পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য
এ পৃথিবীর বুকে পিতা-মাতার সম্মান ও মর্যাদা নিঃসন্দেহে শীর্ষস্থানীয়। মহান আল্লাহ সমগ্র বিশ্ববাসীর একমাত্র উপাস্য ও অভিভাবক। আর পিতা-মাতা হ’ল শুধু তার সন্তানদের ইহকালীন জীবনের সাময়িক অভিভাবক। সুতরাং সন্তানদের কাজ হ’ল, মহান স্রষ্টা ও পালনকর্তা আল্লাহ তা‘আলার যাবতীয় হুকুমের সাথে পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা ও তাদের মান্য করা। সন্তান জন্মের পর বাল্য, শৈশব বা কৈশোর পর্যন্ত পিতা-মাতার তত্ত্বাবধানেই থাকে এবং সম্পূর্ণ অনুগত থাকে। অতঃপর যৌবনে ও সংসার জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে পিতা-মাতার সঙ্গে তার সন্তানদের মতভিন্নতা দেখা দিতে পারে, এটা স্বাভাবিক। সেজন্য মহাজ্ঞানী আল্লাহ তা‘আলা পিতা-মাতার সঙ্গে তার সন্তানদের বাল্য জীবনের ভালবাসার ন্যায়ই সারা জীবন তা মযবূত ও বহাল রাখার আদেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَاناً حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهاً وَّوَضَعَتْهُ كُرْهاً وَّحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلاَثُوْنَ شَهْراً حَتَّى إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَبَلَغَ أَرْبَعِيْنَ سَنَةً قَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِيْ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِيْ أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحاً تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِيْ فِيْ ذُرِّيَّتِيْ إِنِّيْ تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ.
‘আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্ট সহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার দুধ ছাড়াতে লেগেছে ত্রিশ মাস। অবশেষে সে যখন শক্তি-সামর্থ্যের বয়সে ও চল্লিশ বছরে পৌঁছেছে, তখন বলতে লাগল, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে সামর্থ্য দাও, যাতে আমি তোমার নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পসন্দনীয় সৎকাজ করি। আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমারই অভিমুখী হ’লাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম’ (আহক্বাফ ১৫)।
অন্যত্র মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُلْ لَّهُمَا أُفٍّ وَّلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيْماً- وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْراً- رَّبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِيْ نُفُوْسِكُمْ إِنْ تَكُوْنُواْ صَالِحِيْنَ فَإِنَّهُ كَانَ لِلْأَوَّابِيْنَ غَفُوْراً.
‘আপনার রব নির্দেশ দিলেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না, আর তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বল। অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো এবং বল, হে পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মনে যা আছে তা ভাল করেই জানেন। যদি তোমরা সৎ হও, তিনি মনোযোগীদের প্রতি ক্ষমাশীল’ (বনী ইসরাঈল ২৩- ২৫)।
এ বিষয়ে আল্লাহ আরও বলেন, وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْناً عَلَى وَهْنٍ وَّفِصَالُهُ فِيْ عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِيْ وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيْرُ. ‘আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট স্বীকার করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’বছরে। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে’ (লোক্বমান ১৪)।
পবিত্র কুরআনের বাণীগুলোকে পরম শ্রদ্ধা ও বিনয়াবনত অন্তঃকরণে মূল্যায়ন করতে হবে। এখানে কোন দ্বিমত বা ভিন্নমত পোষণ করা হ’তে বিরত থাকতে হবে। আয়াতগুলোতে সাধারণভাবে মানুষকে আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের প্রতি অবিচল থাকা ও সাথে সাথে পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার, তাদের সেবা-যত্ন ও আনুগত্যের নির্দেশও দান করা হয়েছে। অবশ্য আয়াতের প্রারম্ভেই পিতা-মাতা উভয়ের সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরক্ষণেই মাতার কষ্টের কথা উল্লেখ করার তাৎপর্য এই যে, মাতার পরিশ্রম ও কষ্ট অপরিহার্য ও যরূরী। গর্ভ ধারণের সময় কষ্ট, প্রসব বেদনার কষ্ট সর্বাবস্থায় ও সব সন্তানের ক্ষেত্রে মাতাকেই সহ্য করতে হয়। পিতার জন্য লালন-পালনের কষ্ট সহ্য করা সর্ববস্থায় যরূরী হয় না।
পবিত্র কুরআনে অনেক জায়গায় আলোচ্য বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। একইভাবে এখানেও আল্লাহর তাওহীদের প্রতি দাওয়াতের সাথে সাথে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটা পিতা-মাতার জন্য অসামান্য সম্মান ও মর্যাদা।
অতঃপর সমস্ত আত্মীয়-স্বজন, আপনজন ও সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বাগ্রে পিতা-মাতার হক সম্পর্কিত আলোচনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَاعْبُدُوْا اللهَ وَلاَ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئاً وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً وَبِذِيْ الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنبِ وَابْنِ السَّبِيْلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللهَ لاَ يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالاً فَخُوْراً.
