অধিকার ও মর্যাদা

মানবাধিকার ও ইসলাম: বিবাহের অধিকার

জাতিসংঘ সার্বজনীন মানবাধিকার সনদ Article-16 : (1) Men and women of full age, without any limitation due to race, nationality or religion have the right to marry and found a family. They are entitled to equal rights as to marriage, during marriage and at its dissolution.

‘পূর্ণবয়ষ্ক নারী-পুরুষ ধর্ম-বর্ণ-জাতীয়তা নির্বিশেষে একে অপরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে সংসারী হ’তে পারবে। দাম্পত্য জীবনে ও বিবাহ বিচ্ছেদের পরেও প্রতিটি নারী-পুরুষ সমঅধিকারের অধিকারী বা অধিকারিনী হবেন’।

(2) Marriage shall be entered into only with the free and full consent of the intending pouses.

‘বর ও কনে উভয়ের পূর্ণ সম্মতিক্রমেই কেবলমাত্র বিবাহ অনুষ্ঠিত হ’তে পারবে’।

(3) The family is the natural and fundamental group unit of society and is entitled to protection by society and the state.

‘পরিবার সমাজের একটি মৌলিক ও স্বাভাবিক অঙ্গ। তাই প্রতিটি পরিবারই সমাজ এবং রাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা পাবার অধিকারী’।[1]

বিশ্লেষণ :

জাতিসংঘ সর্বজনীন মানবাধিকার সনদের ১৬ (১) ধারায় বলা হয়েছে, পৃথিবীতে বসবাসকারী প্রত্যেক পুরুষ ও নারী ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে পরস্পরে এক অপরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার করতে পারবে। এখানে আরও বলা হয়েছে, দাম্পত্য জীবনে অথবা বিবাহ বিচ্ছেদের পরও প্রত্যেক নারী-পুরুষ তাদের সমঅধিকার ভোগ করতে পারবে। অর্থাৎ এই ধারাতে বিশ্বের মানব সম্প্রদায়কে বুঝানো হচ্ছে যে, প্রত্যেক পূর্ণ বয়ষ্ক মানব-মানবী বিয়ে করে সংসারী হ’তে পারবে এবং মানুষ আনন্দ উপভোগের সাথে বসবাস করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা এর বিপরীত। কারণ এই ধারাতে কয়েকটি অস্পষ্ট দিক রয়েছে; তা হ’ল যে, এখানে প্রত্যেক নর-নারীকে বিয়ে করার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু তা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। এখানে কেউ বিয়ে করে সংসারী হ’তেও পারে আবার নাও পারে। আর যদি কেউ বিয়ে না করে তাতে কারো কিছু যায় আসে না। বিবাহ বহির্ভূত কোন নর-নারী একত্রে জীবন-যাপনের মাধ্যমে অথবা কখনও বন্ধু-বান্ধবী সেজে যথেচ্ছা ভোগ-বিহার করলেও তাতে দোষের কিছু নেই। যে বাধা আছে কিন্তু ইসলামে।

এখানে আরো একটি জিনিস লক্ষণীয় যে, ‘পূর্ণ বয়ষ্ক’ শব্দটির ব্যাখ্যা নেই। একজন নর-নারী কত বছর হ’লে পূর্ণ বয়ষ্ক হ’তে পারে তার কোন হিসাব এখানে অনুপস্থিত। বিভিন্ন দেশভেদে উল্লেখ রয়েছে, কোন দেশে ছেলের ন্যূনতম বয়স ১৮ কোথাও ২০ কোথাও ২১ কোথাওবা ২৫ ইত্যাদি এবং মেয়েদের ন্যূনতম বয়স হ’তে হবে ১৮ কোথাও ২০ কোথাওবা ২১ বছর প্রভৃতি দ্বারা নির্দিষ্ট সীমারেখায় আবদ্ধ। আবার কেউ যদি (রাষ্ট্রভেদে) এই সীমারেখা অমান্য ও নিমণগামী করে তাহ’লে তা প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শুধু তাই-ই নয়, এর জন্য অভিভাবকবৃন্দকেও কারাদন্ড-জরিমানা ভোগ করতে হয়। এখানে বয়সসীমা বেধে দেয়ার কারণে বিবাহ বহির্ভূত মিলনে বিশ্বব্যাপী স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অবাধ মেলামেশায় যিনা-ব্যভিচার খুব দ্রচত গতিতে বেড়ে চলেছে। উক্ত পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। ফলে মানবতা এখন মারাত্মক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। রীতিমত উন্নত দেশ ও পাশ্চাত্য দেশের নীতি নির্ধারকদেরকে সাংঘাতিকভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। পরিবার বা সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাচ্ছে। এই অদূরদির্শতার কারণে এখন তারা নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে এ থেকে বাঁচার বা উত্তরণের উপায় কি? হ্যাঁ, সমাধান আছে একটাতেই; তা’হল সর্বজনীন মানবাধিকারের গ্র্যান্টিযুক্ত সনদ ‘আল-ইসলাম’।

সনদের ১৬ (২) ধারায় বলা হয়েছে যে, বর ও কনে তথা প্রত্যেক নারী-পুরুষের সম্মতিতেই বিয়ে হ’তে হবে। এখানে কোন জোর-জবরদোস্তির মাধ্যমে বিয়ের স্বীকৃতি আদায় করা যাবে না। এই ধারাটির ত্রচটিযুক্ত বিষয় হ’ল, কেবলমাত্র ছেলে-মেয়েদের সম্মতি বা স্বাধীনভাবে বিয়ের সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই একটি দীর্ঘস্থায়ী সুখ-সমৃদ্ধশালী সংসার-জীবন নির্ভর করছে! যেখানে অভিজ্ঞ বা জ্ঞানী পিতা-মাতা কিংবা অভিভাবকের কোন সামান্যতম অনুমতির সুযোগ রাখা হয়নি। যেকারণ এত বড় একটি সিদ্ধান্ত অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েদের স্বেচ্ছাচারিতা বা স্বাধীনতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অথচ পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে তাদের যে ভুল হ’তে পারে তা তুলে ধরার কোন সুযোগ এখানে নেই। যেকারণে একটি দম্পত্তি সারা জীবন দুঃখের সাগরে ভাসতে পারে এবং বাস্তবে তাই-ই হচ্ছে। তাইতো কিছুদিন ভোগবিলাসের পর ছেলে-মেয়েদের মধ্যে অহরহ বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটতে দেখা যায়। তাদের বিশেষ করে নারীদের চরম দুঃখজনক পরিণতির শিকার হ’তে হচ্ছে। অর্থাৎ এই ধারাতেও যে প্রচুর ত্রচটি রয়েছে, তা উপলব্ধি করা যায়।

