পরিবার ও দাম্পত্য

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব

মানুষ একে অপরের সাথে বিভিন্ন সম্পর্কে জড়িত। মানুষের মাঝের এই সম্পর্কের নাম হচ্ছে ‘আত্মীয়তা’। পরস্পরের সাথে জড়িত মানুষ হচ্ছে একে অপরের ‘আত্মীয়’। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে আত্মীয়তার সম্পর্ক সর্বতোভাবে জড়িত। আত্মীয় ছাড়া এ জীবন অচল। আত্মীয়দের সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও ভালবাসা নিয়েই মানুষ এ পার্থিব জীবনে বেঁচে থাকে। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় না থাকলে জীবন হয়ে যায় নীরস, আনন্দহীন, একাকী ও বিচ্ছিন্ন। তাই পার্থিব জীবনে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কেই আলোচ্য নিবন্ধে আলোকপাত করা হবে ইনশাআল্লাহ।

আত্মীয়র পরিচয় :

‘আত্মীয়’ শব্দের অর্থ হচ্ছে স্বজন, জ্ঞাতি, কুটুম্ব। এর আরবী প্রতিশব্দ হচ্ছে الرَّحِمُ (আর-রাহিমু) বা ذُو الرَّحِمِ (যুর রাহিমে)। আত্মীয়তা-এর ইংরেজী প্রতিশব্দ হচ্ছে Relationship. এর সংজ্ঞায় Oxford অভিধানে বলা হয়েছে The way in which two people, groups or countries behave towards each othe or deal with each other. অর্থাৎ এমন পথ-পন্থা যাতে দু’ব্যক্তি, দল বা দেশ পরস্পরের সাথে সদাচরণ করে বা পরস্পরে আলোচনা করে’।[1]

কেউ কেউ বলেন, وهم من بينه وبين الآخر نسب سواء كان يرثه أم لاَ سواء كان ذا محرم أم لا- ‘আত্মীয় হচ্ছে তারা যাদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে, তারা সম্পদের উত্তরাধিকারী হোক বা না হোক, মাহরাম হোক বা না হোক’।[2]

আত্মীয়তার সম্পর্কের তাৎপর্য :

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার অর্থ ও তাৎপর্য হচ্ছে স্বজন ও আপনজনের সার্বিক খোঁজ-খবর রাখা ও তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা। ইবনুল আছীর বলেন, وهي كناية عن الاحسان إلى الأقربين من ذوى النسب والأصهار، والعطف عليهم والرفق لهم والرعاية لأحوالهم وكذلك أن بعدوا وأساءوا- ‘এটা হচ্ছে বংশীয় ও বৈবাহিক সম্পর্কীয় আত্মীয়দের প্রতি অনুগ্রহ-অনুকম্পা প্রদর্শন করা, তাদের প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল হওয়া, তাদের অবস্থার প্রতি খেয়াল রাখা, যদিও তারা দূরে চলে যায় এবং খারাপ আচরণ করে।[3]

আত্মীয়তার প্রকার :

আত্মীয় প্রধানত দু’প্রকার। যথা- (১) রক্ত সম্পর্কীয় বা বংশীয়। যেমন পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, ভাইবোন, চাচা-চাচী, মামা-খালা ইত্যাদি। (২) বিবাহ সম্পর্কীয়। যেমন শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, শ্যালক-শ্যালিকা ইত্যাদি। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّكُمْ سَتَفْتَحُوْنَ مِصْرَ وَهِىَ أَرْضٌ يُسَمَّى فِيْهَا الْقِيْرَاطُ فَإِذَا فَتَحْتُمُوْهَا فَأَحْسِنُوْا إِلَى أَهْلِهَا فَإِنَّ لَهُمْ ذِمَّةً وَرَحِمًا. أَوْ قَالَ ذِمَّةً وَصِهْرًا-  ‘নিশ্চয়ই তোমরা অচিরেই মিসর জয় করবে। সেটা এমন একটি ভূমি যাকে ‘কবীরাত্ব’ বলা হয়। অর্থাৎ যেখানে দীনার-দিরহামের প্রাচুর্য রয়েছে। যখন তোমরা সেটা জয় করবে, তখন সেখানকার অধিবাসীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে। কেননা তাদের জ্ঞাতি সম্পর্ক রয়েছে। অথবা তিনি বলেছেন, বংশীয় ও বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে’। অর্থাৎ ইসমাঈল (আঃ)-এর মাতা হাজেরার দিক দিয়ে বংশীয় বা রক্ত সম্পর্ক এবং রাসূলপত্নী মারিয়া কিবতিয়ার দিক দিয়ে বৈবাহিক সম্পর্ক।[4]

