দাওয়াত ও জিহাদ

আল্লাহর পথে যত পরীক্ষা

দাওয়াতী যিন্দেগী কন্টকাকীণ, কুসুমাস্তীর্ণ নয়। আল্লাহর পথে দাওয়াতী কর্মকান্ড বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত ও পরীক্ষিত হয়। নদীর স্রোতের মতই বয়ে চলে স্থির লক্ষ্যপথে। কখনো তা লঘু বাধার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় বা প্রচন্ড বাধার পাহাড় মাড়ায়।  যত বড় বাধা বা পরীক্ষা তত বড় পুরস্কার।

আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা পরীক্ষাকেন্দ্র দুনিয়াকে পরস্পর পরস্পরকে অর্থাৎ রাসূলগণ স্ব স্ব কওম আবার কওম স্ব স্ব রাসূল, বিচারকগণ তাদের বিচারপ্রার্থী আবার বিচারপ্রার্থীগণ তাদের বিচারকমন্ডলী, শক্তিশালী দুর্বল ও দুর্বলারা শক্তিশালী, বড় লোকরা গরীব আবার গরীবরা বড় লোক, সুস্থতা দিয়ে সুস্থকে, অসুস্থতা দিয়ে অসুস্থকে, কৃষককে তার শস্য দিয়ে, ব্যবসায়ীকে তার ব্যবসা দিয়ে ও পণ্য উৎপাদনকারীকে তার পণ্য দিয়ে পরীক্ষার উপলক্ষ্য বানিয়েছেন। প্রত্যক ব্যক্তি তার দ্বীনী সক্ষমতানুযায়ী পরীক্ষিত হবে। ঈমানী জযবা যার যত বেশী শক্তিশালী এই দুনিয়ায় সে তত বেশী পরীক্ষিত হবে এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ব্যক্তিরা তাদের রবের পক্ষ থেকে পূর্ণ প্রতিদান পাবে।

মানুষকে আল্লাহ জ্ঞান শক্তি দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। সে তার জ্ঞানের আলোকে পথভ্রষ্টদেরকে আল্লাহর পথে আহবান করে এবং এটাই তার কর্তব্য। সাথে সাথে অভিশপ্ত ইবলীসকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন কেবলমাত্র তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করার জন্য। যে বান্দা যত বেশী আল্লাহভীরু সে তত বেশী শয়তানের খপ্পরে পড়বে এবং বিভিন্ন কৌশলে পরীক্ষিত হবে। তবে আল্লাহর প্রকৃত মুমিন বান্দাদের ইবলীস ও তার সঙ্গী-সাথীরা কোনরূপ ক্ষতি সাধন করতে পারবে না বরং এই পরীক্ষাই হবে তাদর ঈমান বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। নিম্নে আল্লাহর পথে দাওয়াত ও  এই পথে বিভিন্ন পরীক্ষার স্বরূপ আলাচনা করা হ’ল।

আল্লাহর পথে দাওয়াত ও পরীক্ষা :

আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ نُطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا ‘আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি (পিতা-মাতার) মিশ্রিত শুক্রবিন্দু হ’তে, তাকে পরীক্ষা করার জন্য। অতঃপর আমরা তাকে করেছি শ্রবণশক্তিসম্পন্ন ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন’ (দাহর৭৬/২)। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ-الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ

‘বরকতময় তিনি, যাঁর হাতে সকল রাজত্ব এবং তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য, কে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সুন্দর আমল করে। আর তিনি মহা পরাক্রান্ত ও ক্ষমাশীল’ (মুলক ৬৭ /২)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,

إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْأَرْضِ زِينَةً لَهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا-

‘ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবকিছুকে আমরা তার শোভা বর্ধনকারী হিসাবে সৃষ্টি করেছি যাতে আমরা মানুষের পরীক্ষা নিতে পারি, তাদের মধ্যে কে সুন্দরতম কাজ করে’ (কাহফ ১৮/৭)

