ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যুবকদের অবদান
-আব্দুল হালীম বিন ইলিয়াস
ভূমিকা :
ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত রাসূল (ছাঃ) প্রদর্শিত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। পৃথিবীর ইতিহাসে ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যুবকদের অবদান অতুলনীয়। দুর্বার উদ্দীপনা, ক্লান্তিহীন গতি, অপরিসীম ঔদার্য্য, অফুরন্ত প্রাণ ও অটল সাধনার প্রতীক যুবকদের দ্বারাই হক্বের বিজয়ী পতাকা উড্ডীন হয়েছে এবং বাতিলের পরাজয় সূচিত হয়েছে। তাদেরই অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষা ও জান-মালের কুরবানীর বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে তাওহীদ ও সুন্নাতের চির অম্লান আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং নমরূদ, ফেরাঊন ও কারূণ এবং যুগে যুগে তাদের উত্তরসূরীরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। নিমেণ ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যুবকদের অবদান উল্লেখ পূর্বক তাদের অবদান থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
১. সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় প্রথম জীবন উৎসর্গকারী হাবীল :
বিশ্ব ইতিহাসের প্রথম মানুষ ও নবী আদম (আঃ)-এর দু’পুত্র ছিলেন ক্বাবীল ও হাবীল। ক্বাবীল ছিলেন আদমের প্রথম সন্তান ও সবার বড়। আর হাবীল ছিলেন তার ছোট ভাই। তারা দু’ভাই আল্লাহর নামে কুরবানী করেছিলেন (মায়েদা ৫/২৭)। সে যুগে কুরবানী কবুল হওয়ার নিদর্শন ছিল, আসমান থেকে আগুন এসে কুরবানী নিয়ে অন্তর্হিত হয়ে যেত। যে কুরবানীকে আগুন গ্রহণ করত না, সে কুরবানীকে প্রত্যাখ্যাত মনে করা হত। কৃষিজীবী ক্বাবীল কিছু শস্য কুরবানীর জন্য পেশ করলেন। আর পশুপালক হাবীল আল্লাহর মহববতে তার উৎকৃষ্ট দুম্বাটি কুরবানীর জন্য পেশ করলেন। অতঃপর আসমান থেকে আগুন এসে হাবীলের কুরবানী নিয়ে গেল। কিন্তু ক্বাবীলের কুরবানী পড়ে রইল। এতে ক্বাবীল ক্ষুদ্ধ হয়ে হাবীলকে বলল, لَأَقْتُلَنَّكَ ‘আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব’। যুবক হাবীল তখন তাকে উপদেশ দিয়ে মার্জিত ভাষায় বলেছিলেন,
إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ- لَئِنْ بَسَطْتَ إِلَيَّ يَدَكَ لِتَقْتُلَنِي مَا أَنَا بِبَاسِطٍ يَدِيَ إِلَيْكَ لِأَقْتُلَكَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ.
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাক্বীদের থেকে (কুরবানী) কবুল করে থাকেন। যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হও তবে আমি তোমাকে পাল্টা হত্যা করতে উদ্যত হব না। কেননা আমি জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি’ (মায়েদাহ ৫/২৭-২৮)। ক্বাবীল স্রেফ হিংসার বশবর্তী হয়ে হাবীলকে হত্যা করেছিলেন। তিনি চাননি যে, ছোট ভাই হাবীল তার চাইতে উত্তম ব্যক্তি হিসাবে সমাজে প্রশংসিত হৌক।[1] এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, ভালোর প্রতি মন্দ লোকের হিংসা ও আক্রোশ মানুষের মজ্জাগত স্বভাব। এর ফলে ভাল লোকেরা সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও চূড়ান্ত বিচারে তারাই লাভবান হয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে মন্দ লোকেরা সাময়িকভাবে লাভবান হলেও চূড়ান্ত বিচারে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। নির্দোষ হাবীলকে হত্যা করে ক্বাবীল অনন্ত ক্ষতির মধ্যে পতিত হয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, فَأَصْبَحَ مِنَ الْخَاسِرِينَ ‘অতঃপর সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হল’ (মায়েদাহ ৫/৩০)। অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যার সিলসিলা ক্বাবীলের মাধ্যমে শুরু হয়। বিধায় অন্যায়ভাবে সকল হত্যাকারীর পাপের একটা অংশ কাবীলের আমল নামায় যুক্ত হবে।[2] হত্যা সাধারণত যুবকদের দ্বারাই বেশি সংঘটিত হয়। অতএব অন্যায়ের সূচনাকারীরা সাবধান!
শিক্ষণীয় বিষয় :
(ক) মানুষ অন্যের ইচ্ছাধীন পুতুল নয় বরং সে স্বাধীন প্রাণী হিসাবে তার মধ্যে সহজাত প্রবৃত্তি বিদ্যমান।
(খ) পৃথিবীর প্রথম হত্যাকান্ড যুবক ক্বাবীলের মাধ্যমে সংঘঠিত হয়েছিল কুপ্রবৃত্তির পূজারী হয়ে। তাই কুপ্রবৃত্তির ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
(গ) ভালোর প্রতি মন্দ লোকের হিংসা চিরন্তন। অতএব হিংসা থেকে সাবধান!
(ঘ) অন্যায়ভাবে হত্যা সর্বাপেক্ষা জঘন্য পাপ এবং তওবা ব্যতীত হত্যাকারীর কোন আমল কবুল হবে না।
(ঙ) মু্ত্তাক্বী ব্যক্তিগণ অন্যায়ের পাল্টা অন্যায় করেন না, বরং আল্লাহর উপর ভরসা করে তাঁর নিকট প্রতিদান কামনা করেন।
(চ) অন্যাকারী এক সময় অনুতপ্ত হয় এবং অন্তর্জালায় দগ্ধীভূত হয়। অবশেষে এর সূচনাকরীদের উপর সকল পাপের বোজা চাপে। অতএব অন্যায়ের সূচনাকারী সকল স্তরের ব্যক্তিগণ সাবধান!
২. স্বেচ্ছায় আত্মোৎসর্গকারী তরুণ ইসমাঈল (আঃ) :
বহু অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ আবুল আম্বিয়া ইবরাহীম (&আঃ)-এর ৮৬ বছর বয়সে বিবি হাজেরার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন ইসমাঈল। তরুণ ইসমাঈলের বয়স ১৩/১৪ বছর। তিনি যখন বৃদ্ধ পিতার সহযোগী হতে চলেছেন এবং পিতৃ হৃদয় পুরোপুরি জুড়ে বসেছেন, ঠিক তখনই তাকে কুরবানীর নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ
‘যখন সে (ইসমাঈল) পিতার সাথে চলাফেরা করার মত বয়সে উপনীত হল, তখন তিনি (ইবরাহীম) তাকে বললেন, হে আমার বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে- আমি তোমাকে যবহ্ করছি। এখন বল, তোমার মতামত কী? সে বলল, হে আববা! আপনাকে যা নির্দেশ করা হয়েছে, আপনি তা কার্যকর করুন। আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ছবরকারীদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন’ (ছাফ্ফাত ৩৭/১০২)।
তরুণ ইসমাঈল নিজেকে ‘ছবরকারী’ না বলে ছবরকারীদের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজের পিতাসহ পূর্বেকার বড় বড় আত্মোৎসর্গকারীদের মধ্যে নিজেকে শামিল করে নিজেকে অহমিকামুক্ত করেছেন। যদিও তাঁর ন্যায় তরুণের এরূপ স্বেচ্ছায় আত্মোৎসর্গের ঘটনা ইতিপূর্বে ঘটেছিল বলে জানা যায় না (নবীদের কাহিনী, ১/১৩৯ পৃঃ)। মহান আল্লাহ বলেন,
فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ- وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ- قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ.