পরিত্যক্ত সম্পদের অধিকারী হওয়ার দিক দিয়ে আত্মীয় দু’প্রকার। (১) উত্তরাধিকারী; যেমন- পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা প্রভৃতি (২) উত্তরাধিকারী নয়; যেমন- চাচা-চাচী, মামা-খালা ইত্যাদি।

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার হুকুম :

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার হুকুম ফরয, সুন্নাত ও বৈধ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে অবস্থার প্রেক্ষিতে এবং আত্মীয়দের ভিন্নতার কারণে। তবে সাধারণভাবে সবার সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখা ওয়াজিব এবং সম্পর্ক ছিন্ন করা সকলের ঐক্যমতে হারাম। তবে কারো কারো নিকটে কবীরা গোনাহ।

(১) ফরয : পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা ফরয। কেননা আল্লাহ বলেন, وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْناً ‘আমরা মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে’ (আনকাবূত ২৯/৮)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيْماً، وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْراً-  ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত না করতে ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হ’লে তাদেরকে উফ বল না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বল’, মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন’ (ইসরা ১৭/২৩-২৪)

পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে হাদীছে অনেক নির্দেশ এসেছে। আর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করাকে বড় গোনাহ বলা হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তিনবার বললেন,أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ. ثَلاَثًا. قَالُوْا بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ. قَالَ الإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ. وَجَلَسَ وَكَانَ مُتَّكِئًا فَقَالَ أَلاَ وَقَوْلُ الزُّوْرِ. ‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহগুলো সম্পর্কে অবহিত করব না? সকলে বললেন, হ্যাঁ, বলুন হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শরীক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্যতা। অতঃপর তিনি হেলান দেওয়া থেকে সোজা হয়ে বসলেন। এরপর বললেন, সাবধান, মিথ্যা কথা বলা’।[5]

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, এক বেদুইন নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কবীরা গুনাহসমূহ কি? তিনি বললেন,

اَلْإِشْرَاكُ بِاللهِ. قَالَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ ثُمَّ عُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ. قَالَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ الْيَمِيْنُ الْغَمُوْسُ. قُلْتُ وَمَا الْيَمِيْنُ الْغَمُوْسُ؟ قَالَ الَّذِىْ يَقْتَطِعُ مَالَ امْرِئٍ مُسْلِمٍ هُوَ فِيْهَا كَاذِبٌ.

‘আল্লাহর সাথে শরীক করা’। সে বলল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘পিতামাতার অবাধ্যতা। সে বলল, তারপর কোন্টি? তিনি বললেন, ‘মিথ্যা শপথ করা’। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মিথ্যা শপথ কি? তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা (শপথের সাহায্যে) মুসলিমের ধন-সম্পদ হরণ করে নেয়’।[6]

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম,أَىُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ قَالَ الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا. قَالَ ثُمَّ أَىُّ قَالَ ثُمَّ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ. قَالَ ثُمَّ أَىُّ قَالَ الْجِهَادُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ. ‘কোন আমল আল্লাহর নিকটে অধিক প্রিয়। তিনি বললেন, যথাসময়ে ছালাত আদায় করা। ইবনু মাসউদ (রাঃ) বললেন, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, অতঃপর পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। তিনি বললেন, অতঃপর কোন্টি? রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা’।[7]

অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বললেন,

رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ. قِيلَ مَنْ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ.

‘তার নাক ধূলায় ধুসরিত হোক। তার নাক ধূলায় ধুসরিত হোক। তার নাক ধূলায় ধুসরিত হোক’। বলা হ’ল, কার হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)? তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতামাতার একজনকে অথবা উভয়কে বার্ধক্যে পেল, কিন্তু (তাদের সেবা করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না’।[8]

(২) সুন্নাত : অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা সুন্নাত। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশকারী আমল সম্পর্কে অবহিত করতে গিয়ে বলেন, وَتَصِلُ الرَّحِمَ ‘তুমি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে’।[9]

(৩) মানদূব বা বৈধ : কাফির-মুশরিক পিতা-মাতার সাথে সন্তানের সুসম্পর্ক বজায় রাখা বৈধ। যেমন আল্লাহ বলেন, وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوْفًا ‘তবে পৃথিবীতে তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করবে’ (লোক্বমান ৩১/১৫)

আসমা বিনতে আবূ বকর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قَدِمَتْ عَلَىَّ أُمِّىْ وَهْىَ مُشْرِكَةٌ، فِىْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَاسْتَفْتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قُلْتُ إِنَّ أُمِّىْ قَدِمَتْ وَهِىَ رَاغِبَةٌ، أَفَأَصِلُ أُمِّىْ، قَالَ نَعَمْ صِلِى أُمَّكِ.

‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে আমার মা মুশরিক অবস্থায় আমার নিকট আসলেন। আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট ফৎওয়া জিজ্ঞেস করলাম, আমার মা আমার নিকটে এসেছেন, তিনি আমার প্রতি (ভাল ব্যবহার পেতে) খুবই আগ্রহী, এমতাবস্থায় আমি কি তার সঙ্গে সদাচরণ করব? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সাথে সদাচরণ কর’।[10]

আত্মীয়দের মাঝে মর্যাদা বা স্তরের ভিন্নতা :

আত্মীয় নিকটত্ব ও দূরত্বের ভিত্তিতে এবং বংশ ও স্থানের দূরত্বের দৃষ্টিকোণে ভিন্নতর হয়ে থাকে। সুতরাং বংশীয় দিক দিয়ে নিকটাত্মীয় হচ্ছেন পিতা-মাতা। তবে এর মধ্যে মায়ের স্তর ঊর্ধ্বে। যেমন আল্লাহ বলেন, وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْناً عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ ‘আমরা তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ান হয় দুই বৎসরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই নিকট’ (লোক্বমান ৩১/১৪)। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَنْ أَحَقُّ بِحُسْنِ صَحَابَتِى قَالَ أُمُّكَ. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ أُمُّكَ. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ أُمُّكَ. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ أَبُوْكَ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। লোকটি বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। সে বলল, অতঃপর কে? তিনি বললেন, ‘তোমার পিতা’।[11]

অন্যত্র তিনি বলেন, إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ عُقُوقَ الْأُمَّهَاتِ، وَوَأْدَ الْبَنَاتِ، وَمَنَعَ وَهَاتِ، وَكَرِهَ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ، وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ، وَإِضَاعَةَ الْمَالِ. ‘আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর হারাম  করেছেন  মায়ের  অবাধ্যতা  বা  নাফরমানী, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা, কারো প্রাপ্য না দেয়া এবং অন্যায়ভাবে কিছু নেয়া। আর অপসন্দ করেছেন অনর্থক বাক্য ব্যয়, অধিক প্রশ্ন করা এবং মাল বিনষ্ট করা’।[12]

নিকটাত্মীয়ের মধ্যে ভাই-বোনও অন্তর্ভুক্ত। তবে ভাই-বোন বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় হয়ে থাকে। আবার সম্পর্কের কারণে তারা দূরবর্তীও হয়। যেমন চাচাত, মামাত, খালাত, ফুফাত ভাই।

আবার স্থানের দূরত্বের কারণেও স্তরের ভিন্নতা হয়। যেমন নিজ মহল্লা ও নিজ শহরে বসবাসকারী আত্মীয় নিকটের। পক্ষান্তরে ভিন্ন মহল্লায় ও ভিন্ন শহরে বসবাসকারী আত্মীয় দূরের অন্তর্ভুক্ত। তবে রক্ত বা বংশ সম্পর্কিত আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা যরূরী অন্যদের অপেক্ষা। এখানে সময়ের কোন নির্ধারিত সীমা নেই। আজীবন এ সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।

প্রকৃত জ্ঞাতি সম্পর্ক :

কোন ব্যক্তি যখন তার কোন আত্মীয়ের সাক্ষাৎ করার কারণে ঐ আত্মীয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে, এটাকে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা বলে না। বরং এটা হচ্ছে প্রতিদান স্বরূপ। অনুরূপভাবে যদি কোন কাজে সহযোগিতা ও প্রয়োজন পূর্ণ করা হয় আত্মীয়ের অনুরূপ কাজের বিনিময়ে তাহ’লে এটাকেও আত্মীয়তা রক্ষা করা বলা হবে না। এটাও হচ্ছে প্রতিদান বা বিনিময়। বরং প্রকৃত আত্মীয়তা রক্ষা হচ্ছে সম্পর্ক ছিন্ন করা হ’লেও যে তা বজায় রাখে। আত্মীয় দুর্ব্যবহার করলেও যে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে, খোঁজ-খবর নেয়, তারা তার সাথে অসদাচরণ করলেও সে উত্তম আচরণ করে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَيْسَ الْوَاصِلُ بِالْمُكَافِئِ، وَلَكِنِ الْوَاصِلُ الَّذِىْ إِذَا قَطَعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا.  ‘প্রতিদানকারী আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী নয়। বরং আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী সে ব্যক্তি, যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হবার পরও তা বজায় রাখে।[13] অন্য হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করল,

يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ لِىْ قَرَابَةً أَصِلُهُمْ وَيَقْطَعُوْنِىْ وَأُحْسِنُ إِلَيْهِمْ وَيُسِيْئُوْنَ إِلَىَّ وَأَحْلُمُ عَنْهُمْ وَيَجْهَلُوْنَ عَلَىَّ. فَقَالَ لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ فَكَأَنَّمَا تُسِفُّهُمُ الْمَلَّ وَلاَ يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللهِ ظَهِيْرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ.

‘ইয়া রাসূলাল্লাহ (ছাঃ)! আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন রয়েছে, আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি, কিন্তু তারা আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করি কিন্তু তারা আমার সাথে অসদাচরণ করে। তারা আমার সাথে গোয়ার্তুমি করে। আমি সহ্য করে যাই। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘যদি তোমার বক্তব্য ঠিক হয়, তবে তো তুমি যেন তাদের মুখে উত্তপ্ত ছাই পুরে দিচ্ছ। তোমার কারণে তাদের দুর্ভোগ আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এরূপ করতে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ হ’তে একজন সাহায্যকারী তাদের মুকাবিলায় তোমার সাথে থাকবেন’।[14]

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার পদ্ধতি ও উপায় :

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য কতিপয় কাজ করা যরূরী। সেগুলো হচ্ছে-

* তাদের সাথে সাক্ষাৎ করা, তাদের অবস্থা সম্পর্কে লক্ষ্য রাখা এবং তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া। তাদেরকে উপহার-উপঢৌকন প্রদান করা, তাদের যথাযথ সম্মান করা ও মর্যাদা দেওয়া। তাদের মধ্যে যারা দরিদ্র তাদেরকে দান করা।