আর এসকল পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্যে হ’ল ভাল-মন্দের সংমিশ্রণ থেকে সর্বোত্তম ব্যক্তি তথা মুমিনদেরকে চিহৃিত করা এবং তাদের মাধ্যমে দুনিয়াতে চলমান এলাহী আন্দোলনের গতি বৃদ্ধি করা। ইতিপূর্বে নবী-রাসূল সহ যে সকল মহাপুরুষরাই এ পথে পা বাড়িয়েছেন তাদের সবার উপরই নেমে এসেছিল অমানবিক নির্যাতন। দাওয়াতের পরিমাণ যতই বাড়তে থাকে শাস্তির মাত্রা আরও কঠিনতর হতে থাকে। যেমন রাসূল (ছাঃ) নবুঅতী জীবনের পূর্বে হেরাগুহায় ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। আরবের লোকেরা তাঁর সত্যাবাদিতার জন্য তাকে ‘আল-আমীন’ বলে ডাকত। কিন্তু যখনই তিনি দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন, তখন থেকেই তার বিরুদ্ধে সকল চক্রান্তের দুয়ার উন্মক্ত হ’ল। ‘আল-আমীন’র বদলে তারা তাকে যাদুকর, পাগল, মিথ্যাবাদী, গণক ইত্যাদি নামে ডাকত শুরু করল। ভালবাসা ও স্নেহের বদলে ঘৃণা ও অবজ্ঞার চোখে দেখতে থাকল। এমনকি তাঁর মুহাম্মাদ (প্রশংসিত) এর বিকৃতি করে তারা তাকে মুযাম্মাম (নিন্দিত) নামে ডাকতে শুরু করল। কয়েক দিনের মধ্যে আপনজনরাই হয়ে গেল সবচেয়ে বড় শত্রু। এ যেন এক অগ্নি পরীক্ষা কিন্তু আল্লাহর ভালবাসা কখনোই তাকে ছেড়ে দেয়নি। বস্ত্ততঃ মুমিনরাই আল্লাহর ভালবাসা পাওয়ার সবচেয়ে বড় হক্বদার। আর এ কারনেই আল্লাহ তা‘আলা দাওয়াতের মতো সর্বোত্তম ও কঠিন কাজটি তাদের মাধ্যমে করিয়ে নেন। কেননা আল্লাহ যাকে যত বেশী ভালবাসা তাকে তত বেশী পরীক্ষায় ফেলেন। যেমন হাদীছে বর্ণিত হয়েছে عن أنس قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلاَءِ وَإِنَّ اللَّهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلاَهُمْ فَمَنْ رَضِىَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ-

আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, বিপদ যত মারাত্মক হবে, প্রতিদানও তত মহান হবে। আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন জাতিকে ভালবাসেন তখন তাদেরকে (বিপদে ফেলে) পরীক্ষা করেন। যে লোক তাতে (বিপদে) সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য (আল্লাহর তা‘আলার) সন্তুষ্টি বিদ্যমান। আর যে লোক তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য (আল্লাহর তা‘আলার) অসন্তুষ্টি বিদ্যমান’।[1]

হাদীছে এসেছে,

عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَىُّ النَّاسِ أَشَدُّ بَلاَءً قَالَ الأَنْبِيَاءُ ثُمَّ الأَمْثَلُ فَالأَمْثَلُ فَيُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ فَإِنْ كَانَ دِينُهُ صُلْبًا اشْتَدَّ بَلاَؤُهُ وَإِنْ كَانَ فِى دِينِهِ رِقَّةٌ ابْتُلِىَ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ فَمَا يَبْرَحُ الْبَلاَءُ بِالْعَبْدِ حَتَّى يَتْرُكَهُ يَمْشِى عَلَى الأَرْضِ مَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ-

