ইসলাম ও বিজ্ঞান

হিজামা : রাসূল (ছাঃ) -এর চিকিৎসা

হিজামা (حِجَامَة ) একটি নববী চিকিৎসা ব্যবস্থা। এটি আরবী শব্দ ‘আল-হাজম’ থেকে এসেছে। যার অর্থ চোষা বা টেনে নেওয়া। আধুনিক পরিভাষায় Cupping (কাপিং)। হিজামার মাধ্যমে দূষিত রক্ত (Toxin) বের করা হয়। এতে শরীরের মাংসপেশী সমূহের রক্ত প্রবাহ দ্রুততর হয়। পেশী, চামড়া, ত্বক ও শরীরের ভিতরের অরগান সমূহের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীর সতেজ ও শক্তিশালী হয়।

হিজামা বা Wet Cupping অতি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে আরব বিশ্বে জনপ্রিয়। নির্দিষ্ট স্থান থেকে সূঁচের মাধ্যমে নেগেটিভ প্রেশার দিয়ে (টেনে/চুষে) নিস্তেজ প্রবাহহীন দূষিত রক্ত বের করে আনা হয়।

এ হিজামা থেরাপী ৩০০০ বৎসরেরও পুরাতন চিকিৎসা পদ্ধতি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে উৎপত্তি হ’লেও চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে চীন, ভারত ও আমেরিকায় বহু পূর্বে থেকেই এটি প্রচলিত ছিল। ১৮ শতক থেকে ইউরোপেও এর প্রচলন রয়েছে।

হিজামা তিবেব নববী : হিজামা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হিজামার উপকারিতা সম্পর্কে অবহিত করেছেন, নিজে ব্যবহার করেছেন এবং হিজামা ব্যবহারে উৎসাহিত করেছেন। হিজামার ব্যবহার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হিজামা করেছেন তাঁর মাথা ব্যথার জন্য[1], পায়ে[2], পিঠে, পিঠের ব্যথার জন্য দুই কাঁধের মধ্যে[3], ঘাড়ের দু’টি রগে[4] ও হাড় মচকে গেলে।[5]

আমর বিন আমির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, নবী করীম (ছাঃ) হিজামা লাগাতেন এবং কোন লোকের পারিশ্রমিক কম দিতেন না।[6]

হিজামার ফযীলত : হিজামার ফযীলত সম্বলিত বহু হাদীছ রয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু হাদীছ উল্লেখ করা হ’ল।-

عَنْحُمَيْدٍقَالَسُئِلَأَنَسُبْنُمَالِكٍعَنْكَسْبِالْحَجَّامِفَقَالَاحْتَجَمَرَسُولُاللهِصلىاللهعليهوسلمحَجَمَهُأَبُوطَيْبَةَفَأَمَرَلَهُبِصَاعَيْنِمِنْطَعَامٍوَكَلَّمَأَهْلَهُفَوَضَعُواعَنْهُمِنْخَرَاجِهِوَقَالَإِنَّأَفْضَلَمَاتَدَاوَيْتُمْبِهِالْحِجَامَةُأَوْهُوَمِنْأَمْثَلِدَوَائِكُم-

হুমাইদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, আনাস বিন মালিক (রাঃ)-এর নিকট হিজামার উপার্জন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হিজামা লাগিয়েছেন। আবু তায়বা তাকে হিজামা করেছেন। তিনি তাকে দুই ছা‘ (প্রায় ৫ কেজি) খাদ্যদ্রব্য দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং তার মালিকদের সাথে আলোচনা করেন। এতে তারা তার উপর ধার্যকৃত কর কমিয়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, তোমরা যেসব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাও হিজামা সেগুলোর মধ্যে উত্তম ব্যবস্থা অথবা (বলেছেন) এটি তোমাদের ঔষধের মধ্যে অধিক ফলদায়ক’।[7]

