নির্বাচিত ফেসবুক স্ট্যাটাস

লকবের নৈরাজ্য

বাংলাদেশে সবচেয়ে অপব্যবহৃত অভিধা ‘আল্লামা’। এই দেশে মূর্খ বেদাতি আলাউদ্দীন জেহাদিও (?) আল্লামা! কমেডি বক্তা তাহেরি ও আফসারিরাও আল্লামা! ওয়ায়েজ হিসেবে কোনো রকম খ্যাতি হলেই ‘আল্লামা’। সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ থেকে বিষয়ভিত্তিক পাঁচ মিনিট কথা বলার যোগ্যতা নেই; ওয়াজে বেনজির আর কিচ্ছাবহুল ওয়াজ সংকলন পড়ে ওয়াজ করেন। কোনো সমস্যা নেই, প্রচারের জোর থাকলে তিনিও আল্লামা।

দুঃখের বিষয় হলো, লকবে নৈরাজ্য এতদিন ছিল বেদাতি-মাজারপন্থীদের বৈশিষ্ট্য, আজকাল কওমির লোকজনকেও এই রোগে ধরেছে ভালোভাবে। আরেফ বিল্লাহ, পীরে কামেল, শাইখুল আরবি ওয়াল আজম, শাইখুল ইসলাম, ফকিহুল আসর, মুহাদ্দিসুল অসর, ফকিহুন নফস, খতিবুল মিল্লাত, খতিবে জামান, খতিবে বাঙাল, মুজাহিদে মিল্লাত, সুলতানুল ওয়ায়িজিন, বুসতানুল মুহাদ্দিসিন, আমিরুল মুজাহিদিন ও আমিরে শরিয়তসহ আরও কত কী!

শব্দগুলোর অর্থ ও ওজন এবং পারিভাষিক দিক খেয়াল করলে এসবের ব্যবহার ৯৯% কমে আসত। অথচ মাজায, নেক ফাল– এমন হালকা ব্যাখ্যা দিয়ে আলেম-উলামাও দেদার অপপ্রয়োগ করছেন। কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা মুক্তাদা এর বিরোধিতা করছেন না। অথচ পাক-ভারতের বাইরে সারাবিশ্বের আলেম-স্কলারদের দেখুন। নামের আগে একাডেমিক ডিগ্রি বা প্রফেশনাল ডেজিগনেশনের এক-দুটি শব্দের বাইরে কোনো বাগাড়ম্বর লকব‌ নেই। উম্মতের সালাফদের দেখুন। এমনকি আমাদের নিকট অতীতের আকাবিরকেও। তাঁরা প্রশংসা বা লকবের বাগাড়ম্বর সহ্য করতেন না।

সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হাদিসের একটি ছোট্ট গল্প দিয়ে লেখাটা শেষ করি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক মজলিসে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় একজন গ্রাম্য লোক এসে নবীজিকে এই বলে প্রশ্ন করলো যে, কিয়ামত কখন হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথা চালিয়ে যেতে থাকলেন। কিছু লোক মন্তব্য করলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটির এই প্রশ্ন পছন্দ করেননি। আবার কিছু লোক বললো, তিনি তাঁর কথা শুনতেই পান নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচনা শেষে বললেন– প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? লোকটি বললেন, এই তো আমি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন–

إِذَا ضُيِّعَتِ الْأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ قَالَ كَيْفَ إِضَاعَتُهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ إِذَا أُسْنِدَ الْأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ

‘যখন আমানতের খেয়ানত হবে তখন কিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে বলে মনে করবে।’ লোকটি আবার প্রশ্ন করলো, কিভাবে আমানতের খেয়ানত করা হবে? নবীজি বললেন– ‘যখন অযোগ্য লোকদেরকে দায়িত্ব দেয়া হবে তখন কিয়ামতের অপেক্ষা করতে থাকো।’ (হাদিস : ৫৯)

উল্লেখ্য, এইসব লকবের ব্যক্তি নয়, ব্যবহারকারীর উদ্দেশে এই লেখা। অবশ্য প্রতিবাদ না করলে তাঁরাও দায়মুক্ত নন।

– আলী হাসান তৈয়ব

মন্তব্য করুন

Back to top button