দাওয়াত ও জিহাদ

জিহাদ কী?

ইসলাম মানবজাতির জন্য আল্লাহ্র মনোনীত একমাত্র ধর্ম। যার সকল বিধান মানুষের ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে নির্ধারিত। পক্ষান্তরে শয়তানী বিধান সর্বত্র অন্যায় ও অশান্তির বিস্তৃতি ঘটিয়ে থাকে। যা মানুষকে আল্লাহ্র পথ থেকে হটিয়ে জাহান্নামের পথে নিতে চায়। সেকারণ আল্লাহ মুসলমানকে ‘ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ’-এর দায়িত্ব প্রদান করেছেন এবং তাকে শয়তানের বিরুদ্ধে সর্বদা জিহাদে লিপ্ত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। জিহাদ ও সন্ত্রাস দু’টি বিপরীতধর্মী বিষয়। জিহাদ হয় মানব কল্যাণের জন্য এবং সন্ত্রাস হয় শয়তানী অপকর্মের জন্য। জিহাদ হ’ল ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এই ইবাদতকেই শয়তান সবচেয়ে বেশী ভয় পায়। সেকারণ নানা কৌশলে শয়তান মুসলমানের জিহাদী জাযবাকে ধ্বংস করতে চায়। বর্তমান যুগে ইসলামী জিহাদকে ‘জঙ্গীবাদ’ হিসাবে চিহ্নিত করাটাও শয়তানী তৎপরতার একটি অংশ মাত্র। একটি পরাশক্তি তার প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক পরাশক্তিকে আফগানিস্তান থেকে হটানোর জন্য অঢেল অর্থ ব্যয় করে ও আধুনিক অস্ত্রের যোগান দিয়ে গত শতাব্দীর শেষদিকে জিহাদের নামে ‘তালেবান’ সৃষ্টি করে। পরে উদ্দেশ্য হাছিল হয়ে গেলে তাদেরকে সন্ত্রাসী জঙ্গীদল বলে আখ্যায়িত করে। একই পলিসি মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুসৃত হচ্ছে। তাদের টার্গেটকৃত মুসলিম রাষ্ট্রটিকে জঙ্গীরাষ্ট্র আখ্যা দিয়ে তাদের স্বার্থ হাছিলের কপট উদ্দেশ্যে পরাশক্তিগুলি এসব অপকর্ম করে যাচ্ছে বলে সরকারের অভিজ্ঞ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের প্রকাশিত মন্তব্যে জানা যায়।

বর্তমানে স্টিং অপারেশনের নামে তারা নিজেদের দেশে মুসলিম তরুণদের পিছনে গোয়েন্দা লাগিয়ে বন্ধু বেশে তাদেরকে সেদেশের বিভিন্ন স্থাপনায় ভুয়া বোমাবাজিতে লিপ্ত করছে। অতঃপর তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করছে। বিশ্বকে জানিয়ে দিচ্ছে যে, মুসলিম মানেই জঙ্গী।

এছাড়া তাদের চক্রান্তের অসহায় শিকার হচ্ছে বিভিন্ন মুসলিম দেশের স্বল্পবুদ্ধি তরুণ সমাজ। অনেক সময় বিদেশীরা তাদের এদেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে এদেরকে ধর্মের নামে জিহাদ ও ক্বিতালে উসকে দেয়। অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে লালন করে। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলে। অতঃপর তাদেরই অদৃশ্য ইঙ্গিতে এরা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এবং মিডিয়ার সংবাদ শিরোনামে পরিণত হয়। আসল হোতারা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এরপর দেশের সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে বিদেশী আধিপত্যবাদীরা তাদের অন্যায় স্বার্থ হাছিল করে। অন্যদিকে তারা বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে মুসলিম ঐক্য ভেঙ্গে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে ও একে অপরের শত্রু বানিয়ে দিচ্ছে।

গণতন্ত্রী ও জঙ্গী উভয় দলের লক্ষ্য ক্ষমতা দখল করা। অথচ ঐ লক্ষ্যটাই ইসলামে নিষিদ্ধ। দুনিয়াবী লক্ষ্যে কোন কাজই আল্লাহ্র নিকটে গ্রহণীয় নয়। ক্ষমতা ও নেতৃত্ব আল্লাহ প্রদত্ত নে‘মত। তা চেয়ে নেবার বা আদায় করে নেবার বিষয় নয়। এর মধ্যে প্রতারণা বা যবরদস্তির কোন অবকাশ নেই। অথচ উক্ত কারণেই সর্বত্র নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে হানাহানি চলছে। এবিষয়ে ইসলামের নিজস্ব নীতি-আদর্শ ও রীতি-পদ্ধতি রয়েছে। সেটি যথার্থভাবে অনুসরণ করলে নেতৃত্বের কোন্দল ও ক্ষমতার লড়াই থেকে জাতি রক্ষা পাবে ইনশাআল্লাহ।