‘অতঃপর (পিতা-পুত্র) উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং পিতা পুত্রকে উপুড় করে শায়িত করল, তখন আমরা তাকে ডাক দিয়ে বললাম, ‘হে ইবরাহীম! তুমি তোমার স্বপ্ন সত্যে পরিণত করেছ। আমরা এভাবেই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি’ (ছাফ্ফাত ৩৭/১০৩-১০৫)।
বিশ্ব মুসলিম এই সুন্নাত অনুসরণে ১০ই যিলহজ্জ বিশ্বব্যাপী শরী‘আত নির্ধারিত পশু কুরবানী দিয়ে থাকে। পিতার আহবানে স্বেচ্ছায় আত্মোৎসর্গকারী তরুণ ইসমাঈল স্বতস্ফুর্তভাবে সাড়া দিয়েছেন বলেই কুরবানীর গৌরবময় ইতিহাস রচিত হয়েছে। তিনি যদি পিতার অবাধ্য হতেন এবং দৌড়ে পালিয়ে যেতেন তাহলে আল্লাহর হুকুম পালন করা ইবরাহীমের পক্ষে আদৌ সম্ভব হত না। এখানে মা হাজেরার অবদানও ছিল অসামান্য। তাইতো বাংলার বুলবুল কাজী নজরুল ইসলাম গেয়েছেন,
মা হাজেরা হৌক মায়েরা সব
যবীহুল্লাহ হৌক ছেলেরা সব,
সবকিছু যাক সত্য রৌক
বিধির বিধান সত্য হৌক।
বর্তমানে বিশৃঙ্খল পৃথিবীতে প্রতিটি যুবককে ইসমাঈল (আঃ)-এর মত হতে হবে, তবেই সেখানে নেমে আসবে পরম করুণাময় আল্লাহর রহমতের ফল্গুধারা।
শিক্ষণীয় বিষয় :
(ক) আল্লাহর মহববত ও দুনিয়াবী মহববত একত্রিত হলে দুনিয়াবী মহববতকে কুরবানী দিয়ে আল্লাহর নির্দেশ মানতে হবে।
(খ) পিতা-মাতা ও প্রবীণদের কল্যাণময় নির্দেশনা এবং তরুণদের আনুগত্য ও উদ্দীপনার সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে চিরস্মরণীয় ইতিহাস রচনা করা সম্ভব।
৩. যৌবনের মহাপরীক্ষায় ইউসুফ (আঃ) :
পৃথিবীর সুন্দরতম মানুষ ইউসুফ (আঃ) অন্ধকূপ থেকে উদ্ধার পাওয়ার পর আযীযে মিসর তথা মিসরের অর্থ ও রাজস্ব মন্ত্রী ক্বিত্বফীর (قطفير )-এর গৃহে পুত্র সেণহে লালিত পালিত হন। অতঃপর যৌবনে পদার্পণকারী অনিন্দ্য সুন্দর ইউসুফের প্রতি মন্ত্রীর নিঃসন্তান পত্নী যুলায়খার আসক্তি জন্মে। সে ইউসুফকে কুপ্রস্তাব দেয়। এ দিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ বলেন,
وَرَاوَدَتْهُ الَّتِي هُوَ فِي بَيْتِهَا عَنْ نَفْسِهِ وَغَلَّقَتِ الْأَبْوَابَ وَقَالَتْ هَيْتَ لَكَ قَالَ مَعَاذَ اللَّهِ إِنَّهُ رَبِّي أَحْسَنَ مَثْوَايَ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ.
‘আর তিনি যে মহিলার বাড়ীতে থাকতেন ঐ মহিলা তাকে ফুসলাতে লাগল এবং (একদিন) ঘরের দরজা সমূহ বন্ধ করে দিয়ে বলল, কাছে এসো! ইউসুফ বললেন, আল্লাহ (আমাকে) রক্ষা করুন। তিনি (অর্থাৎ আপনার স্বামী) আমার মনিব। তিনি আমার উত্তম বসবাসের ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয়ই সীমালঙ্ঘকারীগণ সফলকাম হয় না’ (ইউসুফ ১২/২৩)।
অতুলনীয় রূপ-লাবণ্যের অধিকারী যুবক ইউসুফ (আঃ) কুপ্রস্তাবে সম্মত না হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে যুলায়খা পিছন থেকে তার জামা টেনে ধরে এবং তা ছিঁড়ে যায়। দরজা খুলে বেরিয়ে আসতেই দু’জন ধরা পড়ে যায় বাড়ীর মালিক ক্বিত্বফীরের কাছে। পরে যুলায়খার সাজানো কথামত নির্দোষ ইউসুফের জেল হয় (নবীদের কাহিনী ১/১৭৭ পৃঃ) সুন্দরী নারীর হাতছানী উপেক্ষা করে ইউসুফ (আঃ) সাত বছর জেল খাটেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করেন। তবুও তিনি নিজের চারিত্রিক নিষ্কলুষতা অটুট রাখেন। শুধুমাত্র আল্লাহভীতির বদৌলতে ইউসুফ (আঃ) নোংরা মহিলার কুপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বিনিময়ে নির্দোষ ইউসুফকে কারা নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছিল। অতএব হে যুবসম্প্রদায়! যাবতীয় নোংরামী ও অশ্লীলতা থেকে নিজেকে বিরত রাখ। তুমিতো আল্লাহভীরু ইউসুফের যোগ্য উত্তরসূরী।
