রাসূল (সা.) সৃষ্টি না হলে পৃথিবী সৃষ্টি হতো না—কথাটা কি সত্য?
আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা যদি রাসূল (সা.)-কে সৃষ্টি না করতেন, তাহলে এই সৃষ্টিজগৎ বা মাখলুকাত কিছুই সৃষ্টি করতেন না, এটি একেবারেই ডাহা মিথ্যা-বানোয়াট কথা। এ কথা যদি হাদিসের নামে বলা হয়, তাহলে এটি সবচেয়ে বড় জালিয়াতি। আর এ কথার সত্যিকার অর্থে কোনো ভিত্তিই নেয়। এটি শুধু আবেগের কথা, যা মানুষের কাছে প্রচারিত হয়েছে।
আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা মানুষ সৃষ্টির বিষয়ে সূরা আজ-জারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘জিন ও ইনসানকে আমি সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদত করার জন্য।’ আল্লাহু রাব্বুল আলামিন আরো স্পষ্ট করেছেন, ‘আমি পৃথিবীতে খলিফা প্রেরণ করব।’
আদম (আ.)-কে যখন সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহু রাব্বুল আলামিন সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন এটা প্রকাশ করলেন ফেরেশতাদের কাছে যে, ‘আমি আদমকে সৃষ্টি করছি। আমি পৃথিবীতে খলিফা প্রেরণ করছি।’ এভাবে আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা সৃষ্টির বিষয়গুলো স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এখানে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা নেই যে, আল্লাহু রাব্বুল আলামিন যে মাখলুকাতকে সৃষ্টি করেছেন, বেহুদা-অনর্থক সৃষ্টি করেছেন—ব্যাপারটা এমন নয়। এর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, যা তিনি বর্ণনা করে দিয়েছেন। সুতরাং তা নিজেদের আবিষ্কার করার কোনো দরকার নেই। নিজেদের গবেষণা থেকে বের করার কোনো প্রয়োজন নেই।
আল্লাহ এই পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তা মানুষের কল্যাণের জন্য। আর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহর তৌহিদকে বাস্তবায়ন করার জন্য। সেটি আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এখানে আল্লাহু রাব্বুল আলামিন কোথাও এ কথা বলেন নাই যে, এই পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছি মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্য, অথবা মুহাম্মদ (সা.)-কে সৃষ্টি না করলে আমি কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না। এগুলো আমরা নিজেরাই আবেগ দিয়ে তৈরি করে নিয়ে কিছু সংখ্যক লোক পথভ্রষ্ট হওয়ার জন্য রাসূল (সা.)-এর ভালোবাসাকে পুঁজি করে ভালোবাসার মধ্যে সীমা লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন।
কোনো সন্দেহ নেই, রাসূলুল্লাহ (সা.) এই ভালোবাসা ইমানের দলিল, রাসূল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা আমাদের থাকতে হবে। কোনো ব্যক্তির অন্তরের মধ্যে যদি রাসূলের (সা.) প্রতি ভালোবাসা না থাকে, তাহলে সে ইমানদার হতে পারবে না। কিন্তু ভালোবাসাকে পুঁজি করে পথভ্রষ্ট বক্তব্য দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই অথবা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হওয়ার কোনো দরকার নেই। এ ধরনের বক্তব্য সত্যিকার অর্থে হেদায়েত থেকে মাহরুম বা বঞ্চিত একটি বক্তব্য। আর এ ধরনের কথা রাসূল নিজেও বলেননি বা সাহাবারাও তাঁদের বক্তব্যে কোথাও বলেননি।
– ড. মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ
অনেকেই হাসান সহীহ এর দলিল দিলেন। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বলেনঃ- যে হাদিস এর মধ্যে সহীহ পাওয়া যাবে। সেটাই আমার মাযহাব।
পাঁক কোরআন ও হাদিস বিশ্লেষন যৌক্তিক ধরে নিতে হবে কারন আমার জানার পরিমান খুব কম ; কিন্তু আমার দর্শন স্পস্ট “আজকাল কিছু কোটারী ইসলাম বিশেষজ্ঞ ও অনলাইন এক্টিভিটিজ আছেন যাদের সহজ শিকার আমার মতো কমজানারা ”
আমি ভালোভাবে ও মনোযোগ দিয়ে পড়ছি ‘সিরাত বিশ্বকোষ’ ও’ বিদায়া আন নেহায়য়া ‘
নবীপাঁক মোহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমন্ধে যতই পড়ছি ততই বুজছি ; মহান রব’র সৃস্টিসমুহের মধ্যে শেস্ঠ মানুষ এবং মানুষের মাঝে শ্রেস্ঠতম নবী রসুলকুল শিরোমনি নবী মোহাম্মদ (সঃ).