মুছ‘আব ইবনু সা‘দ (রাহঃ) হ’তে তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি (সা‘দ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! মানুষের মাঝে কার বিপদের পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়? তিনি বললেন, নবীদের বিপদের পরীক্ষা, তারপর যারা নেককার তাদের বিপদের পরীক্ষা। এরপর যারা নেককার তাদের বিপদের পরীক্ষা। মানুষকে তার ধর্মানুরাগের অনুপাত অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। তুলনামূলকভাবে যে লোক বেশী ধার্মিক তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। আর যদি কেউ তার দ্বীনের  ক্ষে ত্রে শিথিল হয়ে থাকে তাহ’লে তাকে সে মোতাবেক পরীক্ষা করা হয়। অতএব, বান্দার উপর বিপদাপদ লেগেই থাকে, অবশেষে তা তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেয় যে, সে যমীনে চলাফেরা করে অথচ তার কোন গুনাহই থাকে না’।[2]

ঈমানদার ব্যক্তিদের জন্য দুনিয়াতে পরীক্ষায় পড়া অবশম্ভবী বিষয়। আল্লাহ প্রদত্ত পরীক্ষায়  তারা পতিত হবেই। আর এ পরীক্ষায়  মাধ্যমে তিনি ঈমানদারদের ঈমানকে আরও মযবুত জোরদার ও শক্তিশালী কারেন। যেমনিভাবে  একটি স্বর্ণখন্ড দিয় যখন কান জিনিস তৈরী করার ইচ্ছা হয়। তখন সেটাকে ভালভাবে আগুণে পুড়িয়ে নিতে হয়। তাহ’লেই এটার দ্বারা যে কোন কঠিন জিনিস সমূহ বানানো সম্ভব। তাই দাঈদেরকে আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্ন কঠিন পরীক্ষায় মাধ্যমে দাওয়াতী কাজের জন্যে তাদের অন্তরকে পরিপূর্ণভাবে প্রস্ত্তত করে নেন।

দাঈর মর্যাদা :

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,  وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ  ‘ঐ ব্যক্তির চাইতে কথায় উত্তম আর কে আছে, যে (মানুষকে) আল্লাহর দিকে ডাকে ও নিজে সৎকর্ম করে এবং বলে যে, নিশ্চয়ই আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত’ (হামীম সাজদাহ ৪১ /৩৩)। আলোচ্য আয়াতে দাঈদের মর্যাদার একটি দিক তুলে ধরা হয়েছে। তারা সব সময় উত্তমভাষী হয়। এছাড়াও দায়ী দাওয়াত অনুযায়ী আমলকারী ব্যক্তির সমপরিমাণ ছওয়াব পায়। যেমন হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا-  ‘যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান ছওয়াব পাবে, অথচ অনুসরণকারীর ছওয়াব কমানো হবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান পাপে জর্জরিত হবে, তার অনুসারীর পাপ মোটেও কমানো হবে না’।[3]

অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ. ‘কল্যাণের পথ প্রদর্শনকারী ব্যক্তি কল্যাণকারীর ন্যায় নেকীর অধিকারী হবে’।[4]

আল্লাহ পথে দাওয়াত ও পরীক্ষার ধরন : পূর্বের আলোচনা থেকেই আমরা জানতে পেরেছি যে, আল্লাহর পথের দাঈদেরকে জীবন ব্যাপী কঠিন সংগ্রাম করতে হয়। বিভিন্ন সময়ে আল্লাহ তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নেন। নিম্নে এধরনের পরীক্ষার কিছু নমুনা উল্লেখ করা হ’ল।

(ক) ক্ষুধা : ক্ষুধার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন। পেটে যখন ক্ষুধা অনুভূত হয় তখন কোন কাজেই মন বসে না। ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। দ’ুচোখে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে। আল্লাহর কঠিন পরীক্ষায় কেবল মুমিনরাই উত্তীর্ণ হ’তে পারে। রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণ অগণিত দিন ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করেছেন। এমনকি খন্দক যুদ্ধের দিন স্বয়ং রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীরা ক্ষুধার তাড়নায় পেটে পাথর বেঁধে মাটি খনন করেছিলেন। এত কষ্টের পরও তারা আল্লাহর দাওয়াত হ’তে পিছপা হননি। হাদীছে এসছে,

আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) খন্দকের দিন বের হ’লেন, হিম শীতল সকালে আনছার ও মুহাজিররা পরিখা খনন করেছেন, আর তাদের এ কাজে করার জন্য তাদের কোন গোলাম ছিলনা। যখন তিনি তাদের দেখতে পেলেন যে, তারা কষ্ট এবং ক্ষুধায় আক্রান্ত, তখন বললেন, হে আল্লাহ! সত্যিকারের আয়েশ হচ্ছে আখেরাতের আয়েশ। তুমি আনছার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দাও। এর উত্তরে তারা  বলে উঠেন, আমরা তারাই যারা মুহাম্মাদের হাতে বায়‘আত করেছি জিহাদের, যদ্দিন আমারা বেঁচে আছি’।[5] হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ يَوْمٍ أَوْ لَيْلَةٍ فَإِذَا هُوَ بِأَبِى بَكْرٍ وَعُمَرَ فَقَالَ مَا أَخْرَجَكُمَا مِنْ بُيُوتِكُمَا هَذِهِ السَّاعَةَ. قَالاَ الْجُوعُ يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ  وَأَنَا وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لأَخْرَجَنِى الَّذِى أَخْرَجَكُمَا-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক দিন বা রাত্রের বেলায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বাইরে বের হয়েই আবু বকর ও ওমর (রাঃ)-কে দেখতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন কোন জিনিসে তোমাদের উভয়কে এই মুহূতে ঘর হ’তে বাইরে আসতে বাধ্য করেছে। তাঁরা উভয়ে বললেন, ক্ষুধায় তাড়না। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, সেই মহান সত্তার কসম যাহার হাতে আমার প্রাণ যেই জিনিসে তোমাদের দুইজনকে ঘর থেকে বের করেছে আমাকেও সেই জিনিসে বাইরে বের করেছে’।[6]

উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ)-এর শে‘আবে আবু ত্বালিবে তিন বছরের মর্মান্তিক কাহিনী মুমিন হৃদয়ে এখনো নাড়া দেয়।

(খ) ভয়ভীতি :

আল্লাহর পথে পরীক্ষার অন্যতম বিষয় হ’ল ভয়ভীতি । ভয়ভীতির মাধ্যমেও আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করেন। ভয় হ’তে পারে নিজ বাড়িতে, যুদ্ধক্ষেত্রে অথবা অন্য যে কোন স্থানে। হ’তে পারে সেটা শত্রুর ভয় বা অন্য কিছুর ভয়। মহান আল্লাহ বলেন,

فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ-

‘তোমরা ওদের ভয় করো না। বরং আমাকে ভয় কর, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও’ (আলে ইমরান ৩/১৭৫)

রাসূল (ছাঃ) মদীনায় আগমনের পরে এতই ভীত থাকতেন যে, রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারতেন না। হাদীছে এসেছে, আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, এক রাতে রাসূল (ছাঃ) জেগে রইলেন। পরে তিনি বললেন, যদি আমার ছাহাবীদের কোন নেককার লোক আজ রাতে আমার পাহারা দিত। হঠাৎ আমরা অস্ত্রের শব্দ শুনলাম। তখন তিনি বললেন, এ কে? বলা হ’ল, এ হচ্ছে সা‘দ, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে পাহারা দিতে এসেছি। তখন রাসূল (ছাঃ) ঘুমালেন, এমন কি আমরা তাঁর নাক ডাকার আওয়াজ শুনতে পেলাম’।[7]

