দাওয়াত ও জিহাদ

আল্লাহ্‌ অবশ্যই কাফিরদের অপমানিত করবেন

১.

মার্কিন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরী একপ্রকার ড্রোন আছে, যেগুলো মশা বা ঐজাতীয় উড়ন্ত পোকার মতো দেখতে। এগুলোকে বলে Insect Spy Drone.এ ড্রোনগুলো মানুষের শরীরে বসে ডিএনএ স্যাম্পল কালেক্ট করতে পারে, এমনকি শরীরের ভেত

র ট্র্যাকিং ডিভাইস ঢুকিয়ে দিতে পারে। সেই ডিভাইসের সাহায্যে এরপর ঐ লোকের চলাফেরার পর্যবেক্ষণ করবে CIA বা অনুরূপ গোয়েন্দা সংস্থা।

কী মারাত্মক টেকনোলজি, তাই না?

অনেকেই জানে না, এমন কি বিজ্ঞানের ছাত্ররাও বেশিরভাগই জানে না যে, উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীর টেকনোলজিক্যাল মেজর আবিষ্কারগুলোর বড় অংশই এসেছে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে, অথবা মিলিটারি পারপাসে। আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য বহু টেকনোলজিই দেখা যাবে প্রথম আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবদান।

পেনিসিলিন থেকে শুরু করে টেলিগ্রাফি, ওয়াকি টকি, নিউক্লিয়ার টেকনোলজি, ডিজিটাল ফটোগ্রাফি, জেট ইঞ্জিন, ইলেক্ট্রনিক কম্পিউটার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ড্রোন, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট নেভিগেশন, এমন কি স্যানিটারি ন্যাপকিন পর্যন্ত! কী নেই এই তালিকায়! কমিউনিকেশান এঞ্জিনিয়ারিং পুরোটাই তো দাঁড়িয়ে আছে মিলিটারি ফিল্ডের ওপর।

আমরা আজকে যেসব টেকনোলজিকে ভাবছি কাটিং এজ, সেগুলো আসলে আবিষ্কৃত হয়েছে অনেক বছর আগেই।

ইউ এস আর্মি যখন আরও উন্নত প্রযুক্তিতে চলে যায় তখন আগের প্রযুক্তিগুলো পাবলিকের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। আমরা আজকে হরদম যে GPS ব্যবহার করে গুগল ম্যাপ ঘাটি আর উবার ডাকি, এই GPS আমেরিকান আর্মি ব্যবহার করেছে সত্তরের দশকে। তারা এখন যেসব টেকনোলজি ব্যবহার করছে তা হয়তো পাবলিকের হাতে আসবে আরও ত্রিশ-চল্লিশ বছর পর। সুতরাং এখন তারা যেসব টেকনোলজি ব্যবহার করে সেগুলো হয়তো আমাদের কল্পনাতেও আসবে না।

এই ব্যাপারগুলো আপনি যদি সারাক্ষণ চিন্তা করেন তাহলে আপনার মনে হতে পারে The Mighty US Army, মনে হতে পারে তারা এক অপরাজেয় শক্তি। আপনি হয়তো বিশ্বাস করতে শুরু করবেন আমেরিকাকে হারানো অসম্ভব।

কিন্তু বাস্তবতা অন্য রকম।

IED এর নাম অনেকে হয়তো শুনেছেন। খুবই সিম্পল মেকানিজমের একপ্রকার বোমা, মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয় আর নির্দিষ্ট সময়ে বিষ্ফোরণ ঘটানো হয়। আফগানিস্তান আর ইরাকের যুদ্ধে নিহত আমেরিকান সৈন্যের প্রায় দুই তৃতীয়াংশের মৃত্যুর কারণ এই IED. এই বস্তুর কারণে এ দুটো জায়গায় ইউ এস আর্মি একেবারেই অসহায় হয়ে পড়েছে।