‘উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে, পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম-মিসকীন, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী সংগী-সাথী, মুসাফির এবং দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পসন্দ করেন না দাম্ভিক-অহংকারীকে’ (নিসা ৩৬)।
অন্যত্র তিনি বলেন, وَاللهُ أَخْرَجَكُم مِّنْ بُطُوْنِ أُمَّهَاتِكُمْ لاَ تَعْلَمُوْنَ شَيْئًا وَجَعَلَ لَكُمُ الْسَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ. ‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে বের করেছেন। তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর দিয়েছেন, যাতে তোমরা অনুগ্রহ স্বীকার কর’ (নাহল ৭৮)।
কুরআনুল কারীমে পিতা-মাতার হক সমূহকে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত ও আনুগত্যের সাথে যুক্ত করে বর্ণনা করা হয়েছে। যাতে বান্দা তার জীবদ্দশায় সার্বিক সতর্কতা বজায় রেখে অকৃত্রিমভাবে পিতা-মাতার ন্যায়সঙ্গত অধিকার পূর্ণ করতে সক্ষম হয়।
অবশ্য বান্দার নিকট আল্লাহর হক অত্যন্ত ব্যাপক। কিন্তু সন্তানের নিকট পিতা-মাতার হক সীমাবদ্ধ। যেমন পিতা তার পুত্রকে শরী‘আত বিরোধী কোন কাজের আদেশ করলে, পুত্র তা প্রত্যাখ্যান করলেও কোন দোষ হবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় কালামে বলেছেন,
وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِيْ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوْفاً وَاتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُوْنَ.
‘পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই। তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে অবগত করব’ (লোকমান ১৫)।
অন্যত্র মহান আল্লাহ প্রত্যাদেশ করেন, وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْناً وَإِنْ جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِيْ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلاَ تُطِعْهُمَا إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ. ‘আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জন্য পীড়াপীড়ি করে, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দিব যা কিছু তোমরা করতে’ (আনকাবূত ৮)।
মানব জাতিকে এক আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। অতঃপর শ্রেষ্ঠত্বের এই মর্যাদা রক্ষায় তাকে প্রচুর জ্ঞান-বুদ্ধি দান করা হয়েছে। কিন্তু মানবজাতির শত্রু ইবলীস ইবাদতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলে সন্তানকে সতর্ক করা হয়েছে, যাতে শয়তানের অনুগত কোন মুশরিক পিতা-মাতা পিতৃত্বের দাবী নিয়ে নিজ সন্তানদের শিরক স্থাপনে বাধ্য করতে না পারে। কারণ শিরক হ’ল অমার্জনীয় পাপ। এখানে মহান আল্লাহর পক্ষ হ’তে অধিকার প্রাপ্ত পিতা-মাতা ও সন্তান উভয়কেই শিরকমুক্ত থেকে ইসলামের প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিগ্রহণের কঠোর নির্দেশ রয়েছে।
পবিত্র কুরআনে লিপিবদ্ধ ইবরাহীম (আঃ)-এর কাহিনী অবলম্বনে পিতা কর্তৃক পুত্রকে শিরকের পথে আহবান এবং পুত্র কর্তৃক পিতাকে সত্যের পথে আহবানের মহাসত্য দলীল পাওয়া যায়। ইবরাহীম (আঃ)-এর পিতা মূর্তিপূজক তথা মুশরিক। অথচ ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন সৎপথপ্রাপ্ত। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيْمُ لأَبِيْهِ آزَرَ أَتَتَّخِذُ أَصْنَاماً آلِهَةً إِنِّيْ أَرَاكَ وَقَوْمَكَ فِيْ ضَلاَلٍ مُّبِيْنٍ. ‘স্মরণ করুন, যখন ইবরাহীম পিতা আযরকে বললেন, তুমি কি প্রতিমাসমূহকে উপাস্য মনে কর? আমি দেখতে পাচ্ছি যে, তুমি ও তোমার সম্প্রদায় প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় রয়েছ’ (আন‘আম ৭৪)।
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ آتَيْنَا إِبْرَاهِيْمَ رُشْدَهُ مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا بِه عَالِمِيْنَ، إِذْ قَالَ لِأَبِيْهِ وَقَوْمِهِ مَا هَذِهِ التَّمَاثِيْلُ الَّتِيْ أَنْتُمْ لَهَا عَاكِفُوْنَ، قَالُوْا وَجَدْنَا آبَاءَنَا لَهَا عَابِدِيْنَ، قَالَ لَقَدْ كُنْتُمْ أَنْتُمْ وَآبَاؤُكُمْ فِيْ ضَلاَلٍ مُّبِيْنٍ.