সনদের ১৬ (৩) ধারাতে বলা হয়েছে, ‘পরিবার সমাজের একটি মৌলিক ও স্বাভাবিক অঙ্গ। তাই প্রতিটি পরিবারই সমাজ এবং রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা পাবার অধিকারী’। এখানে একটি রাষ্ট্রে পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা ফুটে উঠেছে। শুধু তাই-ই নয়, সার্বভৌমসম্পন্ন একটি দেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’ল, সুশৃঙ্খল পরিবার বা সমাজ কাঠামোর উপস্থিতি বিদ্যমান থাকা। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে বিশেষ করে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে পরিবার ও সমাজ বলতে যা বুঝায় তা চেনার উপায় নেই। ধরে নেয়া হৌক যে, একটি নতুন দম্পত্তি স্বাধীনভাবে বসবাসের নিরাপত্তা রাষ্ট্র কর্তৃক পাবার অধিকারী। সেটা পেল। কিন্তু সেখানকার পরিবারের যে চিত্র ধরা পড়ে তাহ’ল, স্বামী-স্ত্রীদের তাদের সন্তানদের খবর নেয়ার সময় থাকে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি শিশু সন্তানের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান প্রভৃতির দায়িত্ব পালন করা হয়। ফলে সন্তান আর পিতা-মাতার উপর নির্ভরশীল হয় না, একটু বুদ্ধি-জ্ঞান হ’লেই তাদের পিতা-মাতাকে তারা আর তোয়াক্কা করে না। তোয়াক্কা করার প্রয়োজনও পড়ে না, কারণ স্বামী-স্ত্রীও কাজে-কর্মে, সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে, কে সন্তানদেরকে খবর নিবে? কে তাদেরকে পিতৃ-মাতৃসেণহে লালন-পালন করবে? মূলত শৈশব বয়সেই ওদেরকে পরিবার থেকে পৃথক করে দেয়া হয়। শিশু-কিশোর বয়স থেকে ওরা ওদের সহপাঠি-বন্ধুদেরকে আবিষ্কার করার সুযোগ পায়। এক সময় যৌবনের উদ্দীপনায় তারা লাগামহীন জীবনে ঘুড়ে বেড়ায়, বিকিয়ে দিতে হয় তাদের জীবনের মূল্যবান সম্পদ সতীত্ব-সম্ভ্রমকে। যেমন একটি ঘটনা থেকেই বুঝা যাবে ভোগবাদী ও বস্ত্তবাদী পাশ্চাত্যপন্থীগণ কিভাবে শুধু দুনিয়া অর্জনের কারণে পরিবার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সিরিয়ার প্রখ্যত ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা আলী তানতাবী আমেরিকার সমাজ সম্পর্কে লিখেছেন, তাদের সেখানে মেয়ে যখন বয়স্কা হয়, তখন তার বাপ তার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন থেকে নিজের হাত গুটিয়ে নেয় এবং ঘরের দুয়ার তার জন্য বন্ধ করে দেয়। তাকে বলে, এখন যাও উপার্জন কর এবং যাও, আমাদের এখানে আর তোমার জন্য কোন জায়গা নেই, কিছুই নেই। সে বেচারী বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায় এবং জীবনের সমস্ত কঠোরতা-জটিলতার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়। দ্বারে দ্বারে ঘা খেয়ে খেয়ে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু বাপ-মায়ের সেজন্য কোনই চিন্তা-ভাবনা হয় না। কোন দুঃখবোধ করে না তাদের সন্তানের এই দুর্ভোগ ও লাঞ্ছনার কথা জেনে।

সে বেচারী শেষ পর্যন্ত শ্রম-মেহনত করে রূযী-রোজগার করতে বাধ্য হয় কিংবা দেহ বিক্রয়ের নোংরা ও জঘন্যতম কর্মে জড়িয়ে পড়ে। এ কেবল আমেরকিাতেই নয়। সমগ্র ইউরোপীয় অঞ্চলের অবস্থাই এমনই। আমার উস্তাদ ইয়াহইয়া শ্যাম প্রায় ৩৩ বছর পূর্বে যখন প্যারিস থেকে শিক্ষা শেষ করে ফিরে এসেছিলেন, আমাকে বলেছিলেন যে, তিনি সেখানে থাকার জন্য একটি কামরার সন্ধানে এক বাড়ীতে পৌঁছেছিলেন। সেখানে কামরাটি ভাড়া দেওয়ার জন্য খালী ছিল। সে বাড়ীতে পৌঁছাবার সময় দুয়ারের কাছ থেকে একটি মেয়েকে বের হয়ে যেতে দেখতে পেলেন। মেয়েটির চোখ দু’টি তখন ছিল অশ্রচসিক্ত। ডাঃ ইয়াহইয়া বাড়ীর মালিকের কাছে মেয়েটির কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন যে, মেয়েটি বাড়ীর মালিকেরই ঔরসজাত সন্তান। এখন সে আলাদাভাবে বসবাস করে এবং এ বাড়ীর খালী বাসাটি ভাড়া নেওয়ার জন্য এখানে এসেছিল; কিন্তু মালিক (নিজ পিতা) তাকে ভাড়ায় দিতে অস্বীকার করার কারণ জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন যে, মেয়েটি মাত্র ১০ ফ্রাঁ (দশ আনার মুদ্রা) দিতে পারে। অথচ সে অন্য লোকের কাছ থেকে ত্রিশ ফ্রাঁ আদায় করতে পারে।[2] এ হচ্ছে বস্ত্তবাদী সমাজ-সভ্যতার মর্মান্তিক পরিণতি। সমাজে কখনো এমন একটি মুহূর্ত আসে যখন কিশোর বয়সের ছেলে-মেয়েরা হয়ে ওঠে হিংস্র ও পশুর আচরণের ন্যায়। তেমনি একটি সাড়া জাগানো লোমহর্ষক ও অমানবিক ঘটনা ঘটে যায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও। তাও কি-না খোদ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিবার-গৃহে। ঘটনাটি হল, ঢাকার মালিবাগের এক ছন্নছাড়া হতভাগা ঐশী নামীয় কিশোরী কন্যা তার প্রিয় পিতা পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মাহফুযুর রহমান ও স্বপ্না রহমান মাতাকে ২০১৩ সালের ১৬ই আগস্টে নির্মমভাবে ঢাকার নিজ বাসায় নিজ হাতে হত্যা করে। যা কল্পনাও করা যায় না। যদিও সদ্য আদালতের রায় অনুযায়ী তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই পিতা-মাতাকে কেউ কি ফিরিয়ে দিতে পারবে? এর জন্য কে দায়ী? হ্যাঁ, এর জন্য আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক ব্যবস্থায় মূলত দায়ী। প্রথম থেকে এই পরিবারটি যদি ইসলামী অনুশাসনে জীবন-যাপনে অভ্যস্ত থাকত, তাহলে ঐ পরিবারে হয়তবা এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটত না।