ইসলামে শৈথিল্যবাদ ও চরমপন্থা কোনটারই অবকাশ নেই। আল্লাহ বলেন, আমরা তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত করেছি। যাতে তোমরা মানবজাতির উপরে (ক্বিয়ামতের দিন) সাক্ষী হ’তে পার এবং রাসূলও তোমাদের উপর সাক্ষী হন’ (বাক্বারাহ ২/১৪৩)। সাক্ষ্যদাতা উম্মত সর্বদা মধ্যপন্থী হয়ে থাকে। আর এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে মুসলিম উম্মাহ্র ‘শ্রেষ্ঠ জাতি’ হওয়ার চাবিকাঠি (আলে ইমরান ৩/১১০)। কিন্তু কিছু মানুষ ক্ষমতা দখলকেই ‘বড় ইবাদত’ এবং ‘সব ফরযের বড় ফরয’ বলে থাকেন। যেভাবেই হৌক ক্ষমতা দখলই তাদের মূল লক্ষ্য। সেকারণ চরমপন্থাকে তারা অধিক পসন্দ করেন। এদের কারণে ইসলামের শত্রুরা ইসলামকে জঙ্গীবাদী ধর্ম হিসাবে অপপ্রচারের সুযোগ পেয়েছে।

 

জিহাদ ও ক্বিতাল:

‘জিহাদ’ অর্থ, আল্লাহ্র পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো’ এবং ‘ক্বিতাল’ অর্থ আল্লাহ্র পথে কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করা’। জিহাদ হ’ল ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া। পঞ্চস্তম্ভের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পায়। কিন্তু চূড়া বা ছাদ না থাকলে তাকে পূর্ণাঙ্গ গৃহ বলা যায় না। চূড়াহীন গৃহের যে তুলনা, জিহাদবিহীন ইসলামের সেই তুলনা। জিহাদেই জীবন, জিহাদেই সম্মান ও মর্যাদা। জিহাদবিহীন মুমিন মর্যাদাহীন ব্যক্তির ন্যায়। জিহাদের মাধ্যমেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা পায়। আল্লাহ্র জন্য মুসলমানের প্রতিটি কর্ম যেমন ইবাদত, আল্লাহ্র বিধান প্রতিষ্ঠায় মুসলমানের প্রতিটি সংগ্রামই তেমনি জিহাদ। দ্বীনের বিজয় জিহাদের উপরেই নির্ভরশীল। জিহাদ হ’ল মুমিন ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্যের অন্যতম মানদন্ড। আল্লাহ বলেন, যারা ঈমানদার তারা যুদ্ধ করে আল্লাহ্র পথে। আর যারা কাফির, তারা যুদ্ধ করে ত্বাগূতের পথে। অতএব তোমরা শয়তানের বন্ধুদের সাথে যুদ্ধ কর। নিশ্চয়ই শয়তানের কৌশল সদা দুর্বল’ (নিসা ৪/৭৬)।

বস্ত্ততঃ মুমিন তার জীবনপথের প্রতিটি পদক্ষেপ ও চিন্তা-চেতনায় শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। শয়তানী সমাজ ও সংস্কৃতির সাথে মুমিনের সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী। তাই সর্বদা তাকে জিহাদী চেতনা নিয়েই পথ চলতে হয়। কোন অবস্থাতেই সে বাতিলের ফাঁদে পা দেয় না বা তার সঙ্গে আপোষ করতে পারে না। কেননা শয়তান মুমিনের প্রকাশ্য দুশমন। বাতিলের সমাজে বসবাস করেও নবীগণ কখনো বাতিলের সঙ্গে আপোষ করেননি। তাদেরকে নিরন্তর যুদ্ধ করতে হয়েছে মূলতঃ সমাজের লালিত আক্বীদা-বিশ্বাসের বিরুদ্ধে, যা কখনো কখনো সশস্ত্র মুকাবিলায় রূপ নিয়েছে। একই নীতি-কৌশল সকল যুগে প্রযোজ্য।

চেতনাহীন মানুষ প্রাণহীন লাশের ন্যায়। ইসলামের শত্রুরা তাই মুসলমানের জিহাদী চেতনাকে বিনাশ করার জন্য যুগে যুগে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। এযুগেও তা অব্যাহত রয়েছে। তারা ইসলামকে চূড়াহীন একটা পাঁচখুঁটির চালাঘর বানানোর জন্য তাকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ময়দান থেকে হটানোর উদ্দেশ্যে যুগে যুগে নানা থিওরী প্রবর্তন করেছে। এভাবে সুকৌশলে তারা সর্বত্র একদল বশংবদ ‘নেতা’ বানিয়েছে এবং চূড়ার কর্তৃত্ব সর্বদা নিজেদের হাতে রেখে দিয়েছে। ফলে আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব ও তাঁর প্রেরিত মঙ্গলময় জীবন বিধান প্রায় সকল ক্ষেত্রে পদদলিত হচ্ছে। আর মানবতা ইসলামের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্যই আল্লাহ মুমিনের উপর জিহাদকে ফরয করেছেন। যেমন তিনি বলেন, ‘আর তোমরা জিহাদ কর আল্লাহ্র পথে যথার্থভাবে; তিনি তোমাদের মনোনীত করেছেন’ (হজ্জ ২২/৭৮)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে। অথচ তা তোমাদের জন্য কষ্টকর। বহু বিষয় এমন রয়েছে, যা তোমরা অপসন্দ কর। অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার বহু বিষয় এমন রয়েছে, যা তোমরা পসন্দ কর। অথচ তা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। বস্ত্ততঃ আল্লাহ (পরিণাম সম্পর্কে) অধিক জানেন, কিন্তু তোমরা জানো না’ (বাক্বারাহ ২/২১৬)। অত্র আয়াতের মাধ্যমে যুদ্ধকারী মুশরিকদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয় (কুরতুবী)। যা ২য় হিজরীতে নাযিল হয়।[1]

 

শাব্দিক ব্যাখ্যা :

(১) ‘কুতিবা’ অর্থ ‘লিখিত হয়েছে’। কুরআনী পরিভাষায় এর অর্থ : ‘ফরয করা হয়েছে’ বা ‘নির্ধারিত হয়েছে’। যেমন- ‘তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হয়েছে’ (বাকবারাহ ২/১৮৩)। ‘তোমাদের উপরে হত্যার বদলে হত্যাকে ফরয করা হয়েছে’ (বাক্বারাহ ২/১৭৮)।

(২) ‘ক্বিতাল’ অর্থ, (ক) ‘পরস্পরে যুদ্ধ করা’। বাবে মুফা‘আলাহ্র অন্যতম মাছদার। (খ) ‘প্রতিরোধ করা’। যেমন- মুছল্লীর সম্মুখ দিয়ে গমনকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিস্বরূপ হাদীছে বলা হয়েছে, ‘তার উচিৎ ওকে সজোরে রুখে দেয়া। কেননা ওটা শয়তান’।[2] (গ) ‘লা‘নত করা’। যেমন কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ওদের ধ্বংস করুন, ওরা কোন্ পথে চলেছে? (তওবাহ ৯/৩০)। (ঘ) ‘বিস্মিত হওয়া ও প্রশংসা করা’। যেমন বলা হয়ে থাকে ‘আল্লাহ ওকে ধ্বংস করুন, কতই না শুদ্ধভাষী সে’।

(৩) ‘কুরহুন’ অর্থ, ‘কষ্ট’। ইবনু ‘আরাফাহ বলেন, ‘আল-কুরহু’ অর্থ, কষ্ট এবং ‘আল-কারহু’ অর্থ, যা তোমার উপর চাপানো হয়’। ইমাম কুরতুবী (৬১০-৬৭১ হিঃ/১২১৪-১২৭৩) বলেন, এটাই পসন্দনীয়। তবে দু’টি শব্দ একই অর্থে আসাটাও সিদ্ধ’ (কুরতুবী)। জমহূর বিদ্বানগণ এর অর্থ করেছেন, ‘স্বভাবগত অপসন্দ ও কষ্ট’। এটি সন্তুষ্টি ও সমর্থনের বিরোধী নয় বা কষ্ট সহ্য করার আগ্রহের বিপরীত নয়। কেননা জিহাদের বিষয়টি আল্লাহ্র নির্দেশাবলীর অন্তর্ভুক্ত এবং এর মধ্যেই রয়েছে দ্বীনের হেফাযতের গ্যারান্টি’।[3] যা কোন মুমিন কখনো অপসন্দ করতে পারেনা।

