দাওয়াতের পদ্ধতি

আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। আর তাদের সার্বিক জীবন পরিচালনার জন্য ইসলামকে একমাত্র দ্বীন হিসাবে মনোনীত করে তার যাবতীয় বিধি-বিধান অহী মারফত জানিয়ে দিয়েছেন এবং তা বাস্তবায়ন করার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন। আর নবী-রাসূলগণের প্রত্যেকেই দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর যাবতীয় বিধানকে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا تَرَكْتُ شَيْئًا مِمَّا أَمَرَكُمُ اللهُ بِهِ إِلاَّ وَقَدْ أَمَرْتُكُمْ بِهِ وَلاَ تَرَكْتُ شَيْئًا مِمَّا نَهَاكُمُ اللهُ عَنْهُ إِلاَّ وَقَدْ نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ ‘আমি এমন কোন জিনিসই ছাড়িনি যার হুকুম আলস্নাহ তা‘আলা তোমাদেরকে দিয়েছেন; কিন্তু আমি তার হুকুম তোমাদেরকে অবশ্যই দিয়েছি। আর আমি এমন কোন জিনিসই ছাড়িনি যা আল্লাহ তা‘আলা নিষেধ করেছেন; কিন্তু আমি তোমাদেরকে তা অবশ্যই নিষেধ করেছি’।[1] বর্তমানে আমাদের মাঝে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জীবিত নেই। তবে তিনি আমাদের সার্বিক জীবন পরিচালনার দিশারী হিসাবে কুরআন ও ছহীহ হাদীছকে আমাদের মাঝে রেখে গেছেন। আর এই মানদন্ডের ভিত্তিতে আল্লাহর দিকে মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের উপর অর্পিত হয়েছে। এই নিবন্ধে আল্লাহর দিকে মানুষকে দা‘ওয়াত দেওয়ার পথ ও পদ্ধতি আলোচনা করা হল।
আল্লাহর পথে দা‘ওয়াতের পদ্ধতি
মানুষ তার সার্বিক জীবনে ইসলামের বিধান পালনের ক্ষেত্রে একমাত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দেখিয়ে দেওয়া পদ্ধতির অনুসরণ করবে। তিনি যে পদ্ধতিতে মানুষকে দা‘ওয়াত দিয়েছেন, মানুষ ঠিক সে পদ্ধতিতে দা‘ওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করবে। নিম্ন সংক্ষিপ্তভাবে রাসূল (ছাঃ)-এর দা‘ওয়াতের পদ্ধতি আলোচনা করা হল।
(১) الإخلاص তথা খালেছ নিয়তে দা‘ওয়াত দেওয়া : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيْبُهَا أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ ‘নিশ্চয়ই প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে ইহকাল লাভের অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে, তার হিজরত সেদিকেই গণ্য হবে, যে জন্য সে হিজরত করেছে’।[2]
অতএব একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করতে হবে। দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্যে দা‘ওয়াত দিলে সেই দা‘ওয়াতে সফলতা পাওয়া যাবে না এবং পরকালে তার জন্য নেকীর কোন অংশ থাকবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ عَمِلَ مِنْهُمْ عَمَلَ الآخِرَةِ لِلدُّنْيَا لَمْ يَكُنْ لَهُ فِيْ الآخِرَةِ مِنْ نَصِيْبٌ ‘যে ব্যক্তি পরকালীন কোন আমল দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে পালন করবে, পরকালে তার জন্য নেকীর কোন অংশ থাকবে না।[3]
(২) العلم তথা জ্ঞান সহকারে দা‘ওয়াত দেওয়া : আল্লাহর পথে মানুষকে দা‘ওয়াত দেওয়ার পূর্বে কয়েকটি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। যেমন- (ক) যে বিষয়ে দা‘ওয়াত দিবে সে সম্পর্কে ইসলামী শরী‘আতের বিধান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কেননা এ বিষয়ের জ্ঞান না থাকলে সে হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল, ওয়াজিবকে সুন্নাত ও সুন্নাতকে ওয়াজিব মনে করবে এবং সেদিকেই মানুষকে আহবান করবে। ফলে সে নিজে পথভ্রষ্ট হবে ও অন্যকে পথভ্রষ্ট করবে। (খ) যাদেরকে দা‘ওয়াত দিবে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। যেমন- তাদের দ্বীন, আক্বীদা, আমল ও তাদের অর্থনীতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং তাদের অবস্থার উপর ভিত্তি করে দা‘ওয়াতী কার্যক্রম চালাতে হবে। (গ) দা‘ওয়াতে সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلْ هَذِهِ سَبِيْلِيْ أَدْعُو إِلَى اللهِ عَلَى بَصِيْرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِيْ وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- ‘বল, এই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করি জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ মহিমান্বিত এবং যারা আল্লাহর শরীক স্থাপন করে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১২/১০৮)।
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা عَلَى بَصِيْرَةٍ বলতে উল্লিখিত বিষয় সমূহের জ্ঞান অর্জনকেই বুঝিয়েছেন।
(৩) اللين তথা নম্রতার সাথে দা‘ওয়াত দেওয়া : মানুষকে দা‘ওয়াত দেওয়ার সময় নম্রতা বজায় রাখতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ- ‘আল্লাহর রহমতে তুমি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছিলে; যদি তুমি রূঢ় ও কঠোরপ্রাণ হতে তবে তারা তোমার থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর’ (আলে-ইমরান ৩/১৫৯)।
অতএব অবশ্যই নম্রতার সাথে মানুষকে আল্লাহর পথে দা‘ওয়াত দিতে হবে। এমনকি পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে অত্যাচারী শাসক নিজেকে আল্লাহ বলে দাবীকারী ফেরাউনকে পর্যন্ত নম্রতার সাথে দা‘ওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, اذْهَبَا إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى- فَقُوْلَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى- ‘তোমরা উভয়ে ফেরাউনের নিকট যাও, সে তো সীমালংঘন করেছে। তোমরা তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে’ (ত্বহা ২০/৪৩-৪৪)।
(৪) الحكمة তথা দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে হিকমাত অবলম্বন করা : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ادْعُ إِلَى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ- ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের দিকে আহবান কর হিকমাত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়’ (নাহল ১৬/১২৫)।
ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন, আয়াতে উল্লিখিত হিকমাত দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আল্লাহর নাযিলকৃত অহি-র বিধান কুরআন ও সুন্নাত।[4]
আল্লাহ তা‘আলা ‘হিকমাত’ শব্দটি পবিত্র কুরআন মাজীদের ১২ টি সূরায় ১৯ টি আয়াতে ২০ বার উল্লেখ করেছেন। উল্লিখিত ‘হিকমাত’ শব্দের তাফসীর নিয়ে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। তবে সবগুলি মতের সারকথা হল, الإصابة في الأقوال والأفعال، ووضع كل شيئ في موضعه ‘কথায় ও কাজ সমূহে প্রত্যেক জিনিসকে তার নিজ স্থানে স্থাপন করাকে হিকমাত বলা হয়।[5] অর্থাৎ প্রত্যেক কথা ও কর্মকে একমাত্র অহি-র বিধানের আলোকে সঠিক প্রমাণ করা এবং তাকে বাতিলের সাথে মিশিয়ে না ফেলা।
অতএব দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নম্রতা, ভদ্রতা, সহনশীলতা ও সৎকাজের আদেশের মধ্যেই ‘হিকমাত’ সীমাবদ্ধ নয়। বরং প্রত্যেক কথা ও কর্মে হকের উপর অটল থাকা এবং সেই হককে স্থান, কাল ও পাত্রভেদে প্রয়োগ করার নাম হিকমাত। অর্থাৎ প্রয়োজন অনুপাতে নম্রতা, কঠোরতা, সহনশীলতা, ভদ্রতা অবলম্বন করতে হবে। সর্বদা বাতিলের সাথে আপেসহীন হতে হবে। হিকমাতের দোহাই দিয়ে কোন ক্রমেই বাতিলের সাথে আপোস করা যাবে না। বরং কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দলীল দ্বারা বাতিলের মুকাবালা করতে হবে।
(৫) একমাত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মানদন্ডে দা‘ওয়াত দেওয়া : আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষের সার্বিক জীবন পরিচালনার যাবতীয় বিধি-বিধান অহী মারফত মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর নাযিল করেছেন। অতএব মানুষ তার সার্বিক জীবন পরিচালনা করবে একমাত্র অহি-র বিধান অনুযায়ী এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দেখিয়ে দেওয়া পদ্ধতিতে। সাথে সাথে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করবে একমাত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের ভিত্তিতে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللهُ النَّبِيِّيْنَ مُبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَ وَأَنْزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيْمَا اخْتَلَفُوْا فِيْه- ‘সকল মানুষ ছিল একই উম্মত। অতঃপর আল্লাহ নবীগণকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেন। মানুষরা যে বিষয়ে মতভেদ করত তাদের মধ্যে সে বিষয়ে মীমাংসার জন্য তিনি তাদের সাথে সত্যসহ কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেন’ (বাকারা ২/২১৩)।
তিনি অন্যত্র বলেন, لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيْزَانَ لِيَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ– ‘নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব (কুরআন) ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে’ (হাদীদ ৫৭/২৫)।
তিনি অন্যত্র বলেন, إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللهُ وَلَا تَكُنْ لِلْخَائِنِيْنَ خَصِيْمًا- ‘আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সে অনুযায়ী মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা কর এবং বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের সমর্থনে তর্ক কর না’ (নিসা ৪/১০৫)।
তিনি আরো বলেন, وَمَا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِيْ اخْتَلَفُوْا فِيْهِ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِقَوْمٍ يُؤْمِنُوْنَ- ‘আমি তো তোমার প্রতি কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি যারা এ বিষয়ে মতভেদ করে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য এবং মুমিনদের জন্য পথনির্দেশ ও দয়াস্বরূপ’ (নাহল ১৬/৬৪)।
তিনি অন্যত্র বলেন, أَوَلَمْ يَكْفِهِمْ أَنَّا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ يُتْلَى عَلَيْهِمْ إِنَّ فِيْ ذَلِكَ لَرَحْمَةً وَذِكْرَى لِقَوْمٍ يُؤْمِنُوْنَ- ‘এটা কি উহাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যা উহাদের নিকট তেলাওয়াত করা হয়। এতে অবশ্যই উপদেশ রয়েছে সেই কওমের জন্য যারা ঈমান আনে’ (আনকাবূত ২৯/৫১)।
তিনি অন্যত্র বলেন, إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّيْنَ- ‘আমি তোমার নিকট এই কিতাব সত্যসহ অবতীর্ণ করেছি। সুতরাং বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহর ইবাদত কর’ (যুমার ৩৯/২)।
তিনি অন্যত্র বলেন, إِنَّا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ لِلنَّاسِ بِالْحَقِّ فَمَنِ اهْتَدَى فَلِنَفْسِهِ وَمَنْ ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا وَمَا أَنْتَ عَلَيْهِمْ بِوَكِيْلٍ- ‘আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য; অতঃপর যে ব্যক্তি সৎপথ অবলম্বন করে সে তা করে নিজেরই কল্যাণের জন্য এবং যে বিপথগামী হয় সে তো বিপথগামী হয় নিজেরই ধ্বংসের জন্য এবং তুমি উহাদের তত্ত্বাবধায়ক নও’ (যুমার ৩৯/৪১)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, تَرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ، لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ- ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্ত্ত ছেড়ে যাচ্ছি। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা সে দু’টি বস্ত্তকে অাঁকড়ে ধরে থাকবে ততক্ষণ তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল, আল্লাহর কিতাব (কুরআন) ও তাঁর রাসূলের সুন্নাত’।[6]
উল্লিখিত দলীল সমূহ হতে প্রমাণিত হয় যে, একমাত্র অহি-র বিধান তথা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের ভিত্তিতে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করতে হবে। মানব রচিত ঈমান বিধ্বংসী কিচ্ছা-কাহিনীর মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করলে সে নিজে পথভ্রষ্ট হবে এবং অপরকে পথভ্রষ্ট করবে।
(৬) প্রথমে আক্বীদা সংশোধনের দা‘ওয়াত দেওয়া : আল্লাহর পথে মানুষকে দা‘ওয়াত দেওয়ার সময় প্রথমেই তাকে ছহীহ আক্বীদা তথা নির্ভেজাল তাওহীদের দা‘ওয়াত দিতে হবে। কেননা ছহীহ আক্বীদা পোষণের মাধ্যমেই একজন মানুষ সত্যিকারের মুসলিম হয়। পক্ষান্তরে ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণের মাধ্যমে সে মুসলিম থেকে খারিজ হয়ে যায়। আর ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেলে তার ছালাত, ছিয়াম কোন কাজে আসবে না। এজন্যই রাসূল (ছাঃ) মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে শাসনকর্তা হিসাবে ইয়ামেনে প্রেরণকালে বলেছিলেন,
إِنَّكَ تَقْدَمُ عَلَى قَوْمٍ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ فَلْيَكُنْ أَوَّلَ مَا تَدْعُوْهُمْ إِلَى أَنْ يُوَحِّدُوْا اللهَ تَعَالَى فَإِذَا عَرَفُوْا ذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِيْ يَوْمِهِمْ وَلَيْلَتِهِمْ، فَإِذَا صَلُّوْا فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ زَكَاةً فِيْ أَمْوَالِهِمْ تُؤْخَذُ مِنْ غَنِيِّهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فَقِيْرِهِمْ، فَإِذَا أَقَرُّوْا بِذَلِكَ فَخُذْ مِنْهُمْ وَتَوَقَّ كَرَائِمَ أَمْوَالِ النَّاسِ-
‘তুমি যেহেতু আহলে কিতাবদের নিকট যাচ্ছ সেহেতু প্রথমে তাদেরকে তাওহীদের (আল্লাহর একত্ব) দিকে আহবান করবে। যখন তারা আল্লাহর পরিচয় লাভ করবে, তখন তাদেরকে খবর দিবে যে, আল্লাহ তাদের উপর দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন। যখন তারা ছালাত আদায় করবে, তখন তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তাদের সম্পদের যাকাত ফরয করেছেন, যা তাদের ধনীদের থেকে গ্রহণ করা হবে এবং দরিদ্রের মাঝে বিতরণ করা হবে। যখন তারা ইহাকে স্বীকৃতি দিবে, তখন তাদের থেকে তা গ্রহণ করবে এবং লোকের উত্তম মাল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে।[7]
পরিশেষে আল্লাহর পথে দেওয়া পৃথিবী মহত্তম কাজ সমূহের মধ্যে অন্যতম। তবে এই দাওয়াত দিতে অবশ্যই রাসূল (ছাঃ)-এর দেখানো পদ্ধতি মোতাবেক, নিজের খেয়াল-খুশী মোতাবেক নয়। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন!
–মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
[1]. সিলসিলা ছহীহা হা/ ১৮০৩; সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী হা/১৩৮২৫, ইমাম শাফেঈ, কিতাবুর রিসালাহ, ১৫ পৃঃ।
[2]. বুখারী হা/১, ‘আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি কিতাবে অহী শুরু হয়েছিল’ অধ্যায়।
[3]. আহমাদ হা/২১২৬০; ছহীহ জামে‘ আছ-ছাগীর হা/৫১৩৬।
[4]. তাফসীর ইবনে কাছীর ৪/৬১৩ পৃঃ, অত্র আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টাব্য।
[5]. সাঈদ ইবনু আলী ক্বাহতানী, আল-হিকমাত ২৭ পৃঃ।
[6]. মুওয়াত্তা মালেক হা/৩৩৩৮, মিশকাত হা/১৮৬, ‘কিতাব ও সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ, বঙ্গানুবাদ (এমদাদিয়া) ১/১৩২ পৃঃ; আলবানী, সনদ হাসান।
[7]. বুখারী হা/৭৩৭২।
opor e ALLAH subhanallahu ta’ala’r namer banan vul ase….ota thik korun
5no. Poddhotir dalil no.7— E Hazrat jabir (r) je Hadith ullekh kra hoyece ta ki ma’novi naki lafji.??