দাওয়াত ও জিহাদ

মুসলিমদের মধ্যে পরস্পরে যুদ্ধ নিষিদ্ধ

মুসলমানদের পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা নিষিদ্ধ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সকল মুসলমানের পরস্পরের জন্য তিনটি বস্ত্ত হারাম। তার রক্ত, তার মাল ও তার ইযযত’।[1] কিন্তু এরপরেও মুসলমান বিভিন্ন কারণে পরস্পরের যুদ্ধ করে থাকে। এতে অত্যাচারী পক্ষ কবীরা গোনাহগার হ’লেও সে ইসলামের গন্ডী থেকে বহিস্কৃত হয় না। উমাইয়া যুগে খলীফা আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান (৬৫-৮৬ হিঃ) ও আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ)-এর মধ্যে ৭৩ হিজরীতে যখন মক্কায় যুদ্ধ হয়, তখন লোকদের প্রশ্নের উত্তরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, ‘আমাকে যুদ্ধ থেকে বিরত রেখেছে এ বিষয়টি যে, আল্লাহ আমার উপর আমার ভাইয়ের রক্ত হারাম করেছেন’। লোকেরা বলল, আল্লাহ কি বলেননি, ‘তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না ফিৎনা অবশিষ্ট থাকে এবং দ্বীন সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ্র জন্য হয়ে যায়’ (বাক্বারাহ ২/১৯৩)। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করেছি যাতে ফিৎনা (শিরক ও কুফর) না থাকে এবং দ্বীন পূর্ণরূপে আল্লাহ্র জন্য হয়ে যায়। আর তোমরা যুদ্ধ করছ যাতে ফিৎনা (বিপর্যয়) সৃষ্টি হয় এবং দ্বীন আল্লাহ ব্যতীত অন্যের (শত্রুর) জন্য হয়ে যায়’।[2] তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘তুমি কি জানো ফিৎনা কি? মুহাম্মাদ (ছাঃ) যুদ্ধ করতেন মুশরিকদের বিরুদ্ধে। আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধটাই ছিল ফিৎনা। তোমাদের মত শাসন ক্ষমতা লাভের জন্য যুদ্ধ নয়।[3] ইবনু হাজার বলেন, এখানে প্রশ্নকারী ব্যক্তি শাসকের বিরুদ্ধে উত্থানকারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বৈধ মনে করত। পক্ষান্তরে ইবনু ওমর (রাঃ) এটাকে রাজনৈতিক বিষয়ভুক্ত মনে করতেন’।[4] অর্থাৎ তিনি কাফির ও মুশরিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সিদ্ধ মনে করতেন। কিন্তু মুসলিমের বিরুদ্ধে নয়।

উল্লেখ্য যে, ‘ক্ষমতা দখলের লড়াইকে ফিৎনা বলা হয়। বিদ্রোহীকে অনুগত করার লড়াইকে নয়। এটাই হ’ল জমহূর বিদ্বানগণের মত’।[5]

বর্তমানে সরকারী ও বিরোধীদলীয় হিংসা ও প্রতিহিংসার রক্তক্ষয়ী রাজনীতির যুগে উপরের হাদীছটি ছাড়াও আবু বাকরাহ (রাঃ) বর্ণিত রাসূল (ছাঃ)-এর অত্র হাদীছটি স্মরণীয়। যেখানে তিনি বলেন, সত্বর ফেৎনাসমূহের উদ্ভব হবে। সে সময় বসা ব্যক্তি হাঁটা ব্যক্তির চেয়ে এবং হাঁটা ব্যক্তি দৌড়ানো ব্যক্তির চেয়ে উত্তম হবে। সে সময় তোমরা তোমাদের উট, ছাগপাল বা জমি-জমা নিয়ে থাক। অথবা পাথরে আঘাত করে তরবারি ভেঙ্গে দিয়ে ফিৎনার স্থান থেকে পালিয়ে বাঁচো। একথা তিনবার বলার পর তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের কাছে নির্দেশ পৌঁছেছি? অতঃপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে সময় যদি কেউ তোমাকে কোন একটি দলে প্রবেশে বাধ্য করে, অতঃপর তুমি কারু অস্ত্রাঘাতে নিহত হও, তাহ’লে ঐ ব্যক্তি তার ও তোমার পাপভার নিজে বহন করবে এবং সে জাহান্নামী হবে’।[6]

উক্ত হাদীছ জানার পর নেতারা সাবধান হবেন কি? তারা কি তাদের কারণে নিহত বা নির্যাতিত কর্মীদের পাপভার ক্বিয়ামতের দিন নিজেদের কাঁধে নিতে রাযী আছেন? নাকি ‘মরলে শহীদ বাঁচলে গাযী’ বলে নিজেদের ছেলেদের বাদ দিয়ে অন্যদের ছেলেকে রক্তক্ষয়ী রাজনীতির মধ্যে ঠেলে দিবেন?


[1] মুসলিম হা/২৫৬৪; মিশকাত হা/৪৯৫৯, ‘শিষ্টাচার সমূহ’ অধ্যায়, ১৫ অনুচ্ছেদ।

[2] বুখারী হা/৪৫১৩।

[3] বুখারী হা/৪৬৫১; ৭০৯৫।

[4] ফাৎহুল বারী হা/৪৬৫০-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ।

[5] ফাৎহুল বারী হা/৭০৯৫-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ, ‘ফিৎনাসমূহ’ অধ্যায়, ১৩/৫১ পৃঃ।

[6] মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩৮৫ ‘ফিৎনা সমূহ’ অধ্যায়।

মন্তব্য করুন

Back to top button