ইকরিমা বলেন, ‘(কষ্টকর বিষয় হওয়ার কারণে) মুসলমানরা এটাকে অপসন্দ করে। কিন্তু পরে পসন্দ করে এবং বলে যে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। কেননা আল্লাহ্র হুকুম মানতে গেলে কষ্ট করতেই হবে। কিন্তু যখন এর অধিক ছওয়াবের কথা জানা যায়, তখন তার পাশে যাবতীয় কষ্টকে হীন মনে হয়’ (কুরতুবী)।

সৈয়দ রশীদ রিযা (১৮৬৫-১৯৩৫ খৃঃ) বলেন, কেউ কেউ জিহাদকে কঠিন বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অথচ মুমিনগণ এটাকে কিভাবে অপসন্দ করতে পারে? যে বিষয়টি আল্লাহ তাদের উপরে ফরয করেছেন এবং এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাদের সৌভাগ্য। তবে হ্যাঁ, এটি স্বভাবগত অপসন্দের বিষয়াবলীর মধ্যে গণ্য হ’তে পারে, যার মধ্যে তার জন্য উপকার ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যেমন তিক্ত ঔষধ সেবন, ইনজেকশন গ্রহণ ইত্যাদি। তাছাড়া ছাহাবীগণ যুদ্ধ-বিগ্রহকে স্বভাবগতভাবেও অপসন্দ করতেন না। কেননা তাঁরা এতে অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু তাঁরা এ বিষয়টি খেয়াল করেছিলেন যে, মদীনায় তাঁদের অধিকাংশ ছিলেন মুহাজির এবং সংখ্যায় অল্প। মুশরিকদের মুকাবিলায় দুনিয়াবী শক্তির ভারসাম্যহীনতার কারণে তাঁরা যে মুছীবত প্রাপ্ত হয়েছেন এবং যে হক-এর প্রতি তাঁরা মানুষকে দাওয়াত দিচ্ছেন ও যার সামাজিক প্রতিষ্ঠা তাঁরা কামনা করছেন, সেটুকু অংকুরেই বিনষ্ট হয়ে যাবে। এতদ্ব্যতীত তাঁদের নিকটে আরেকটি চিন্তার বিষয় ছিল সেটি হ’ল, তাঁরা ছিলেন শান্তি ও মানবকল্যাণের আকাংখী। সশস্ত্র যুদ্ধ হ’লে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হবে এবং এতে লোকদের সামগ্রিকভাবে ইসলামে প্রবেশে বাধার সৃষ্টি হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আমিই মাত্র জানি, তোমরা জানো না’। অর্থাৎ শান্তির অবস্থায় সকল মানুষ ইসলামে প্রবেশ করবে- এরূপ ধারণা বাতিল। কেননা লোকদের মধ্যে বহু দুষ্ট চরিত্রের লোক রয়েছে। তাদেরকে সমাজদেহ থেকে উৎখাত করা সুস্থ দেহ থেকে দূষিত রক্ত বের করার শামিল। অতএব এই যুদ্ধ বা জিহাদ তোমাদের জন্য নিঃসন্দেহে কল্যাণকর’।[4]

 

আয়াতের ব্যাখ্যা :

ইতিপূর্বে মক্কায় জিহাদের অনুমতি ছিল না। পরে সেখান থেকে হিজরতকালে জিহাদের অনুমতির আয়াত নাযিল হয় সূরা হজ্জ ৩৯ আয়াতের মাধ্যমে। অতঃপর ২য় হিজরী সনে মদীনায় অবতীর্ণ সূরা বাক্বারাহ ২১৬ আয়াতের মাধ্যমে মুসলমানদের উপরে প্রথম ‘জিহাদ’ ফরয করা হয়।[5] অত্র আয়াতে ‘ক্বিতাল’ শব্দ বলা হ’লেও সূরা তাওবাহ ৪১ আয়াতে ‘জিহাদ’ শব্দ উল্লেখিত হয়েছে। যার মাধ্যমে সাময়িকভাবে শুধু ক্বিতাল বা ‘যুদ্ধ’ নয়, বরং মুশরিক ও কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে জান-মাল দিয়ে সর্বদা ‘জিহাদ’ বা সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়েছে।

‘জিহাদ’ শব্দটি ব্যাপক প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং ‘ক্বিতাল’ শব্দটি বিশেষভাবে ‘সশস্ত্র যুদ্ধ’ হিসাবে গণ্য হয়। ‘জিহাদ’ শান্তি ও যুদ্ধ সকল অবস্থায় প্রযোজ্য। পক্ষান্তরে ‘ক্বিতাল’ কেবল যুদ্ধাবস্থায় প্রযোজ্য। ‘জিহাদ’ বললে দু’টিই বুঝায়। ‘ক্বিতাল’ বললে স্রেফ ‘যুদ্ধ’ বুঝায়। যদিও দু’টি শব্দ অনেক সময় সমার্থক হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে ইসলামী পরিভাষায় ‘জিহাদ’ শব্দটিই অধিক প্রচলিত ও অধিক গ্রহণীয়।