* আত্মীয়-স্বজন বাড়ীতে আসলে তাদেরকে সানন্দে গ্রহণ করা ও যথাসাধ্য আপ্যায়ন করা এবং মাঝেমধ্যে বাড়ীতে আমন্ত্রণ করা। তাদের কোন অভিযোগ থাকলে তা শোনা ও দূর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা। সর্বোপরি তাদের মর্যাদাকে সবার উপরে স্থান দেওয়া।

* তাদের সুসংবাদে শরীক হওয়া এবং দুঃসংবাদে সহমর্মী ও সমব্যথী হওয়া। তাদের নিরাপত্তা ও সংশোধনের জন্য দো‘আ করা। বিবদমান বিষয় দ্রুত মীমাংসা করা এবং সম্পর্কোন্নয়ন ও মযবূত করণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখা।

* আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে কেউ অসুস্থ হ’লে তাকে দেখতে যাওয়া এবং সাধ্যমত তার সেবা-শুশ্রূষা করা। কোন আত্মীয় দাওয়াত দিলে তার দাওয়াত কবুল করা।

* আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, তাদের হেদায়াতের চেষ্টা করা, সঠিক পথের দিকে তাদেরকে দাওয়াত দেওয়া। সেই সাথে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা, বাধা দেওয়া। আত্মীয়-স্বজন সৎ কর্মশীল হ’লে এবং সঠিক পথে থাকলে এ সম্পর্ক অব্যাহত থাকে। পক্ষান্তরে আত্মীয়-স্বজন কাফের বা পাপাচারী হ’লে তাদেরকে উপদেশ দেওয়া এবং তাদের হেদায়াতের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখা।

* যদি কোন আত্মীয়ের মধ্যে অহংকার, আত্মগৌরব, শত্রুতা ও বিরোধীভাব পরিলক্ষিত হয় অথবা কেউ যদি এই আশংকা করে যে, তার কোন আত্মীয় তাকে প্রত্যাখ্যান করবে ও তার সাথে বাড়াবাড়ি করবে, তাহ’লে তার সাথে নম্রতা অবলম্বন করা অথবা তাদের থেকে এমনভাবে দূরত্ব বজায় রাখা যে, সেটা যেন তাদের কোন কষ্টের কারণ না হয়। আর তাদের জন্য অধিক দো‘আ করা, যাতে আল্লাহ তাদের হেদায়াত করেন। আত্মীয়দের কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযায় শরীক হওয়া।

সর্বোপরি আত্মীয়-স্বজনের সাথে নম্র ব্যবহার এবং তাদের সাথে সদ্ভাব-সম্প্রীতি স্থাপন ও পরস্পর ভালবাসার সৃষ্টির মাধ্যমে এ সম্পর্ক অটুট রাখা যায়।

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব :

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা অতি যরূরী। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالاً فَخُوْرًا ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে ও কোন কিছুকে তাঁর সাথে শরীক করবে না। পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পসন্দ করেন না দাম্ভিক, অহংকারীকে’ (নিসা ৪/৩৬)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِيْ تَسَاءَلُوْنَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا ‘আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা এক অপরের নিকট যাচ্ঞা কর এবং তোমরা সতর্ক থাক জ্ঞাতি-বন্ধন সম্পর্কে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখবেন’ (নিসা ৪/১)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَالَّذِيْنَ يَصِلُوْنَ مَا أَمَرَ اللهُ بِهِ أَنْ يُوْصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُوْنَ سُوْءَ الْحِسَابِ ‘আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুণ্ণ রাখে, ভয় করে তাদের প্রতিপালককে এবং ভয় করে কঠোর হিসাবকে’ (রা‘দ ১৩/২১)

আল্লাহ বলেন,وَإِذْ أَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْ إِسْرائيْلَ لا تَعْبُدُوْنَ إِلاَّ اللهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً وَذِيْ الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ- ‘স্মরণ কর, যখন আমরা বানী ইসরাঈলের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করবে না, পিতামাত, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন ও দরিদ্রদের প্রতি সদয় ব্যবহার করবে’ (বাক্বারাহ ২/৮৩)

তিনি আরো বলেন, فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوْا فِى الأَرْضِ وَتُقَطِّعُوْا أَرْحَامَكُمْ ‘তবে কি (হে মুনাফিক সমাজ!) তোমরা আধিপত্য লাভ করলে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন সমূহকে ছিন্ন করবে?’ (মুহাম্মাদ ৪৭/২২)। অন্যত্র তিনি বলেন, إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالإِحْسَانِ وَإِيتَاء ذِي الْقُرْبَى ‘আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন’ (নাহল ১৬/৯০)। তিনি আরো বলেন, وَآتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ ‘আত্মীয়কে তার অধিকার প্রদান কর’ (বনী ইসরাঈল ১৭/২৬; রূম ৩১/৩৮)

হাদীছেও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে অনেক তাকীদ এসেছে। যেমন- আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন,

لَمَّا أُنْزِلَتْ هَذِهِ الآيَةُ (وَأَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الأَقْرَبِيْنَ) دَعَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قُرَيْشًا فَاجْتَمَعُوْا فَعَمَّ وَخَصَّ فَقَالَ يَا بَنِى كَعْبِ بْنِ لُؤَىٍّ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ يَا بَنِى مُرَّةَ بْنِ كَعْبٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ يَا بَنِى عَبْدِ شَمْسٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ يَا بَنِىْ عَبْدِ مَنَافٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ يَا بَنِى هَاشِمٍ أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ يَا بَنِى عَبْدِ الْمُطَّلِبِ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ يَا فَاطِمَةُ أَنْقِذِىْ نَفْسَكِ مِنَ النَّارِ فَإِنِّىْ لاَ أَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئًا غَيْرَ أَنَّ لَكُمْ رَحِمًا سَأَبُلُّهَا بِبَلاَلِهَا-

অর্থাৎ যখন আয়াত নাযিল হ’ল, وَأَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الأَقْرَبِيْنَ ‘তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক কর’ (শু‘আরা ২৬/২১৪) তখন নবী করীম (ছাঃ) ডাক দিলেন, হে বনী কা‘ব ইবনু লুই! নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন হ’তে রক্ষা কর! হে আবদে মানাফ গোত্রীয় লোকজন! নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন হ’তে রক্ষা কর! হে হাশেম বংশীয়রা! নিজেদেরকে আগুন হ’তে রক্ষা কর! হে আব্দুল মুত্তালিবের বংশের লোকজন! নিজেদেরকে আগুন হ’তে রক্ষা কর! হে মুহাম্মাদ তনয়া ফাতেমা! নিজেকে আগুন হ’তে রক্ষা কর! নতুবা আমি তোমাকে আল্লাহর কোপানল হ’তে রক্ষা করতে পারব না, আমার করার কিছুই থাকবে না; কেবল তোমরা যে আমার রক্তের বন্ধনে বাঁধা, এই যা আমি আমার রক্তের হক আদায় করি’।[15]

আবূ আইয়ূব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈক ছাহাবী নবী করীম (ছাঃ)-কে বললেন,أَخْبِرْنِىْ بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِى الْجَنَّةَ. قَالَ مَا لَهُ مَا لَهُ وَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم أَرَبٌ مَالَهُ، تَعْبُدُ اللهَ، وَلاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ، وَتُؤْتِى الزَّكَاةَ، وَتَصِلُ الرَّحِمَ. ‘আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘তার কী হয়েছে! তার কী হয়েছে! এবং বললেন, তার দরকার রয়েছে তো। তুমি আল্লাহর ‘ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে অপর কোন কিছুকে শরীক করবে না। ছালাত আদায় করবে, যাকাত আদায় করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখবে’।[16]

