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلَاوَتِهِ أُولَئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ

যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি, তারা তা পাঠ করে যথার্থভাবে। তারাই এর প্রতি ঈমান রাখে… [আল বাকারা: ১২১]

 

– মাহাম্মাদ নাসীল শাহরুখ

মন্তব্য করুন

Back to top button