‘জিহাদ’ ‘জুহদুন’ ধাতু হ’তে উৎপন্ন। যার অর্থ, কষ্ট ও চূড়ান্ত প্রচেষ্টা। অর্থাৎ যখন কেউ শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে ও তাকে প্রতিরোধের জন্য তার সকল ক্ষমতা ও শক্তি ব্যয় করে এবং কষ্টসমূহ সহ্য করে, তাকে আভিধানিক অর্থে ‘জিহাদ’ বলে’।[6] ইসলামী পরিভাষায় ‘জিহাদ’ অর্থ : আল্লাহ্র সন্তুষ্টির লক্ষ্যে আল্লাহ্র দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য বাতিলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো’। ‘জিহাদ’ শব্দটি পারিভাষিক অর্থেই অধিক প্রচলিত। মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, ‘জিহাদ’ অর্থ ‘কাফেরদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো অথবা মাল দ্বারা, পরামর্শ দ্বারা, দলবৃদ্ধি দ্বারা কিংবা অন্য যেকোন পন্থায় কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে সার্বিক সহযোগিতা করা’। তিনি বলেন, জিহাদ হ’ল ‘ফরযে কিফায়াহ’। কেউ সেটা করলে অন্যের উপর থেকে দায়িত্ব নেমে যায়’।[7]

ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘শারঈ পরিভাষায় জিহাদ হ’ল, কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সর্বাতমক প্রচেষ্টা নিয়োজিত করা। এর দ্বারা নফস, শয়তান ও ফাসিকদের বিরুদ্ধে জিহাদকেও বুঝানো হয়’।[8]

 

জিহাদের উদ্দেশ্য :

(১) জিহাদ হবে আল্লাহ্র কালেমাকে সমুন্নত করার জন্য ও তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তিনি স্বীয় রাসূলকে সাহায্য করেন এমন বাহিনী দ্বারা যাদেরকে তোমরা দেখোনি। তিনি কাফিরদের ঝান্ডাকে অবনমিত করেন ও আল্লাহ্র ঝান্ডাকে সমুন্নত করেন’ (তওবাহ ৯/৪০)।

হযরত আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে এসে বলল, কোন ব্যক্তি যুদ্ধ করে গণীমত লাভের জন্য, কেউ যুদ্ধ করে নাম-যশের জন্য, কেউ যুদ্ধ করে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য। এক্ষণে কোন্ ব্যক্তি আল্লাহ্র রাস্তায় যুদ্ধ করে? জওয়াবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্র কালেমাকে সমুন্নত করার জন্য লড়াই করে, সেই-ই মাত্র আল্লাহ্র রাস্তায় যুদ্ধ করে’।[9] আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই সেই সত্তা যিনি স্বীয় রাসূলকে হেদায়াত ও সত্যদ্বীন সহকারে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দ্বীনের উপরে তাকে বিজয়ী করতে পারেন। আর (এ ব্যাপারে) সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট’ (ফাৎহ ৪৮/২৮)। অর্থাৎ ইসলাম যে সকল দ্বীনের উপরে বিজয়ী, সে বিষয়ে আল্লাহই বড় সাক্ষী। কারণ অন্যেরা তা স্বীকার করে না বা করবেও না। সেদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘যদিও মুশরিকরা তা অপসন্দ করে’ (তওবাহ ৯/৩৩, ছফ ৬১/৯)। তিনি বলেন, ‘তারা আল্লাহ্র নূরকে (শরী‘আতকে) ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিতে চায়। অথচ আল্লাহ স্বীয় নূরকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন, যদিও কাফিররা তা অপসন্দ করে’ (ছফ ৬১/৮; তওবাহ ৯/৩২)।

উপরোক্ত আয়াতসমূহে একথা পরিষ্কার যে, যারা ধর্মীয় ও বৈষয়িক জীবনের সর্বত্র ইসলামী শরী‘আতকে কবুল করে না, বরং তাকে অপসন্দ করে, তারা কাফির ও মুশরিকদের অনুসারী এবং তারা ইসলামকে দুনিয়ার বুক থেকে মিটিয়ে দিতে চায়। যদিও তারা তাতে নিশ্চিতভাবে ব্যর্থ হবে।

