কুরআনে গ্রাউন্ড ওয়াটার টেবিল
আল কুরআন এক বিস্ময়কর কিতাব! আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বহু বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে কুরআন মাজিদে । হাইড্রোলজি, জিওলোজি, জিওগ্রাফি ইত্যাদি আমাদের জীবনে অতি পরিচিত বিষয়য়ের নাম । গ্রাউন্ড ওয়াটার টেবিল এসব বিষয়ের একটি সাধারণ টপিকের নাম । কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই গ্রাউন্ড ওয়াটার টেবিলের কথাও উল্লেখ রয়েছে আল কুরআনে ! তার একটি প্রমাণ স্বরূপ আলোচনা নিচে দেওয়া হলঃ
ওয়াটার টেবিল অথবা গ্রাউন্ড ওয়াটার টেবিল হলো আমাদের মাটির নিচের একটি লেভেল বা স্তর যার নিচে থেকে স্বচ্ছ,পানির স্তর অথবা পানি সমৃদ্ধ স্তর শুরু হয়, মানে যেখানে গেলে আমরা প্রাকৃতিক ভাবে সঞ্চিত স্বচ্ছ, পানযোগ্য, পরিষ্কার পানি পেয়ে থাকি ।
আমরা প্রতিনিয়ত মাটির নিচ থেকে পাম্পের মাধ্যমে স্বচ্ছ, মিঠা পানি উত্তোলন করে থাকি । আমাদের বাড়িতে ট্যাংকের যেমন পানির একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে এবং আমাদের ব্যবহারের সাথে সাথে ট্যাংকটি খালি হতে থাকে, আর ট্যাংক খালি হলে আমরা আবার পাম্পের মাধ্যমে তা পূর্ণ করে থাকি, তেমনি মাটির নিচেও যে স্যাচুরেটেড জোন, একুইফার ইত্যাদি থাকে (একুইফার কে আপনি ট্যাংকের মত ধরতে পারেন) এটারও একটা পানির নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে । আমরা যতই পানি উত্তোলন করতে থাকি আর পানির পরিমাণ কমতে থাকে অথবা আপনি বলতে পারেন পানির স্তর নিচে নামতে থাকে । এবং তা খালি হতে থাকে ।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে বোঝা যাক! টিউবওয়েল বা পাম্প স্থাপনা ক্ষেত্রে দেখা যায়, ১০ বছর আগেও হয়তো যতোটুকু গভীরে গেলেই পানির স্তর পাওয়া যেত কিন্তু এখন ততোটুকু গভীরে গেলে পানির স্তর পাওয়া যায় না । এর কারণ হলো মানুষের পানির অতি ব্যবহার ।
আমরা সাধারণভাবে দেখতে পাই বিভিন্ন এলাকায় গ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেল বিভিন্ন হয় । যেমন, ময়মনসিংহ সদরে আমরা ৬০-৭০ ফুট বা এরকম গভীরে গেলেই সুমিষ্ট, স্বচ্ছ পানি পাই, কিন্তু দেখা গেছে উত্তরবঙ্গে বা দক্ষিণবঙ্গের দিকে ৬০০-৭০০ ফুট বা তারও বেশি গভীরে যাওয়া লাগে সুমিষ্ট পানির পাওয়ার জন্য!
আর এভাবেই পানির স্তর অনেক নিচে নেমে চলে যায় । কিন্তু প্রশ্ন হলো, পানির স্তর নিচে চলে গেলেও আমরা সহজে পানি পাচ্ছি কিভাবে ?
- যার সহজ উত্তর হলো, আল্লাহ তায়ালার কুদরতে বৃষ্টির পানির (প্রিসিপিটেশন) মাধ্যমে আবার তা রিচার্জ বা পুনরায় ভর্তি হয়ে থাকে । আমরা পাই পানি যার অপর নাম জীবন । আর আমরা অনবরত পানি ব্যবহার করার ফলেও সেরকম কমতি হয় না । এ আলোচনা থেকে আমরা মোটামুটি গ্রাউন্ড ওয়াটার টেবিল বা ওয়াটার টেবিল সম্পর্কে একটি ধারণা পেলাম!
এবার কুরআনের দিকে তাকাই!
তেমনি, আল-কুরআনে সুরা মুলক এর ৩০ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’আলা একটি বিষয়ের কথা বলেছেন, “বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি পানি ভূগর্ভে তোমাদের নাগালের বাইরে চলে যায়, তখন কে তোমাদেরকে এনে দিবে প্রবহমান পানি? “(সূরা আল- মুলক,আয়াত-৩০) ।
যা প্রত্যক্ষভাবে গ্রাউন্ড ওয়াটার টেবিল বা ওয়াটার টেবিলের বিষয়টিকে ইঙ্গিত করছে!
উক্ত আয়াতের জন্য তাফসীরে আহসানুল বায়ান এর তাফসির থেকে জানা যায়, “غَوْر শব্দের অর্থ হল শুকিয়ে যাওয়া অথবা পানির এত গভীরে চলে যাওয়া যে, সেখান হতে তা বের করা অসম্ভব হয়। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা যদি পানি শুকিয়ে দিয়ে তার অস্তিত্বই শেষ করে দেন অথবা মাটির এত গভীরে করে দেন, যেখান থেকে পানি বের করতে সর্বপ্রকার যন্ত্র ব্যর্থ সাব্যস্ত হয়, তাহলে বল, কে আছে এমন, যে তোমাদের জন্য প্রবহমান ও নির্মল পানির ব্যবস্থা করে দেবে? অর্থাৎ, কেউ নেই। এটা মহান আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ যে, তোমাদের অবাধ্যতা সত্ত্বেও তিনি তোমাদেরকে পানি থেকে বঞ্চিত করেননি ।
এটি থেকে স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়, উক্ত আয়াতে গ্রাউন্ড ওয়াটার টেবিলের কথা বলা হয়েছে।
আর গ্রাউন্ড ওয়াটার টেবিল এ পানি সংরক্ষণ করে রাখার বিষয়টিও আল্লাহ সুবহানাহুওতায়ালা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন সূরা আল মু’মিনূন এ,
“আমি আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে, অতঃপর আমি তা মাটিতে সংরক্ষিত করি, আর আমি ওকে অপসারিত করতেও নিশ্চিতভাবে সক্ষম” । (সূরা আল মু’মিনূন আয়াত-১৮)
এর স্বপক্ষে তাফসীরে জাকারিয়া থেকে জানা যায়,
- অনুরূপভাবে আলোচ্য আয়াতের ভাষ্য সূরা আল-কাহাফে নির্দেশিত আয়াত থেকেও ব্যাপকতর, যেখানে বলা হয়েছেঃ “অথবা তার পানি ভূগর্ভে হারিয়ে যাবে এবং আপনি কখনো সেটার সন্ধান লাভে সক্ষম হবেন না।” (সূরা আল- কাহাফ, আয়াত-৪১)
নিশ্চিতভাবে এটি পানি শুকিয়ে যাওয়া বা গ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেল অত্যন্ত নিচে চলে যাওয়ার বিষয়টিকে ইঙ্গিত করছে। শেষোক্ত দুই আয়াতের আরও চমৎকার তাফসীর রয়েছে। কিন্তু অনুচ্ছেদ বড় হওয়ার আশঙ্কায় সেগুলো দেয়া হলো না।
কুরআন এমন এক গ্রন্থ যেটিতে উল্লেখ রয়েছে অনেক অনেক বিষয় । প্রকৃতপক্ষে আল কুরআন হলো বিশাল একটি জ্ঞানভান্ডার । এক একটি আয়াত বহন করে এক একটি অধ্যায়। আর এরকমই একটি প্রমাণ হলো উক্ত ৩ টি আয়াত।
হাইড্রোলজির আলোচিত অংশটুকুর প্রশংসা করেছেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, ড. আশরাফ আলী সিদ্দিকী স্যার। কোরআনের আয়াতের ব্যাখ্যায় সম্মতি ও প্রশংসা করেছেন, হাফেজ মাওলানা মুফতি মাকসুদুর রহমান সাহেব (দাঃবা), যিনি বর্তমানে সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়াতুস্ সুন্নাহ্ মুযাহিরুল উলূম মাদ্রাসা, শিকারীকান্দা, ময়মনসিংহ, এবং মুহতাতিম, দারুস সূফ্ফা মাদ্রাসা, পোল্ট্রিফার্ম সংলগ্ন, কেওয়াটখালী, ময়মনসিংহ । আমি আন্তরিকতার সাথে তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। সার্বিক সহায়তায় আমি আরও কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি আমার বিভাগের, শাকির হোসাইন সরকার ভাইয়ের প্রতি।
এস.এ.এম. গাজী হাসান
শিক্ষার্থী, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ,
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ ।
ইমেইলঃ [email protected]
a lot of things learn by this post. thanks
Thanks!
Pray for me please!
Share this article with your relatives, friends etc. And help them to know that!
A high level Engineering discussion on the super creation of Allah. Thank u
জাযাকাল্লাহ খইরন।
দোয়া করবেন 😍😍
আলহামদুলিল্লাহ!
ইসলামিক অনলাইন মিডিয়া কে অত্যন্ত ধন্যবাদ!
জাযাকাল্লাহ খইরন। 😍