অন্য আর এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে- আমেরিকাতে ১৯৯১ সালে ১২ লাখ অবৈধ সন্তান জন্মগ্রহণ করে। ১৯৯০ সালে নিউজ উইক একটি জরিপ পরিকল্পনা করে তাতে দেখা যায়, প্রতি ১৮ সেকেন্ডে ১ জন নারী নির্যাতিত হয় এবং প্রতি ৬ মিনিটে ১ জন নারী ধর্ষিতা হয়। প্রতি চারজনের মধ্যে ১ জন অবিবাহিতা ১০-১৪ বছর বয়সীর গর্ভে জন্ম লাভ করে সন্তান। প্রতি বছর ১৫-১৭ বছর বয়সী অবিবাহিতা ৫০ হাযার মেয়ে গর্ভধারণ করে।[3] আমেরিকার এফ.বি.আই-এর ১৯৯০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ১০ হাযার ২৫৫ নারীর সঙ্গে ব্যভিচারের ঘটনা ঘটে (আদালতের দায়েরকৃত অভিযোগ)।[4] ১৯৯০ সালে বৃটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন, ১৯৭৯-৮৭ সাল পর্যন্ত নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশার কারণে ৪ লাখ জারজ সন্তান বাস করছে ইংলান্ডে। তাহ’লে ২০ বছর পর আজকে প্রায় এক কোটি জারজ সন্তান বাস করছে ইংলান্ডে।[5] অন্য এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে, আমেরিকার ইউনিভার্সিটিতে কিংবা কর্মক্ষেত্রে ৫০% নারী ধর্ষণের স্বীকার হয়।[6] তাইতো বলা যায়, ওদের পরিবার ও সমাজটা হ’ল তথাকথিত উদার-খোলামেলা অথবা যিনা-ব্যভিচারে ভরপুর। ভাই-বোন, বাবা-মা পৃথক পৃথক নাইট ক্লাব, হোটেল-রেঁস্তোরায় নিয়মিত যাতায়াত যাদের সংস্কৃতি; তাদের পরিবার বলতে কি আর থাকতে পারে? এক অর্থে তারা পরিবারের সংজ্ঞাই বুঝেন না। আর অন্যরাও যাতে না বুঝে তার জন্য সম্মেলন করে আইনও করা হয়েছে। যেমন- ২০০০ সালে ‘একুশ শতকে সাম্য, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা’ বিষয়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সম্মেলনে যেসব প্রস্তাব গৃহীত হয়- (১) তরুণ-তরুণীদের কোন বাধাধরা না রেখে যৌন স্বাধীনতার প্রতি আহবান করতে হবে। (২) পরিবার গঠনে বিয়ের ভূমিকা নির্মূল করতে হবে। (৩) গর্ভ বিনষ্টকে আইনগত মর্যাদা দিতে হবে। (৪) সমকামিতা বৈধ বলে আখ্যায়িত করতে হবে। (৫) বেইজিং সম্মেলনের শপথের উপর কিছু কিছু ইসলামী দেশের পক্ষ হতে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।[7] গঠনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এর জন্য সনদ প্রণয়নকারীদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ! কিন্তু সনদ প্রণয়নকারীগণ একটু ইসলামী পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি রেখে যদি সনদ প্রণয়ন করতেন তাহ’লে হয়তবা আমাদের আজকের এই লেখার তত প্রয়োজন পড়ত না। আসুন! এবার উপরিউক্ত ধারা-উপধারা গুলোর জবাব বা বিশে­ষণ ইসলাম কীভাবে দিয়েছে তা অবলোকন করি।

ইসলামের আলোকে বিবাহ ও পরিবার গঠনের অধিকার :

ইসলামের আলোকে বিবাহ ও পরিবার গঠনের অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে বিবাহ কি এ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা দরকার। কেননা বিবাহ অনুষ্ঠান বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন ভাবে সংঘটিত হয়ে থাকে, ইসলাম ধর্মের সাথে যার কোন সাদৃশ্যতা নেই। ইসলাম ধর্মে প্রথম বিয়ের প্রচলনটা বোঝা যায় মানব সৃষ্টির আদি পিতা-মাতা আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া (আঃ)-এর স্বামী-স্ত্রী হিসাবে পরস্পর গ্রহণের মাধ্যমে। যদিও রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক আনিত বিয়ে পদ্ধতির মত ছিল না।

বিবাহের পরিচয় : বিবাহকে আরবীতে বলা হয় ‘নিকাহ’ এর আভিধানিক অর্থ, মিলানো, একত্র করা ইত্যাদি।[8] বিবাহ অর্থে এ শব্দ পবিত্র কুরআনেও এসেছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পসন্দমত নারীকে বিবাহ কর’ (নিসা ৪/৩)। শব্দটি সহবাস অর্থেও ব্যবহৃত হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি সে তার স্ত্রীকে ত্বালাক্ব দেয়, তবে ঐ স্ত্রী তার (স্বামীর) জন্য বৈধ হবে না, যে পর্যন্ত সে অন্য স্বামীর সাথে (বিবাহ করে) সহবাস না করে’ (বাক্বারাহ ২/২৩০)।

বিবাহ মূলত একট সামাজিক চুক্তি। কেউ কেউ একে মুসলিম দেওয়ানী চুক্তিও বলেছেন।[9] অর্থাৎ ইসলামী শরী‘আতের পরিভাষায় বিবাহ এমন একটি চুক্তিকে বলা হয়, যা এমন দু’জন নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পাদিত হয়, যাদের পরস্পর বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হ’তে শরী‘আত বাধা প্রদান করে না এবং এর ফলে তাদের একজন অপর জনকে স্বামী-স্ত্রীসুলভ ভোগ করা বৈধ হয়ে থাকে।[10] পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী বিয়ে সম্পন্ন হ’তে কয়েকটি শর্তের প্রয়োজন হয়। শর্তগুলো হ’ল-(ক) বর-কনের ইজাব বা সম্মতি (খ) সাক্ষী ও (গ) মোহরানা।[11] তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে তার পিতা অথবা পিতার অবর্তমানে মেয়ের বৈধ অভিভাবকের সম্মতির প্রয়োজন আবশ্যক।[12] আমাদের দেশে কন্যার পিতা বা অভিভাবক ছাড়া যে পদ্ধতিতেই বিয়ে হৌক না কেন তা শরী‘আত সমর্থিত নয়। যদিও আমাদের দেশে ব্যাপক হারে এই ধরণের বিয়ে কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে সংঘটিত হচ্ছে। শরী‘আতের দৃষ্টিতে এসব বিয়ে নিষেধ এবং ঐ দম্পত্তি থেকে যে সন্তান হচ্ছে তাও বৈধ নয়।[13] অথচ হিন্দু-খৃষ্টান বা অন্য ধর্মে এ ধরণের সম্মতির প্রয়োজন পড়ে না।

মোহরানা :

মোহরানা বিয়ের অন্যতম একটি শর্ত, যা অমান্য করা শাস্তিযোগ্য। তা কম হৌক বা বেশী হৌক। কিন্তু অন্য ধর্মের কথা না হয় বাদই দিলাম, আমাদের মুসলিম সমাজে এ বিষয়ে খুব খাটো করে দেখা হয়। বাকীতে আকাশ-কুসম পরিমাণ মোহরানা বেঁধে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়। এমনও আছে কারো পরিশোধের ক্ষমতা থাকুক বা নাই থাকুক লক্ষ লক্ষ টাকা মোহরানা ধরা হয়। আবার কোন পরিবার আছে, যারা ৫০ লাখ অথবা এক কোটি টাকাও মোহরানা নির্ধারণ করে থাকে; যা স্রেফ বাকীতে। নগতে কিছুই দেয় না। অতঃপর কোন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে কিংবা স্বামীর মৃত লাশের সামনে গিয়ে স্ত্রীকে বলা হয়, মাপ করলে কি-না! উপায়ন্তর না পেয়ে সেই বিমর্ষ মুহূর্তে স্ত্রী কি আর করতে পারে। পরিশেষে মাপ করে দেয়া হয়। এমন করে নানা ভাবে আমাদের সমাজে মেয়েদেরকে ঠকানো হচ্ছে। অথচ এ নিয়ে নারীবাদীরা কোন কথা বলেন না। বিয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পসন্দমত নারীকে বিবাহ কর’ (নিসা ৪/৩)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর বান্দার প্রতি তাঁর রহমতের নিদর্শন যে, তিনি তোমাদের মধ্যে তোমাদের স্ত্রী জাতিকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের কাছে শান্তি পাও। তোমাদের আপোষের মধ্যে ভালবাসা, একে অপরের প্রতি মমত্ববোধ, দয়া সৃষ্টি করেছেন। এতে চিন্তাশীলদের জন্য বড় নিদর্শন আছে’ (রূম ৩০/২১)।

সুধী পাঠক! সূরা নিসার ৩ নং আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, ইসলাম ছেলেদেরকে পসন্দমত নারী বিয়ে করার স্বাধীনতা দিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে, পথে-ঘাট, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কোন মেয়েকে দেখলেই পসন্দ করতে হবে অথবা পসন্দের নামে মেয়ের সাথে আমতলায়-বটতলায় বসে বসে নির্লজ্জ, বেহাপনা ও অশ্লীলতায় মেতে উঠবে অথবা হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, খেলার মাঠ, পার্ক, সিনেমা হলে বিয়ের পূর্বে প্রেম নিবেদনের মাধ্যমে স্বীকৃতি আদায় করবে। বর্তমানে শিক্ষিতদের মধ্যেও মোবাইল কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে এই সমস্ত নোংরা ঘটনা ঘটছে। ইসলাম এগুলো একদম সমর্থন করে না। দেখুন আপনি কোন্ মেয়েকে পসন্দ করবেন, আজীবনের সঙ্গী করবেন তা রাসূল (ছাঃ)-এর নিজ ভাষায় শুনুন। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘একজন মহিলাকে বিয়ে করার সময় চারটি বিষয় লক্ষ্য করা হয়। যথা : ধন-সম্পদ, বংশ-মর্যাদা, সৌন্দর্য এবং দ্বীন। সুতরাং দ্বীনদার মহিলাই তোমার বিয়ে করা উচিৎ। অন্যথায় তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে’।[14]

সুধী পাঠক! এখানে কয়েকটি দিক ফুটে উঠে। এর মধ্যে সৌন্দর্য, বংশ, অর্থগত দিক দেখার পরে বেশী দ্বীনদারকে প্রাধান্য দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যাতে সংসারটি শান্তিময় হয়। বিয়ের পূর্বে ছেলে মেয়েকে একবার দেখে নিবে। এটাই সুন্নাত। এতে বিয়ের পর ছেলে-মেয়ের মধ্যে ভালবাসার সৃষ্টি হয়। আদর্শ পরিবার গঠনে সুষ্ঠু পরিকল্পনাও করতে পারে। কিন্তু আজকাল সেদিকে খুব কম লোকই ভ্রচক্ষেপ করেন। অনেকে বলবেন, নারীদের ধন-সম্পদ আছে কি-না মানুষ কেবল সেদিকেই গুরুত্ব দেন। কিন্তু তা সঠিক নয়।

বেকার ও দরিদ্রদের বিয়ে : ইসলামের প্রত্যেক সামর্থবান বালেগ-বালেগা নর-নারীকে বিয়ে করতে উৎসাহিত করেছে। কিন্তু যারা গরীব কিংবা বিয়ের যোগ্যতা রাখেনা তারা কী করবেন? এক্ষেত্রে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, যৌবনকালে আমরা নবী (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম, কিন্তু আমাদের কোন সম্পদ ছিল না। এমতাবস্থায় রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, হে যুবসম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ের সামর্থ রাখে তারা যেন বিয়ে করে। কেননা বিয়ে (পর স্ত্রী দর্শন থেকে) দৃষ্টিকে নীচু রাখে এবং তার যৌন জীবনকে সংযমী করে। আর যে বিয়ে করার সামর্থ রাখে না, সে যেন ছিয়াম রাখে। ছিয়াম তার যৌন-বাসনাকে কমিয়ে দিবে।[15] তবে এর অর্থ এই নয় যে, দরিদ্র বা বেকাররা কখনো বিয়ে করবে না। কারণ এ বিষয়ে ইমাম বুখারী ‘বিয়ে’ অধ্যায়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেছেন, ‘…যদি তারা দরিদ্র হয়। আল্লাহ মেহেরবাণী করে তাদের সম্পদশালী করে দিবেন’ (নূর ২৪/৩২)।

কোন কোন দেশে এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে এবং পাশ্চাত্যে বেকার ছেলেদেরকে অথবা স্বল্প আয়ী পাত্রকে বিয়ে দিতে চায় না। এটাও ঠিক নয়। কারণ এমনও অনেক মেয়ের পিতা রয়েছে যারা ধনাঢ্য, অথচ মেয়েকে বিয়ে দেন না। এই জন্য যে মেয়ের মোহরনা বেশী পাবে। কিন্তু মেয়ের যে বয়স হয়ে যাচ্ছে-লোভী পিতা-মাতা ও অভিভাবক সেদিকে খেয়াল করেন না। এমনকি আমাদের সমাজে অনেক অভিভাবক রয়েছেন যে, আমাদের মেয়েরা শিক্ষিত হবে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করুক পরে বিয়ে দিব। এরকম ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েরা যদি কোন অপরাধ করেই ফেলে তার অভিভাবকগণ কখনোও এর দায় এড়াতে পারবেন না।

উক্ত হাদীছ থেকে আরো একটি বিষয় সুম্পষ্ট যে, বিয়ে-সাদীর ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী ধনী হ’তে হবে এমনটা নয়। শুধু তাই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রে দুনিয়াতে একজন সৎ ধার্মিক গরীব ব্যক্তির মর্যাদা অনেক গুণ বেশী। তাঁকে অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে সাহল (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট দিয়ে গমন করছিল, তখন তিনি (ছাহাবায়ে কেরামকে) বললেন, তোমাদের এর সম্পর্কে কী ধারণা? তাঁরা উত্তর দিলেন, ‘যদি সে সুপারিশ করে, তাহ’লে সুপারিশ গ্রহণ করা যায়, যদি কথা বলে, তবে কান লাগিয়ে শোনা উচিৎ। এরপর সেখান দিয়ে একজন গরীব মুসলিম অতিক্রম করতেই রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমাদের কী ধারণা? তাঁরা জবাব দিলেন, যদি এ ব্যক্তি কোথাও সাদীর প্রস্তাব করে তো বিবাহ দেয়া ঠিক হবে না। যদি সুপারিশ করে তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। যদি কোন কথা বলে তবে তা শোনার প্রয়োজন নেই। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, সমস্ত পৃথিবীতে ঐ ব্যক্তির চেয়ে এ ব্যক্তি উত্তম অর্থাৎ ধনীদের চেয়ে গরীবরা উত্তম।[16]

এছাড়া গরীব ঈমানদার ব্যক্তি ধনী ঈমানদারের চেয়ে ৫শ বছর আগে জান্নাত যাবে। সূরা রুমের ২১ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘নর-নারী পরস্পর বিয়ের মাধ্যমে শান্তি-সমৃদ্ধির মাধ্যমে একটা সুন্দর পরিবার গঠন করতে পারে। বিয়ের মাধ্যমে পর নারীর প্রতি কুদৃষ্টি থেকে নিজেকে যেমন হেফাযত করতে পারে, তেমনি তাকে পবিত্র করতে পারে। পরিবারে সন্তান-সন্ততির মাধ্যমে পরিবার তথা সমাজ গঠন হ’তে পারে। সেই সমাজ-ই হ’তে পারে সুশৃঙ্খল, নিরাপত্তা মূলক ও দীর্ঘস্থায়ী। যার মাধ্যমে একটা সুখী, সস্মৃদ্ধশালী দেশ ও জাতি গঠন সম্ভব। পক্ষান্তরে পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে বিয়ের ক্ষেত্রে এধরনের চিন্তা-ভাবনার কোন অবকাশ নেই।

কন্যার অনুমতি : প্রগতিবাদীগণ অথবা নারীবাদীগণ বলতে পারেন যে, মুসলিম পুরুষ শাসিত সমাজে মেয়েদের চিন্তা, বিবেক-স্বাধীনতা প্রকাশের কোন সুযোগ নেই। এমনকি বিয়ের ক্ষেত্রে বর যেমন হৌক না কেন তাকে দেখার প্রয়োজন পড়ে না। অথচ মেয়েদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ তার বিপরীত। কিন্তু না, এ বিষয়ে ইসলামের অবস্থান আরো স্পষ্ট। এ সম্পর্কে খানসা বিনতে খিযাম আল-আনছারিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন তিনি অকুমারী ছিলেন তখন তার পিতা তাকে সাদী দেন। এ সাদী তার পসন্দ ছিল না। এরপর রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে গেলে তিনি এ সাদী বাতিল করে দেন।[17]

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘কোন বিধবা-নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী মহিলাকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কেমন করে তার অনুমতি নেয়া হবে? উত্তরে তিনি বললেন, তার চুপ থাকাটাই তার অনুমতি।[18] এখান থেকে বুঝা গেল যে, শুধু অভিভাবক বা পিতা-মাতার নয়; কন্যাদের পসন্দমত বিয়ের ব্যাপারেও ইসলাম তাদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছে। কিন্তু বর্তমান নোংরা সংস্কৃতির মত যথেচ্ছা অনুমতি নয়; বরং পারিবারিকভাবে মার্জিত, সুন্দর ও ধর্মীয় পরিবেশের মধ্যেই হ’তে হবে।