(২) ইসলামে ‘জিহাদ’ স্রেফ আল্লাহ্র জন্য হয়ে থাকে, দুনিয়ার জন্য নয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা জিহাদ কর আল্লাহ্র পথে সত্যিকারের জিহাদ। তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন’ (হজ্জ ২২/৭৮)।

(ক) ৭ম হিজরীতে খায়বর যুদ্ধে ইহূদীদের সবচাইতে মযবুত ‘নায়েম’ দুর্গ জয়ের পূর্বে ঝান্ডা হাতে দেওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেনাপতি আলী (রাঃ)-কে বলেন, যুদ্ধ শুরুর পূর্বে প্রতিপক্ষ যোদ্ধাদের প্রতি ইসলামের দাওয়াত দাও। কেননা ‘যদি তোমার দ্বারা আল্লাহ একজন ব্যক্তিকেও হেদায়াত দান করেন, তবে সেটি তোমার জন্য মূল্যবান লাল উটের (কুরবানীর) চাইতে উত্তম হবে’।[10]

এতে বুঝা যায় যে, স্রেফ যুদ্ধবিজয় ইসলামী জিহাদের লক্ষ্য নয়। বরং মানুষ আল্লাহ্র বিধানের অনুগত হৌক এটাই হ’ল কাম্য। যদি নিয়তের মধ্যে খুলূছিয়াত না থাকে, বরং ব্যক্তিস্বার্থ বা অন্য কোন দুনিয়াবী স্বার্থ হাছিল করা উদ্দেশ্য হয়, তাহ’লে আল্লাহ্র দরবারে সেটা জিহাদ হিসাবে কবুল হবে না।

(খ) আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তুমি আললাহ্র ইবাদত কর তাঁর প্রতি খালেছ আনুগত্য সহকারে’ (যুমার ৩৯/২)। যুদ্ধাবস্থায় মৃত্যু হ’লেও ত্রুটিপূর্ণ নিয়তের কারণে ঐ ব্যক্তি শহীদের মর্যাদা হ’তে বঞ্চিত হবে। আবার শহীদ হওয়ার খালেছ নিয়তের কারণে বিছানায় মৃত্যুবরণ করেও অনেকে শহীদের মর্যাদা পাবেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে এবং হযরত আবুবকর (রাঃ), হযরত খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) প্রমুখ। উক্ত মর্মে বহু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। কেননা ‘নিয়ত’ হ’ল আমলের রূহ স্বরূপ। নিয়তহীন আমল লক্ষ্যহীন পথিকের ন্যায়। আল্লাহ্র কাছে ঐ আমলের কোন মূল্য নেই।

(গ) হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ আমল কবুল করেন না, যা তার জন্য খালেছ না হয় এবং যা স্রেফ তাঁর চেহারা অন্বেষণের লক্ষ্যে না হয়’।[11]

(ঘ) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ক্বিয়ামতের দিন প্রথম বিচার হবে (কপট) শহীদের। আল্লাহ তাকে (দুনিয়ায় প্রদত্ত) নে‘মত সমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন এবং সে তা স্বীকার করবে। অতঃপর তাকে বলা হবে, তুমি ঐসব নে‘মতের বিনিময়ে দুনিয়ায় কি কাজ করেছ? সে বলবে, আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য লড়াই করেছি ও অবশেষে শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এজন্য যুদ্ধ করেছিলে যেন তোমাকে ‘বীর’ বলা হয়। আর তা তোমাকে বলা হয়েছে। অতঃপর তার সম্পর্কে আদেশ দেওয়া হবে এবং তাকে উপুড়মুখী করে টানতে টানতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরপর আলেমদের, অতঃপর (লোক দেখানো) দানশীলদের একই অবস্থা হবে’।[12]

(ঙ) সাহল বিন হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্র নিকটে খালেছ অন্তরে শাহাদাত কামনা করে, আল্লাহ তাকে শহীদগণের স্তরে পৌঁছে দেন, যদিও সে বিছানায় মৃত্যুবরণ করে’।[13]

(চ) একদা এক খুৎবায় ওমর ফারূক (রাঃ) বলেন, কেউ যুদ্ধে নিহত হ’লে বা মারা গেলে তোমরা বলে থাক যে, ‘অমুক লোক শহীদ হয়ে গেছে’। তোমরা এরূপ বলো না। বরং ঐরূপ বল যেরূপ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলতেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্র রাস্তায় নিহত হ’ল সে ব্যক্তি শহীদ এবং যে আল্লাহ্র রাস্তায় মৃত্যু বরণ করল সে ব্যক্তি শহীদ’।[14]