যে সৈন্যরা টেকনোলজিতে বাকিদের ধরাছোঁয়ার বাইরে তারা হাজারে হাজারে মরেছে আর পঙ্গু হয়েছে এই সিম্পল অস্ত্রের কাছে।

যুদ্ধজয় যে অস্ত্রের গর্বে হয় না, তা ইতিহাসে অজস্রবার প্রমাণিত হয়েছে।

২.
মুফতী যুবায়ের আহমেদ ভাইয়ের নাম অনেকে হয়তো জানেন। উনি প্রধানত অমুসলিমদের মধ্যে দাওয়াতের কাজ করেন। বিশেষত মিশনারি, কাদিয়ানী ইত্যাদি ফেরকার কারণে যারা ঈমানহারা হচ্ছেন তাদের মধ্যে মেহনত করেন।

গতবছর উনার মারকাযে গিয়েছিলাম। তাঁর মুখে শুনলাম মিশনারিরা কীভাবে মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে খ্রিষ্টান বানায়, কীভাবে তারা প্রভাবশালী সব রাজনৈতিক নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা পায়, কীভাবে তারা ইউরোপ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ফান্ডিং পেয়ে প্রত্যন্ত সব অঞ্চলে হাসপাতাল, স্কুল বানিয়ে মানুষকে খ্রিষ্টান করে ইত্যাদি।

এসব শুনে মনটা কিছুটা দমে গেল। বললাম, ভাই ওরা তো এত ফান্ডিং পায়, প্রভাবশালী লোকজন ওদের সাথে, আমাদের দাঈদের আর্থিক অবস্থা খারাপ, সরকারের চাপসহ নানা সমস্যা। আমরা ওদের মোকাবেলায় কতটুকু সফল হচ্ছি?

যুবায়ের ভাই যে উত্তর দিলেন তাতে কলজেটা জুড়িয়ে গেল। বললেন, “মাকড়সার জাল দেখেছেন?”

– হ্যাঁ, দেখেছি।

– একটা ঘরে মাকড়সার জালভর্তি। মানুষ ঐ ঘরে ঢুকলেই আঁতকে উঠবে। ভাববে, এই ঘরে কীভাবে এগোনো সম্ভব। কিন্তু সাহস করে একটা লাঠি দিয়ে বাড়ি দিলেই সাথে সাথে জালগুলো ঝুরঝুর করে ঝরে পড়বে। ভাই, মিশনারিদের কাজগুলো ঐ মাকড়সার জালের মত। দেখলে মনে হয় বিরাট কিছু, কিন্তু মুসলিমদের লাঠির আঘাতেই ধসে পড়ে। দেখা যায় ওরা কোটি কোটি টাকা খরচ করে, দশ বছর-বিশ বছর মেহনত করে যে কয়টা লোককে খ্রিষ্টান বানায়, আমাদের আলেম উলামারা দু-তিনদিন দাওয়াত দিয়ে তাদের আবার ইসলামে ফিরিয়ে আনেন।

সুবহানাল্লাহ! মাকড়সার জালের এই উপমাই তো রাব্বুল আলামীন দিয়েছেন কুরআনে-

“যারা আল্লাহ্‌র পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তাদের দৃষ্টান্ত হলো মাকড়সার মতো। সে ঘর বানায়, আর নিশ্চয়ই সবচাইতে দুর্বল ঘর হলো মাকড়সার ঘর, যদি তারা জানতো!” [সূরা আনকাবুত: ৪১]

এটাই মুমিনের সাথে কাফিরের পার্থক্য। একজন মুমিন ভরসা করে একমাত্র আল্লাহ্‌র ওপর, যিনি সমগ্র বিশ্বজগতের একচ্ছত্র অধিপতি, যার কোনওকিছুতে কমতি নেই, যার শক্তি-ক্ষমতা সীমাহীন, যিনি সমগ্র সৃষ্টি থেকে অমুখাপেক্ষী। মুমিনরা তাঁকেই অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, তাঁরই ইবাদাত করে, তাঁর কাছেই সাহায্য চায়। অন্যদিকে কাফিরের অভিভাবক হচ্ছে গাইরুল্লাহ, যে বড়ই দুর্বল, বড়ই সীমিত তার ক্ষমতা। মুমিনের বিপরীতে কাফিরের শক্তি তাই মাকড়সার জালের মতো, যা টোকা দিলেই ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

৩.
মুমিনরা কখনো কাফিরের শক্তির কাছে পরাজিত হয় না। তারা পরাজিত হয় নিজেদের কমতির কারণে। এই কমতি হলো ঈমানের কমতি, আমলের কমতি। সায়্যিদিনা উমার (রা) একবার যুদ্ধে সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা) কে সেনাপতি করে পাঠালেন। তিনি সা’দ (রা) এর প্রতি চিঠি পাঠিয়ে বললেন, “সা’দ, কাফিরদের শক্তির চেয়ে নিজেদের গুনাহকে বেশি ভয় করো”।

আজকে কিছু লোক কাফিরদের শক্তি-বিত্ত-প্রভাব দেখে আঁতকে ওঠে, কাফিরদের ম্যাজেস্টি তাদের চমকে দেয়। তারা বলে ওঠে- এদের হারানো অসম্ভব, এরাই তো এ যুগের প্রভু। এই লোকেরা কাফিরদের বড়ত্বে এতটাই মুগ্ধ যে যখন কেউ কাফিরদের সাথে যুদ্ধে সাফল্য দেখায় তখন এরা বলে ওঠে, “ওরা আমেরিকারই সৃষ্টি”।

অথচ একজন মুমিন তো এভাবে দেখবে না। সে দেখবে আমেরিকা কী ভঙ্গুর একটা অর্থনীতির ওপর কাঁপতে কাঁপতে দাঁড়িয়ে আছে। সে দেখবে ইউরোপীয় সভ্যতার চাকচিক্যের আড়ালে নৈতিকতার অবক্ষয়ের গুমড়ে পড়া কান্না। সে তো হলিউডের চোখ ধাঁধানো চলচ্চিত্রের রূপে কাফিরদের বিচার করবে না, সে তো জানে আল্লাহ্‌র ওয়াদা-

“আর আল্লাহ্‌ অবশ্যই কাফিরদের অপমানিত করবেন”। [সূরা তাওবাহ: ২]

এবং

“আর যাবুর কিতাবে উপদেশ দেবার পর আমি লিখে দিয়েছি, আমার সৎকর্মশীল বান্দারাই যমিনের অধিকারী হবে”। [সূরা আম্বিয়া: ১০৫]

৪.
মাকড়সার জাল বড়ই দুর্বল জাল। কাদের কাছে দুর্বল? যারা জানে ওটাকে আঘাত করলেই ছিড়ে পড়বে। কিন্তু পোকামাকড়ের কাছে? তাদের কাছে দুর্ভেদ্য এ জাল, পর্বতপ্রমাণ এক শৃঙ্খল। মু’মিনরা যখন আল্লাহ্‌র ওপর তাওয়াক্কুল ছেড়ে দেয়, পাপের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ে তখন তারা হয়ে যায় ঐ পোকামাকড়ের মতো। যারা মাকড়সার শক্তিকে দানবাকার মনে করে ভয়ে কাঁপতে থাকে। এরাই ঐ জালের ভেতরে আটকে যায়, আর মাকড়সার খাবারে পরিণত হয়। আমরা যেন তাদের মতো না হই।

অজস্র মাকড়সার জাল ছিড়তে লাঠির একটা আঘাতই যথেষ্ট। কিন্তু এই আঘাতটা তো করতে হবে।

এই লাঠির উপাদান হচ্ছে ঈমান, নেক আমল আর তাওয়াক্কুল। আমরা যদি একে তৈরি করতে পারি, তবে মাকড়সার জাল ছিড়বেই।

ওটা তো ছেড়ার জন্যই।

– MuHammad Jubaer

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Back to top button