আবূ আইঊব আনছারী (রাঃ) বলেন, জনৈক বেদুঈন নবী করীম (ছাঃ)-এর এক ভ্রমণকালে তাঁর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করল, أَخْبِرْنِيْ مَا يُقَرِّبُنِيْ مِنَ الْجَنَّةِ، وَيُبَاعِدُنِيْ مِنَ النَّارِ؟ قَالَ تَعْبُدُ اللهَ وَلا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيْمُ الصَّلاةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَصِلُ الرَّحِم ‘যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম হ’তে দূরবর্তী করবে, সে সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। তিনি বললেন, ‘ইবাদত করবে আল্লাহর এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবে না। ছালাত কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে’।[17]

রোমের বাদশাহ হিরাকল আবু সুফিয়ানকে যে প্রশ্ন করেছিল, সে সম্পর্কিত হাদীছে আছে,

قَالَ مَاذَا يَأْمُرُكُمْ قُلْتُ يَقُوْلُ اعْبُدُوْا اللهَ وَحْدَهُ، وَلاَ تُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا، وَاتْرُكُوْا مَا يَقُوْلُ آبَاؤُكُمْ، وَيَأْمُرُنَا بِالصَّلاَةِ وَالصِّدْقِ وَالْعَفَافِ وَالصِّلَةِ.

‘হিরাকল বলল, তিনি তোমাদের কি আদেশ করেন? আবু সুফিয়ান বলেন, তখন আমি বললাম, তিনি বলেন, ‘তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক কর না। তোমাদের পিতৃপুরুষ যে সবের ইবাদত করত, তা ছেড়ে দাও। তিনি আমাদের আদেশ করেন ছালাত আদায় করতে, ছাদাক্বাহ দিতে, পূতপবিত্র থাকতে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে’।[18]

উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা এবং ঐ সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ ও অটুট রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা সবার জন্য আবশ্যক। যে ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। এ সম্পর্ক বজায় রাখলে ইহকালীন ও পরকালীন ফায়দা রয়েছে। আবার এ সম্পর্ক ছিন্ন করলে পরকালে শাস্তি রয়েছে। তাই আত্মীয়তার সম্পর্ক সংরক্ষণে আমাদেরকে যথা সম্ভব সচেষ্ট হ’তে হবে।

পরবর্তী অংশ পড়ুন: আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ফযীলত

ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম

 


[1]. A.S. Hornby, Oxford Advanced Learner’s Dictionary, P. 1285.

[2]. আবু ইউসুফ মুহাম্মাদ যায়েদ, তায়্যিবুল কালাম ফী ছিলাতির রাহিম, পৃঃ ১।

[3]. মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম আল-হামদ, কাতীয়াতুর রাহিমে, পৃঃ ৭

[4]. মুসলিম হা/২৫৪৩; মিশকাত হা/৫৯১৬

[5]. বুখারী হা/২৬৫৪; মুসলিম হা/৮৭ তিরমিযী হা/১৯০১

[6]. বুখারী হা/৬৯২০; আবু দাউদ হা/২৮৭৫

[7]. বুখারী হা/৫২৭; মুসলিম হা/৮৫

[8]. মুসলিম হা/২৫৫১

[9]. বুখারী হা/১৩৯৬; মাল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৯

[10]. বুখারী হা/২৬২০; মুসলিম হা/১০০৩

[11]. বুখারী হা/৫৯৭১; মুসলিম হা/২৫৪৮

[12]. বুখারী হা/২৪০৮; মুসলিম হা/২৫৯৩

[13]. বুখারী হা/৫৯৯১; তিরমিযী হা/২০২৩।

[14]. মুসলিম হা/২৫৫৮; মিশকাত হা/৪৯২৪; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫২।

[15]. মুসলিম হা/২০৪; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৮।

[16]. বুখারী হা/১৩৯৬

[17]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৯; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৫০৮।

[18]. বুখারী হা/৭, ২৯৪১।

মন্তব্য করুন

Back to top button