عَنْ عَاصِمِبْنِعُمَرَ بْنِ قَتَادَةَ حَدَّثَهُ أَنَّ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ رضى الله عنهماعَادَ الْمُقَنَّعَ ثُمَّ قَالَ لاَ أَبْرَحُ حَتَّى تَحْتَجِمَ فَإِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُإِنَّ فِيْهِ شِفَاءًٌ-

আছেম বিন ওমর বিন ক্বাতাদা থেকে বর্ণিত আছে যে, জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) অসুস্থ মুকান্নাকে দেখতে যান। এরপর তিনি বলেন, আমি সরব না, যতক্ষণ না তুমি শিঙ্গা লাগাবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই এর (হিজামার) মধ্যে নিরাময় রয়েছে’।[8]

ইবনু আববাস (রাঃ)-এর সূত্রে নবী করীম (ছাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রোগমুক্তি তিনটি জিনিসের মধ্যে নিহিত। শিঙ্গা লাগানো, মধু পান করা এবং আগুন দিয়ে গরম দাগ দেয়ার মধ্যে। তবে আমি আমার উম্মাতকে আগুন দিয়ে গরম দাগ দিতে নিষেধ করি’।[9]

عَنْ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَبْنِ قَتَادَةَ قَالَ جَاءَنَا جَابِرُ بْنُ عَبْدِاللهِ  فِي أَهْلِنَا وَرَجُلٌ يَشْتَكِي خُرَاجًا بِهِ أَوْ جِرَاحًا فَقَالَ مَا تَشْتَكِي قَالَ خُرَاجٌ بِي قَدْ شَقَّعَلَيَّ فَقَالَ يَا غُلَامُ ائْتِنِي بِحَجَّامٍ فَقَالَ لَهُ مَا تَصْنَعُ بِالْحَجَّامِ يَا أَبَا عَبْدِ اللهِ  قَالَأُرِيدُ أَنْ أُعَلِّقَ فِيهِ مِحْجَمًا قَالَ وَاللهِ إِنَّ الذُّبَابَ لَيُصِيبُنِي أَوْ يُصِيبُنِي الثَّوْبُ فَيُؤْذِينِيوَيَشُقُّ عَلَيَّ فَلَمَّا رَأَى تَبَرُّمَهُ مِنْ ذَلِكَ قَالَ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ  صَلَّى اللهُ  عَلَيْهِوَسَلَّمَ يَقُولُ إِنْ كَانَ فِي شَيْءٍ مِنْ أَدْوِيَتِكُمْ خَيْرٌ فَفِي شَرْطَةِ مِحْجَمٍ أَوْ شَرْبَةٍ مِنْ عَسَلٍ أَوْلَذْعَةٍ بِنَارٍ قَالَ رَسُولُ اللهِ  صَلَّى اللهُ  عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا أُحِبُّ أَنْ أَكْتَوِيَ قَالَ فَجَاءَ بِحَجَّامٍفَشَرَطَهُ فَذَهَبَ عَنْهُ مَا يَجِدُ-

আছেম বিন ওমর বিন ক্বাতাদা হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাদের বাড়ীতে আসেন। বাড়ির একজন লোক তার ক্ষত রোগের কথা বলল। জাবির (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি সমস্যা? সে বলল, ক্ষত হয়েছে যা আমার কাছে অসহনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাবির (রাঃ) বলেন, বৎস! আমার কাছে একজন হিজামাকারী ডেকে নিয়ে এসো। সে বলল, হে আবু আবদুল্লাহ! হিজামাকারীকে দিয়ে কি করবেন? তিনি বললেন, ক্ষতস্থানে শিঙ্গা লাগাতে চাই। সে বলল, আল্লাহর শপথ! মাছি আমাকে উত্যক্ত করবে কিংবা (ক্ষতস্থানে) কাপড় লেগে গেলে আমার কষ্ট হবে। হিজামা করাতে তার অসম্মতি দেখে জাবির (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘যদি তোমাদের কোন ঔষধে কল্যাণ থেকে থাকে তাহ’লে তা আছে (১) হিজামা করানো (২) মধু পান করা এবং (৩) আগুনের টুকরা দিয়ে দাগ দেয়া’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরও  বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে আগুন দিয়ে দাগ লাগানো পসন্দ করি না। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি হিজামাকারীকে আনালেন। অতঃপর সে তাকে হিজামা করল। এতেই সে আরোগ্য লাভ করল’।[10]

হিজামার গুরুত্ব : জাবির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, নবী করীম (ছাঃ)-এর (পায়ে) যে ব্যথা ছিল, তার জন্য তিনি ইহরাম অবস্থায় হিজামা লাগিয়েছিলেন।[11]

قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِيْنَ عُرِجَبِهِ مَا مَرَّ عَلَى مَلَإٍ مِنْ الْمَلاَئِكَةِ إِلاَّ قَالُوْا عَلَيْكَ بِالْحِجَامَةِ-

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মি‘রাজে যাওয়ার সময় তিনি ফিরিশতাদের যে দলের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন তারা বলেন, ‘আপনি অবশ্যই হিজামা করাবেন’।[12]

عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ حَدَّثَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ لَيْلَةَ أُسْرِىَ بِهِ أَنَّهُ لَمْ يَمُرَّ عَلَى مَلإٍ مِنَ الْمَلاَئِكَةِ إِلاَّ أَمَرُوْهُ أَنْ مُرْ أُمَّتَكَ بِالْحِجَامَةِ-

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, মি‘রাজের রাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন যে, এই রাতে ফিরিশতাদের যে দলের সম্মুখ দিয়েই তিনি যাচ্ছিলেন তারা বলেছেন, ‘আপনার উম্মতকে হিজামার নির্দেশ দিন’।[13]

হিজামা ফেরেশতাদের দ্বারা সুফারিশকৃত : হিজামা একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, যা আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তাঁর উম্মতের জন্য এটি ফেরেশতাদের দ্বারা সুপারিশকৃত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। এজন্য কেউ বলতে পারে না যে, এই প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি বর্তমান আধুনিক যুগে অচল। বরং এটি সাফল্যপূর্ণ প্রতিষেধক সমস্ত বিশ্ববাসীর জন্য। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করা হয়েছে।[14]

হিজামার পদ্ধতি : হিজামার পূর্বে গোসল করে নেওয়া উত্তম। যদি গোসল না করেন, তবে হিজামার পূর্বে ঘণ্টা খানেক বিশ্রাম নেওয়া ভালো।

খালি পেটে হিজামা করা বা শিঙ্গা লাগানো ভাল : ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘বাসি মুখে শিঙ্গা লাগালে তাতে নিরাময় ও বরকত লাভ হয় এবং জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়’।[15]

হিজামার উত্তম সময় : সাধারণত হিজামার জন্য উত্তম সময় হচ্ছে চান্দ্র মাসের ১৭, ১৯ ও ২১ তারিখ। আনাস বিন মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঘাড়ের দুই পাশের শিরায় এবং ঘাড়ের কাছাকাছি পিঠের ফুলা অংশে হিজামা করাতেন। তিনি মাসের সতের, ঊনিশ ও একুশ তারিখে হিজামা করাতেন।[16] যদি অসুস্থতা বা ব্যথা অনুভূত হয় তবে উক্ত তারিখের অপেক্ষা না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হিজামা করানো যাবে।

হিজামার জন্য উত্তম দিন হচ্ছে সোম, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার।

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ … فَإِنِّيْسَمِعْتُرَسُوْلَاللهِصَلَّىاللهُعَلَيْهِوَسَلَّمَيَقُوْلُفَاحْتَجِمُوْاعَلَىبَرَكَةِاللهِيَوْمَالْخَمِيسِوَاجْتَنِبُواالْحِجَامَةَيَوْمَالْأَرْبِعَاءِوَالْجُمُعَةِوَالسَّبْتِوَيَوْمَالْأَحَدِتَحَرِّيًاوَاحْتَجِمُوْايَوْمَالِاثْنَيْنِوَالثُّلاَثَاءِ-

ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহর বরকত লাভের আশায় তোমরা বৃহস্পতিবার হিজামা করাও এবং বুধ, শুক্র, শনি ও রবিবার বেছে নেওয়া থেকে বিরত থাক। আর সোম ও মঙ্গলবারে হিজামা করাও’।[17]

উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হিজামা করেছেন মাসের বিভিন্ন সময়ে। যেমন হজ্জের সময়, চান্দ্র মাসের প্রথমে। কারণ তিনি খারাপ মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এতে বুঝা যায়, প্রয়োজনে যে কোন সময় হিজামা করা যায়।

হিজামা থেকে বিরত থাকা : অসুস্থ, হায়েয, অন্তঃসত্তা, নেফাস এবং দুর্বল শরীরের অধিকারীদেরকে শিঙ্গা লাগানো থেকে বিরত থাকা উচিত।

ছিয়াম বা ইহরাম বাধা অবস্থায় হিজামা লাগানো : আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইহরাম অবস্থায় আধ কপালির কারণে তাঁর মাথায় শিক্ষা লাগান।[18]

ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছায়েম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন।[19]

হিজামা থেরাপী : রোগীকে আরামদায়ক অবস্থায় শুইয়ে অথবা বসিয়ে রাখতে হবে। যে স্থানে হিজামা করতে চান তা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে। হাতে গ্লাবস পরে নেয়া উত্তম। অতঃপর হিজামার স্থানে ধারালো সুঁচ বা ব্লেড দ্বারা হালকাভাবে ছিদ্র করে নিতে হবে। অতঃপর কাপ সেট করে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এভাবে দূষিত রক্ত বের হয়ে কাপে জমতে থাকবে।

হিজামার পর সাধারণত ঐ স্থানে গোল চিহ্ন বা ফোলা অনুভব করবেন। যা সর্বোচ্চ এক, দুই বা তিন দিন থাকতে পারে। এটা দূষিত রক্ত বের হওয়ার চি‎হ্ন।

হিজামার মাধ্যমে যেসব রোগ প্রতিরোধ হয় : ব্যাক পেইন, উচ্চ রক্তচাপ, পায়ে ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা, মাথাব্যথা (মাইগ্রেইন), ঘাড়ে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, জয়েন্টে পেইন, আর্থ্যাইটিজ, যাদু, বাত, ঘুমের ব্যাঘাত, থাইরয়েড ব্যঘাত, জ্ঞান এবং স্মৃতিশক্তিহীনতা, ত্বকের বর্জ্য পরিষ্কার, অতিরিক্ত স্রাব নিঃসরণ বন্ধ করা, অর্শ, অন্ডকোষ ফোলা, পাঁচড়া, ফোঁড়া ইত্যাদি প্রতিরোধ হয়।

মাথাব্যথায় হিজামা : সালমা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, ‘যখন কেউ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে মাথাব্যথার কথা বলত, তখন তিনি তাদের হিজামা করার কথা বলতেন’।[20]

জ্ঞান এবং স্মৃতিবর্ধক : ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘খালি পেটে হিজামা লাগানো উত্তম। এতে শিফা ও বরকত রয়েছে। এতে জ্ঞান এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়’।[21]

