আপনাদের বাসায় যারা সাহায্য করতেন তাদের বেতন দিচ্ছেন তো?
খাদিমা ও বুয়াদের প্রতি ইহসান করুন এবং করোনা মহামারিকালীন সময়ে তাদের বেতন চালু রাখুন।
আমাদের গৃহস্থলি কাজে যাদের অনেক বড় অবদান অথচ তা আমরা হয়তো সেভাবে বিবেচনা করি না তারা হল সেই সকল খাদিমা যাদেরকে আমরা বুয়া বলে থাকি। কেন আমরা বুয়া বলি এবং এতে কি তাদেরকে সম্মান দেখানো হয় নাকি ছোট করা হয় সে ব্যাপারটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। তবে বোধ করি তাদেরকে যদি বোন কিংবা খালা বলে আমরা সম্বোধন নাও করি, নিদেনপক্ষে খাদিমা বলা যেতে পারে। এর মানে হলো খেদমতকারিনী, যারা আমাদের গৃহস্থালির নানা কাজে সামান্য বেতনের বিনিময়ে অনেক বড় খেদমত ও সার্ভিস দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তাদের ভালো করুন, সহায় হোন- আমি আন্তরিকভাবে দোয়া করি।
আজ তাদের বিষয়ে আপনাদের প্রতি তিনটি আহবান রাখতে চাই:
এক : তাদের প্রতি ইহসান ও সুন্দর আচরণ করুন।
একজন মুসলিম হিসাবে আমাদের প্রতি এটাই ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহস্থালি কাজে যারা তার খেদমত করেছেন, জীবনভর তাদের প্রতি অসাধারণ সুন্দর আচরণ করেছিলেন। সে প্রমাণটি আমরা সহিহ বুখারীর একটি ছোট্ট হাদীসে পেয়ে যাই। আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি দশ বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করেছি। এ দীর্ঘ সময়ে তিনি কখনও আমাকে ‘উফ’ শব্দটিও বলেননি, আর এটাও বলেননি যে, “কেন করেছো?”। “কেন করনি?” এমন প্রশ্নও কখনো করেননি। [সহিহ বুখারী, হা/ ৬০৩৮]
সুবাহানাল্লাহ! বনি আদমের সবার শ্রেষ্ঠতম নেতা হয়েও অধিনস্তদের সাথে ও গৃহপরিচারকের সাথে কতো অনাবিল সুন্দর ছিল তার ব্যবহার! আদর্শের কি চমৎকার দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছিলেন উম্মতের জন্য! অথচ আজ কোথায় আমাদের অবস্থান?! আমরা কি আমাদের অধিনস্তদের সাথে ও আমাদের গৃহস্থালির কাজে নিয়োজিত খাদেম-খাদিমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করছি? তাদের মানবাধিকার রক্ষা করছি? গৃহাভ্যন্তরে বসবাসকারী অন্য সদস্যদের মতো তাদের থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসার দায়িত্ব বহন করছি কি?
দুই : চুক্তি অনুয়ায়ী তাদের প্রাপ্য বেতন ভাতা ঠিক সময়ে কড়ায়-গণ্ডায় বুঝিয়ে দিন।
কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা চুক্তি পুর্ণ কর”। [আল-মায়িদাহ আয়াত ১]
শ্রমিকের পাওনা ঠিকমত আদায় করার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচন্ড তাগিদ দিয়েছেন । আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেন, তিনি বলেছেন,
حَدَّثَنَا يُوسُفُ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ سُلَيْمٍ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أُمَيَّةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى ثَلاَثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَجُلٌ أَعْطَى بِي ثُمَّ غَدَرَ، وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ، وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِهِ أَجْرَهُ ”.
“আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরোধী থাকব। তাদের এক ব্যক্তি হল, যে আমার নামে প্রতিজ্ঞা করল, তারপর তা ভঙ্গ করল। আরেক ব্যক্তি হল, যে আযাদ মানুষ বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করে। অপর এক ব্যক্তি হল, যে কোন লোককে মজদুর নিয়োগ করল এবং তার হতে কাজ পুরোপুরি আদায় করল, অথচ তার পারিশ্রমিক দিল না”। [সহিহ বুখারী, হা/২২৭০]
তিন : করোনা মহামারির এ লক ডাউনে তাদের বেতন চালু রাখুন এবং সদাকাহ দেয়ার সাওয়াব অর্জন করুন ।
এ মহাদুর্যোগের সময়ে তাদের প্রতি ইহসান করে এবং আমাদের সংসারে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করে আসুন আমরা তাদের বেতন চালু রাখি। এমন সহায়তা না পেলে তারা অনাহারে কিংবা অর্ধাহারে দিন গুজরান করতে বাধ্য হবে। তাদের প্রতি দুর্যোগকালীন আমাদের এ সাহায্য অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা সদকাহ হিসাবে গণ্য করবেন । জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
كُلُّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ
“সকল সৎ ‘আমাল সদাকাহ হিসেবে গণ্য” । [সহিহ বুখারী, হা/৬০২১]
আহবানে : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী