অধিকার ও মর্যাদা

আলেমের মর্যাদা

নবী-রাসূলগণের ওয়ারিছ হিসাবে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাবান মানুষ আলেমগণ। কারণ যারা প্রকৃত আলেম তারা আল্লাহর বড়ত্ব ও মর্যাদাকে অধিক উপলব্ধি করেন এবং মূল্যায়ন করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘বান্দাদের মধ্যে কেবল আলেমগণই আল্লাহকে ভয় করে’ (আল-ফাত্বির : ২৮)। সেজন্য আল্লাহ আলেমদেরকে অনেক মর্যাদা দিয়েছেন (আল-মুজাদালা : ১১)। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে তারাই সর্বশ্রেষ্ঠ যারা কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়’। অন্য হাদীছে বলেন, ‘আলেমদের মর্যাদা সাধারণ মানুষের উপর অনুরূপ, যেমন চন্দ্রের মর্যাদা সমস্ত তারকার উপর। অন্যত্র বলেন, ‘আলেমের মর্যাদা অন্যদের তুলনায় অনুরূপ, যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের নিম্নতর ব্যক্তির উপর’

রাসূল (ﷺ) আরো বলেন, আল্লাহ তা‘আলা, ফেরেশতাগণ, আসমান ও যমীনের অধিবাসীরা, এমনকি গর্তের পিপীলিকা ও মাছও তাদের জন্য দু‘আ করে এবং ক্ষমা চায়। আলেমদের জন্য জান্নাতে যাওয়া খুবই সহজ। তাই ফেরেশতামণ্ডলী তাদের সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। তারা মারা গেলেও তাদের ইলমের নেকী অব্যাহত থাকে। মূলকথা আলেমগণই উম্মাহর কর্ণধার। আল্লাহ বলেন, তারা মহান রবের পক্ষ থেকে দ্বীনের যিম্বাদার (সূরা আল-আম্বিয়া : ৭; সূরা আন-নাহল : ৪৩)। নবী করীম (ﷺ) বলেন, আলেমগণ নবীদের ওয়ারিছ কেননা তারাই তো আমাদের কাছে নবীর মীরাছ দ্বীনের ইলমকে নিয়ে এসেছেন। অন্য হাদীছে এসেছে, যারা আলেমদের সম্মান করে না, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

চরম অজ্ঞতার কারণে ভূইফোঁড় নাস্তিকরা আলেমদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে থাকে। নাপাক রসদের আশায় ইসলামের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে তারা বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে থাকে। তারা মস্তিষ্ক বিক্রি করে জীবনযাপন করে। এই বুদ্ধিপ্রতিবন্দীরা ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানে না। অযথা আলেমদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেয়। সমাজের লোকেরা তাদেরকে বিশ্বাস করে না, তাদের ডাকে সাড়া দেয় না, বরং তাদেরকে চরম ঘৃণা করে। তাই তারা ইসলামী সম্মেলন, ঈদগাহ, জানাযা, জুম‘আকে টার্গেট করেছে এবং এ সমস্ত ইসলামী আয়োজনকে মিথ্যা কথা বলার মঞ্চ বানিয়ে নিয়েছে। এরা সব বকধার্মিক। এরা পরিকল্পিতভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে যারা শিক্ষাখাতের সাথে জড়িত তারা ইতিমধ্যেই শিক্ষা থেকে ইসলামকে বিদায় করেছে, বিজাতীয় শিক্ষা ও নাস্তিক্যবাদ দিয়ে ভর্তি করে দিয়েছে।

যে সমস্ত মূর্খ নাস্তিক প্রশাসনের সাথে জড়িত তারা মাদরাসা, মসজিদ ও ইসলামী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক আচরণ করে, আলেমদেরকে অযথা হেনস্তা করে। ইসলামের বিরুদ্ধে চরম কুৎসা রটনা করে সর্বত্র ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। যারা সংস্কৃতির সাথে জড়িত তারা ইসলামী সংস্কৃতিকে কলঙ্কিত করছে এবং জাহেলী অপসংস্কৃতি দিয়ে কালিমা লেপন করছে। ইসলামের বিরুদ্ধে তারা নাটক, সিনেমা, উপন্যাস এবং বিভিন্ন অসভ্য অনুষ্ঠান করে অনেক নীচে নেমেছে। এর কুপ্রভাবেই উচ্চশ্রেণীর লোকেরা সন্তানদেরকে মাদরাসায় ভর্তি করতে চায় না এবং আলেমদেরকে সব সময় ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে।

এতকিছুর পরও যখন ইসলামের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা যাচ্ছে না তখন তারা সমাজের কর্ণধার আলেম সমাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। আলেমদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা, উদ্ভট তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা, মামলা দিয়ে হয়রানি করা, কণ্ঠরুদ্ধ করার জন্য জেলে বন্দি করা এবং লোমহর্ষক অত্যাচার করা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। কারণ আলেমদের মুখ বন্ধ করতে পারলে ইসলামের প্রচার বন্ধ হবে। দ্বীনের দাঈদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝাতে পারলে জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। এভাবে ইসলামও বিদায় নিবে। এ সমস্ত অসার কল্পনায় তারা বিভোর।

মনে রাখা আবশ্যক যে, কুরআন-সুন্নাহর এলাহী জ্ঞানেই পৃথিবী আলোকিত হয়েছে, বিজ্ঞানময় রূপ নিয়েছে, আধুনিকতার লকব পেয়েছে। কুরআন-সুন্নাহর বিষদ জ্ঞানের ব্যাখ্যা দেয়াসহ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের দ্বার আলেমগণই উন্মোচন করেছেন। দ্বীনের দাওয়াতের পাশাপাশি জ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র তারাই পৃথিবীর সর্বত্র পৌঁছে দিয়েছেন। শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদের ময়দানে বীরত্ব প্রদর্শন করেছেন এবং জান-মাল সবই বিলিয়ে দিয়েছেন। উপমহাদেশে ইংরেজ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে আলেমগণই নেতৃত্ব দান করেছেন এবং বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি, আন্দোলন-সংগ্রাম, সমাজসেবাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই আলেমদের অবদান অবিস্মরণীয়। তাদের সেবা পদপদবির জন্য নয়, মেয়াদের সাথেও সম্পৃক্ত নয়, বরং অবিরাম, চিরন্তন। তাই যারা এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করে তারা মানুষের পরিচয় বহন করে না। তারা সমাজের আবর্জনা। তারা দেশ-জাতির জন্য ঘাতক ভাইরাসের মত। তাদের সতর্ক হওয়া উচিত যে, যারা আলেমদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে তাদের পরিণতি কোনদিনই ভাল হয়নি। তাদের অপমান-অপদস্ত করার পরিণাম খুবই ভয়াবহ। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহ.) বলেন, ‘আলেমদের গোশত বিষক্রিয়ার মত। যে শুঁকে সে মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, আর যে খায় সে মারা যায়’।১০ যাদেরকে আল্লাহ সম্মান দিয়েছেন তাদেরকে অসম্মান করলে আল্লাহ বরদাশত করেন না। এটা আল্লাহ্র সাথে যুদ্ধে নামার শামিল। এজন্য আল্লাহ্র পক্ষ থেকে গযব নাযিল হওয়ার ইতিহাস বহু আছে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, নিত্যনতুন রোগ-ব্যাধি, বালা-মুছীবত, দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষ নাযিল করে আল্লাহ বহু জাতিকে নাস্তানাবুদ করে দিয়েছেন।

অতএব আলেমদের মর্যাদা রক্ষার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহলকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। স্বার্থান্বেষী মহলের উস্কানিতে যেন কোন হক্বপন্থী আলেম হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং বন্দি আলেমদের নিঃশর্ত মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে উলামায়ে কেরামকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ধৈর্য সহকারে হিকমতের সাথে জাতিকে সাবধান করতে হবে এবং তাওহীদ ও সুন্নাতের প্রচার-প্রসারে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিকে মযবুত করতে হবে। ইনশাআল্লাহ অচিরেই আমাদের এই দেশ তাওহীদের উর্বর ভূমিতে পরিণত হবে।


১. ছহীহ বুখারী, হা/৫০২৭; মিশকাত, হা/২১০৯
২. আবূ দাঊদ, হা/৩৬৪১, সনদ হাসান
৩. তিরমিযী, হা/২৬৮৫, সনদ হাসান
৪. তিরমিযী, হা/২৬৮৫; সনদ ছহীহ
৫. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৯৯
৬. আবূ দাঊদ, হা/৩৬৪১; সনদ ছহীহ
৭. ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৩১
৮. আবূ দাঊদ, হা/৩৬৪১, সনদ ছহীহ; তিরমিযী হা/২৬৮২, সনদ হাসান
৯. ছহীহুল জামে‘, হা/৫৪৪৩, সনদ হাসান
১০. আল-মাজমূঊ, ১/৫৮৯ পৃ.

উৎস: মাসিক আল-ইখলাছ

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button