শিক্ষণীয় বিষয় :
(ক) নবীগণ মানুষ ছিলেন এবং মনুষ্যসুলভ স্বাভাবিক প্রবণতাও তাদের মধ্যে ছিল। তবে আল্লাহর বিশেষ ব্যবস্থাপনায় তারা যাবতীয় কাবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত ও নিষ্পাপ ছিলেন।
(খ) জেল-যুলুমসহ দুনিয়াবী বিপদাপদের ভয় থাকলেও নিজের চারিত্রিক নিষ্কলুষতা সর্বদা অটুট রাখতে হবে। তবে কাঙ্খিত সফলতা অর্জন করা যাবে।
(গ) সত্য একদিন প্রকাশিত হবেই। তাই দুনিয়াবী হাতছানী ও অপবাদ উপেক্ষা করে সর্বদা ন্যায় পথে অটল থাকতে হবে।
৪. আছহাবুল উখদূদের ঘটনায় বর্ণিত ঈমানদার যুবক :
দ্বীনে হক্ব প্রতিষ্ঠায় যুবকদের অবদান দিবালোকের ন্যায় ফুটে উটেছে আছহাবুল উখদূদের ঐতিহাসিক ঘটনায়। বনী ইসরাঈলের এক ঈমানদার যুবক নিজের জীবন দিয়ে জাতিকে হক্বের রাস্তা প্রদর্শন করে গেছেন। ছুহাইব বিন সিনান আর রূমী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হতে এ বিষয়ে এক দীর্ঘ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তা সংক্ষেপে এই যে, বহুকাল পূর্বে এক রাজা ছিলেন, যার ছিল এক বৃদ্ধ যাদুকর। তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার আশঙ্কায় একজন বালককে তার নিকটে যাদুবিদ্যা শেখার জন্য নিযুক্ত করা হয়। বালকটির নাম ‘আব্দুল্লাহ ইবনুছ ছামের’। তার যাতায়াতের পথে একটি গীর্জায় একজন পাদ্রী ছিলেন। বালকটি দৈনিক তার কাছে বসত। পাদ্রীর কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে সে মুসলমান হয়ে যায়। কিন্তু তা গোপন রাখে। একদিন যাতায়াতের পথে বড় একটি হিংস্র জন্তু রাস্তা আটকে রাখে। বালকটি মনে মনে বলল, আজ আমি দেখব, পাদ্রী শ্রেষ্ঠ না যাদুকর শ্রেষ্ঠ? সে তখন একটি পাথর হাতে নিয়ে বলল ‘হে আল্লাহ! পাদ্রীর কর্ম যাদুকরের কর্ম হতে আপনার কাছে অধিক পসন্দনীয় হলে এ জন্তুটিকে মেরে ফেলুন। এই বলে সে পাথরটি নিক্ষেপ করল এবং ঐ পাথরের আঘাতে জন্তুটি মারা পড়ল।
অতঃপর এ খবর পাদ্রীয় কানে পৌঁছে গেল। তিনি বালকটিকে ডেকে বললেন, ‘হে বৎস’ তুমি এখনই আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠেছ। শীঘ্রই তুমি পরীক্ষায় পড়বে। যদি পড়, তবে আমার কথা প্রকাশ করে দিও না। বালকটির কারামত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তার দো‘আয় জন্মান্ধ ব্যক্তি চক্ষুষ্মান হতে লাগল, কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি নিরাময় হতে লাগল এবং লোকজন অন্যান্য রোগ হতেও আরোগ্য লাভ করতে লাগল। ঘটনাক্রমে রাজার এক সভাসদ ঐ সময় অন্ধ হয়ে যান। তিনি বহু মূল্যের উপঢৌকনাদি নিয়ে বালকটির নিকট গমন করেন। বালকটি তাকে বলে, ‘আমি কাউকে রোগমুক্ত করি না। এটা কেবল আল্লাহ করেন। এক্ষণে যদি আপনি আল্লাহর উপর ঈমান আনেন তাহলে আমি আল্লাহর নিকট দো‘আ করতে পারি। তাতে হয়ত তিনি আপনাকে আরোগ্য দান করবেন’। মন্ত্রী ঈমান আনলে বালক দো‘আ করল। অতঃপর তিনি দৃষ্টি শক্তি পেলেন। পরে রাজদরবারে গেলে রাজার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, আমার