শুধু রাসূল (ছাঃ) নয়। এমনকি ছাহাবীরা পর্যন্ত সারাক্ষণ ভীতিকর অবস্থার মধ্যে থাকতেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ قَتَادَةَ قَالَ سَمِعْتُ أَنَسًا يَقُولُ كَانَ فَزَعٌ بِالْمَدِينَةِ فَاسْتَعَارَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم فَرَسًا مِنْ أَبِى طَلْحَةَ يُقَالُ لَهُ الْمَنْدُوبُ ، فَرَكِبَ فَلَمَّا رَجَعَ قَالَ مَا رَأَيْنَا مِنْ شَىْءٍ ، وَإِنْ وَجَدْنَاهُ لَبَحْرًا-

হযরত ক্বাতাদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, মদীনায় একবার শক্রর আক্রমনের ভয় ছড়িয়ে পড়ল। নবী করীম (ছাঃ) তখন আবু তালহা (রাঃ)-এর নিকট হ’তে একটি ঘোড়া ধার নিলেন এবং তাতে সওয়ার হ’লেন। ঘোড়াটির নাম ছিল মানদূব। অতঃপর তিনি ঘোড়াটির টহল দিয়ে ফিরে এসে বললেন, কিছুই তো দেখতে পেলাম না, তবে এই ঘোড়াটিকে আমি সমুদ্রের তরঙ্গের মতো পেয়েছি’।[8]

(গ) ধন-সম্পদ কমে যাওয়া : ধন-সম্পদ কমে যাওয়া ও এক ধরনের পরীক্ষা। কেননা ধনী ব্যক্তিদের দ্বারাও ইসলাম প্রচারে অনেক উপকার সাধিত হয়। ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত ওছমান (রাঃ) আরবের সেরা ধনীদের একজন ছিলেন। অঢেল ধন-সম্পদের মালিক ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি তাঁর সমুদয় সম্পত্তি দ্বীনের দাওয়াতে ব্যয় করেন দেন। তাবূক যুদ্ধে তার অকল্পনীয় দানের কথা ইতিহাসেরে পাতায় স্বর্ণক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এমনকি  তিনি তাবুক যুদ্ধের রসদ যোগানদাতা হিসাবে ও খ্যাতি লাভ করেছিলন। অতএব যখনই মাল সম্পদের কমতি দেখা যাবে তখনই বুঝে নিতে হবে আল্লাহ কর্তৃক পরীক্ষা। রাসূল (ছাঃ) খাদীজা (রাঃ) বিয়ে করে তার সমস্ত সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিয়েছিলেন।  মহান আল্লাহ বলেন,

 وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِين-

‘আর অবশ্যই আমরা তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধন ও প্রাণের ক্ষতির মাধ্যমে এবং ফল-শস্যাদি বিনষ্টের মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও’ (বাক্বারাহ ২/১৫৫)।

 (ঘ) শরীরে রোগ-বালাই হওয়া ও সন্তান সন্তুতি না থাকা :

আল্লাহর পরীক্ষা কৌশলের অন্যতম একটি হ’ল বান্দার শরীরে রোগ বালাই হওয়া। এক্ষেত্রে বান্দা যদি তাঁর প্রতি বিরক্তবোধ কর তাহ’লে সে অকৃতজ্ঞদের দলভুক্ত হবে আর যদি সে ওটাকে আল্লাহর পরীক্ষা মনে করে ধৈর্যধারণ করে তাহ’লে সেই সর্বোত্তম। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا ، إِلاَّ كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ-

‘মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করেন’।[9] রাসূল (ছাঃ) অন্যত্র বলেন,

مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ-

‘আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ কামনা করেন তাকে তিনি দুঃখকষ্টে পতিত করেন’।[10]