 

জিহাদের ফযীলত :

(১) আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমি কি তোমাদের এমন একটি ব্যবসার কথা বলে দেব না, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হ’তে মুক্তি দেবে? তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমাদের মাল ও জান দ্বারা আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ’ (ছফ ৬১/১০-১১)।

(২) তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনের জান ও মাল খরিদ করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে। তারা লড়াই করে আল্লাহ্র রাস্তায়। অতঃপর তারা মারে ও মরে’ (তওবাহ ৯/১১১)।

(৩) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদকারীদের জন্য আল্লাহ জান্নাতে একশতটি স্তর প্রস্ত্তত করে রেখেছেন। প্রতিটি স্তরের দূরত্ব আসমান ও যমীনের মধ্যকার দূরত্বের ন্যায়। অতএব যখন তোমরা প্রার্থনা করবে, তখন ‘ফেরদৌস’ প্রার্থনা করবে। কেননা এটিই হ’ল জান্নাতের মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বোচ্চ স্তর। এর উপরেই আমাকে আল্লাহ্র আরশ দেখানো হয়েছে। আর এখান থেকেই জান্নাতের নদীসমূহ প্রবাহিত হয়েছে’।[15]

(৪) তিনি বলেন, ‘যার পদযুগল আল্লাহ্র রাস্তায় ধূলি ধূসরিত হয়েছে, তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না’।[16] ‘পদযুগল ধূলি ধূসরিত হওয়া’ অর্থ, দেহ-মন সবকিছু আল্লাহ্র রাস্তায় ব্যয় করা। যেমন অন্যত্র (৫) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ্র রাস্তায় একটি সকাল ও একটি সন্ধ্যা ব্যয় করা, দুনিয়া ও তার মধ্যকার সকল কিছু হ’তে উত্তম’।[17]

(৬) তিনি বলেন, ‘আল্লাহ্র রাস্তায় নিহত হওয়া সকল পাপকে মোচন করে ঋণ ব্যতীত।[18]

(৭) তিনি বলেন, ‘কেউ আল্লাহ্র রাস্তায় আহত হ’লে, আর আল্লাহ ভালো জানেন কে তার রাস্তায় আহত হয়েছে, ক্বিয়ামতের দিন সে এমন অবস্থায় আসবে যে, তার ক্ষতস্থান হ’তে রক্ত ঝরতে থাকবে। যার রং হবে রক্তের ন্যায়, কিন্তু সুগন্ধি হবে মিশকের ন্যায়’।[19]

(৮) রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করার পর তাকে পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ দেওয়া হলেও পুনরায় সে দুনিয়ায় ফিরে আসতে চাইবে না, শহীদ ব্যতীত। তাদের উচ্চ মর্যাদা দেখে সে দুনিয়ায় ফিরে আসতে চাইবে, যাতে সে দশবার শহীদ হ’তে পারে।[20]

(৯) আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ্র রাস্তায় নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত ধারণা করো না; বরং তারা জীবিত। তারা তাদের প্রতিপালক হ’তে জীবিকাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে’ (আলে ইমরান ৩/১৭৯)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তাদের আত্মাসমূহ সবুজ বর্ণের পাখির মধ্যে রক্ষিত হয় এবং তাদের জন্য আল্লাহ্র আরশের নীচে ফানুস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। অতঃপর তারা জান্নাতে যথেচ্ছ বিচরণ করে। পরে তারা আবার ঐসমস্ত ফানুসের দিকে ফিরে আসে। তখন তাদের রব তাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে বলেন, তোমরা কি আরো কিছু চাও? উত্তরে তারা বলে, আমরা আর কিসের আকাংখা করব? আমরা তো জান্নাতের যেখানে খুশী বিচরণ করছি। আল্লাহ তাদেরকে এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করলে তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা চাই যে, আমাদের আত্মাগুলিকে পুনরায় আমাদের দেহের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। যেন আমরা পুনরায় আপনার রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হ’তে পারি। অতঃপর যখন আল্লাহ দেখবেন যে তাদের আর কিছু প্রয়োজন নেই, তখন তাদের ছেড়ে দিবেন’।[21]