পালনকর্তা আমাকে সুস্থ করেছেন। রাজা বললেন, আমি ছাড়া তোমার রব আছে কি? মন্ত্রী বললেন, আমার ও আপনার উভয়ের রব আল্লাহ। তখন রাজার হুকুমে তার উপর নির্যাতন শুরু হয়। একপর্যায়ে তিনি উক্ত বালকের নাম বলে দেন। বালককে ধরে এনে একই প্রশ্নের অভিন্ন জবাব পেয়ে তার উপর চালানো হয় কঠোর নির্যাতন। ফলে একপর্যায়ে সেও পাদ্রীর কথা বলে দেয়। তখন পাদ্রীকে ধরে আনা হলে তিনিও একই জবাব দেন। রাজা তাদেরকে তাদের দ্বীন ত্যাগ করতে বললে তারা অস্বীকার করেন। তখন পাদ্রী ও মন্ত্রীকে জীবন্ত অবস্থায় করাতে চিরে তাদের মাথাসহ দেহকে দ্বিখন্ডিত করা হয়।
অতঃপর একইভাবে বালকটিও দ্বীন পরিত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে কিছু সৈন্যের সাথে উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় তুলে সেখান থেকে ফেলে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে, পাহাড় কেঁপে উঠে, এতে তার সঙ্গী সাথীরা পাহাড়ের চূড়া হতে নিচে পড়ে মারা যায় এবং বালকটি প্রাণে রক্ষা পায়। অতঃপর তাকে নৌকায় করে সমুদ্রের মাঝখানে নিয়ে পানিতে ফেলে দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু নৌকা উল্টে রাজার লোকজন মারা পড়ে এবং বালকটি বেঁচে যায়। দু’বারই বালকটি আল্লাহর নিকটে দো‘আ করেছিল, হে আল্লাহ! আপনার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে এদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করুন।’ পরে বালকটি রাজাকে বলল, আপনি আমার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ না করলে আমাকে হত্যা করতে পারবেন না। রাজা বলল, সেটা কী? বালকটি বলল, আপনি সমস্ত লোককে একটি ময়দানে জমা করুন এবং সেই ময়দানে একটি খেজুর গাছের গুঁড়ি পুঁতে তার উপরিভাগে আমাকে বেঁধে রাখুন। অতঃপর আমার তূণীর হতে একটি তীর ধনুকে সংযোজিত করে নিক্ষেপের সময় বলুন, بسم الله رب الغلام ‘বালকটির রব আল্লাহর নামে’! রাজা তাই করলেন এবং বালকটি মারা গেল। এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত জনগণ বলে উঠল, আমরা বালকটির রবের প্রতি ঈমান আনলাম। তখন রাজার নির্দেশে বড় বড় গর্ত খুঁড়ে বিশাল অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে সবাইকে হত্যা করা হল। নিক্ষেপের আগে প্রত্যেককে দ্বীনে হক্ব ত্যাগের বিনিময়ে মুক্তির কথা বলা হয়। কিন্তু কেউ তা মানেনি। শেষদিকে একজন রমণীকে তার শিশুসন্তানসহ উপস্থিত করা হল। রমণীটি আগুনে ঝাঁপ দিতে ইতস্ততবোধ করতে থাকলে শিশুটি বলে উঠন إصبر يا امه! فانك علي الحق ‘হে আমার মা! ছবর (করতঃ আগুনে প্রবেশ) করুন। কেননা আপনি হক্ব পথে আছেন’।[3] এ ঘটনা থেকে আমরা জানতে পারি যে, একজন যুবক দ্বীনে হক্বকে প্রচারের খাতিরে স্বেচ্ছায় নিজের হত্যার কৌশল শত্রুর নিকট ব্যক্ত করেছিল। ফলে তার আত্মত্যাগের বিনিময়ে হাযার হাযার নারী পুরুষ শিরক বর্জন করে তাওহীদ গ্রহণ করতঃ পরকালীন মুক্তির দিশা খুঁজে পেয়েছিল। এমনিভাবে যুবকদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে সমাজে দাম্ভিকদের দম্ভ চূর্ণ হয়ে তদস্থলে হক্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং হবে ইনশাআল্লাহ। অকর্মণ্য তরুণ সমাজ উক্ত ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে কি!