সন্তান-সন্তুতি না থাকা বা না হওয়ায় ব্যাপারটিও  একটি কঠিন পরীক্ষা। আমাদের নবী হযরত আইয়ুব (আঃ)-এর অনেক ধন-সম্পদ, দাস-দাসী অনেক জমিজমা ছিল। এছাড়া আল্লাহ তাকে অনেক সন্তানও দান করেছিলেন। পরবর্তীতে আল্লাহ তাঁর ধন-সম্পদ, পুত্র-কন্যা সবই ছিনিয়ে নেন এবং তাকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলেন। এমনকি তাঁর শরীরে জটিল রোগ-বালাই দিয়ে দেন। যাতে তার শরীরের একটি অঙ্গও আক্রান্ত হ’তে বাদ ছিল না। কিন্তু হযরত আইয়ুব (আঃ) এই কঠিন বিপদ মুহূর্তেও ধৈর্য হারা হননি।  মহান আল্লাহ বলেন, وَأَيُّوبَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ- فَاسْتَجَبْنَا لَهُ فَكَشَفْنَا مَا بِهِ مِنْ ضُرٍّ وَآتَيْنَاهُ أَهْلَهُ وَمِثْلَهُمْ مَعَهُمْ رَحْمَةً مِنْ عِنْدِنَا وَذِكْرَى لِلْعَابِدِينَ-  ‘আর (স্মরণ কর) আইয়ূবের কথা। যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিল, আমরা কষ্টে পড়েছি। আর তুমি দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তখন আমরা তার ডাকে সাড়া দিলাম। অতঃপর তার কষ্ট দূর করে দিলাম। আর তার পরিবার-পরিজনকে তার নিকটে ফিরিয়ে দিলাম এবং তাদের সাথে তাদের সমপরিমাণ আরও দিলাম আমাদের পক্ষ হ’তে দয়াপরবশে। আর এটা হ’ল ইবাদতকারীদের জন্য উপদেশ স্বরূপ’ (আম্বিয়া ২১/৮৩-৮৪)

(ঙ) নে‘মতের মাধ্যমে পরীক্ষা : আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কোন কোন বান্দাদেরক অগনিত নে‘মত দিয়ে থাকেন। এই নে‘মতরাজির মাধ্যমে তিনি তাদেরকে পরীক্ষায় ফেলেন। যারা কাফের-মুশরিক তারা এসব নে‘মত পেয়ে আল্লাহকে ভুলে যায়। আর যারা মুমিন তারা নে‘মত পেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। হযরত সুলায়মান (আঃ) ও ফেরাউন তার জাজ্বল্যমান প্রমান। হযরত সুলায়মান (আঃ)-কে আল্লাহ তা‘আলা অনেক ধন-সম্পত্তি, এমনকি সারা জাহানের শাসন ক্ষমতা দান করেছিলেন। এত কিছুর পরেও তিনি আল্লাহকে ভুল যান নি। বরং এগুলিকে তিনি পরীক্ষার বস্ত্ত হিসাবে মনে করতেন। অথচ ফেরাঊন তাঁর পুরো উল্টো। ফেরাউনকেও আল্লাহ রাজ্য ক্ষমতা দান করেছিলেন। কিন্তু সে অহমিকায় ফেটে পড়ে নিজেক আল্লাহ দাবী করেছিল। ফেরাঊন সর্ম্পকে মহান আল্লাহ বলেন,

اذْهَبْ إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى-فَقُلْ هَلْ لَكَ إِلَى أَنْ تَزَكَّى- وَأَهْدِيَكَ إِلَى رَبِّكَ فَتَخْشَى-فَأَرَاهُ الْآيَةَ الْكُبْرَى-فَكَذَّبَ وَعَصَى- ثُمَّ أَدْبَرَ يَسْعَى-فَحَشَرَ فَنَادَى-فَقَالَ أَنَا رَبُّكُمُ الْأَعْلَى- فَأَخَذَهُ اللَّهُ نَكَالَ الْآخِرَةِ وَالْأُولَى-