কনের জন্য কাপড়-চোপড় ইত্যাদি ধার করা : মুসলিম নর-নারী বিয়েতে এক অপরের জিনিসপত্র আত্মীয়দের নিকট থেকে ধার করতে পারে। মানুষের জীবনে এরূপ সংকট কখনও দেখা দিবে এটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘একসময় তিনি আসমা বিনতে আবুবকর (রাঃ) থেকে একগাসি গলার হার ধার এনেছিলেন। তারপর তিনি তা হারিয়ে ফেললে রাসূল (ছাঃ) কতিপয় ছাহাবীকে সেটা খুঁজতে পাঠান। পথিমধ্যে ছালাতের সময় হলে পানি না পাওয়ায় তাঁরা বিনা ওযুতেই ছালাত আদায় করেন। অতঃপর তাঁরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে ফিরে আসার পর ঘটনাটি উল্লেখ করেন। তখন তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হয়। ওসায়দ বিন হুযায়র (রাঃ) বলেন, ‘হে আয়েশা! আল্লাহ তোমাকে উত্তম পুরস্কার দান করুন। কেননা যখনই তোমার উপর কোন অসুবিধা এসেছে, তখন কেবল তোমাকেই তা থেকে মুক্ত করা হয়নি; বরং গোটা মুসলিম জাতি তা থেকে কল্যাণ লাভ করেছে’।[19] ইসলাম বিয়ে-সাদীতে ছোট-বড়-দাস-দাসীর মধ্যে ভেদাভেদ করে না। যেটা অন্য ধর্মে ও জাতিতে থাকতে পারে। যেমন- হিন্দুধর্মে ব্রাক্ষ্মণের ছেলে-মেয়েদের সাথে হিন্দুদের অন্য বর্ণের গোত্রের মধ্যে বিবাহ করা নিষিদ্ধ। খৃষ্টানদের মধ্যেও এমন বর্ণ-গোত্র ভেদ রয়েছে। শুধু তাই-ই নয়; খোদ বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে পরাশক্তিধর তথাকথিত গণতন্ত্রের দাবীদার এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার রক্ষক (?) সেখানেই কাজে-কর্মে বিয়ে-সাদীতে চরম বৈষম্যের চিত্র পাওয়া যায়। যেমন সেখানকার এক কৃঞ্চাঙ্গ ও শেতাঙ্গ ছেলে-মেয়ের মধ্যে বিয়ে সংঘটিত হওয়ায় আমেরিকার এক আলাদতে জনৈক কৃঞ্চাঙ্গ ছেলেকে কারাদন্ড দেয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ইসলাম কী বলে? আপন দাসীকে মুক্ত করে বিয়ে করার ব্যাপারে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) সাফিয়াকে আযাদ করলেন এবং এই আযাদীকে তাঁর সাদীর মোহরানা হিসাবে ধার্য করলেন।[20]

এ সম্পর্কে আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে আপন কৃতদাসীকে শিক্ষা দেয় এবং উত্তম শিক্ষা দেয়; শিষ্টাচার শিক্ষা দেয় এবং উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়। এরপর তাকে মুক্ত করে বিয়ে করে তার জন্য দ্বিগুণ নেকী রয়েছে’।[21] এখান থেকে বুঝা যায় যে, বন্দী হওয়ার পূর্বে সাফিয়া খ্রীষ্টান ছিলেন রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শের প্রভাবে মুসলিম হওয়ার পর দাসী থেকে মুক্ত করে নিজ স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করে তাঁকে (সাফিয়াকে) উঁচু মর্যাদার স্থানে অভিষিক্ত করলেন। কারণ তিনি ছিলেন তার পিতার উচ্চ বংশীয় গোত্রের সন্তান। একইভাবে উপরিউক্ত আলোচ্য হাদীছে গরীব দাস-দাসীকে মুক্ত করার ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এখানে জাতি-গোত্র হিসাবে কোন ভেদাভেদ করা হয়নি। অথচ অন্য ধর্মে-বর্ণে তা প্রকট আকারে বিদ্যমান আছে।

বয়স্ক পুরুষের সাথে কমবয়স্কা নারীর বিয়ে : ইসলামী রীতি অনুযায়ী কম বয়স্কা নারীর সাথে বয়স্ক পুরুষদের বিয়ে হ’তে পারে। উরওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল (ছাঃ) আয়েশা (রাঃ)-এর বিয়ের প্রস্তাব করলে আবুবকর (রাঃ) বললেন, আমি তো আপনার ভাই। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি আল্লাহর দ্বীন ও কিতাবের দিক থেকে আমার ভাই। অতএব সে তো আমার জন্য হালাল। তাকে বিয়ে করতে কোন বাধা নেই’।[22] উল্লেখ্য যে, ছেলের থেকে মেয়েও যদি বড় হয় সেখানেও বিয়ে করাতে কোন আপত্তি নেই। যেমন- বিবি খাদিজার যখন বয়স ৪০ বছর তখন রাসূল (ছাঃ)-এর বয়স মাত্র ২৫ বছর।[23] এখানে নারীবাদীরা এসকল বিয়ে নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারেন। এর জবাব হ’ল এই যে, এ ধরাতলে নারীরা শুধু পুরুষদের ভোগের ক্রীড়নক হয়ে আসেনি; বরং একটা সুন্দর পরিবার-সমাজ কীভাবে গঠন করা যায় তার সার্বিক ব্যবস্থাপনার দূরদর্শিতাও এর দ্বারা ফুটে উঠেছে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে। এখানে কম বয়সী মেয়ে লালন-পালন করে স্ত্রী হিসাবে তৈরি করাটা অতীব ধৈর্য ও সাহস না থাকলে সম্ভব নয়। আয়েশা (রাঃ) বালেগা হ’লে রাসূল (ছাঃ) তাঁর সাথে বাসর রাত করেন। রাসূল (ছাঃ) -এর জীবনে একমাত্র কুমারী মেয়ে আয়েশা (রাঃ)-কে মাত্র ৬ বছর বয়সে বিবাহ করে, সে সময়ের সমাজের মধ্যে যে কুসংস্কার ছিল তা দূর করেছিলেন। যেমন সে যুগে সহপাঠি, বন্ধু বা যে কোন ভাই সম্পর্কের মেয়েকে বিয়ে করাটা একটা নিন্দনীয় কাজ বলে প্রচলিত ছিল। আবুবকর (রাঃ) ছিলেন রাসূল (ছাঃ)-এর একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, দ্বীনী ভাই, ও সহচর। সুতরাং তাঁর মেয়ের বিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে হ’তে পারে না। কিন্তু অন্ধকুসংস্কারের এই প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলার জন্য স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে তিনি (ছাঃ) আয়েশা (রঃ)-কে বিয়ে করেন।

যার ফলাফলে পরবর্তীতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ দারুণভাবে উপকৃত হয়। দ্বীনের সঠিক ব্যাখ্যা, হাদীছ বর্ণনা, ত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত গোটা মানবজাতিকে তথা বিশ্ব নারী সম্প্রদায়কে চিরকৃতজ্ঞভরে স্মরণ করতে হবে। ইসলামের ইতিহাসে নারীদের মধ্যে আয়েশা (রাঃ) ২২১০ টি অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তাঁর কাছে ১২ হাযার শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ইমাম যুহরী বলেন, সকল পুরুষ এবং সকল উম্মুল মুমিনীনের ইলম একত্রে করা হ’লেও আয়েশা (রাঃ)-এর ইলম হবে তাঁদের সবার চেয়ে বেশি। শুধু তাই নয়, আয়েশা (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর বিপদে-আপদে, সাহস জোগানো, খেদমত, সাধারণ মানুষের সমাজ কল্যাণমূলক অবদান, নানা ত্যাগ-তিতীক্ষা বিশেষ করে যৌবনপ্রাপ্ত হয়েও যে ত্যাগ রেখেছেন; এখনকার কেন, ক্বিয়ামত পর্যন্ত এমন নযীর আর মিলবে না। এছাড়া তিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত নারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। অথচ প্রগতিবাদীরা এ বিয়েকে হাস্যকর এবং বেমানান বলে উল্লেখ করেন এবং এমর্মে ছেলে-মেয়েদেরকে অল্প বয়সে বিয়ে দিতে শুধু নিষেধ নয়; যদি কেউ তা করে তাদের জেল-জরিমানা এমনকি পিতা-মাতাকেও শাস্তি পেতে হবে মর্মে আইন করেছে। অথচ যা সম্পূর্ণ ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক।

আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী ছেলের বয়স কমপক্ষে ২১ এবং মেয়ের বয়স ১৮ বছর হতে হবে। সম্প্রতি সরকার বাল্য বিয়ে রোধকল্পে ছেলে-মেয়েদের বিশেষ করে মেয়েদের ১৮-১৬ বছর করতে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কিছু পাশ্চাত্যপন্থী ও তথাকথিত নারীবাদীদের বিরোধীতার কারণে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বরং এখন সরকার মেয়ের বয়স ১৮-২০ বছর করতে চাচ্ছে। কিন্তু যেটাই হোক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কারণ এর অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। সরকার চাচ্ছেন জনসংখ্যা কমাতে। নারীদের মান স্ট্যান্ডার্ট রাখতে, মেয়েদের কেবল ২/৩ বছর বিয়ের বয়স বাড়ায়, কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয়। বরং এর হিতে বিপরীত হচ্ছে। পারিবারিক এবং সামাজিক ভাবে যেনা-ব্যভিচার বৃদ্ধি, বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য, নারী হত্যা-গুমসহ নারীজনিত নানা প্রকারের অপরাধ ভয়ংকরভাবে বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্ব ব্যবস্থার দিকে তাকালে দেখতে পাব এর একটি চিত্র। বর্তমানে বিশ্বে প্রতি বছর দেড়কোটি বাল্য বিবাহ হয়। স্ত্রী নির্যাতন করে ৬০ শতাংশ ভারতীয়। বিয়ে হল আল্লাহ প্রদত্ত বিধান। এর বিপরীতমুখী কোন পদক্ষেপ নিলে তার ফলাফল কখনও কল্যাণকর হতে পারে না, এটাই তার প্রমাণ। কিন্তু ইসলাম বলছে ছেলে-মেয়ে বালেগ-বালেগা হ’লেই বিয়ের ব্যবস্থা কর। যাতে তারা পবিত্র হ’তে পারে এবং পরস্পর নির্ভরশীল জীবন-যাপনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারে। একথা অসত্য নয় যে, একজন ছেলে-মেয়েকে বালেগ-বালেগা হয়ে অথবা ঈমানের সাথে থেকে ক্ষেত্র বিশেষে একটু বয়স হয়ে বিয়ে করাটাও ভাল। কারণ মেয়েদের অল্প বয়সে মা হলে তার নিজ স্বামীর খেদমতসহ সন্তানের লালন-পালনের অভিজ্ঞতার একটা ঘাটতি দেখা দিতে পারে। অথবা স্বাস্থ্য অসচেতনার কারণে শারীরিক অসুবিধা দেখা দিতে পারে। এজন্য শিক্ষিত সন্তানের জন্য প্রয়োজন শিক্ষিত স্বামী-স্ত্রী তথা পিতা-মাতা। অতএব উভয়ের শিক্ষা অর্জন করতে হবে। যা বিয়ের পরেও সম্ভব। যদি স্বামী-স্ত্রী শিক্ষিত হয়, তাহ’লে তাদের সন্তান মানুষ করার জন্য যেমন সহজ হয়; তেমনি একটি সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে দারুণ প্রভাব পড়ে। আর এটাই স্বাভাবিক। এ জন্য ইসলাম পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদেরও পৃথক অবস্থানে পর্দা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্বীনী শিক্ষাসহ অন্যান্য ভাল শিক্ষা দেওয়া যরূরী বলে ঘোষণা করেছে। তবে সহ শিক্ষা কখনো নয়। বলা বাহুল্য, পৃথকভাবে মেয়েদের শিক্ষা ব্যবস্থা ইতোমধ্যে আমাদের সমাজে চালু হয়ে গেছে। ইংল্যান্ডসহ পাশ্চাত্যের অনেক রাষ্ট্র এখন ছেলে-মেয়েদের পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার মাধ্যমে ভাল ফলাফল পাচ্ছে বলে তারা প্রকাশ করে।

বিশ্বের তথা অমুসলিম দেশের বিয়ে প্রথা, পরিবার ও সামাজিক ভঙ্গুর চিত্রের কথা না হয় বাদই দিলাম-আমাদের মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে তৎসংক্রান্তে নারী-নির্যাতন যে হারে বেড়েই চলেছে তা অত্যন্ত ভয়ংকর। আদালতের একটি সমীক্ষা দেখলেই বুঝা যাবে। সমীক্ষাতে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রীম কোর্টের হিসাব মতে, গত ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত দেশের বিচারাধীন নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার সংখ্যা ১ লাখ ৪৪ হাযার ৭৯৬টি। অথচ দেশে ৫৪টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল ও ১৮টি যেলা আদালতে চলতি বছরের মার্চ (২০১৫) পর্যন্ত ১ লাখ ৪৯ হাযার ২৬৫টি মামলা বিচারাধীন হয়েছে। সুপ্রীম কোর্টের হিসাবে দেখা যায়, প্রতি মাসে দেড় হাযার নতুন মামলা দায়ের হচ্ছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে।[24] এ সংক্রান্তে বাংলাদেশ হিউমান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী এ্যাডভোকেট এলিনা খান তার মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এজন্য তিনি বিচার পদ্ধতিকে দায়ী করতে চেয়েছেন।

সুধী পাঠক! বর্তমানে বিশ্বের ২য় মুসলিম প্রধান দেশ হয়েও এটি মুসলিমদের জন্য কতই না বড় অপবাদ? আর এর জন্য মূলত দায়ী কুরআন-ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক জীবন-যাপন না করা। বিয়ে-সাদী, পরিবার গঠন, বিচার-আচার সবকিছু ইসলামী বিধান মতে পরিচালিত না হওয়া। যতদিন নগ্ন সংস্কৃতি তথা ছেলে-মেয়েদেরকে বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে স্বচ্ছ-সুন্দর ইসলামী সংস্কৃতিতে না আনা যাবে এবং বেকার ও দরিদ্রতা দূর না করা যাবে, আল্লাহভীতি আনা না যাবে ততদিন এ থেকে উত্তরণের কোন পথ নেই। এটাই বাস্তবতা।