একদল আছেন যাদের কাজই হলো উনাকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের জটিল হিসাবে ফেলে সাধারনের কাতারে আনা যায় কিনা (নাউজুবিল্লাহ্ )! উনার আধ্মাতিক পবিত্রতা ‘র অংশ টা ধর্তব্যের মধ্যে আনেনা …..
আমি শুধু মিরাজ ‘র বাহ্যিক দু একটা কথা পোস্ট করি ..মূসা(আঃ) আল্লাহ্ পাঁক ‘র সঙ্গে দেখা করার পূর্বে , আল্লাহ্র নির্দেশ “মূসা তোমার পাদুকা খুলে আসো ” মহান রবের নূরের সামান্য ঝলকানীতে তূর পর্বত অঙ্গারে পরিনত হয়েছিল ..পক্ষান্তরে নবীপাঁক(সঃ) কে বেলেছিলেন “আপনার পাদুকা খুলবেননা ,এর ধুলোয় আরশ ধৈন্য হবে ” মিরাজের এক পর্যায় নবী পাঁক(সঃ)কে অভয় দিয়ে বললেন এই জগত আপনার আপনি যান আমি
(আগুনের তৈরী জিব্রীল (আঃ) )এক চুল পরিমান অগ্রসর হলে আমি পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো ..
নবীঃপাঁক(সঃ) আল্লাহ্ পাঁক’র দিদার লাভের সময় উনাদের পরস্পরিক দুরুত্ব কিরুপ ছিল ?
এরকম অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলানো জরুরী ….
সিরাত বিশ্বকোষে আল্লাহ্ পাঁক নবীপাঁক (সঃ)’র মাধ্যমে মোবারক মুজিজা সমূহ প্রকাশ করিয়েছেন ; সেগুলু ও কিন্তু নবীপাঁক( স:) ‘র আধ্মাতিকতার উজ্জল দৃস্টান্ত …. উনার পুর্নাঙ্গ জীবনী স্টাডি/গবেষনা উপলব্ধি না করে শুধু যুক্তির উপর ভিত্তি করে কোন মূল্যায়ন করা উচিত নয় !(যুক্তি বানিয়েছে শয়তান )
বইঃ সহীহ আক্বীদার মানদন্ডে তাবলীগী নিসাব, অধ্যায়ঃ অন্যান্য বিষয়াবলী, অনুচ্ছেদঃ নাবীর জন্য সব কিছু সৃষ্টি
নাবীর জন্য সব কিছু সৃষ্টি
‘‘আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি আসমানসমূহ (কোন কিছু) সৃষ্টি করতাম না’’- (ফাজায়েলে জিকির ৩য় ফসল, ১৪৩ পৃঃ; গৃহীত- ওয়াসিলার শির্ক ১৫ পৃঃ)। এটি লোক মুখে হাদীসে কুদসী হিসাবে যথেষ্ট প্রসিদ্ধ। অথচ হাদীস বিশেষজ্ঞগণ এ ব্যাপারে একমত যে, এটি একটি ভিত্তিহীন রিওয়ায়াত, মিথ্যুকদের বানানো কথা। রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাদীসের সাথে এর সামান্যতম মিল নেই। ইমাম সাগানি, আল্লামা পাটনী, মোল্লা আলী কারী, শায়খ আজলুনী, আল্লামা কাউকজী, ইমাম শওকানী, মুহাদ্দিস ‘আবদুল্লাহ ইবনু সিদ্দিক আল-গুমারী এবং শাহ ‘আবদুল ‘আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহ.) প্রমুখ মুহাদ্দিসীনে কিরাম এটিকে জাল বলেছেন। [দেখুন- রিসালাতুল মাওযুআত ৯, তাযকিরাতুল মাওযু‘আত ৮৬, আল-মাসুন ১৫০, কাশফুল খাফা ২/১৬৪, আল-জুউলুউল মারসু ৬৬, আল-ফাওয়ায়েদুল মাজমু‘আ ২/৪১০, আল-বুশীরী মাদেহুর রাসূলিল আ‘যম (স.) ৭৫, ফাতাওয়া আযীযিয়া ২/১২৩, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১/৭৭; গৃহীতঃ প্রচলিত জাল হাদীস ১৮৬-১৮৭]। কেউ কেউ বলেন যে, এই রিওয়ায়াত যদিও জাল; কিন্তু এর মূল বিষয়বস্তু (অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খাতিরেই এই দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন। তাঁকে পয়দা করার ইচ্ছা না করলে তিনি কোন কিছুই পয়দা করতেন না) সঠিক। অথচ আল্লাহ তা‘আলা এই দুনিয়া ও সমগ্র জগৎকে কেন সৃষ্টি করলেন, তা ওয়াহী ছাড়া জানার কোন উপায় নেই। ওয়াহী শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীসের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কাজেই যতক্ষণ পর্যন্ত কুরআনের আয়াত কিংবা কোন সহীহ হাদীসের মাধ্যমে এ কথা প্রমাণিত না হবে যে, একমাত্র তাঁর খাতিরেই সবকিছু সৃষ্টি করা হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই আক্বীদা পোষণ করার কোন সুযোগ নেই। জানা কথা যে, এটি কুরআন মাজীদের কোন আয়াত কিংবা কোন সহীহ হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত নয়। এটিও উপরে বর্ণিত জাল রিওয়ায়াত অথবা এ ধরনের বাতিল বর্ণনার ভিত্তিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। যাকে তারা আক্বীদাহ তথা মৌলিক বিশ্বাস্য বিষয় বানিয়ে রেখেছে। (যাইলুল মাকাসিদিল হাসান, যাইলু তানযীহিশ শরী‘আতির মারফুয়া; গৃহীত : প্রচলিত জাল হাদীস ১৮৮ পৃঃ)
উল্লিখিত হাদীসদ্বয় সহীহ না হওয়ার ব্যাপারে আল্লামা ইবনু তাইমিয়া তাঁর মাযমুয়াকে ফাতাওয়া গ্রন্থে ১ম খন্ড ২৫৪ পৃষ্ঠায় বলেন : এ হাদীস যে, কখনও সত্য হতে পারে না। তা আল-কুরআনের নিম্নের আয়াত থেকে একেবারে দিনের আলোর মত স্পষ্ট প্রমাণিত। মহান আল্লাহ বলেন :
{فَتَلَقَّى آدَمُ مِنْ رَبِّهِ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ}
‘‘অতঃপর আদাম তার প্রতিপালকের নিকট হতে কিছু বাণী প্রাপ্ত হল। আল্লাহ তার প্রতি ক্ষমাপরবশ হলেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’ (সূরা আল-বাক্বারাহ ৩৭)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আদাম (‘আ.)-কে তাওবার দু‘আ শিখিয়েছি অপরদিকে উল্লেখিত বর্ণনায় প্রমাণিত হয়, এটা ছিল আদাম (‘আ.)-এর আপন (ইজতিহাদ) গবেষণা। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলেন, তুমি মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অসীলা কেন গ্রহণ করলে? সকল মুফাস্সিরগণ এ ব্যাপারে একমত যে, কি ছিল সেই ক্ষমা চাওয়ার কথাগুলি? সূরা আ’রাফের ২৩ নং আয়াতে আল্লাহ সেই তাওবাহ করার কথাগুলি তা আমাদেরকে ওয়াহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন। তা হচ্ছে :
{رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ}