(১০) তিনি বলেন, আল্লাহ্র নিকটে শহীদদের জন্য ৬টি বিশেষ পুরস্কার রয়েছে (ক) শহীদের রক্তের প্রথম ফোঁটা যমীনে পড়তেই তাকে মাফ করে দেওয়া হয় এবং জান বের হওয়ার প্রাক্কালেই তাকে জান্নাতের ঠিকানা দেখানো হয় (খ) তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করা হয় (গ) ক্বিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা হ’তে তাকে নিরাপদ রাখা হয় (ঘ) সেদিন তার মাথায় সম্মানের মুকুট পরানো হবে। যার একটি মুক্তা দুনিয়া ও তার মধ্যেকার সবকিছু হতে উত্তম (ঙ) তাকে ৭২ জন সুন্দর চক্ষুবিশিষ্ট হূরের সাথে বিয়ে দেওয়া হবে এবং (চ) ৭০ জন নিকটাত্মীয়ের জন্য তার সুফারিশ কবুল করা হবে।[22]

(১১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির আমল বন্ধ হয়ে যায় কেবল ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে ব্যক্তি আল্লাহ্র রাস্তায় পাহারারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। তার নেকী ক্বিয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ঐ ব্যক্তি কবরের পরীক্ষা হ’তে নিরাপদ থাকে’।[23] এই নেকী ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত প্রহরী সৈনিক যেমন পাবেন, ইসলাম বিরোধী আক্বীদা ও আমল প্রতিরোধে নিহত বা মৃত ব্যক্তিও তেমনি পাবেন।

 


 

[1] সৈয়দ মুহাম্মাদ রশীদ রেযা, মুখতাছার তাফসীরুল মানার (বৈরূত : ১ম সংস্করণ ১৪০৪/১৯৮৪) ১/১৮৬ পৃঃ।

[2] ইবনু মাজাহ হা/৯৫৪, নাসাঈ হা/৪৮৬২; বুখারী, মিশকাত হা/৭৭৭।

[3] সৈয়দ রশীদ রেযা, মুখতাছার তাফসীরুল মানার ১/১৮৬।

[4] সৈয়দ রশীদ রেযা, মুখতাছার তাফসীরুল মানার ১/১৮৬-১৮৭ পৃঃ (সার-সংক্ষেপ)।

[5] তিরমিযী হা/৩১৭১, নাসাঈ হা/৩০৮৫; মুখতাছার তাফসীরুল মানার ১/১৮৬।

[6] সাইয়িদ সাবিক্ব, ফিক্বহুস সুন্নাহ (কায়রো : দারুল ফাৎহ, ৫ম সংস্করণ ১৪১২/১৯৯২) ৩/৮৬।

[7] মোল্লা আলী ক্বারী, মিরক্বাত শরহ মিশকাত (মুলতান : ইশ‘আতুল মা‘আরেফ, ১৩৮৬/১৯৬৬) ‘জিহাদ’ অধ্যায়, ৭/২৬৪ পৃঃ।

[8] আহমাদ ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী শরহ ছহীহুল বুখারী (কায়রো : ১৪০৭/১৯২৭) ‘জিহাদ’ অধ্যায় ৬/৫ পৃঃ।

[9] মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৮১৪ ‘জিহাদ’ অধ্যায়।

[10] মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬০৮০; ফাৎহুল বারী হা/৪২১০।

[11] আবুদাঊদ, নাসাঈ হা/৩১৪০।

[12] মুসলিম হা/১৯০৫, মিশকাত হা/২০৫ ‘ইলম’ অধ্যায়।

[13] মুসলিম হা/১৯০৯, মিশকাত হা/৩৮০৮ ‘জিহাদ’ অধ্যায়।

[14] আহমাদ হা/২৮৫, ১০৭৭২; ইবনু মাজাহ হা/২৯১০; মুসলিম, মিশকাত হা/৩৮১১।

[15] বুখারী, মিশকাত হা/৩৭৮৭; ফাৎহুল বারী হা/২৭৯০ ‘জিহাদ’ অধ্যায় ৪ অনুচ্ছেদ।

[16] বুখারী, মিশকাত হা/৩৭৯৪ ‘জিহাদ’ অধ্যায়।

[17] মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৭৯২ ‘জিহাদ’ অধ্যায়।

[18] মুসলিম হা/১৮৮৬, মিশকাত হা/৩৮০৬।

[19] মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৮০২ ‘জিহাদ’ অধ্যায়।

[20] মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৮০৩।

[21] মুসলিম হা/১৮৮৭; মিশকাত হা/৩৮০৪।

[22] তিরমিযী হা/১৬৬৩, ইবনু মাজাহ হা/২৭৯৯, মিশকাত হা/৩৮৩৪।

[23] তিরমিযী হা/১৬২১; মিশকাত হা/৩৮২৩।

মন্তব্য করুন

Back to top button