নির্বাচিত ফেসবুক স্ট্যাটাস

যা করছি, কেন করছি? রসুলের পথে করছি তো?

খুবই কষ্টের কথা – খ্রিষ্টানদের গীর্জায় যে মুসলিম আক্রমণ হয়েছে – এটাকে অনেক মুসলিম সমর্থন করেন।

এবং এই মুসলিমদের একটা বড় অংশ চান আমাকেও এই কাজ সমর্থন করতে হবে। না করলে আমি কাফির-সিমপ্যাথাইজার, মুসলিম অ্যাপোলজেটিক।

শাতিমের রসুলের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড – এটা দেওয়া যে রাষ্ট্রের কাজ – অনেক মুসলিম ভাই তা অস্বীকার করেন। তাদের বক্তব্য যে কোনো ব্যক্তি নাকি রাষ্টের বিচার ছাড়াই নিজে নিজে বিচার করবে, নিজেই শাস্তি দিয়ে দেবে।

কুরআন অবমাননা করলে পিটিয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে হবে – এটাতেও অনেকের আপত্তি নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

এই চিন্তা করা মানুষদের সংখ্যা অনেক। তারা সবাই খুব প্র্যাকটিসিং মুসলিম।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খারিজিদের বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছিলেন – তারা কুরআন পড়বে – কিন্তু কুরআন তাদের গলার নীচে নামবে না – বুকে পৌঁছাবে না।

এই চিন্তা-ভাবনা যারা ধারণ করেন – তারা আমাদেরই মুসলিম ভাই। আমাদের সাথে মাসজিদে সলাত পড়েন-ওঠেন-বসেন-খান এক সাথে। এই ভাইদের দেখলে আমার ভয় লাগে।

খারেজিদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য – মানুষের প্রতি ‘এমপ্যাথি’ না থাকা – আমার এই মুসলিম ভাইয়েরা ধারণ করেন। আমার খুব খারাপ লাগে, কষ্ট লাগে।

তাঁদের দলিলগুলোর প্রায় সবই ইমাম ইবনে তায়্যিমিয়ার বই “আস সারিমুল মাসলুল আলা শাতিমির রাসূল” থেকে নেওয়া। কিন্তু এই ভাইয়েরা ভেবে দেখেন না, ইমাম ইবনে তায়্যিমিয়া কেন ওই শাতিমকে ওই সময় হত্যা না করে এই বইটা লিখলেন। কেন?

ভাইয়েরা আপনারা ফ্রান্সের পতাকা নিয়ে পাপোস বানাতে পারেন কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন যদি তারা সৌদি আরবের পতাকা দিয়ে পাপোস বানায় তখন আপনার কেমন লাগবে? অথচ ফ্রান্সের পতাকা পায়ের তলায় দিয়ে তো আপনার খুব লাভ হয়নি, তাদেরও খুব ক্ষতি হয়নি।

#BoycottFrance হ্যাশ এ দুনিয়া ভেসে যাচ্ছে, দেখানোর দরকার আছে – আমিও মানি, কিন্তু আপনারা কমেন্টে কমেন্টে, প্রাইভেট গ্রুপে, প্রাইভেট পোস্টে যে হ্যাশট্যাগ দিচ্ছেন – সেগুলো ফেসবুকের অ্যালগরিদমে কাউন্ট যে হয় না – এটা জানেন না।

তাহলে এগুলো দিয়ে কী লাভ হচ্ছে? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর একবার দরুদ বললেও তো অন্তত দুনিয়া-আখিরাতে লাভ ছিল, তাই না?

আপনি ফেসবুকে যে অনর্থক সময় কাটাচ্ছেন তাদের জুকারবার্গ এবং ফেসবুকের ইহুদি মালিকবর্গ ছাড়া অন্য কারো লাভ হচ্ছে না।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমরা ভালোবাসি বলছি – কিন্তু ভাই চিন্তা করে দেখেন – সে ভালোবাসার প্রমাণ কী হ্যাশ-ট্যাগ আর মিছিলেই সীমাবদ্ধ থাকবে?

আপনার ব্যক্তিগত জীবনে একটা নতুন সুন্নাহ পালন করলে – এটা কী আপনাকে আখিরাতে অনেক বেশি উপকার এনে দিতে পারত না?

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আল্লাহর কাছে সে আমল পছন্দনীয় যেটা অল্প হলেও প্রতিদিন করা হয়। মিছিল তো একদিন, বা দুইদিন। দেখানোর দরকার আছে – রাস্তার একটা পাশ দিয়ে মানুষ যাওয়ার রাস্তা করে মিছিল করেন,

মানববন্ধন করেন – কিন্তু লং টার্মে, প্রতিদিনের আমল কী?

বয়কট করতে পারেন – দীর্ঘমেয়াদের ভালো আমল। নিজেদের পণ্য বানাতে পারেন। কিন্তু সবার আগে দরকার চিন্তা করা। নিজের কাছে নিজে সৎ থাকা।

যা করছি কেন করছি? রসুলের পথে করছি তো?

আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা আমাদের চিন্তা করার তাওফিক দিন। আল্লাহ আমাদের আল্লাহর কাছে অন্তর থেকে হিদায়াত চাওয়ার তাওফিক দিন।

– Sharif Abu Hayat Opu

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Back to top button