বেপর্দা নারীর মসজিদে প্রবেশ
প্রশ্ন : আমি এবং আমার দুই বান্ধবী ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের জন্য মসজিদে যেতে চাই; কিন্তু তারা দুজন পর্দা করে না। তাদের জন্য কি নিজেদের অভ্যস্ত পোশাকের সঙ্গে কেবল ওড়না পেচিয়ে মসজিদে যাওয়া জায়েয হবে?
উত্তর : পর্দাহীনতা ফিতনা ডেকে আনে। এটি কেবল খোদ মেয়েটির জন্যই অনিষ্টকর নয়, তাকে যারা দেখবে তাদের জন্যও অনিষ্টের কারণ। তার পর্দাহীনতা ও সৌন্দর্যপ্রদর্শনের ফলে কোনো পাপাচারী কথা বা কাজের মাধ্যমে অবৈধ কিছু করে বসবে। তাছাড়া পর্দাহীন নারী যতই নিজেকে ভালো দাবি করেন না কেন তাকে কেন্দ্র করে সমাজে গুনাহ ছড়ানোই স্বাভাবিক। কারণ, তিনি নিজে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের দাবি করলেও অন্যকে নিয়ন্ত্রণের দাবি করতে পারেন না। সেহেতু পর্দাহীনতার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا، قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ، رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ، وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا»
‘দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী হবে, যাদের আমি আমার যুগে দেখতে পাব না। এক শ্রেণীর লোক, তারা এমন এক সম্প্রদায়, তাদের সাথে থাকবে গরুর লেজের মত এক ধরনের লাঠি যদ্বারা তারা মানুষকে পিটাবে। অপর শ্রেণী হল, কাপড় পরিহিতা নারী, অথচ নগ্ন, তারা পুরুষদেরকে আকৃষ্টকারী ও নিজেরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের মাথা হবে উটের চোটের মত বাঁকা। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের সু-ঘ্রাণও তারা পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে।’ [মুসলিম : ২১২৮]
দ্বিতীয়ত. মুসলিমমাত্রই অন্যের হেদায়েত, তার সত্য গ্রহণ ও তাতে অবিচলতায় আগ্রহী। সুতরাং এই বোনদের মসজিদে প্রবেশে হয়তো তাদের অনেক উপকারে লাগতে পারে। যেমন তারা সেখানে সালাত আদায় করবেন, উত্তম উপদেশ ও ওয়াজ-নসিহত শুনবেন, যা থেকে তাদের অন্তর প্রভাবিত হবে। তেমনি মসজিদের ঈমানী পরিবেশ তাদের অন্তরে ঈমান সৃষ্টি করবে এবং উদাসী মনকে জাগ্রত করবে। এ কারণে আপনার কর্তব্য হবে প্রাথমিকভাবে ওড়না পরে এবং মাথা ঢেকে এ বোনদেরকে মসজিদে নিয়ে যেতে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থাকা। পরে তাদের ধারাবাহিকভাবে পুরু ও প্রশস্ত কাপড় পরিধানের উপদেশ দিয়ে যেতে থাকা।
তৃতীয়ত. আল্লাহ তায়ালা মসজিদকে পবিত্র রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং এর পবিত্র ও সম্মানের পরিপন্থী সব কিছু থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন,
﴿ فِي بُيُوتٍ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ وَيُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ يُسَبِّحُ لَهُۥ فِيهَا بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡأٓصَالِ ٣٦ ﴾ [النور: ٣٦]
‘আল্লাহ যেসব গৃহকে মর্যাদায় উন্নীত করার এবং সেগুলোতে তাঁর নাম উচ্চারণ করার আদেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে।’ {সূরা আন-নূর : ৩৬}