স্ত্রীর সাথে সদাচরণ :

কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সমূহে বহু বর্ণনা এসেছে স্ত্রীদের সাথে স্বামীরা কিরূপ ব্যবহার করবে। এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘যে আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন আপন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর তোমরা নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে এবং সবচেয়ে বাঁকা হচ্ছে পাঁজরের ওপরের হাড়। যদি তা সোজা করতে যাও, তাহ’লে ভেঙ্গে যাবে। আর যদি যেভাবে আছে সেভাবে রেখে দিতে চাও তাহ’লে বাঁকাই থাকবে। অতএব তোমাদের উচিত হবে নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার জন্য’। মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘আর যদি তোমরা তাদের থেকে ফায়দা উঠাতে চাও তাহ’লে বাঁকা থাকাবস্থায় তাদের থেকে উপভোগ নিতে থাকবে। আর যদি সোজা করতে চাও তাহ’লে তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর ভেঙ্গে ফেলার অর্থ ত্বালাক্ব দেয়া’।[25] অন্যত্র স্ত্রীকে স্বামীর সাথে সদাচরণ ও স্বামীর অধিকার এর ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন- আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্নিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যদি কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে তার সঙ্গে একই বিছানায় শোয়ার জন্য ডাকে, আর সে আসতে অস্বীকার করে, তাহ’লে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতাগণ ঐ মহিলার উপর লা‘নত বর্ষণ করতে থাকে’। ছহীহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, ‘আসমানে অবস্থানকারী ফেরেশতাগণ তার ওপর অসন্তুষ্ট থাকে, যতক্ষণ না তার স্বামী তার ওপর সন্তুষ্ট হয়।[26]

অতএব উপরিউক্ত সার্বিক বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য ইসলামে নর-নারীর যে বিয়ে, বিয়ের অনুমতি, স্বাধীনতা বা পরস্পর মতামত, স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর কর্তব্য প্রভৃতি দিক বিদ্যমান রয়েছে তা জাতিসংঘ সর্বজনীন মানবাধিকার সনদের ত্রচটিযুক্ত দিক-নির্দেশনার আর প্রয়োজন পড়ে না। কেননা ইসলামই একমাত্র সর্বজনীন জীবন-ব্যবস্থা। এখানেই মওজুদ রয়েছে সকল সমস্যার একমাত্র সুষ্ঠু সমাধান। সুতরাং বিয়ের নামে নিকৃষ্ট অবাধ মেলামেশা, লিভটুগেদার, সমকামিতা সহ নানা অশ্লীল যৌনাচার দিয়ে বিশ্বকে যেভাবে কলুষিত করা হচ্ছে তা অচিরেই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। নইলে আল্লাহর গযব থেকে আমরা কেউই বাঁচতে পারব না। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন-আমীন!!

মূল লেখা: মানবাধিকার ও ইসলাম

লেখক: শামসুল আলম


 

[1] Dr. Borhan Uddin Khan, Fifty Years of the Universal Declarration of Human Rights, IDHRB, Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs, Dhaka : 10 December, 1998, p. 202.

[2] মাসিক রিযওয়ান, লাহোর; পরিবার ও পারিবারিক জীবন, প্রকাশক : মোস্তফা আমীনুল হুসাইন, ঢাকা, জুলাই ১৯৯৬, পৃঃ ৩৫২-৩৫৩।

[3] দৈনিক ইনকিলাব, ৫ এপ্রিল, ২০০৮, পৃ. ১৪।

[4] ডাঃ জাকির নায়েক, ইসলামের উপর ৪০টি অভিযোগ ও তার দলীল ভিক্তিক জবাব, পিস পাবলিকেশন্স, পৃঃ ৩২।

[5] পরিবার ও পারিবারিক জীবন, ইসলামিক সেন্টার, পৃঃ ৭৪।

[6] জাকির নায়েক লেকচার সিরিজ-৪, পিস পাবলিকেশন্স, মার্চ-২০০৯, পৃঃ ৭০।

[7] সমঅধিকার নয় মর্যাদা চাই, পৃঃ ০৯।

[8] ইসলামী আইন ও বিচার (ঢাকা : বাংলাদেশ ইসলামিক ল’ রিসার্চ এ্যান্ড লিগাল এইড সেন্টার, মার্চ ২০১৪), পৃঃ ৩১ ।

[9] পারিবারিক আইনে বাংলাদেশের নারী (ঢাকা : আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ৩য় সংস্করণ, ডিসেম্বর ২০১৩), পৃঃ ৭।

[10] আলাউদ্দীন হাসকাফী, আদ-দুররচল মুখতার (বৈরচত : দারচল ফিকর, ২য় সংস্করণ ১৪১২ হিঃ/১৯৮৩ খ্রীঃ), পৃঃ ৩-৪; ইসলামী আইন ও বিচার, পৃঃ ৩২।

[11] আহমাদ, তিরমিযী, শারহুস সুন্নাহ, মিশকাত হা/৩১৩০,৩১।

[12] বুখারী হা/৫১৩৬।

[13] বুখারী (ব্যাখ্যা) তাওহীদ প্রকাশনী, পৃঃ ৪৫।

[14] তাহক্বীক্ব বুলূগুল মারাম হা/৯৭১, বুখারী, মুসলিম প্রভৃতি।

[15] বুখারী হা/৫০৬৬।

[16] বুখারী হা/৬১৯৮।

[17] বুখারী হা/৫১৩৮।

[18] বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৬, ‘বিবাহ’ অধ্যায়, ‘ওয়ালী ও নারীর অনুমতি’ অনুচ্ছেদ।

[19] বুখারী হা/৫১৬৪।

[20] বুখারী হা/৫০৮৬।

[21] বুখারী হা/৫০৮৩।

[22] বুখারী হা/৫০৮১।

[23] বস্তারিত দ্র. সীরাতুর রাসূল (ছাঃ), ২য় সংস্করণ, পৃঃ ৭৭।

[24] দৈনিক কালেরকণ্ঠ, ২৬ নভেম্বর ২০১৫, বর্ষ-৬, সংখ্যা-৩১১, কলাম ৮, পৃঃ ২০।

[25] তাহক্বীক্ব বুলূগুল মারাম হা/১০১৫ (তাওঃ প্রঃ); বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আহমাদ, দারেমী প্রভৃতি।

[26] তাহক্বীক্ব বুলূগুল মারাম হা/১০২১ (তাওঃ প্রঃ); বুখারী, মুসলিম, আবুদাঊদ, আহমাদ প্রভৃতি।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button