‘‘হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নিজেদের উপর যুল্ম করেছি, যদি তুমি আমাদের ক্ষমা না কর, তাহলে আমরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হব।’’ (সূরা আ’রাফ ২৩)
এটা আল-কুরআনের স্পষ্টবাণী, এর মধ্যে রসূল -এর নামের উল্লেখ কোথায় রয়েছে? আল্লাহ কি বে -মালুম ভুলে গেলেন এত বড় একটা আক্বীদার বিষয়? আর এটা আবিষ্কার হল কিসের মাধ্যমে যে, আদাম (‘আ.) মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অসীলায় মাফ পেয়েছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিদ‘আতীরা কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে কোন দলীল পায় না বরং তারা জাল হাদীস থেকে যুক্তি খুঁজে বের করে। দ্বিতীয় বিষয়টি হল এর মাধ্যমে তারা নাবী (সাঃ)-কে সমগ্র জগৎ সৃষ্টির কারণ বলে উল্লেখ করে। অথচ কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ভাষায় জগৎ সৃষ্টির কারণ উল্লেখ করে বলেন :
{وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالأِ<نْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ}
‘‘আমি জ্বীন ও মানুষকে অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করি নি, কেবল এজন্য সৃষ্টি করেছি তারা আমার বন্দেগী করবে।’’ (সূরা যারিয়াত ৫৬)
আরো দেখুন- আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার সমস্ত নিয়ামাত জ্বীন, ইনসান সহ সমস্ত মাখলুকের জন্য সৃষ্টি করেছেন। শুধু নাবী (সাঃ)-এর জন্য নয়- বাক্বারাহ ২২-২৯, আন‘আম ৯৭, ইব্রাহীম ৩২-৩৪, ত্বহা ৫৩-৫৪, ফুরক্বান ৪৭, নামাল ৬০, লুক্বমান ২০, ইয়াসীন ৭১-৭২, যুমার ৬, মু’মিন ৬৪, যুখরুফ ১০, জাসিয়া ১২-১৩, নূহ ১৯।
প্রশ্ন হল তিনি কি প্রথম সৃষ্টি? এর উত্তর হচ্ছে মানুষের মধ্যে প্রথম সৃষ্টি হলেন আদাম (‘আ.) আর জিনিসের মধ্যে প্রথম হল কলম। তার প্রমাণ হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী :
{إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَراً مِنْ طِينٍ}
‘‘যখন তোমার রব বললেন আমি মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করব।’’ (সূরা সোয়াদ ৭১)
আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন :
إن أول خلق الله القلم
‘আল্লাহ তা‘আলা প্রথম যা সৃষ্টি করেছেন তা হল কলম।’(আবূ দাউদ, তিরমিযী- হাসান সহীহ)
প্রমাণিত হল পৃথিবী সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আল্লাহর ‘ইবাদাত বা উপাসনা করা, নাবী (সাঃ)-এর ব্যক্তিত্ব নয়। স্বয়ং নাবী (সাঃ)-কেও তাঁর ‘ইবাদাত ও বন্দেগীর জন্য সৃষ্টি করেছেন। তাছাড়া নাবী (সাঃ)-এর উসিলার ব্যাপারটিও অসার প্রমাণিত হল। বিস্তারিত দেখুন- এই কিতাবের অসীলার অধ্যায়ে।
http://www.hadithbd.com/shareqa.php?qa=3412