হাফেজ ইবনে কাছীর (রহ.) বলেন,
أي: أمر الله تعالى برفعها ، أي: بتطهيرها من الدنس واللغو ، والأفعال والأقوال التي لا تليق فيها
‘আল্লাহ তায়ালা এর মর্যাদা বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন অর্থাৎ একে অপবিত্রতা ও অনর্থকতা এবং এর মর্যাদাবিরোধী কথা ও কর্ম থেকে পবিত্র রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (তাফসীরে ইবন কাছীর : ৬/৬২)
বেপর্দা নারীদের মসজিদে প্রবেশে ছাড় দিলে তা রাস্তাঘাট ও বাজারের ফিতনা আল্লাহ তায়ালার ঘর পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যেতে পারে। তথাপি বেপর্দা মুসলিম নারী যখন তার ফিতনা কমিয়ে ফেলবে, তার গুনাহ কাফেরের কুফরি থেকে তো বেশি ক্ষতিকর নয়, অথচ প্রয়োজনবশত কাফেরের মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়।
শায়খ বিন বাজ রহিমাহুল্লাহ বলেন,
لا حرج في دخول الكافر المسجد إذا كان لغرض شرعي وأمر مباح ؛ كأن يسمع الموعظة ، أو يشرب من الماء ، أو نحو ذلك ؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم أنزل بعض الوفود الكافرة في مسجده صلى الله عليه وسلم ؛ ليشاهدوا المصلين ، ويسمعوا قراءته صلى الله عليه وسلم وخطبه ، وليدعوهم إلى الله من قريب ، ولأنه صلى الله عليه وسلم ربط ثمامة بن أثال الحنفي في المسجد لما أتي به إليه أسيرا ، فهداه الله وأسلم . والله ولي التوفيق .
‘অমুসলিমের মসজিদে প্রবেশে কোনো অসুবিধা নেই যদি তা হয় কোনো ধর্মীয় বা বৈধ প্রয়োজনে। যেমন ধর্মীয় উপদেশ শ্রবণ, পানি পান বা এ জাতীয় কোনো প্রয়োজন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক অমুসলিম কাফেলাকে মসজিদে নববীতে এনেছেন যাতে তারা মুসল্লিদের দেখতে পারে এবং তাঁর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআন তেলাওয়াত ও খুতবা শুনতে পারে। যাতে তিনি তাদেরকে আল্লাহর প্রতি ডাকতে পারেন কাছে থেকে। তেমনি তিনি ছুমামা বিন আছাল হানাফীকে মসজিদে বেঁধে রেখেছিলেন যখন তাকে বন্দি করে আনা হয়। ফলে আল্লাহ তাকে হেদায়েত দেন এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।’ (মাজমু‘ ফাতাওয়া ওয়া মাকালাত বিন বায : ৮/৩৫৬)
অতএব আপনার বান্ধবী যদি কল্যাণের প্রতি আগ্রহী হন এবং তাদের মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্য হয় নগ্নতা না ছড়িয়ে উপকৃত হওয়া আর তারা তাদের মাথার চুল ঢাকা ও যথাসাধ্য মোটা কাপড় পরিধান ইত্যাদির মাধ্যমে ফিতনাগুলো কমানোর চেষ্টা করেন তাহলে আশা করা তাদেরকে মসজিদে এসব দরসে সংযুক্ত করলে তাদের জন্য কল্যাণের দরজা খুলে যাবে। আল্লাহর শরীয়ত পরিপালনে তাদের পথ উন্মুক্ত হবে। অতএব আপনি তাদের এতে উদ্বুদ্ধ করুন। (আল্লাহই ভালো জানেন।)
– ইসলাম কিউ এন্ড এ
– অনুবাদ : আলী হাসান তৈয়ব
আসসালামু আলাইকুম । ১। মেয়েদের কালো চুলে কৃত্রিম বা প্রাকৃতিকভাবে আরো কালো করা যাবে কি ?
২। ছবি তোলা এবং ভিডিও করে রাখায় শাস্তি কি ?
৩। খাবার পূর্বে ও পরে লবণ খাওয়া কি সুন্নাত ?