(এবং আল্লাহ মুসা (আঃ)-কে বলেছিলেন) ফেরাঊনের কাছে যাও। কেননা সে সীমালংঘন করেছে। অতঃপর তাকে বল, তোমার পবিত্র হওয়ার আগ্রহ আছে কি? আমি তোমাকে তোমার পালনকর্তার দিকে পথ দেখাব, যাতে তুমি তাঁকে ভয় কর। অতঃপর সে (মূসা) তাকে মহানিদর্শন দেখাল। কিন্তু সে (ফেরাঊন) মিথ্যারোপ করল এবং অবাধ্য হ’ল। অতঃপর সে পিছন ফিরে গেল দ্রুত পায়ে। অতঃপর সে লোক জমা করল এবং উঁচু স্বরে আহবান করল। অতঃপর বলল, আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ প্রতিপালক। ফলে আল্লাহ তাকে পাকড়াও করলেন পরকালের ও ইহকালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্বারা’ (নাযি‘আত ৭৯/১৭-২৫)। হযরত সুলায়মান (আঃ) সর্ম্পকে মহান আল্লাহ বলেন,

 قَالَ الَّذِي عِنْدَهُ عِلْمٌ مِنَ الْكِتَابِ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَنْ يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ فَلَمَّا رَآهُ مُسْتَقِرًّا عِنْدَهُ قَالَ هَذَا مِنْ فَضْلِ رَبِّي لِيَبْلُوَنِي أَأَشْكُرُ أَمْ أَكْفُرُ وَمَنْ شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّي غَنِيٌّ كَرِيمٌ-

‘(অন্যদিকে) কিতাবের জ্ঞান যার ছিল সে বলল, আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনার কাছে এনে দিব। অতঃপর সুলায়মান যখন সেটিকে তার সামনে দেখল, তখন বলল, এটি আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। যাতে তিনি পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি না অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। যে ব্যক্তি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই সেটা করে থাকে। আর যে ব্যক্তি অকৃতজ্ঞ

হয়, সে মানুষ যে আমার পালনকর্তা অভাবমুক্ত ও মহান’ (নামল২৭/৪০)।  মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন এবং তার জীবন-যৌবন, হাত-পা, চক্ষু-কান, শরীর, সুস্থতা, রাত-দিন, আলো-বাতাস দুনিয়ার সবকিছু তার জন্য নে‘মত হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। আদম সন্তানকে ক্বিয়ামতের মাঠে আল্লাহ    প্রদত্ত সমস্ত  নে‘মতরাজি সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করা হবে।

আর বিশেষকরে ক্বিয়ামতের মাঠে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই দিতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

لاَ تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ-

‘ক্বিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগপর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ তা‘আলার নিকট হ’তে সরাতে পারবেনা। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কি কাজে তা বিনাশ করেছে? তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হ’তে তা উপার্জন করেছে এবং তা কি কি খাতে খরচ করেছে এবং সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মোতাবেক কি কি আমল করেছে? [11]

মহান আল্লাহ বলেন, ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيمِ ‘অতঃপর তোমরা অবশ্যই সেদিন তোমাদেরকে দেওয়া নে‘মতরাজি সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’ (তাকাছুর ১০২/৮)

(ক্রমশ)

লেখক : আব্দুল্লাহ । হোমনা, বাঞ্ছারামপুর, বি-বাড়িয়া।

উৎস: তাওহীদের ডাক


[1] . তিরমিযী হা/২৩৯৬; ইবনু মাজাহ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/ ১৫৬৬।

[2] . তিরমিযী হা/২৩৯৮; ইবনু মাজাহ হা/৪০২৩; মিশকাত হা/ ১৫৬২।

[3] . আবুদাঊদ হা/৪৬০৯; মিশকাত হা/১৫৮।

[4] . মুসলিম হা/২৭।

[5] . বুখারী হা/৪০৯৯

[6] . মুসলিম হা/২০৩৮; মিশকাত হা/৪২৪৬।

[7] . বুখারী হা/৭২৩১; মিশকাত হা/৬১০৫।

[8] . বুখারী হা/২৬২৭; তিরমিযী হা/১৬৮৬; মিশকাত হা/২৯৪৩।

[9] . বুখারী হা/৫৬৪১; মিশকাত হা/১৫৩৭।

[10] . বুখারী হা/৫৬৪৫; মিশকাত হা/২০০।

[11] . তিরমিযী হা/২৪১৬; মিশকাত হা/৫১৯৭।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button