‘আর আমি ইতিপূর্বে ইবরাহীমকে তাঁর সৎপন্থা দান করেছিলাম এবং আমি তাঁর সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাতও ছিলাম। যখন তিনি তাঁর পিতা ও তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, এই মূর্তিগুলো কী, যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ? তারা বলল, আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে এদের পূজা করতে দেখেছি। তিনি বললেন, তোমরাও তোমাদের বাপ-দাদারা প্রকাশ্য গোমরাহীতে আছ’ (আম্বিয়া ৫১-৫৪)।
ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রতি পুত্র ইসমাঈলের আনুগত্যের মূল্যায়ন স্বরূপ ইবরাহীম (আঃ)-এর অনুসারীদের জন্য চিরস্থায়ীভাবে কুরবানী প্রথার প্রবর্তন হয়। সারা বিশ্বের মুসলমান প্রতিবৎসর তাঁর পুণ্যময় পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-এর আনুগত্যের প্রতীক কুরবানীর তারিখে নিজ নিজ পরিবারের পক্ষ হ’তে একটি পশু কুরবানী করে থাকেন। এ কাহিনীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ হচ্ছে,
فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِيْنِ، وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيْمُ، قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِيْنَ، إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْبَلاَءُ الْمُبِيْنُ، وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيْمٍ، وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِيْنَ، سَلاَمٌ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِيْنَ.
‘যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহীম তাকে যবেহ করার জন্য শায়িত করল, তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ। আমি এভাবেই সৎকর্মীশীলদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্য এক মহান জন্তু। আমি তার জন্য এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে, ইবরাহীমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীশীলদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি’ (ছাফফাত ১০৩-১১০)।
এই সর্বজনবিদিত ও সর্বজন স্বীকৃত বাস্তব ঘটনায় যে শিক্ষা ও উপদেশমূলক মূল্যবান বাণী নিহিত রয়েছে তা সবার জন্য অনুকরণীয়। এ কাহিনী পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তানদের প্রেম-প্রীতি, ভালবাসা, আনুগত্য ও আত্মত্যাগেরই এক শ্রেষ্ঠ ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হ’তে নির্দেশ পেয়ে ইবরাহীম (আঃ) তাঁর একমাত্র পুত্র ইসমাঈলকে কুরবানী করার চরম মুহূর্তে এক জান্নাতী ভেড়া বা দুম্বা প্রাপ্ত হন। তিনি আল্লাহর নির্দেশক্রমে পুত্রের পরিবর্তে সেটি কুরবানী করেন। এ পশুটিকে মহান বলার তাৎপর্য এই যে, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছিল এবং এর কুরবানী কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ ছিল না।
অতঃপর ইবরাহীম (আঃ) তাঁর পরম করুণাময় পালনকর্তা আল্লাহ তা‘আলার সমীপে, নিজ মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি ও প্রিয় অনুসারীদের জন্যে যে মর্মস্পর্শী প্রার্থনা ও আবেদন করেছিলেন তা পবিত্র কুরআনের ভাষায় নিম্নরূপ-
رَبِّ اجْعَلْنِيْ مُقِيْمَ الصَّلاَةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِيْ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ، رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ.
‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে ছালাত কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা! কবুল করুন আমার দো‘আ। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাকে আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব অনুষ্ঠিত হবে’ (ইবরাহীম ৪০-৪১)।
উপরোক্ত আয়াতে একজন বান্দার নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, সন্তানদের জন্য এবং মুমিন নর-নারীদের জন্য দো‘আর নমুনা পেশ করা হয়েছে। ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর অসীম অনুগ্রহ হ’তে প্রাপ্ত জ্ঞানে এই ব্যাপক অর্থবোধক দো‘আ করেন, যা উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য অনুকরণীয়।
পবিত্র কুরআনের বাণীসমূহ পর্যালোচনা করলে পিতা-মাতা ও সন্তানের অতীতের আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। এগুলোর কোন কোন ক্ষেত্রে পিতাকে পথভ্রষ্ট এবং পুত্রকে সৎপথপ্রাপ্ত, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে পিতাকে সৎকর্মপরায়ণ এবং পুত্রকে অবিশ্বাসী ও অনাচারী পাওয়া যাবে। যেমন উপরের আলোচনায় মূর্তিপূজক কাফের পিতা আযরের ঘরে ইবরাহীম (আঃ)-এর জন্ম তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। অনুরূপভাবে দেখা যায়, আল্লাহর নবী নূহ (আঃ)-এর পরিবারে ভ্রান্তিপূর্ণ পুত্র কেন‘আন-এর আগমন। নূহ (আঃ)-এর কওমের অধিকাংশ লোক শয়তানের প্ররোচনায় আল্লাহদ্রোহী কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। তাঁর পুত্র কেন‘আনও এদের দলভুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও নূহ (আঃ)-এর দো‘আর বরকতে ইতিহাস প্রসিদ্ধ বন্যায় সমগ্র পৃথিবী প্লাবিত হয়ে যায়। পূর্বেই নূহ (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে একটা নৌকা তৈরী করেন। বন্যায় নৌকাটি ভাসতে থাকে এবং এক পর্যায়ে নূহ (আঃ)-এর বিদ্রোহী পুত্র কেন‘আন নৌকার সামনে পড়ে যায়। নূহ (আঃ) পিতৃসুলভ স্নেহবশতঃ কেন‘আনকে নৌকায় আরোহণের আহবান জানান। কিন্তু শয়তানের তাবেদার কেন‘আন পিতার আদেশ তথা সত্য পথকে প্রত্যাখ্যান করে নৌকায় উঠতে রাযী হয়নি। পিতা-পুত্রের এই দৃশ্য অবলোকনে মহাপ্রজ্ঞাময় আল্লাহ তা‘আলা অসন্তুষ্ট হয়ে নূহ (আঃ)-কে যে অহী প্রেরণ করেন তা নিম্নরূপ। মহান আল্লাহ বলেন,
وَهِيَ تَجْرِيْ بِهِمْ فِيْ مَوْجٍ كَالْجِبَالِ وَنَادَى نُوْحٌ ابْنَهُ وَكَانَ فِيْ مَعْزِلٍ يَا بُنَيَّ ارْكَب مَّعَنَا وَلاَ تَكُنْ مَّعَ الْكَافِرِيْنَ، قَالَ سَآوِيْ إِلَى جَبَلٍ يَعْصِمُنِيْ مِنَ الْمَاء.
‘আর নৌকাখানি তাদের বহন করে চলল পর্বতপ্রমাণ তরঙ্গমালার মাঝে। আর নূহ (আঃ) তাঁর পুত্রকে ডাক দিলেন এবং সে সরে রয়েছিল, তিনি বললেন, প্রিয় বৎস! আমাদের সাথে আরোহণ কর এবং কাফেরদের সাথে থেকো না। সে বলল, আমি অচিরেই কোন পাহাড়ে আশ্রয় নেব, যা আমাকে পানি হ’তে রক্ষা করবে’ (হূদ ৪২-৪৩)।
এ বিষয়ে আরও প্রত্যাদেশ হয় যে,
وَنَادَى نُوْحٌ رَّبَّهُ فَقَالَ رَبِّ إِنَّ ابْنِيْ مِنْ أَهْلِيْ وَإِنَّ وَعْدَكَ الْحَقُّ وَأَنْتَ أَحْكَمُ الْحَاكِمِيْنَ، قَالَ يَا نُوْحُ إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ إِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ فَلاَ تَسْأَلْنِ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنِّيْ أَعِظُكَ أَنْ تَكُوْنَ مِنَ الْجَاهِلِيْنَ، قَالَ رَبِّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ أَنْ أَسْأَلَكَ مَا لَيْسَ لِيْ بِهِ عِلْمٌ وَإِلاَّ تَغْفِرْ لِيْ وَتَرْحَمْنِيْ أَكُنْ مِّنَ الْخَاسِرِيْنَ.
‘আর নূহ (আঃ) তাঁর পালনকর্তাকে ডেকে বললেন, হে পরওয়ারদেগার, আমার পুত্র আমার পরিজনদের অন্তর্ভুক্ত, আর আপনার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য, আর আপনিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফায়ছালাকারী। আল্লাহ বলেন, হে নূহ! নিশ্চয়ই সে আপনার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চয়ই সে দুরাচার। সুতরাং আমার কাছে এমন দরখাস্ত করবেন না, যার খবর আপনি জানেন না। আমি আপনাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, আপনি অজ্ঞদের দলভুক্ত হবেন না। নূহ বলেন, হে আমার পালনকর্তা! আমার যা জানা নেই এমন কোন দরখাস্ত করা হ’তে আমি আপনার কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন ও দয়া না করেন, তাহ’লে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’ (হূদ ৪৫-৪৭)।
উপরোল্লেখিত ঘটনাগুলোর অন্তরালে বেশ কিছু তাৎপর্য রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তা‘আলার ভয় এবং তাঁর হুকুম-আহকামের প্রতি যাদের মধ্যে নিষ্ঠা থাকে না, তাদের দ্বারা দুনিয়ায় অন্য অধিকার রক্ষা ও নিষ্ঠা আশা করা যায় না। ইহজগতে মানবগোষ্ঠী সমাজের রীতি-নীতি কিংবা রাষ্ট্রের আইন-কানুন থেকে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে বহু পন্থা আবিষ্কার করে নেয়। কিন্তু মহান আল্লাহর আইন-কানুনের ক্ষেত্র সেগুলো অশোভনীয়ভাবে ধরা পড়ে যায় বা মলিন হয়ে যায়। তাই পিতা-পুত্রের মত নিবিড় সম্পর্কযুক্ত আপনজনের ক্ষেত্রেও মতৈক্যের কোন আপোষ মীমাংসা করা সম্ভব হয়নি এবং কাফের পুত্রের সঙ্গে পবিত্র পিতার মিলিত হওয়া, মহা পবিত্র আল্লাহ তা‘আলা অনুমোদন করেননি। বরং পিতাকে এমন ভাষায় সতর্ক করে দেন, যা ভবিষ্যত মুসলিম জাতির জন্য এক মহাস্মারক।
আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে তাঁর সর্বাধিক প্রিয় মহানবী (ছাঃ)-কে ও তাঁর উম্মতবর্গকে সঠিক, সুন্দর ও আদর্শ পথের সন্ধন দানের জন্যে পিতা-মাতার কর্তব্যের প্রতি নির্ভর এসব প্রত্যাদেশ উপহার দেন। এসব আয়াতের ধারাবাহিক ভাবার্থে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য পালনকে ধর্মীয় বিধানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
আমরা এখানে আরও একটি চিরস্মরণীয় ও চিরসত্য ইতিহাস সংযোজন করতে চাই, তা হ’ল আমাদের চিরশত্রু ও চিরসঙ্গী শয়তানের নির্লজ্জ্য হামলা হ’তে সর্বাবস্থায় আল্লাহর আশ্রয় পার্থনা। কারণ শয়তানের সর্বপ্রথম আক্রমণের ফলেই আমাদের আদি পিতা-মাতা (আদম (আঃ) ও মা হাওয়া) বস্ত্রহীন হয়ে পড়েছিলেন। এটা সমগ্র মুসলিম জাতির জন্য এক চিরস্মরণীয় এবং অবিস্মরণীয় লজ্জাজনক সতর্কতা। অতঃপর সমগ্র মানব জাতির উপকারার্থে বিষয়টি পবিত্র কুরআনের ভাষায় যেভাবে বর্ণিত হয়েছে তা হলো,
يَا بَنِيْ آدَمَ لاَ يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ الْجَنَّةِ يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْءَاتِهِمَا إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيْلُهُ مِنْ حَيْثُ لاَ تَرَوْنَهُمْ إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ أَوْلِيَاءَ لِلَّذِيْنَ لاَ يُؤْمِنُوْنَ.
‘হে বনু আদম! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে, যেমন সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে, তাদের পোশাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছে, যাতে তাদেরকে লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, কিন্তু সেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না’ (আ‘রাফ ২৭)।
ইসলামের পবিত্রতা রক্ষায়, শয়তানের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কথা স্মরণ করাতে উপরোক্ত আয়াতটি উদ্ধৃত হয়েছে। আসলে শয়তানের নিরলস প্রচেষ্টা অসচেতন, অজানা ও দুর্বল প্রকৃতির মানুষের কাছে সহজেই প্রভাব বিস্তার করতে পারে এবং অপ্রত্যাশিতভাবে সাফল্য লাভ করে। কিন্তু ঈমানদার ও আল্লাহভীরু বান্দাদের নিকট শয়তানের কোন ঠাঁই নেই। কিন্তু তার চেষ্টারও কোন ত্রুটি নেই। এমতাবস্থায় পবিত্র কুরআনের দ্বারা মোকাবেলা করাই আল্লাহর সর্বাত্মক ও সর্বশেষ নির্দেশ। পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে উপরোক্ত আয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ আমাদের আদি পিতা-মাতাই শয়তানের বুদ্ধিমত্তায় সাময়িকভাবে আল্লাহর আদেশ ভুলে গিয়েছিলেন। কাজেই সমগ্র মানব জাতির জন্য এই চিরসত্য কাহিনীর প্রতিশোধ কল্পেই উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতি অগ্নিপরীক্ষার অবতারণা হয়। অর্থাৎ পবিত্র কুরআনের নির্দেশ মোতাবেক পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। পিতা-মাতার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে দয়াময় আল্লাহর আশ্রয় নিতে হবে। মহান আল্লাহ এ বিষয়ে মহানবী (ছাঃ)-কে প্রত্যাদেশ করেন, وَقُل رَّبِّ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ. ‘বলুন, হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি’ (মুমিনূন ৯৭)।
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য পালনে মহানবী (ছাঃ)-এর বহু মূল্যবাণ উপদেশ বাণী রয়েছে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَحَقُّ بِحُسْنِ صَحَابَتِى قَالَ أُمُّكَ. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ أُمُّكَ. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ أُمُّكَ. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ أَبُوكَ.
‘একদিন একজন লোক রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দরবারে হাযির হয়ে আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার কাছে সবচেয়ে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিকারী কে? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে লোকটি আবারও প্রশ্ন করলো, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি আবারও জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তারপর তোমার পিতা’ (বুখারী হা/৫৯৭১; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৯১১)।
অন্য আর এক হাদীছে তিনি বলেন, إِنَّ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ أَنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ. قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَكَيْفَ يَلْعَنُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ قَالَ يَسُبُّ الرَّجُلُ أَبَا الرَّجُلِ، فَيَسُبُّ أَبَاهُ، وَيَسُبُّ أَمَّهُ ‘সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ হচ্ছে কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করা। বলা হ’ল হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! মানুষ তার পিতা-মাতাকে কি ভাবে অভিশাপ করে? তিনি বললেন, কোন ব্যক্তি অপরের পিতা-মাতাকে গালি দেয়। ফলে সেও তার পিতা-মাতাকে গালি দেয়।’ (বুখারী, হা/৫৯৭৩; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৯১৬)। নবী করীম (ছাঃ) আরও বলেন, رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ. قِيلَ مَنْ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ. ‘ঐ লোক হতভাগ্য! ঐ লোক হতভাগ্য! ঐ লোক হতভাগ্য! জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আললাহর রাসূল (ছাঃ)! কার শানে একথা বললেন? নবী করীম (ছাঃ) বললেন, যে লোক পিতা-মাতার একজন কিম্বা দু’জনকে তাদের বৃদ্ধ বয়সে পেল অথচ জান্নাতে দাখিল হল না, সে হতভাগ্য’ (মুসলিম হা/২৫৫১)। অর্থাৎ তাদের সাথে সে সময় ভাল ব্যবহার করলে সে জান্নাতে যেত। সে জান্নাত পেয়েও জান্নাতে গেল না, সে বড় হতভাগ্য।
আসুন, আমরা পবিত্র কুরআন ও হাদীছের আলোক পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তোষজনক ব্যবহারের দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অকৃত্রিম ব্রতগ্রহণ করি।
– রফীক আহমাদ