শিক্ষণীয় বিষয় :
(ক) প্রত্যেক আদম সন্তান স্বভাবধর্ম ইসলামের উপর জন্ম গ্রহণ করে।
(খ) রোগ-মুক্তির মালিক একমাত্র আল্লাহ; কোন ভন্ড ওলী, দরবেশ, পীর-ফকীর, সাধু-সন্ন্যাসী বা তাবীয-কবয নয়।
(গ) যাবতীয় যাদু-বিদ্যা ও শিরকী কর্মকান্ড ত্যাগ করে আল্লাহর কালাম শিক্ষা করতে হবে।
(ঘ) হক্ব পথের নির্ভীক সৈনিকরা জীবনের তরে কখনো বাতিলের সামনে ঈমান বিকিয়ে দেয় না।
(ঙ) একজন হক্বপন্থী তরুণ ও যুবকের আত্মত্যাগের বিনিময়েই পৃথিবীতে হাযার হাযার মানুষ শিরকী পথ বর্জন করে জান্নাতী পথে জীবন উৎসর্গ করেছে। অতএব যুবকগণ এগিয়ে আসুন সেই জান্নাতী পথে।
৫. সাইয়েদুশ শুহাদা হামযা বিন আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) :
ইসলামের প্রাথমিক যুগে যখন মক্কার বিস্তৃত অঞ্চল অন্যায় ও অত্যাচারের ঘনকালো মেঘমালা দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল, মুসলমানগণ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন, সে সময় যে সকল অকুতোভয় যুবক ছাহাবী ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় বুকের তাজা খুন ঝরিয়েছিলেন, বাতিলের বিরুদ্ধে হক্বের ঝান্ডা উড্ডীন করতে শাহাদতের অমীয় পেয়ালা পান করেছিলেন হামযাহ বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব (ছাঃ) ছিলেন তাদের অন্যতম। তিনি মহানবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নবুওঅত প্রাপ্তির ৬ষ্ঠ নববী বর্ষের শেষ দিকে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী। ঘটনাটি হল, যিলহজ্জ মাসের কোন একদিনে ছাফা পাহাড়ের পাশ দিয়ে যাবার সময় আবু জাহল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখে প্রথমে অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজ করল এবং অনেক অপমান সূচক কথাবার্তা বলল। তাতে তাঁর কোন প্রত্যুত্তর ও ভাবান্তর দেখতে না পেয়ে অবশেষে আবু জাহল একটা পাথর তুলে রাসূলের (ছাঃ) মাথায় আঘাত করল। তাতে তাঁর মাথা ফেটে রক্তধারা প্রবাহিত হতে থাকল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) চুপচাপ সবকিছু সহ্য করলেন।
আবু জাহল অতঃপর কা‘বা ঘরের নিকটে গিয়ে তার দলবলের সাথে বসে উক্ত কাজের জন্য গৌরব যাহির করতে থাকল। আব্দুল্লাহ বিন জুদ‘আনের জনৈক দাসী ছাফা পাহাড়ের উপরে তার বাসা থেকে এ ঘটনা আদ্যোপান্ত অবলোকন করে। ঐ সময় বীর সেনানী যুবক হামযা বিন আব্দুল মুত্তালিব শিকার থেকে তীর ধনুক সুসজ্জিত অবস্থায় ঘরে ফিরছিলেন। উল্লেখ্য যে, হামযাহ (রাঃ) শিকারে খুবই দক্ষ ছিলেন। তখন উক্ত দাসীর নিকট সব ঘটনা শুনে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে কালমুহূর্ত বিলম্ব না করে হামযা (রাঃ) ছুটলেন আবু জাহলের খোঁজে। তিনি ছিলেন কুরায়েশগণের মধ্যে মহাবীর ও শক্তিশালী যুবক। খোঁজ করতে করতে তাকে পেলেন মসজিদুল হারামে। সেখানে তিনি তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তীব্র ভাষায় গালিগালাজ করে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন, يا مُصَفِّرَ اسْتَه تشتم ابن أخي وأنا على دينه ‘হে গুহ্যদ্বার দিয়ে রায়ু নিঃসরণকারী (অর্থাৎ কাপুরুষ)! তুমি আমার ভাতিজাকে গালি দিয়েছ, অথচ আমি তার দ্বীনের উপরে আছি? এরপর ধনুক দিয়ে তার মাথায় এমন জোরে আঘাত করলেন যে, সে চরমভাবে যখম হয়ে রক্তাক্ত হয়ে গেল। ফলে আবু জাহলের বনু মাখযূম গোত্র এবং হামযাহর বনু হাশেম গোত্র পরস্পরের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। এমতাবস্থায় আবু জাহল নিজের দোষ স্বীকার করে নিজ গোত্রকে নিরস্ত করল। ফলে আসন্ন খুনোখুনি হতে উভয় পক্ষ বেঁচে গেল।[4] হামযাহর ইসলাম কবুলের এই ঘটনাটি ছিল আকস্মিক এবং ভাতিজার প্রতি ভালবাসার টানে। অতঃপর আল্লাহ তার অন্তরকে ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন এবং নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য তিনি শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য স্তম্ভরূপে আর্বিভুত হন। হামযাহ (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের পর নিমেণাক্ত কবিতাটি আবৃত্তি করেন!
