পরিবার ও দাম্পত্য

রাসুল সাঃ ও আয়িশার বিয়ে ও বাল্য বিবাহ প্রসঙ্গ

আবু উসাইদ

বাল্য বিবাহ। মোটামুটি বিগত শতাব্দী বাদে মানব ইতিহাসের একটি স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য সামাজিক আচার। বাল্য বিবাহ পৃথিবীর সকল জাতির ইতিহাসে হয়ে এসেছে এবং ইসলামের ইতিহাসেও এটা হয়েছে। আল্লাহ কুরআনে এর স্বপক্ষে আয়াত নাজিল করেছেন। তবে বাল্য বিবাহ ব্যাপারে পৃথিবীর সকল ধর্মের মানুষ এখন যেন দায়ভার ইসলামের উপর চাপিয়ে দেবার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আর এই অসুস্থ প্রচারণার শিকার হয়ে আজ এমনকি মুসলিমরাও এর বিরুদ্ধে বলতে শুরু করেছে অথবা নানাভাবে একে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছে। মুসলিমদের এ কথা জেনে রাখা উচিৎ যে, আল্লাহ হলেন সৃষ্টিকর্তা এবং মানব জাতির জন্য বিধানদাতা। তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং মানব জাতির ভালো-মন্দ, মানবদেহের খুঁটি-নাটি এবং মানব সমাজের জন্য কোন আইন প্রযোজ্য তা তাঁর চেয়ে কেউ বেশী জানেনা। মানব সৃষ্টির আগে থেকেই তিনি যেমন সব কিছু জানেন, তেমনি মানব সৃষ্টির শেষ বা কিয়ামাত পর্যন্ত সব কিছুই একমাত্র তাঁর জ্ঞানের আওতাধীন। আধুনিক বিজ্ঞান এবং মেডিক্যাল সাইন্স এবং আজকে থেকে হাজার বছর পরের বিজ্ঞান ও মেডিক্যাল সাইন্স একমাত্র আল্লাহই জানেন। সুতরাং আল্লাহ যেটা হালাল করেছেন, সেটা তাঁর অসীম জ্ঞান থেকেই হালাল করেছেন এবং আল্লাহ যেটা হারাম করেছেন সেটা তাঁর অসীম জ্ঞান থেকেই হারাম করেছেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যেদিন থেকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছানো শুরু করেছেন সেদিন থেকেই সকলের কাছেই বিশ্বস্ত এ মানুষটিকে সবাই অত্যাচারে জর্জরিত করতে শুরু করেছিলো। তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও বন্ধুদের মধ্য থেকে অনেকেও তাঁর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছিলো এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ অশ্লীল কবিতা লিখে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাতে লাগলো। যারা তাঁর বিরুদ্ধে অশ্লীল কবিতার প্রচারক ছিলো তারা নিজেরাও জানত এ হলো মিথ্যা এবং তিনি সত্যবাদী বৈ তো নন। কিন্তু নিজেদের ক্ষমতার মোহ ও ইলাহ হিসাবে আল্লাহকে মেনে নিয়ে তাদের ইচ্ছাকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করতে তারা চায়নি। আর এভাবেই শুরু হয়েছে ইতিহাসে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর বিরুদ্ধে অবিশ্বাসীদের মিথ্যাচার ও অশ্লীল অপবাদের চর্চা। তবে আল্লাহ যেভাবে কুরআনে তাঁর দীনকে অন্য দীনের উপর বিজয়ী করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং যেভাবে রাসুল সাঃ এর নামকে উচ্চতম করার কথে বলেছে কিয়ামাত পর্যন্ত তা বলবদ থাকবে, যদিও অবিশ্বাসীদের কাছে তা অপছন্দনীয় হোক বা তাদের অপপ্রচার কায়েম থাকুক।

