নির্বাচিত ফেসবুক স্ট্যাটাস

Closeup দ্বিধাহীন কাছে আসার গল্প

ক্লোস-আপের ফেইসবুক পেইজে যদি যান তাহলে দেখবেন – কাপল ছাড়া কোনো ক্রিয়েটিভ নেই। ব্র্যান্ডিং এর টুক-টাক যা জানি তাতে ক্লোস-আপের ব্র্যান্ড ইমেইজটাই এটা। টুথপেস্ট না বরং দুজন মানুষের কাছে আসাকে ফোকাস করে ব্র্যান্ড ন্যারেটিভটা তৈরি করা হয়েছে।

এজন্য সেনসোডাইন বা পেপসোডেন্টে যে দাঁতের উল্লেখ আছে সেটা ক্লোস-আপের নামেও নেই – ব্র্যান্ড প্রমোশনেও কোথাও নেই।

এখন প্রশ্ন হতে পারে – ক্লোস কী শুধু প্রেমিক প্রেমিকারাই হয়?

মানুষের মুখের দুর্গন্ধে তো উচ্চ/মহা/বিশ্ব বিদ্যালয়ের সহপাঠী, অফিসের সহকর্মী, গণপরিবহনের সহযাত্রী, মাসজিদের সহমুসল্লি – সবারই কষ্ট হয়।

কিন্তু কেন ক্লোস আপের মালিক প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার এর প্রডাক্টের ব্র্যান্ড ইমেইজ হিসেবে একে ভালোবাসা/ প্রেম হিসেবে বেছে নিয়েছে – এটা তারাই ভালো জানে। সম্ভবত এটা যে টিজি (টার্গেট গ্রুপ)কে নিয়ে কাজ করে সেটা বয়সে তরুণ। অন্য কারণও থাকতে পারে যা আমার জানা নাই।

কিন্তু এটা স্পষ্ট ক্লোস-আপ তাদের ব্যবসা করার জন্য প্রেম-ভালোবাসাকে প্রমোট করছে। এবং সেটা বিয়ের মাধ্যমে বৈধকৃত কাছে আসা নয় – বিয়ের আগের ঘটনাবলী – এবং ইসলামের দৃষ্টি থেকে সেটা নিষিদ্ধ, হারাম।

এই যে বিয়ের আগের প্রেম জিনিসটাকে টিভি নাটক, পেপার-ম্যাগাজিনের গল্প এবং উপন্যাসের মাধ্যমে গত কয়েক দশক ধরে নরমালাইজেশন বা ‘সাধারণীকরণ’ করা হয়েছে। এখন তো মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে পরীমণির মতো বেশ্যাদের বাস্টার্ড প্রডাকশনকে গ্লোরিফাই করা হচ্ছে।

ক্লোস আপের গল্প লিখে পাঠানোর কনটেস্ট এবং তা দিয়ে শর্ট ফিল্ম বানিয়ে প্রচার করা – এই নরমালাইজেশনের শেষ স্তর যেখানে আপামর জনগণকে অংশীদার করা হয়।

এই যে ‘দ্বিধা’, যেটাকে ভেঙে ফেলে ক্লোস আপ ‘দ্বিধাহীনভাবে কাছে আসতে’ বলেছে – এই দ্বিধাটা আসলে মানুষের একটা ফিতরাত।
‘বিয়ে’ জিনিসটা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি সব ধর্মেই আছে। কেবল কুত্তাদেরই কাছে আসতে দ্বিধা থাকে না।

আমরা ছোট থাকতে কোনো একটা মেয়ের সাথে কথা বলাটাকে সমাজ সহজভাবে নিত না। আমার চাচাদেরই লুকিয়ে প্রেম করতে দেখেছি।
কিন্তু ইউনিভার্সিটিতে পড়তে পড়তে দেখলাম প্রেম ব্যাপারটা খুব নরমাল হয়ে যাচ্ছে। আর এখন শুধু প্রেম না, বিয়ের আগে বিছানায় যাওয়া ডাল-ভাত হয়ে গেছে – অন্তত পরিসংখ্যান তাই বলে।

একটা জিনিসকে খারাপ করতে খারাপেরা অনেক বছর সময় দিয়েছে। কষ্ট করেছে। টাকা খরচ করেছে। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে এই নষ্ট জিনিসটাকে ঠিক করা।

মানুষের সামনে তুলে ধরা যে প্রেম-ভালোবাসা ‘পবিত্র’ বা ‘স্বর্গ হতে আসা’ – এগুলো বুলশিট।

হাতে গোণা খুব অল্প কিছু প্রেমের পরিণতি শুভ হয় – যারা শেষমেশ বিয়ে করে একটা সুখী জীবন যাপন করতে পারে।
কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ জীবনের একটা পর্যায়ে উপলব্ধি করে প্রেম ভালো কিছু না।
কেউ আত্মহত্যা করে।
অনেকের ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়।
অধিকাংশই অশান্তির সংসারে জীবন যাপন করে।
এগুলো দুনিয়াতে দেখা যায়।

আর প্রেমের সময় চোখ, হাত, ঠোঁট, মুখ, মনের এবং আল্লাহ মাফ করুক, লজ্জাস্থানের যিনা যদি হয় – এগুলোর প্রত্যেকটা আখিরাতে শাস্তি পাওয়ার জিনিস।

আপনারা এই ব্যাপার নিয়ে আওয়াজ তুলুন।

প্রথম আওয়াজ তুলুন দোকানে – বাংলাদেশের বেশিরভাগ মুদির দোকানদার ধর্মপ্রাণ না হলেও ধর্মভীরু।
তাদের পুরো ব্যাপারটা সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেন ক্লোস আপ বিক্রি না করতে।

শিক্ষকরা ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের বলেন কাছে আসার – এসব নাটক সিনেমার সমস্যাগুলো।
ইমাম সাহেবরা খুতবাতে ব্যাপারগুলো তুলে আনুন প্লিজ।

একটা পরিবেশ খারাপ হয় কারণ ভালোরা চুপ থাকে।
চুপ থেকেন না।

সবাই সবার জায়গা থেকে কিছু বলুন, লিখুন। অফলাইনে, অনলাইনে।
ক্লোস আপ তার ব্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি বদলাক আর না বদলাক – আপনি আল্লাহর কাছে ‘নাহি আনিল মুনকারের’ সাওয়াব পাবেন। এটা অনেক বড় সাওয়াব।

আব্দুর রহমান বিন হাযবরামী এক সাহাবী থেকে বর্ণনা করে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় রয়েছে, যাদেরকে পূর্বের (সাহাবার) মত সওয়াব দান করা হবে। তারা মন্দকাজে বাধাদান করবে।
(আহমাদ ১৬৫৯২, ২৩১৮১, সহীহুল জামে’ ২২২৪)

আর যদি চুপ থাকেন, তাহলে …

হুযাইফাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ আছে! তোমরা অবশ্যই ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে, তা না হলে শীঘ্রই আল্লাহ তাআলা তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের উপর আযাব পাঠাবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর কাছে দু‘আ করবে; কিন্তু তা কবুল করা হবে না।

(আহমাদ, তিরমিযী ২১৬৯, সহীহুল জামে ৭০৭০)

– Md. Sharif Abu Hayat

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button