حمدت الله حين هدي فوادي * الي الاسلام والدين الحنيف
لدين جاء من رب عزيز* خبير بالعباد بهم لطيف
اذا تليت رسائله علينا* تحدر دمع ذي اللب الحصيف
رسائل حاء احمد من هداها* بايات مبينة الحروف
‘আমি মহান আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করছি, যেহেতু তিনি আমার অন্তরকে ইসলামের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন এবং একনিষ্ঠ এক দ্বীনের দিকে আমাকে হেদায়াত দান করেছেন। সেটা এমন এক দ্বীন, যা পরাক্রমশালী প্রভুর পক্ষ থেকে এসেছে। সেই প্রভু স্বীয় বান্দাদের খবর রাখেন এবং তাদের ব্যাপারে অত্যন্ত দয়ালু। যখন তাঁর গ্রন্থ আমাদের নিকট তেলাওয়াত করা হয়, তখন কঠিন হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তির চোখ থেকে অবিরত ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। যে গ্রন্থ আহমাদ নিয়ে এসেছেন এবং যার আয়াত দ্বারা হেদায়াত করেছেন। এর আয়াত সুস্পষ্ট হরফ (অক্ষর) দ্বারা সন্নিবেশিত।[5]
ইসলাম গ্রহণের পর হামযাহ (রাঃ) অনেক জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন। ‘সারিয়াতু হামাযাহ’ সংঘটিত হওয়ার সময় (১ম হিজরীর রামাযান মাসে) ইসলামের সর্বপ্রথম ঝান্ডা হামযাহ (রাঃ)-কে প্রদান করা হয়। ‘আবওয়া’র যুদ্ধেও মহানবী (ছাঃ) হামযাহকে নেতা ও ঝান্ডাবাহী এবং ‘যুল আশীরা’র যুদ্ধেও তাঁকে ঝান্ডাবাহী নিযুক্ত করেছিলেন। বদর যুদ্ধে শায়বাহ মতান্তরে উৎবাহসহ অনেক কুরাইশ নেতা ও সৈন্য তাঁর হাতে নিহত হয়েছিল। ২য় হিজরীর শাওয়াল মাসে সংঘটিত বনু কাইনুকার যুদ্ধেও তিনি অংশ গ্রহণ করেছিলেন এবং মহানবী (ছাঃ) এ যুদ্ধেও তাঁকে ইসলামী বাহিনীর পতাকা অর্পণ করেছিলেন। তৃতীয় হিজরীর ৭ই শাওয়াল শনিবার সকালে সংঘটিত ওহোদ যুদ্ধে যুবক হামযাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) শাহাদত বরণ করেন। তাঁর শাহাদতের ঘটনা হল, ওহোদ যুদ্ধে আলী, তালহা, যুবায়ের, সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাছ ও আবু দুজানাহ সহ অন্যান্য জানবায মুসলিম বীরদের মত হামযাহ (রাঃ) যুদ্ধ করছিলেন। এ যুদ্ধে তাঁর বীরত্ব ছিল কিংবদন্তিতুল্য। প্রতিপক্ষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তিনি সিংহ বিক্রমে লড়াই করছিলেন। তিনি দু’হাতে এমনভাবে তরবারি পরিচালনা করছিলেন যে, শত্রুপক্ষের কেউ তাঁর সামনে টিকতে না পেরে সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এদিকে মক্কার নেতা যুবাইর ইবনু মুত্বঈ‘মের হাবশী গোলাম ওয়াহশী বিন হারব একটি ছোট বর্শা হাতে নিয়ে একটি গাছ বা পাথরের আড়ালে ওঁৎ পেতে বসেছিল হামযাহ (রাঃ)-কে নাগালে পাওয়ার জন্য। জুবায়ের তার চাচা তু‘আইমা বিন ‘আদী হত্যার পরিবর্তে ওয়াহশীকে নিযুক্ত করেছিল হামযাহকে হত্যা করার জন্য। আর এর বিনিময়ে তাকে মুক্ত করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছ্যিল। বদর যুদ্ধে তু‘আইমা হামযাহ (রাঃ)-এর হাতে নিহত হয়েছিল।