রাসুলুল্লাহ সাঃ যখন আয়িশা রাঃ কে বিয়ে করেন তখন তাঁর বয়স ছিলো ৬ বছর। তিনি তাঁকে যখন ঘরে তুলে নেন তখন তাঁর বয়স ছিলো ৯ বছর। একটি কথা জেনে রাখা ভালো যে, রাসুলুল্লাহ সাঃ এর আগেই মুত’ঈম বিন আদী নামের একজন বিধর্মী কুরাইশ তার ছেলে জুবাইর বিন মুত’ঈমের সাথে আয়িশার বিয়ের জন্য আবু বাকরের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলো। আবু বাকরও এ প্রস্তাবে সম্মত ছিলেন (তখনও মুসলিমদের সাথে অমুসলিমদের বিয়ে বন্ধ হবার বিধান আসেনি)। এর মধ্যে খাওলা রাঃ স্বঃপ্রনদিত হয়ে রাসুল সাঃ এর পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব আনেন। আবু বাকর মুত’ঈমের বাড়ী গিয়ে বিয়ের ব্যাপারে জানতে গেলে এবার তার স্ত্রী রাজী নয় বলে জানিয়ে দেয়। তখন তিনি খাওলা রাঃ এর কাছে রাসুলের প্রস্তাবে রাজীর কথা জানান। আজ আমাদের মনে প্রশ্ন জেগে উঠে, নয় বছরের একটি মেয়ে স্বামীর ঘর করবে কিভাবে? তার তো তখন খেলার বয়স। হ্যাঁ, সত্যিই তাই আর রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ঘরে আয়িশা তাই করেছিলেন। বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ সমূহে এসেছে, আয়িশা রাঃ তাঁর ঘরে সমবয়সী মেয়েদের সাথে হাতে তৈরী পুতুল দিয়ে খেলতেন। মদীনায় তলোয়ার চালনা খেলা হলে আয়িশা তা গিয়ে দেখতেন এবং তখন রাসুল সাঃ তাকে সঙ্গ দিয়ে যেতেন যতক্ষন তার দেখা শেষ না হতো। কখনও তিনি আয়িশার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায়ও নামতেন। আয়িশা রাঃ বর্ণনা করেছেন, প্রথম প্রথম আমি তাঁকে হারিয়ে দিতাম কারণ আমি তখন ছিলাম হ্যাংলা-পাতলা গড়নের। পরবর্তিতে আমার শরীরের অজন কিছুটা বেড়ে গেলে তিনি আমাকে হারিয়ে দিতেন আর বলতেন, “এ হলো আগেরগুলোর প্রতিশোধ”। আর এভাবেই শৈশবের আয়িশা নবীর আলোর ছায়ায় বিকশিত হচ্ছিলেন। আয়িশা ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ও প্রখর মেধা সম্পন্ন। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর অভিভাবকত্বে এ মেধার পূর্ণ বিকাশ ঘটেছিলো। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ঘরে অক্ষরজ্ঞান থেকে শুরু করে মেডিক্যাল সাইন্স, সাহিত্য, বংশবিদ্যা, হাদীস শাস্ত্র ইত্যাদি সহ জ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি পারদর্শীতা অর্জন করেন। রাসুল সাঃ এর জীবনের প্রতিটি দিকের সূক্ষ্মতম বর্ণনা আমরা প্রধানতঃ আয়িশার কাছ থেকেই পেয়েছি। শুধু তাই নয়, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। আজ যেভাবে বলা হয় তাতে মনে হয় যেন বাল্য বয়সে আয়িশার বিয়ে হওয়াতে তাঁর জীবনটা নষ্ট হয়েছে, তবে সত্যিকার অবস্থা হলো, এ বিয়েই তাঁকে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম নারীদের একজনে পরিণত করেছে, বিয়ে না হলে যা হওয়া অসম্ভব ছিলো।

একটা ব্যাপার আমাদের মনে রাখাতে হবে যে, রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সকল স্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র আয়িশাই ছিলেন অল্পবয়স্ক, বাকী সকলেই ছিলেন এখনকার প্রচিলত অর্থে প্রাপ্ত বয়স্ক। বাল্য বিবাহকে আল্লাহ হালাল করলেও তা বাধ্যতামূলক নয় বরং মুসলিম সমাজের অধিকাংশ বিয়েই বাল্য বিবাহ নয়, তবে আয়িশাকে বিয়ে করে বাল্য বিবাহের যে পথ আল্লাহ রাসুল সাঃ এর মাধ্যমে জায়িজ করেছেন তা ইসলামের সমাজ জীবনে অনন্য ভূমিকা রেখাছিলো।

দুঃখজনক হলেও সত্য, বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে আজকের এই প্রচারণার বিরুদ্ধে বলার খুব কম লোকই আছে। আজ মিডিয়া, অবিশ্বাসীগন আর এ সমাজ ব্যবস্থা যেভাবে এর বিরুদ্ধে বলছে এই প্রেক্ষাপটে বাল্য বিবাহ ও আয়িশা আর রাসুলুল্লাহ সাঃ বিয়ের উপর আলোকপাত করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

প্রথমেই আসি ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রসঙ্গে।

ইসলাম যখন আল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাঃ কে দিয়ে এ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তখন থেকে শুরু করে এ ব্যবস্থা এক অনন্য সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন মানব ইতিহাসে স্থাপন করলো। ধর্ম-জাত-স্থান-পাত্র উপেক্ষা করে ন্যায়বিচারের অনন্য নজির ইসলাম দেখাতে সক্ষম হয়েছিলো। নিজেদের উন্নত চরিত্র আর নিজের জীবনের চেয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবেসে পরোপকারিতা আর আমানতদারীর এক অনন্য নজীর মুসলিমরা স্থাপন করেছিলেন। সে ধারাবাহিকতায় আমরা দেখতে পাই, সাহাবীগন যখন পারস্য ও রোম বিজয় করলেন, তখন সেখানকার কিশোর ও তরুন সমাজ-যাদের বাবা-চাচাদের বিরুদ্ধে সাহাবাগণ যুদ্ধ করেছিলেন, সে সাহাবাদের চরিত্র ও জীবন প্রণালী দেখে দেখে তারাই এসে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছিলো। মুহাম্মাদ বিন কাশিমের ভারত অভিযানে হিন্দু রাজা দাহিরের প্রধান সেনাপতি আহত হলে মুহাম্মাদ বিন কাশিম নিজের শিবিরে তাঁকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছিলেন, প্রথম ক্রুসেডে হাজারো মুসলিমকে গনহত্যা করার পরও সালাহুদ্দীন আইয়ুবী ২য় ক্রুসেডে জয়ী হয়ে সকল অমুসলিমদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, তাঁর সময়ে একটি অমুসলিম মেয়ের জীবন বাঁচাতে গিয়ে এক প্লাটুন মুসলিম সৈন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলো, ইসলামের অনন্য ন্যায়বিচার ও আমানতদারী দেখে খৃস্টান রাজ্য থেকে মাইগ্রেট করে খৃস্টানরা মুসলিম রাজ্যে আসত নির্বিঘ্নে নিজেদের ধর্ম পালন করতে। আর মুসলিম সমাজে সকল সৌন্দর্যের অন্যতম ছিলো তাদের অনন্য পারিবারিক বন্ধন। অমুসলিম সমাজে যখন দেখা যায় স্বামী ঘরে ফিরে নিশ্চিত নয় যে তার স্ত্রী একা সময়টা কিভাবে কাটিয়েছে আর স্ত্রীও নিশ্চিত নয় যে তার স্বামী বাইরে গিয়ে নিজের চরিত্র হেফাজত করেছে কিনা, তখন মুসলিম সমাজে দেখা গেছে স্বামী মাস বা বছরের জন্য বাইরে চলে গেলেও স্ত্রী আল্লাহর কাছে কাঁদে, “ও আমার রব, তাকে তুমি ভালো রেখ”, আর স্বামীটিও দূরদেশে বসে বসে আল্লাহকে ডেকে বলে “ও প্রতিপালক, তুমি আমার পরিবারের উপর রহম করো”। যখন অবিশ্বাসী সমাজে বার্ধক্য অভিশাপ হয়ে এসেছে, তখন মুসলিম সমাজে সন্তানেরা নিজে না খেয়ে হলেও বাবা-মা’র যত্নকে প্রধান কর্তব্য হিসাবে পালন করেছে।

যতদিন পর্যন্ত পৃথিবীতে ইসলামী অনুশাসন ছিলো, ততদিন পর্যন্ত মানুষ দেখেছে এ সমাজে ইভ টিজিং, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, অবাধ যৌনাচার ইত্যাদি সমাজ বিধ্বংসী কোন পাপাচারের স্থান নেই। ইসলামী এই সমাজ বিনির্মাণে অল্প বয়সে বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর ফলে বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্ক মুসলিম সমাজে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। উঠতি বয়সে যৌন জীবনের যে আকর্ষন, তাড়াতাড়ি বিয়ের ফলে এটা মুসলিম সমাজে অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত থেকেছে, ফলে মুসলিম সমাজে অবা্ধ যৌনাচার কখনও স্থান পায়নি। ইসলামে বিবাহ বহির্ভুত যৌনাচারের বিধান পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা এবং এই শাস্তির বিরুদ্ধে বলার লোকের অভাব নেই। তবে এটা তাদের জানা নেই যে, ইসলামের সমস্ত ইতিহাসে রজমের সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত, এমনকি উমার রাঃ এর ১০ বছর শাসনামলে মাত্র একটি রজমের ঘটনা ঘটছে, এর কারণ শুধু শাস্তির ভয়ই নয়, তাড়াতাড়ি বিয়েও একটি অন্যতম কারণ। তাড়াতাড়ি বিয়ে মুসলিম ছেলেমেয়েদের অল্প বয়সেই গুরুদায়িত্ব বহন করতে শিখিয়েছে, স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন এতে সুদৃঢ় হয়েছে এবং নিজেদের সম্পর্ক বন্ধুর মতো করে গড়ে তোলা গেছে। বাচ্চা তাড়াতাড়ি হবার ফলে বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবা সন্তানদের যত্নের ছায়াতলে থাকতে পেরেছে।

যুগে যুগে মুসলিম সমাজের এই অনন্য বন্ধন অবিশ্বাসীদের হতাশাকে বাড়িয়ে তুলেছে। আল্লাহর ঘোষণাকে সত্য প্রমাণ করে তারা ইসলামের আলোকে নিভিয়ে দেবার সব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর তাদের এই প্রচেষ্টায় মুসলিম পরিবারের বন্ধন ধ্বংস করা হলো অন্যতম এজেন্ডা। আর এরই অংশ হিসাবে এরা নারী স্বাধীনতার ধোঁয়া তুলে নারীদের হিজাব খুলিয়েছে, বন্ধুত্বের নামে ফ্রি মিক্সিংকে জায়েজ বানিয়ে দিয়ে উন্মত্ত অশ্লীলতায় সমাজকে ধ্বংস করে দিয়েছে আর নষ্ট করে দিয়েছে নারী পুরুষের স্বাভাবিক বিশ্বাস। আর ঘর থেকে মা-খালা-নানী-দাদীদের চিরন্তন ভালোবাসা ও আদরের বন্ধন বিদায় করে দিতে সক্ষম হয়েছে। প্রপাগান্ডার প্রথম থেকে তারা বাল্য বিবাহকে টার্গেট করেছে। আর তাদের এই টার্গেটে প্রধান হাতিয়ার হিসাবে তারা ব্যবহার করতে শুরু করেছে মেডিক্যাল সাইন্স।

এবার মেডিক্যাল সাইন্সের প্রেক্ষাপটে বাল্য বিবাহ অর এর বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডার কিছু অজানা দিক তুলে ধরার চেষ্টা করব।

প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন মনে করি যে, মেডিক্যাল সাইন্সের বিরুদ্ধে আমি নই এবং ইসলামে চিকিৎসা নেয়ার ব্যাপারে কোন বাধা-নিষেধ নেই । তবে বর্তমান যুগে মেডিক্যাল সাইন্স এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, মানুষ অনেক ক্ষেত্রে একে আল্লাহর স্থলে ইলাহ হিসাবে গ্রহণ করতে শুরু করেছে। আর মানুষের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে স্বার্থবাদী গোষ্ঠী মেডিক্যাল সাইন্সকে ব্যবহার করে গোপন সব ফায়দা লুটে নিচ্ছে যা চিরকালই সাধারণ মানুষের ধারণার অতীত হয়ে থাকবে। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি উদাহরণ দিতে চাই।

নিকট অতীতে যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরাক আক্রমন করে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করা শুরু করেছিলোএবং তাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার খবরেই বিশ্ব বিবেকে নাড়া পড়ে গিয়েছিলো, এহেন অবস্থায় মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাবার জন্য তারা আশ্রয় নিলো তাদের বিশ্বস্ত এবং কার্যকরতম অস্ত্র মেডিক্যাল সাইন্সের। অদের সমস্ত মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে তারা ‘সার্স’ (SARS-Severe Acute Respiratory Syndrome) নামের এক জীবনঘাতী মহামারী রোগের বিস্তারের প্রচার শুরু করলো এবং এ রোগের বিস্তারে মানুষের করণীয় হিসাবে মুখে মাস্ক পরার কথা প্রচার করল। তাদের এ প্রচার মন্ত্রের মত কাজ করলো। ইরাক যুদ্ধ থেকে সরে গিয়ে মানুষের দৃষ্টি সার্সে নিবদ্ধ হলো আর লক্ষ লক্ষ মানুষ এর ভয়ে মাস্ক পরে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে লাগলো। তবে অনেক চিকিৎসক ও গবেষকের মতে, সত্যিকার অর্থে সার্স নামে কোন রোগ ছিলো না বরং সামান্য ফ্লু কেই সে সময় অতিরঞ্জিত করে সার্স নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছিলো। মজার ব্যাপার হলো, ইরাক যুদ্ধের ওই সময়টা বাদ দিয়ে বিশ্বে আর কখনও না সার্সের প্রাদুর্ভাব আগে ঘটেছে, আর না তার পরে কখনও ঘটেছে- অথচ এ রোগের নির্মুলের জন্য কোন টীকা কোথাও দেয়া হয়নি, তাহলে এ রোগ কোথায় গেলো?

একইভাবে কিছুদিন আগে অর্থনৈতিক মন্দার সময় ‘সোয়াইন ফ্লু’ নামের এক জীবনঘাতী মহামারীর কথা প্রচার করা হয় এবং অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে প্রায় সাথে সাথেই এই কার্যকরী ঔষধ ও ভ্যাক্সিনের কথাও প্রচার করা হয়। সারা বিশ্বে কোটি কোটি ডলারের ঔষধ বিক্রি করা হয়, কিন্তু সে রোগটি এবং এর ঔষধের ভেতর আদৌ কি ছিলো তা আজও অভিজ্ঞদের কাছে রহস্যাবৃত রয়ে গেছে।

এইডস নিয়ে সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে আর এ রোগে ধুঁকছে আরো কোটি কোটি মানুষ। তবে মেডিক্যাল সাইন্সে এইডস এর ভাইরাস সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে তা এসেছে আফ্রিকার বানর থেকে। তবে একদল বিজ্ঞানী গবেষণার ভেতর উঠে এসেছে যে, এইডস এর ভাইরাস এইআইভি বানর থেকে আসা অসম্ভব এবং তারা দেখিয়েছেন এইডস এর ভাইরাস ল্যাবরটরিতে মডিফিকেশন করে তৈরী করা হয়েছে আফ্রিকার ব্ল্যাক জনসংখ্যা কমানোর জন্য এবং টীকাদান বা ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে এর জীবানুকে গোপনে মানুষের দেহে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। আল্লাহু আকবার, এ যদি সত্য হয়ে থাকে, তা কতইনা ভয়বহ ব্যাপার।

আর্সেনিক নিয়ে এদেশে তাদের প্রপাগান্ডা হলো মানুষকে ভয় পাইয়ে টাকা কামাবার অন্যতম হাতিয়ার। এদেশের হাজার হাজার টিউবয়েলে তারা লাল নিশান লাগানো শিখিয়ে দিয়ে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এর ভেতর এমন সব কলও রয়েছে যার পানি কয়েক দশক ধরে পান করা হচ্ছে। অথচ আর্সেনিক রোগে মারা যাওয়া রোগী হাতে গুনতেও কষ্ট হবেনা। যেখানে সরকারী হাসপাতালগুলোতে হাজারো রকম রোগীর যায়গা দেয়া যাচ্ছেনা, যেখানে রোগীরা ডাক্তারের কাছে গিয়েও রোগীর চাপে সময় নিয়ে দেখাতে পারছেনা, সেখানে আর্সেনিক পয়জনিং হলো এমন একটি রোগ যার জন্য সরকারী মেডিক্যাল টিম সারা বছর মানুষের বাড়ী বাড়ী গিয়ে রোগী খুঁজে বেড়ায় আর একটি রোগী সনাক্ত করে দিতে পারলে ডাক্তারকে সরকারীভাবে সম্মানী দেয়া হয়।

এবার আসা যাক বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে বলা সকল মেডিক্যাল সমস্যাগুলোর ব্যাপারে। এর সমস্যাগুলো প্রধানতঃ বলা হয়ে থাকে অল্প বয়সে গর্ভধারণ বিষয়ক। এর প্রধান যে সমস্যাগুলো সম্পর্কে বলা হয় তা হলো- রক্ত স্বল্পতা, অধিক সময় ধরে ডেলিভারী, ইঊটেরাস বা গর্ভাশয় ফেটে যাওয়া, গর্ভে বাচ্চার ডিস্ট্রেস ইত্যাদি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, এই সকল গর্ভজনিত কমপ্লিকেশন বা সমস্যা যে শুধু অল্পবয়সী মায়ের ক্ষেত্রেই হবে তা নয়, বরং এগুলো যে কোন বয়সের মায়েদেরই হতে পারে এবং এমন কোন কমপ্লিকেশন নেই যা কেবল অল্পবয়সী মায়েদেরই হয়। মেডিক্যাল সাইন্সের অবসট্রেটিকস বা ধাত্রীবিদ্যায় প্রায় সবকটি রোগের প্রথম ভুক্তভোগীর নাম হলো ‘এলডারলি প্রাইমি’ বা ‘বেশী বয়সে প্রথম গর্ভধারণ’। এমনকি আমাদের দেশে (যে দেশ সম্বন্ধে অমুসলিমরা বলে থাকে যে বাল্য বিবাহের হার অনেক বেশী) হাসপাতালগুলোতেও গর্ভজনিত রোগের প্রধান ভুক্তভোগীরা হলো এলডারলি প্রাইমি বা বেশী বয়সে প্রথম বাচ্চা নেয়া মা। তবে, কম বা বেশী বয়সী মা যাই হোকনা কেন, সকল রোগই এখন চিকিৎসা যোগ্য।

আরেকটি ব্যাপার হলো এই যে, সরাসরি কোথাও না এলেও মেডিক্যাল সাইন্সেই অল্পবয়সে গর্ভধারণ নারীর অনেক জটিল রোগের কার্যকর প্রতিরোধোক বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন- জরায়ুর টিউমার ও ক্যান্সার, ব্রেস্ট টিউমার, হরমোনাল অনেক সমস্যা, ঋতুজনিত সমস্যা ইত্যাদি।

দুঃখজনক হলেও সত্যি, আজ যারা বাল্যবিবাহের ধোঁয়া তুলে রাসুলুল্লাহ সাঃ এবং ইসলামের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডায় নেমেছে, তারাই সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছে শিশু পর্নোগ্রাফির মতো সাঙ্ঘাতিক অনৈতিকতা। এদের মুখের মিষ্টি কথা দিয়ে এরা নিজেদের শিশুদের মহান রক্ষক হিসাবে তুলে ধরে, অথচ এরাই আজ পতিতালয়ে গিয়ে শিশু যৌনকর্মী খোঁজে। নিজ ঘরে গিয়ে এরা দেখে তার ছোট্ট শিশু সন্তানটি এখন আর ভার্জিন নয় বরং অনেক বন্ধু আজ জুটে গেছে তার শুধু যৌনতার খাতিরে। এদের সমাজে আজ আর পারিবারিক বন্ধন বলে কিছু নেই। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে আর বিশ্বাস নেই, সন্তানেরা বাবা-মাকে মানেনা আর বাবা-মাও সমাজ ও তাদের নিজেদের তৈরী করা আইনের ফাঁদে পড়ে সন্তানদের কিছু বলতে ভয় পায়। বৃদ্ধ দাদা-দাদীরা বৃদ্ধাশ্রমের বন্দীশালায় ধুঁকে ধুঁকে মরে। বিপরীতে ইসলাম দেখিয়েছে এমন এক পরিবার ব্যবস্থা, যেখানে পরিবার হলো সবার সুখের আশ্রয়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত্তি হলো পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও বন্ধুভাব, বাবা-মা একই সাথে সন্তানের বন্ধু ও শাসক অভিভাবক, বৃদ্ধ দাদা-দাদী আর নানা-নানীরা সমাজের বোঝা নয় বরং সবার সবচেয়ে শ্রদ্ধার পাত্র আর পুরো পরিবারের ছায়ার মতো। আজ আমাদের সতর্ক হতে হবে ওদের এমন সব প্রপাগান্ডা থেকে যার ফলে আল্লাহর করুণায় প্রাপ্ত আমাদের এই অনন্য পারিবারিক বন্ধন ভেঙে পড়ে।

আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন এবং সকল অপপ্রচার থেকে বেঁচে থেকে ইসলামের উপর অটল থাকার সৌভাগ্য দান করুন।

১টি মন্তব্য

  1. আপনাদের “ইসলামিক অনলাইন মিডিয়া” সাইট আআমার খুব পছন্দের ও বিশ্বস্ত । এজন্য http://markajomar.com/?p=1569 লিংকের লেখাটায় লেখক সঠিক লিখেছেন কিনা একটু যাচায় করে আমাদের সঠিকটা জানানোর অনুরোধ করছি।
    এ লেখায় লেখক প্রমান করার চেষ্টা করেছে যে বিয়ের সময় মা আয়েশা (রা) বয়স ৬বছরের বেশি ছিল(১৭ বছরের কম বা বেশি ছিল)।(দয়াকরে আমাকে ভুল বুঝবেন না)

মন্তব্য করুন

Back to top button