বিষ বা ব্যথা : আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, এক ইহুদী মহিলা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বিষযুক্ত গোশত খেতে দিয়েছিল। তিনি তাকে সংবাদ পাঠিয়ে বললেন, কেন তুমি এ কাজ করলে? মহিলাটি উত্তরে বলল, যদি তুমি সত্যিই আল্লাহর রাসূল হও, তবে আল্লাহ তোমাকে জানিয়ে দিবেন। আর তুমি যদি তাঁর রাসূল না হও, তবে আমি মানুষকে তোমার থেকে নিরাপদ রাখব! যখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) এর যন্ত্রণা অনুভব করতে লাগলেন, তিনি হিজামা ব্যবহার করলেন। একদা ইহরাম অবস্থায় তিনি ভ্রমণে বের হ’লেন এবং ঐ বিষের যন্ত্রণা বোধ করলেন, তখন তিনি হিজামা ব্যবহার করলেন’।[22]

যাদু : ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন যাদু দ্বারা পীড়িত হন তখন তিনি মাথায় শিঙ্গা লাগান এবং এটাই সবচেয়ে উত্তম ঔষধ, যদি সঠিকভাবে করা হয়।[23]

হিজামা করার স্থানসমূহ : আনাস বিন মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তিন স্থানে ঘাড়ের দু’টি রগে এবং কাঁধে হিজামা করিয়েছেন।[24]

আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর মাথায় হিজামা লাগিয়েছিলেন।[25]

আবু কাবশাহ আনমারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) মাথার মাঝখানে এবং দুই কাঁধের মাঝে হিজামা করতেন এবং বলতেন, যে ব্যক্তি নিজ শরীরের এ অংশে হিজামা করাবে, সে তার কোন রোগের চিকিৎসা না করালেও কোন ক্ষতি হবে না।[26]

জাবির (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাড় মচকে গেলে তিনি এর জন্য হিজামা করান।[27]

আনাস বিন মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ব্যথার কারণে ইহরাম অবস্থায় তাঁর পায়ের উপরিভাগে হিজামা করিয়েছেন।[28]

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেছেন, ‘দাঁতে, মুখে এবং গলায় ব্যথা হ’লে থুতনির নীচে হিজামা লাগালে উপকার পাওয়া যায়, যদি তা সঠিক সময়ে করা হয়। এটা মাথা ও চোয়াল শোধন করে।

পায়ের সাফিনায় (যা গোড়ালির বড় শিরা) পাংচারিং করার পরিবর্তে পায়ের পাতার সম্মুখে হিজামা লাগানো যেতে পারে। থাই এবং পায়ের পিছনের গোশতের আলসারের চিকিৎসায় এটি উপকারী। তাছাড়া রক্তস্রাবে বাধা ও অন্ড কোষের চামড়ার ক্ষতে তা ব্যবহারযোগ্য।

উরুতে ব্যথা, চুলকানী ও খোসপাঁচড়ার চিকিৎসা হিসাবে বুকের নিচে হিজামা লাগানো উপকারী। এতে পিঠের গেঁটে বাত, অর্শ, গোদ রোগ, খোসপাঁচড়ার প্রতিরোধে সাহায্য করে।[29]

মহিলাদের জন্য হিজামা : জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, উম্মে সালামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে হিজামা করার জন্য অনুমতি চাইলেন। ফলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে হিজামা লাগিয়ে দিতে আবু তাইবা (রাঃ)-কে আদেশ দিলেন। জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমার মনে হয়, আবু তাইবা তার (উম্মে সালামার) দুধভাই অথবা একজন অপ্রাপ্তবয়ষ্ক বালক ছিলেন।[30]

পরিশেষে বলা যায়, হিজামা নববী চিকিৎসা। এর মাধ্যমে অল্লাহর রহমতে ব্যাক পেইন, উচ্চ রক্তচাপ, পায়ে ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা, মাথাব্যথা (মাইগ্রেইন), ঘাড়ে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, জয়েন্টে পেইন, আর্থাইটিজ, যাদু, বাত, ঘুমের ব্যাঘাত, থাইরয়েড ব্যাঘাত, জ্ঞান এবং স্মৃতিশক্তিহীনতা, ত্বকের বর্জ্য পরিষ্কার, অতিরিক্ত স্রাব নিঃসরণ থামানো, অর্শ, অন্ডকোষ ফোলা, পাঁচড়া, ফোঁড়া ইত্যাদি রোগ ভাল হ’তে পারে।

 

– মুহাম্মাদ আবু তাহের

পি.এইচডি. গবেষক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।


 

[1]. বুখারী হা/৫৭০০, ৫৭০১।

[2]. নাসাঈ হা/২৮৫২।

[3]. আবুদাঊদ হা/৩৮৫৯, সনদ ছহীহ।

[4]. আবুদাঊদ হা/৩৮৬০, সনদ ছহীহ।

[5]. আবুদাঊদ হা/৩৮৬৩, সনদ ছহীহ।

[6]. বুখারী হা/২২৮০।

[7]. মুসলিম হা/৩৯৩০।

[8]. বুখারী হা/৫৬৯৭।

[9]. বুখারী হা/৫৬৮১।

[10]. মুসলিম হা/৫৬৩৬।

[11]. নাসাঈ হা/২৮৫২।

[12]. ছহীহ তিরমিযী, হা/৩৪৬২।

[13]. ইবনু মাজাহ হা/৩৪৭৯; তিরমিযী হা/২০৫২; মিশকাত হা/৪৫৪৪, সনদ ছহীহ।

[14]. ছহীহ তিরমিযী হা/২০৫২, ২০৫৩; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৩৪৭৭।

[15]. ইবনে মাজাহ হা/৩৪৮৭, ৩৪৮৮, সনদ হাসান।

[16]. তিরমিযী হা/২০৫১, ২০৫৩; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৩৪৮৩; আবুদাঊদ হা/৩৮৬১, সনদ ছহীহ।

[17]. ইবনে মাজাহ হা/৩৪৮৭-৩৪৮৮, সনদ হাসান।

[18]. বুখারী হা/৫৭০১।

[19]. বুখারী হা/৫৬৯৪।

[20]. আবুদাঊদ হা/৩৮৫৮, সনদ হাসান।

[21]. ইবনে মাজাহ হা/৩৪৮৭, সনদ হাসান।

[22]. মুসনাদে আহমাদ ১/৩০৫, সনদ হাসান।

[23]. যাদুল মা‘আদ ৪/১২৫-১২৬।

[24]. আবুদাঊদ হা/৩৮৬০; ইবনে মাজাহ হা/৩৪৮৩, হাদীছ ছহীহ।

[25]. বুখারী হা/৫৬৯৯।

[26]. আবুদাঊদ হা/৩৮৫৯; ইবনে মাজাহ হা/৩৪৮৪, সনদ ছহীহ।

[27]. আবুদাঊদ হা/৩৮৬৩; ইবনে মাজাহ হা/৩৪৮৫, সনদ ছহীহ।

[28]. আবুদাঊদ হা/১৮৩৭, সনদ ছহীহ।

[29]. যাদুল মা‘আদ ৪/৫৮।

[30]. আবুদাঊদ হা/৪১০৫; ইবনে মাজাহ  হা/৩৪৮০, সনদ ছহীহ।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

৫টি মন্তব্য

  1. অনেকেই বলতে পারেন হিজামা কিভাবে এত রোগ ভাল করে?
    হিজামা শরীরের একটি বেসিক মেকানিজম এক্টিভেট করে। তা হচ্ছে এন্ডোজেনাস নাইট্রিক অক্সাইড পাথওয়েকে বুস্ট করে দেয়। এই নাইট্রিক অক্সাইডকেই বিজ্ঞানীরা মিরাকল মলিকিউল বা হিলিং মলিকিউল নাম দিয়েছেন। যেকোন ডিজিজের নাম এর সাথে effect of nitric oxide লিখে গুগোল সার্চ করলেই আমদের কথা সত্যতা পাবেন।

    হিজামাতে যে লাইট স্ক্র‍্যাচ হয় এতে ক্যাপিলারি ইনজুরি হয়, এবং এই ক্যাপিলারির এন্ডোথেলিয়াম থেকেই নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি হয়।
    ▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
    হিজামা একটি জনপ্রিয় সুন্নাহ ও বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি। বিস্তারিত জানতে এই লিংকে ক্লিক করুনঃ http://hijama.com.bd/what-is-hijama/

    এটা রোগের জন্য চিকিৎসা, সুস্থ ব্যাক্তির জন্য রোগ প্রতিরোধক। হিজামা এন্টি এইজিং ট্রিটমেন্ট অর্থাৎ সারা দুনিয়ায় মানুষ বয়সকে ধরে রাখতে এবং স্ট্যামিনা বাড়ানোর জন্য হিজামা পছন্দ করে থাকেন।

    ভিডিও দেখতেঃ
    https://youtu.be/Yul4_berG9A
    https://youtu.be/z-48h2eduBc

    হিজামার খরচঃ http://hijama.com.bd/pricing/
    ▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
    এ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে ফোন করুনঃ
    ▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
    +88.01610.445262 (Banani, Dhaka)
    +88.0161.2877464 (Dhanmondi, Dhaka)
    +88.01841.445262 (Chittagong)
    +88.01615.445262 (Khulna)
    +88.01842.787924 (Jhalokati,Barisal)
    +88.0184.2877464 (Bogra)
    +1(716)495-4435 (Buffalo, New York, USA)
    ▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
    ইনবক্স করতে ক্লিক করুনঃ
    বনানীঃ m.me/hijama.planet.banani
    ধানমন্ডিঃ m.me/bangladesh.hijama.clinic
    চট্টগ্রামঃ m.me/hijama.planet.chittagong
    খুলনাঃ m.me/hijama.planet.khulna
    বরিশাল ও ঝালকাঠিঃ m.me/hijama.planet.jhalokati
    বগুড়াঃ m.me/hijama.planet.bogra
    লক্ষ্মীপুরঃ m.me/hijama.planet.lakshmipur (opening soon)
    নরসিংদীঃ m.me/126671967972640 (opening soon)
    সিরাজগঞ্জঃ m.me/hijama.planet.sirajganj (opening soon)
    কুয়াকাটাঃ m.me/hijama.planet.kuakata (opening soon)
    সিলেটঃ m.me/hijama.planet.sylhet (opening soon)
    ময়মনসিংহঃ m.me/hijama.planet.mymensingh (opening soon)
    ▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
    প্রধান শাখাঃ
    হিজামা প্ল্যানেটঃ কাপিং ও রুকইয়াহ সেন্টার
    ঠিকানাঃ Building C (Ground Floor), House 91/1, Road 11A, Dhanmondi, Dhaka 1209
    এ্যাপয়েন্টমেন্টঃ+88.0161.2877464
    লোকেশানঃ https://goo.gl/maps/hDDwUMEPKdq
    ▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
    ওয়েবসাইটঃ
    https://www.hijama.com.bd/
    https://www.ruqyahbd.com/

  2. হিজামা করুন সুস্থ থাকুন।

    ————————————————-
    ————————————————-
    হিজামা থেরাপী ও প্রশিক্ষনের জন্য যোগাযোগ করুনঃ
    ————————————————-
    হিজামা প্ল্যানেটঃ ট্রিটমেন্ট, ট্রেইনিং এ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার
    বাড়িঃ ৯১/১,
    রোডঃ ১১এ,
    ধানমন্ডি, ঢাকা।

    ফোনঃ
    +88.0161.2877464
    +88.01610.445262 (Sisters only)
    +88.01612.079727 (cellular, whatsapp, viber, imo)
    ইমেইলঃ
    [email protected]

    ফেইসবুক পেইজঃ
    http://www.facebook.com/hijama.com.bd

    ওয়েবসাইটঃ
    http://www.hijama.com.bd

মন্তব্য করুন

Back to top button