যুদ্ধের এক পর্যায়ে সিবা‘ (سباع ) বিন আব্দুল ওযযা হামযার সামনে আসলে তিনি তাতে আঘাত করেন। ফলে তার মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তিনি সামনে অগ্রসর হতে থাকেন। এদিকে বর্শা তাক করে বসে থাকা ওয়াহশী সুযোগমত হামযার অগোচরে তাঁর দিকে বর্শা ছুঁড়ে মারে। যা তার নাভীর নীচে ভেদ করে ওপারে চলে যায়। এরপরেও তিনি তার দিকে তেড়ে যেতে লাগলে পড়ে যান এবং কিছুক্ষণ পরেই শাহাদত বরণ করেন।[6] এ যুদ্ধে শহীদ হওয়ার আগ পর্যন্ত হামযাহ একাই ৩০ জনের অধিক শত্রু সেনাকে হত্যা করেন।[7] আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিন উৎবাহ বদর যুদ্ধে তার পিতার হত্যাকারী হামযার উপরে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তার বুক ফেড়ে কলিজা বের করে নিয়ে চিবাতে থাকে এবং তাঁর নাক ও কান কেটে কণ্টহার বানায়। হামযাহ (রাঃ)- কে ‘সাইয়েদুশ শুহাদা’ শহীদগণের নেতারুপে এবং আসাদুল্লাহ ও আসাদু রাসূলিল্লাহ (আল্লাহর সিংহ ও আল্লাহ্ র রাসূলের সিংহ) আখ্যায়িত করা হয়।[8] শাহাদতের পর হামযার (রাঃ) বোন ছাফিয়াহ স্বীয়পুত্র যুবাইরকে দু’টি চাদর দিয়ে তাঁর দাফন সম্পন্ন করতে বলেন। কিন্তু এক আনছারীর লাশ তাঁর পাশেই পড়ে থাকতে দেখে আনছারীকে এক চাদরে ও হামযাহকে এক চাদরে কাফন দেয়া হয়। কিন্তু কাপড় এত ছোট ছিল যে, হামযার মাথা ঢাকলে পা বেরিয়ে আসত এবং পা ঢাকলে মাথা বেরিয়ে পড়ত। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নির্দেশে মাথা ও মুখমন্ডল ঢেকে দেয়া হয় ও পায়ের উপর ইযখির ঘাস চাপিয়ে দেয়া হয় এবং তাঁকে ও তাঁর ভাগ্নে আব্দুল্লাহ বিন জাহশকে একই কবরে ওহোদ প্রান্তরে (শহীদের কবরস্থানে) সমাহিত করা হয়। তাঁর জানাযায় দাঁড়িয়ে রাসূল (ছাঃ) এমনভাবে কাঁদেন যে শব্দ উঁচু হয়ে যায়।[9] তাঁর সম্পর্কে মহানবী (ছাঃ) বলেছেন,
دَخَلْتُ الْجَنَّةَ الْبَارِحَةَ فَنَظَرْتُ فِيهَا فَإِذَا جَعْفَرٌ يَطِيرُ مَعَ الْمَلاَئِكَةِ وَإِذَا حَمْزَةُ مُتَّكِئٌ عَلَى سَرِيرٍ
‘আমি গত রাতে জান্নাতে প্রবেশ করে দেখলাম, জা‘ফর ফেরেশতাদের সাথে উড়ে বেড়াচ্ছেন আর হামযাহ একটি আসনের উপর ঠেস দিয়ে বসে আসেন।[10] সাইয়েদুশ শুহাদা হামযাহ (রাঃ)-এর ত্যাগের প্রতি লক্ষ্য রেখে যুবকদেরকে সমাজ সংস্কারে ও হক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। (চলবে)
[লেখক : কেন্দ্রীয় পরিচালক, সোনামণি ও শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী]